বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেছেন, সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডাটাবেজে রক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনওভাবেই তা আলাদা কোথাও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা নিয়ে সম্প্রতি সৃষ্ট বিতর্ক নিরসনে তারানা হালিম জরুরিভিত্তিতে রবিবার বিকেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যে ডিভাইস দিয়ে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে তাতে সংরক্ষণের কোনও সফটওয়্যার নেই।

তারানা হালিম আরও বলেন, এটা অনলাইন ভেরিফিকেশন, অফলাইন নয়। ফলে আঙুলের ছাপ অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে মানে আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার জহুরুল হক, মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রি. জে. এমদাদ উল বারী, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতান জামান মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ডিএনএ ল্যাব ও আইটি ফরেনসিক ল্যাব প্রকেল্পর প্রধান) শেখ মো. রেজাউল হায়দার, সিআইডির পুলিশ সুপার (আইটি ফরেনসিক) আলীমুজ্জামান, মোবাইলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবিরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

তারানা হালিম বলেন, আমি জানি কারা এই প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। যারা হুমকিদাতা, যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) ব্যবসায়ীরা এসব গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। কারণ সিম নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারলে তারাই সবচেয়ে লাভবান হবেন। আমি জানি তারা সব রাঘব বোয়াল। কিন্তু রাঘব বোয়াল, কুমির, বাঘে তারানা হালিম ভয় পায় না।

তারানা হালিম বৈঠকে অ্যামটব প্রতিনিধি টিআইএম নূরুল কবিরের সামনে (মোবাইলে ধারণ করা) একটি স্থির বিজ্ঞাপনচিত্র দেখিয়ে জানতে চান, এই বিজ্ঞাপন আপনারা প্রচার করছেন? (বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম নিবন্ধন করলে সমস্যা হবে। বিজ্ঞাপনে সব মোবাইলফোন অপারেটরের লোগো এবং অ্যামটবের লোগো রয়েছে)। টিআইএম নূরুল কবির জানান, অ্যামটব এটা প্রচার করেনি। বরং বিশেষ কোনও মহলের কাজ এটি।

তিনি জানান, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে সিম নিবন্ধনে কোনওভাবেই আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। কেবল ভেরিফাই করা হেচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তারানা হালিম উল্লেখ করেন, দেশের বাইরে যেতে হলে ভিসার আবেদনের সময় সবাই কোনও চিন্তা না করেই আঙুলের ছাপ দিয়ে দিচ্ছেন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময়ও আঙুলের ছাপ দিতে কারও মনে কোনও প্রশ্ন উদয় হচ্ছে না। এমনকি স্যামসাং বা আইফোনের লক সিস্টেমেও আঙুলের ছাপ দেওয়া হচ্ছে যেটা সরাসরি তাদের সার্ভারে চলে যায়, কিন্তু কেউ তাতে কোনও প্রশ্ন তুলছেন না। প্রশ্ন কেবল সুরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোবাইলফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

তিনি আরও বলেন, আমি নির্দিধায় বলতে পারি, এই উদ্যোগ ভেস্তে গেলে সবচেয়ে খুশি হবে মোবাইলফোন অপারেটররা।

‘আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা’ – তারানা হালিমের এই প্রশ্নে সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, যারা এমন গুজব, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদের ভেরিফিকেশন করা হবে। বিটিআরসি তাদের খুঁজে বের করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

শেখ মো.রেজাউল হায়দার বলেন, আঙুলের ছাপ নিয়ে কোনও কিছু করা কেবল সিনেমাতেই সম্ভব। আসলে এরকম (বাস্তবে) হবে না।

নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতান জামান মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন বলেন, আঙুলের ছাপ দিয়ে ছোটখাট পর্যায়ের কোনও অপরাধ করা সম্ভব নয়।

বৈঠকে জানানো হয়, প্রথম দিকে ২৬ শতাংশ আঙুলের ছাপ ম্যাচ হলেও বর্তমানে সেই হার বেড়েছে। বর্তমানে এনআইডি ডাটাবেজের সঙ্গে ৮৬ শতাংশ আঙুলের ছাপ মিলছে বলে জানানো হয়ে। যাদের মিলছে না তাদের ছাপ সংগ্রহ করে ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বৈঠকে এও জানানো হয়, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন শুরু হয়েছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ২ কোটি ৫৩ লাখ সিম নিবন্ধন হয়েছে।

Leave a Reply