হ্যালো ব্রো, স্বাগতম, সবাইকে, আমার আজকের আরেকটা নতুন টিউটোরিয়ালে । আশা করি সবাই খুবই ভালো আছেন। ভালো তো থাকারই কথা, কারন trickbd র সাথে থাকলে সবাই খুব ভালো থাকে । আর ভালো থাকার জন্যই মানুষ ট্রিকবিডিতে আসে। চলুন শুরু করা যাক।
আপনারা নিশ্চয় পোস্টের টাইটেল টি দেখে তারপর পোস্টে এসেছেন।
আজকে আমি আপনাদেরকে একটি অসাধারণ একটি বই সম্পর্কে বলবো
লেখকঃ মোঃ সহিদুল ইসলাম রাজন
জনরাঃরোমান্টিক থ্রিলার
প্রকাশনীঃবইবাজার প্রকাশনী
প্রকাশকঃ সৈয়দ রবিউজ্জামান
প্রচ্ছদ মুল্যঃ ৩০০
পৃষ্টাঃ ১৭৫
সুইসাইড নোট,নামটি শুনলেই মনের মাঝে এক অজানা রহস্য উঁকি মারে। তাইলে কি গল্পে সুইসাইডকে সমর্থন করা হয়েছে?
না সুইসাইড নোট আসলে সুইসাইডকে সমর্থন করেনি বরঞ্চ বাস্তবতার বিভিন্ন দিককে আমাদের কাছে তুলে ধরেছে।
যে গল্পে ভালোবাসার পাশাপাশি দুঃখ-কষ্ট,হতাশা ও পারিবারিক জীবনের বাস্তবতার বিভিন্ন দিক দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। বইটি তরূণ-তরুণীদের জন্য অনেক বেশি উপযোগী বলে মনে করি।
সুইসাইড নোট এক যুবকের তীব্র ভালোবেসেও একা হয়ে যাওয়ার গল্প,এক তরুনীর চঞ্চলতার গল্প,এক অসহায় মায়ের গল্প।
বইয়ের সার-সংক্ষেপঃ সুইসাইড নোট শ্রাবণ নামের এমন একজনের গল্প যে জীবনে পারিবারিক ভাঙন,মা বাবার দ্বন্দ,বিচ্ছেদ,প্রিয় মানুষের অপরিচিত রূপ সবগুলার সাথে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। পারিবারিক ভাঙ্গন, বাবা মায়ের মাঝে দ্বন্দ্ব, বিচ্ছেদ যে কোনো সন্তানের সুস্থ মানসিক বিকাশের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শ্রাবনও তেমন, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ তাকে একঝাঁক একাকীত্ব, অস্তিত্বহীনতা এবং হতাশার মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। তার অন্ধকার জীবনে হঠাৎ একটুকরো আলো হয়ে আসে নীলা, অল্প অল্প করে জমতে থাকে তাদের ভালোবাসা এবং ঘর বাঁধার স্বপ্ন। সে নীলাই যখন নিভু নিভু করে ডুবে যেতে চায় ঠিক তখনই শ্রাবন ফিরে যায় তার পুরোনো একাকীত্বে। অবহেলা নামক ফিনিক্স পাখি তাকে করে তোলে ভয়ানক, প্রচন্ড ভয়ানক।
নীলার সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে থাকার সময় সে সাময়িক সময়ের জন্য নিজেকে খোঁজে পায় সখের স্বর্গে।
নীলাকে নিয়ে শ্রাবণের মনে জমে উঠে ভালোবাসার এক অদ্ভুত পাহাড়। কিন্ত সে ভালোবাসার পাহাড়ে হঠাৎ হানা দেয় তৃতীয় ব্যক্তি,
তার আগমনে নীলার প্রতি শ্রাবনের ভালোবাসা ভাটা পড়েনি বরং আরো বেড়ে যায় কিন্ত একপর্যায়ে নীলার অবহেলা তাকে একাকীত্বের গভীর নগরে নিয়ে যায়।
শ্রাবন তার ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে,কিন্ত একপর্যায়ে অবহেলা সইতে না পেরে সে আবার চলে যায় একাকীত্বের ভীড়ে।
সবকিছু ভুলে শ্রাবন আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলো,কিন্ত ছোটকাল থেকেই হতাশা,দ্বন্ধ আর একাকীত্বের মধ্যে শ্রাবন আবার নিজেকে জড়িয়ে নেয়। ডুবে যায় অস্তিত্বহীনতার পথে। শ্রাবন পারবে কী নীলাকে নিয়ে সুখের সমুদ্রে ভাসতে নাকী হারিয়ে যাবে একাকীত্ব আর হতাশার মহাসমুদ্রে?
সারাজীবন শ্রাবনের মা-বাবার দ্বন্ধ,তারপর বাবার দ্বিতীয় বিবাহ,মায়ের অন্য আরেকজনের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়া,ভালোবাসার মানুষের অন্য কারো দিকে ঝুকে যাওয়া এসব অনেক বেদনাকাতর স্মৃতি সহ্য করে এক যুবকের জীবনযুদ্ধের এক লিখিত সমাবেশ হলো সুইসাইড নোট।
লেখকের দক্ষতা প্রসঙ্গঃ “সুইসাইড নোট” বইটিতে লেখক আমাদের জীবনের বাস্তবতার এক নির্মম দিক ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
শুধু ভালোবাসা নয়,প্রিয়জনের অবহেলা,প্রিয়জনদের দ্বন্ধ,বিচ্ছেদ,তীব্রভাবে ভালোবাসার পর কাউকে আপন করার অদম্য চেষ্টার দ্বারা শ্রাবন যেনো হয়ে উঠেছে এক বাস্তবমুখী চরিত্র। এক্ষেত্রে লেখকের অবদান অপরিসীম। কাউকে তীব্রভাবে চাওয়া আর তারপর তার কাছ থেকে পাওয়া অবহেলা কাউকে অমানুষ বানিয়ে দিতে পারে তার নির্মম পরিণতি যেনো খুব দারুণভাবে পাঠকহ্রদয় ছুয়ে যাবে।
শিক্ষনীয় দিকঃ নিজের দুর্বলতা অন্যকে বললে সে যতোই আপন হোক না কেনো,একদিন সুযোগ পেলেই সে সেই দুর্বলতার কথা বলে আপনাকে কষ্ট দিবেই।
তাই নিজের দুর্বলতা কারো কাছে প্রকাশ না করাই উত্তম। ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখার জন্য অতিরিক্ত অধিকার দেখানোর খারাপ পরিণতিও গল্পে প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া একটা সুন্দর সম্পর্ক কীভাবে তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে তিলে তিলে নষ্ট হয় সেটাও গল্পে বর্ননা করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত সন্দেহ যে আমাদের একদিন অতিরিক্ত একা বানিয়ে দেয় তাও এই গল্পের মধ্যে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। আর রাগের বসে করা কোন কাজ বা রাগের মাথায় নেওয়া কোন সিদ্ধান্তই যে সঠিক হয় না সেই সম্পর্কেও একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়
একটি সুন্দর ভালোবাসার গল্প ও জীবনের বাস্তবতার কিছু ঘটনার মিশেলে লেখক সুইসাইড নোট বইটিকে আকর্ষণীয়ভাবে সবার সামনে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সুইসাইড নোট উপন্যাসের থেকে নেওয়া আমার প্রিয় কিছু লাইনঃ
ভালোবাসা প্রকাশ করলে অবহেলা পেতে হয়, তাি কিছুসময় ভালোবাসা অপ্রকাশিত রাখাই শ্রেয়।
‘তাকে আটকে রাখার জন্য করা চেষ্টাগুলোই তাকে হারিয়ে ফেলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
‘অথচ তুমিও জানতে তোমাকে ছাড়া আমার ঠিক কতটা কষ্ট হবে।’
‘নির্মম জীবনগুলোর জন্য পৃথিবী কেন যেন অনেক বেশিই নির্বোধ হয়।’
‘অতিরিক্ত যে কোন জিনিস বিপরীত ফলাফলের জন্ম দেয়।’
‘তুমি আমার অন্ধকার জীবনে একটুকরো আলোর মতো যাকে আমি আমার সবটুকু দিয়ে আগলে রাখতে চাই।
অভ্যাস আর ভালোবাসা সাধারণত একমুখী হয়,তবে যদি দুমুখী হয় তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভ্যাস জয়ী হয়।
‘একদিনের আত্মহত্যা মহাপাপ বলে আমরা অনেকেই তা ধীরে ধীরে করি।’
তোমাকে দেখার এক অদ্ভুত লোভ আমাকে আজীবন দুঃখী করে রাখবে।’
বাবা মা একবারই আসে, একবরাই হয়। এদের পরে অন্য কেও বাবা মা হয় না, তারা বড়জোর চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বাবা মা হতে পারে না।
কিছু কিছু মানুষ খুব অদ্ভুত, যখন তাদের অধিকার থাকে না তখন তারা অনেক বেশি অধিকার দেখাতে চায়, আর যখন অধিকার থাকে ;তখন তারা প্রাপ্ত অধিকারের প্রতি উদাসীনতা দেখায়।
শব্দহীন কান্নাগুলো বোধ হয় শব্দযুক্ত কান্না থেকেও অনেক বেশি ভারী।
মানুষের মন সবসময় এক জায়গায় পড়ে থাকে না, মাঝেমাঝে বিকল্প খুঁজে। আর বিকল্প পেলে সে অতীতকে পায়ে ঠেলে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না, এইটা সম্ভবত মানুষের সবচেয়ে খারাপ দিক।
যেখানে প্রত্যাশার পরিমান অনেক বেশী থাকে সেখানে ফলাফল থাকে শূন্যের ঘরে, কিংবা তারও কম- ঋণাত্মক।
মাঝেমাঝে শূন্যতা বোঝার জন্য একটুআধটু দূরত্ব রাখতে হয়। এতে সত্যি কারের ভালোবাসা বোঝা যায়।
“মানুষের হঠাৎ বদলে যাওয়াটা তার খুব কাছের মানুষগুলোকে যে কতটা কষ্ট দেয় তা যদি বদলে যাওয়া মানুষটি একবার বুঝতে পারতো তবে সে কখনোই হয়তো বদলাতো না, সে নিজেকে হয়ত কখনোই ক্ষমাই করতে পারতো না। আর যদি বিপরীত পরিবেশই মানুষটাকে বদলে যেতে বাধ্য করে তখন সেটা অন্য পর্যায়ে চলে যাবে, সেক্ষেত্রে হয়তো মানুষটাকে দোষ না দিয়ে বরং নিরুপায় বলা চলে।
‘প্রতীক্ষা’ শব্দটির সৃষ্টি সম্ভবত মেয়েদের জন্য, তারা প্রিয় মানুষ কিংবা প্রিয় যে কোনোকিছুর জন্য কারনে- অকারনে অনেক বেশী প্রতীক্ষা করতে পারে, মাঝেমাঝে আসবে না জেনেও প্রতীক্ষা করে। প্রিয় কোনোকিছুর জন্য অহেতুক প্রতীক্ষা করার মাঝেও তারা একপ্রকার সুখ পায়।”
“অশ্রুের কোনো রঙ নেই বলে ঠিক বুঝানো যায় না কোনটা রাগের, কোনটা কষ্টের, কোনটা অভিমানের, কিংবা কোনটা আনন্দের।”
“জীবন অনেক বড় অধ্যায়, এখানে একে অন্যের যতই কাছের হোক না কেন ততক্ষণ কেউ কারো অবস্থা, অনুভূতি, আনন্দ কিংবা বেদনা বুঝতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যের বিদ্যমান পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
কিছু কিছু জিনিস জানা থেকে অজানাতে থাকা ভালো এতে অন্তত একটা সুখ পাওয়া যায়, হোক না সেটা মিথ্যে সুখ, তাও তো সুখ।
“যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি,
যদি ভালোবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি।
যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
ব্যক্তিগত মতামতঃ ব্যক্তিগত ভাবে সুইসাইড নোট উপন্যাসটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। বইয়ের অধিকাংশ লেখাগুলোই বাস্তবতা কেন্দ্রিক তাই হয়তো পাঠকদের এতো বেশি মন কেড়েছে। বইয়ের মূল চরিত্র শ্রাবন যার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো আমাদের চারপাশে অহরহই ঘটে হয়তো আমরা তার খবর রাখি না। তবে এটি আমাদের বর্তমান সমাজের একটি অতি দুঃখজনক ব্যাস্তবতা। আমাদের চারপাশে এরকম হাজারো শ্রাবন হারিয়ে যায় একাকীত্ব, অস্তিত্বহীনতা এবং হতাশার অতল অন্ধকারে। আমি সুইসাইড নোট বইটি একটা সুন্দর গোছালো কাহিনী হিসেবে পুরো বইটা পড়ার সময় উপভোগ করেছি। নতুন লেখক হিসেবে সহিদুল ইসলাম ভাইয়া অনেক ভালোভাবেই গল্পটিকে টেনে নিয়ে গেছেন একটা দারুণ উপসংহারের দিকে।
আশা করি ভবিষ্যতেও লেখকের আরো দারুণ দারুণ লিখা পড়তে পারবো। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো লেখকের জন্য।
( আমি কোন লেখিকা নয় আর লেখালেখিও করি না। সুইসাইড নোট বইটি পড়ার পর বই সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। হয়তো ভালো করে গুছিয়ে লিখতে পারিনি, লেখায় কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করে দেবেন )
আর যাদেরই এরকম রোমান্টিক থ্রিলার বই ভালো লাগে, তারা অবশ্যই বইটা একবার পড়ে দেখবেন l আমি নিচে বইটির রকমারি থেকে কেনার লিঙ্ক দিয়ে দিলাম l আপনি চাইলে রকমারি থেকে সংগ্রহ করতে পারেন অথবা কাছাকাছি কোন লাইব্রেরী থেকে সংগ্রহ করতে পারে l
আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি।
মানুষ মাত্রেই ভুল হয় , তাই পোষ্টে কোন ভুল থাকলে দয়া করে মাপ করে দিয়েন, আর প্লিজ কমেন্টে লিখে ভুলগুলা শোধরানোর সুযোগ করে দিয়েন।
কোন কিছু না বুঝলে বা কোন কিছু জানার থাকলে, আমাকে কমেন্টে জানান।
আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনি আমাদের ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন হতে পারেন l
আর যেকোন প্রবলেমে ফেসবুকে আমি
তাহলে সবাইকে ট্রিকবিডির সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রন জানিয়ে আজকে আমি আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
You must be logged in to post a comment.
এই রোমান্টিক গল্প আমার প্রিয় নয় । শিক্ষণীয় গল্প চায় ।
try korbo dite. hygenburger golpo boita porte paren
ভালো।