ব্লগার কিংবা ওয়েবমাষ্টার যতক্ষন পর্যন্ত তার ব্লগের পোষ্টগুলি গুগল সার্চ রেজাল্টের প্রথম পাতায় শো করাতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্লগে পর্যাপ্ত অর্গানিক ট্রাফিক পাবে না। অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অর্গানিক ট্রাফিক ছাড়া কোন ভাবে সফলতার ধারপ্রান্তে পৌছা সম্ভব নয়। গুগল সার্চ ইঞ্জিনকে যথাযথভাবে অপটিমাইজ করতে পারলে কেবলমাত্র সার্চ রেজাল্টের প্রথম পাতায় অবস্থান নেওয়া সম্ভব হবে। যখন একটি ব্লগের বেশীরভাগ পোষ্ট সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় শো করবে তখন ভিজিটর দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আজ আমি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে ৯০% এর বেশী লোক গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কোন কিছু খুজে থাকে। সে জন্য আপনি যথাযথভাবে এসইও করে গুগল সার্চ রেজাল্টের প্রথম পাতায় আপনার ব্লগের পোষ্ট শো করাতে পারলে সার্চ ইঞ্জিন হতে পর্যাপ্ত ভিজিটর পেয়ে ব্লগের ভাল রয়াংকিং করতে পারবেন।
স্থানীয় কীওয়ার্ড খুজাঃ
আপনার ব্লগটি যদি বাংলায় হয়ে থাকে কিংবা যে কোন নির্দিষ্ট দেশ বা স্থানীয় বিষয়ে আর্টিকেল শেয়ার করে থাকেন তাহলে আপনাকে ঐ দেশ ও এলাকার লোকজন কী ধরনের কীওয়ার্ড ব্যবহারে করে ইন্টারনেটে সার্চ করছে সে বিষয়টি খুজে বের করতে হবে। কারণ গুগল বর্তমানে Local বিষয় নিয়ে লিখা ওয়েবসাইটগুলিকে সহজে সনাক্ত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি স্থানীয় কীওয়ার্ড অপটিমাইজ না করে ব্লগি করেন তাহলে গুগল আপনার ব্লগের পোষ্ট কোন দেশে বেশী গুরুত্ব দেবে সেটা বুঝতে পারবে না। যার ফলে সারা বিশ্বব্যাপী প্রদর্শন করতে গিয়ে আপনার টার্গেটেড দেশ বা স্থানটি বাদ পড়ে যাবে। এ বিষয়টি করার জন্য গুগল ওয়েমাষ্টার টুলস এ আপনার ব্লগটির টার্গেটেড দেশ সিলেক্ট করে দেবেন। তাহলে সেই দেশের লোকজন যখন সার্চ করবে তখন গুগল আপনার ব্লগটি সেই দেশের সার্চের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেবে।
এ কাজটি করার জন্য আপনি আরো কিছু বিষয় যুক্ত করতে পারলে গুগল আপনার ব্লগটির লোকেশন সহজে সনাক্ত করে নিতে পারবে। গুগল ম্যাপ এ আপনার ব্লগের Url, নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার যুক্ত করার মাধ্যমে আপনার ব্লগের অবস্থান সম্পর্কে গুগলকে জানিয়ে দিতে পারেন। গুগল ম্যাপে যুক্ত করা ঠিকানাটা Google My Business হতে ভেরিফাই করে নিতে পারলে লোকাল সার্চের ক্ষেত্রে আরো সুবিধা নিতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক ব্লগের গঠনঃ
আপনি যদি সমগ্র বিশ্বকে টার্গেট করে ব্লগিং করেন তাহলে ওয়েবসাইট সম্পর্কে ভিজিটর ও সার্চ ইঞ্জিনকে পরিষ্কার ধারনা দেওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ রাখতে হবে। এই পেজগুলি না থাকলে আপনার ব্লগের গুরুত্ব সার্চ ইঞ্জিনের কাছে কমে যাবে। তবে যারা লোকাল বা বাংলা ভাষায় ব্লগিং করেন তাদের ক্ষেত্রে এই পেজগুলি না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। তবে পেজগুলি রাখলে বেশ ভালো হয়।
About Us: এটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পেজ। এখানে আপনার ব্লগ এবং আপনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত পরিষ্কারভাবে তুলে ধরবেন।Contact Us: ভিজিটর যাথে আপনাদের সাথে যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ রাখতে পারে সে জন্য একটি যোগাযোগ ফরম রাখবেন। এটি আপনার ব্লগের পাঠকদের সাথে কমিউনিকেশন তৈরি করবে।Privacy Policy: আপনাদের ব্লগের গোপনীয় নীতি মেনে কিভাবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতঃ সেটা কাজে লাগান বা ব্যবহার করেন সে বিষয়ে তুলে ধরবেন।Term and Conditions: অনেক ব্লগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শর্ত আরূপ করা হয়ে থাকে। আপনার ব্লগের এ রকম কিছু থাকলে সেটিও ব্লগে উল্লেখ করে রাখবেন।Sitemap: একটি ব্লগের পূর্ণাঙ্গ ধারনা সংক্ষেপে তুলে ধরার জন্য সাইটম্যাপ তৈরি করা হয়। এটি আপনার ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিন এর কাছে সংক্ষেপে উপস্থাপন করে ব্লগ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা দেবে।
উপরের পেজগুলি নুতনদের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। তবে যখন আপনার ব্লগটির পরিচিতি বাড়তে থাকবে তখন নিজে এই পেজগুলির অভাব অনুধাবন করতে পারবেন। কাজেই যে কোন ধরনের ব্লগিং এর ক্ষেত্রে ব্লগ তৈরির প্রথম পর্যায়ে পেজগুলি রেখে দেওয়াটাই উত্তম হবে।
মান সম্পন্ন ব্লগ তৈরিঃ
মান সম্মত বলতে ব্লগের সার্বিক অনেক বিষয়কে নির্দেশ করে। একটি ব্লগ শুরু করার পর ব্লগের গঠন আকর্ষণীয় রাখার পাশাপাশি আরো অনেক বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। নিচে মানসম্মত ব্লগের প্রথমিক কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
Original Content: ব্লগে ট্রাফিক পাওয়ার ক্ষেত্রে ভালমানের Original Content এর বিকল্প কিছুই নেই। আপনার ব্লগে যত ভালমানের ইউনিক কনটেন্ট শেয়ার করতে পারবেন সার্চ ইঞ্জিন তত বেশী আপনার ব্লগের অনুকুলে থাকবে। বিশেষ করে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের কাছে ইউনিক কনটেন্ট এর মূল্য এতটাই বেশী যে, বর্ণনা করে কোনভাবে শেষ করা যাবে না। তাছাড়া ভালমানের কনটেন্ট ছাড়া এসইও করে কোন ফলাফল পাওয়া যাবে না। আমি প্রায় সময় আমার ক্লায়েন্টদের এসইও বিষয়ে কাজ করে দেই। কাজ নেওয়ার পূর্বে আমার ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে জেনে নেই তার ব্লগে ভালমানের কনটেন্ট আছে কি না। ভালমানের কনটেন্ট ছাড়া আমি কখন এসইও করার কাজ হাতে নেই না। কারণ অরিজিনাল কনটেন্ট ছাড়া আমি কোনভাবেই সার্চ ইঞ্জিন হতে ট্রাফিক এনে দিতে পারব না।Navigation: ওয়েবসাইটের ডিজাইন সুন্দর রাখার পাশাপাশি ব্লগের নেভিগেশন সুন্দর জায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন। ভিজিটরের দৃষ্টি সহজে আকর্ষণ করবে না এমন জায়গায় নেভিগেশন রাখলে পাঠক আপনার ব্লগে ভিজিট করে বেশীক্ষণ না থেকে ব্লগ ত্যাগ করে চলে যাবে।Breadcrumbs: এটির মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন ও ভিজিটর উভয়ে আপনার ব্লগ পোষ্টের ক্যাটাগরি এবং লোকেশন সহ আরো অনেক বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনা নিতে পারবে। বিশেষ করে এই Breadcrumbs লিংকগুলির মাধ্যমে এক ধরনের Internal Backlinks তৈরির সুবিধা নেওয়া যায়।Search Box: যে ব্লগে সার্চ বক্স নেই সেই ব্লগ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ সার্চ বক্স এমন জায়গাতে রাখবেন যাতে খুব সহজে ভিজিটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
Responsive Design:
Responsive Web Designs বর্তমান সময়ে একটি প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনে পরিনত হয়েছে। এক সময় ছিল যখন কোন ব্লগ/ওয়েবসাইট Responsive ছিল না, কিন্তু সমপ্রতি সকলেই তাদের ব্লগকে Responsive Designs আকারে গঠন করে নিচ্ছেন। টপ লেভেলের ব্লগ ডিজাইনাররা বিভিন্ন ছোট বড় ডিভাইসের উপযোগী করার জন্য তাদের ব্লগগুলি Responsive করে নিয়েছেন। তাছাড়া যে কোন Responsive ব্লগের স্পীড অন্যান্য নরমাল ব্লগের চাইতে অনেকগুন বেশী হয়ে থাকে। এর সব চাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে যে, এ ধরনের ব্লগের কনটেন্ট জুম না করে পরিষ্কারভাবে পড়া যায়। আপনি যদি ব্লগকে এখনো Responsive না করে থাকেন তাহলে ধরে নেন আপনার এজান্তে ছোট ডিভাইসের ভিজিটরদের হারাচ্ছেন। তাছাড়া গুগল অনেক আগেই সবার ব্লগ Responsive করে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে।
Optimize for Mobile:
Responsive Web Designs এর পরে আসবে মোবাইল অপটিমাইজ করার বিষয়টি। Responsive Designs শুধুমাত্র সকল ধরনের ডিভাইসের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে পরিষ্কারভাবে দেখার উপযোগী করে থাকে। আর মোবাইল অপটিমাইজ করার পর ছোট ছোট মোবাইলগুলি ওয়েবসাইটকে দ্রুত লোড নিতে সক্ষম হয়। যারা গুগল ব্লগার দিয়ে ব্লগিং করছেন তারা ব্লগের বিভিন্ন Conditional Tags ব্যবহার করে ব্লগকে পরিপূর্ণ মোবাইল অপটিমাইজ করতে পারেন। বর্তমানে গুগল সার্চ ইঞ্জিন মোবাইল সার্চ এর জন্য আলাদা গুগল মোবাইল বট তৈরি করেছে। গুগল মোবাইল বট ওয়েবসাইট মোবাইল উপযোগী কি না তা যাচাই বাছাই করার পর গুগল মোবাইল সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়।
AMP অপটিমাইজেশনঃ
AMP HTML হচ্ছে গুগল কোম্পানি সমর্থিত একটি Open Source Project, যা একটি ওয়েবসাইটের Content-কে যে কোন ধরনের মোবাইল ডিভাইসে দ্রুত লোড নিতে সাহায্য করে। আরো ভালভাবে বলা যায়, একটি মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে AMP যে কোন ওয়েবসাইটকে একটি দ্রুতগামী বুলেটের মত লোড নিতে সক্ষম। বর্তমানে গুগল সার্চ ইঞ্জিন মোবাইল রয়াংকিং এর ক্ষেত্রে AMPকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। তবে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য আপনার ব্লগে শুধুমাত্র Google AdSense ব্যতীত প্রায় সকল ধরনের বিজ্ঞাপন’সহ Third Party Scripts ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
Schema Markup ব্যবহারঃ
এটি হচ্ছে এক ধরনের (Semantic Vocabulary) কোড, যা সার্চ ইঞ্জিনের আকর্ষন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ব্লগ ও ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ গুলি সাধারণত HTML ও Scripts আকারে হয়ে থাকে। এই Schema Markup ট্যাগগুলি ব্যবহার করে আপনার ব্লগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনদের সহজভাবে পরিষ্কার ধারনা দিতে পারবেন। যার ফলে আপনার ব্লগটি সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় আসার সম্ভাবনা আরও অনেকগুন বেড়ে যাবে। আমরা ইতোপূর্বে আমাদের ব্লগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনটি পোষ্ট শেয়ার করেছি। আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের ব্লগের পোষ্টগুলি দেখে নিতে পারেন।
ভালমানের Image ব্যবহারঃ
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে Image Search নামে একটি অপশন রয়েছে। সেখানে সার্চ করলে যে কোন ধরনের ছবি মুহুর্তে চোখের সামনে হাজির হয়। আপনি যদি আপনার ব্লগে ভালমানের সুন্দর ছবি আপলোড করে ছবিতে Alta Tag ব্যবহার করে Image সার্চে আনতে পারেন, তাহলে সেখান থেকে অনেক ট্রাফিক পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে কম সাইজের ভালমানের নিজস্ব ছবি আপলোড করার চেষ্টা করবেন। অন্যের ব্লগে ছবি ব্যবহার করলেও নরমালি কোন সমস্যা হবে না। তবে কেউ যদি অভিযোগ আনে তাহলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইন্টারনেট থেকে ছবি নিয়ে ব্যবহার করতে চাইলে অন্তত কিছুটা পরিবর্তন করে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। তাহলে পাইরেসির অভিযোগে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
সুতরাং আমি আবারও বলব Proper সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ছাড়া কেউ সার্চ ইঞ্জিন হতে ট্রাফিক পেতে সক্ষম হয়নি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে না। আপনি যদি ব্লগে পর্যাপ্ত অর্গানিক ট্রাফিক এর আশা করেন তাহলে অবশ্যই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের সকল নিয়ম অনুসরণ করে ব্লগিং করতে হবে। তবে আপনার ব্লগের সফলতা খুব দ্রুত আপনার হাতে ধরা দেবে।
ডেমো দেখুন Abcd24.ga
lol