ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সব কর্পোরেট চাকুরীজীবীরা জেনে গেছি যে, কোম্পানিকে ভালবাসতে ‘না’ করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠা ব্যক্তিত্ব এ পি জে আবদুল কালাম বরং তিনি কাজকে ভালবাসতে বলেছেন। কারণ কোম্পানি যে কখন কাকে ভালোবাসা বন্ধ করে দেয় তা কেউ জানেনা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এটি বুঝা হয়েছে ভালোবাসা-বাসির ব্যাপার কোম্পানির দিক থেকে নেই কারণ কোম্পানি ভালোবাসার ব্যবসা খুলেনি, সে মুনাফার জন্যে এবং সর্বোচ্চ মুনাফার জন্যই ব্যবসা পরিচালনা করছে! এই Profit Maximization ই বেশিরভাগ পুঁজি ও প্রতিষ্ঠানের নীতি। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী এবং গ্রামীণব্যাংক এর প্রতিষ্ঠাতা সামাজিক ব্যবসার ধারণা দিচ্ছেন এবং বিশ্বব্যাপী তিনি সামাজিক ব্যবসায়ের ধারণা উপস্থাপন করে চলেছেন। আমার ব্যক্তিগত মত ব্যবসায়ীরা এই ধারণা প্রমোট করবে না মূল ব্যবসা হিসেবে।
যাহোক, এ পি জে আবদুল কালামের কথা সত্যি হলেও মানুষ অতোটা নির্মোহ সত্যিকার অর্থে হতে পারে না। মাটির প্রতি যেমন মায়া জন্মায়, পাশের বাড়ির মানুষের প্রতি যেমন ভালোবাসা জন্মায় তেমনি মানুষের কর্মস্থলের প্রতিও ভালোবাসাও জন্মায়। প্রতিদিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করা কাজের জায়গাটির প্রতি আবেগ কাজ করে। আমি অনেক বিদায়ি সহকর্মীর বিদায়ি সংবর্ধনায় তাদেরকে কাঁদতে দেখেছি, নিজেও সেই বিদায়ি সহকর্মীর আবেগে ভেসেছি। আমিও একজন ছাপোষা মানুষ মাত্র। প্রয়োজনে চাকরি নিয়েছি। সেই চাকরি এখনো করে চলেছি, এই ৯ বছরে গ্রামীণফোনে চাকরি করতে গিয়ে এর প্রতিটি বিষয়ের সাথে সংলগ্ন থেকে এর প্রতি আবেগ, ভালোবাসা এবং সাথের সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক পেশাদারিত্বের সীমায় আবদ্ধ থাকেনি। এমনিতেই গ্রামীণফোনে সহকর্মীদের সম্বোধন করতে হয় “ভাই, বোন, দাদা কিংবা দিদি”। সম্বোধনের এই অসাধারণ সহজিয়া ভাবনাই দ্রুততম সময়ে সহকর্মীদের কাছাকাছি নিয়ে আসে। খুব আপন মনে হয়ে সকলকে। গ্রামীণফোন একটি তারুণ্য নির্ভর কোম্পানি। এখানে চাকুরীরত সবাই বয়সে তরুণ এবং যুবা। তাই অন্যরকম এক প্রাণচাঞ্চল্য প্রতিদিনই বহমান থাকে এর ব্যবসায়িক পথচলায়। বাংলাদেশের মার্কেট লিডার হয়ে উঠবার পেছনে এই প্রাণময় তারুণ্যের অংশীদারিত্ব এবং অংশগ্রহণ অভূতপূর্ব।
একটা সময় ছিলো যখন প্রতিদিন ৭:৪৫ এ অফিসে চলে যেতাম ফিরতাম রাত ৯ টায়। তখন আমি একলা ছিলাম, আর ছিলো আমার চাকরি। পুরষ্কার জিতে নিয়েছিলাম অফিস টাইমিং এ। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতেও জীবিকা নির্বাহের অনুষঙ্গ গুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। কৃষক আবহমান কাল থেকেই তার কৃষি উৎপাদনের যন্ত্রপাতিকে শ্রদ্ধায় বরণ করে চলেছে। আমার এখনো প্রায় ১০ ঘণ্টা নিত্যদিন অফিসে চলে যায়। এখন শুক্র ও শনিবারও যায় কোম্পানির মধ্যে আমাদের Grameenphone Employees Union (GPEU) তথা ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়। কিন্তু সবার আগে গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোন ভালো থাকলেই, তার ব্যবসা ভালো হলেই এখানে ভালো ট্রেড ইউনিয়ন, ঠেকসই শিল্প সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব। ব্যবসা ভালো না থাকলে বাকী সমস্ত চেষ্টাই বৃথা। আমাদের সহকর্মীরা এই বিষয়ে প্রতিজ্ঞাই করেছে যেকোন মূল্যে মার্কেট লিডার থাকবো আমরাই। টেলিকম ব্যবসাকে শুরু থেকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। এবং এখনো হচ্ছে। এই পরিবর্তন টেলিকমের ব্যবসায়ীক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে বৈ কমেনি। আগামীতেও এর ব্যবসা বাড়বে বলেই আমি মনে করি। মোবাইল বিহীন একদিনও এই ধরণি আর চলতে পারবেনা!
২৬ মার্চ আমাদের জাতিরাষ্ট্রের জন্মদিনে গ্রামীণফোনের পথচলার শুরু। বাংলাদেশের জন্মলগ্নে যেমন কেউ অনুমান করতে পারেনি ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত আর আত্মবিশ্বাস সম্বল করে একদিন বিশ্বব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পদ্মা সেতুটি শেখের বেটি তথা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৈরি করে ফেলবে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া অদৃষ্ট। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারেনা। অনেক দাম দিয়ে পেয়েছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আজকের এবং আগামী প্রজন্ম এগিয়ে নেবেই। ২৬ মার্চ গ্রামীণফোনেরও জন্মদিন। আজ থেকে ১৯ বছর আগে এই কোম্পানির মাদার কোম্পানি টেলিনর ও নিশ্চয় চিন্তা করেনি এর গ্রাহক হবে প্রায় ৬ কোটি। ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে ব্যবসা। এই কোম্পানির চাকরিজীবীরা ২০১২ সালের আগে চিন্তাও করেনি এখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবে।
২০১৩ সালের আগে কেউ চিন্তাও করেনি সকল পর্যায়ের কর্মীদের অংশগ্রহণ এবং সরাসরি ভোটে Grameenphone Peoples Council (GPPC) তৈরি হবে। ২০১৩ সালের আগে কোম্পানির ভেতরে থাকা বেশিরভাগ মানুষ চিন্তাই করতে পারেনি WPPF ২০১০ থেকে পাওয়া যাবে। এইরকম হাজারো ঘটনাবহুল আমার চাকরির জায়গা গ্রামীনফোন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের এক অন্যতম কোম্পানি এবং অসংখ্য ইতিবাচক উদাহরণ এই কোম্পানি নিজে এবং এর কর্মীরা মিলে তৈরি করেছে। আমি একজন কর্মী যে-কিনা এইসব ঘটনার মধ্যদিয়ে গেছি এবং শিখছি প্রতিদিন নতুন করে। অসম্ভব সুন্দর কিছু মানুষের সমাবেশ ঘটেছে এই কোম্পানিতে। অপরাজেয় সেইসব সহকর্মীদের অভিবাদন। শুভ জন্মদিন গ্রামীনফোন। ঠেকসই ব্যবসায়ীক উন্নয়নের ধারায় চলুক আগামী। শুভকামনা গ্রামীনফোন এবং সহকর্মীদের।