এটা আমার প্রথম পোস্ট। দোয়া করবেন।
বর্তমানে এটা প্রমানিত যে, মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কনটেন্ট মার্কেটিং সবচাইতে কার্যকরী একটি পন্থা। কারণ একটি আর্টিকেল আপনার পণ্য সম্পর্কে মানুষকে যেভাবে আকর্ষণ করতে পারবে, অন্য কোন পদ্ধতি দিয়ে সেইভাবে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাকে তেমনভাবে পণ্যটি কেনার ব্যপারে আকর্ষণ করতে পারেনা। কনটেন্ট মার্কেটিং পণ্যের কিংবা সেবার প্রচারে বেশি কার্যকরী, এ তত্ত্বটি যারা বুঝতে পেরেছেন, তারা তাদের নিজেদের ব্যবসার প্রসারের জন্য ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি ইতিমধ্যে আলাদা ব্লগ তৈরি করেছেন কিংবা অনেকে আরেকধাপ এগিয়ে নিজের ওয়েবসাইটের সাথেই আলাদা সাবডোমেইনে ব্লগ তৈরি করছেন।
আপনিও ব্লগ তৈরির মর্ম বুঝে, নিজের ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ব্লগ তৈরি করলেন। এইটুকু ঠিক আছে। কিন্তু সেই ব্লগে কোন ভিজিটরই যদি না পেলেন কিংবা ভিজিটর মোটামুটি আসে কিন্তু কেউ কমেন্ট করেনা, কিংবা আটিকেলটি কেউ শেয়ার করলনা কিংবা সর্বনিম্ন যেইটুকু আশা করছেন, কেউ লাইক করবে, সেটাও করলনা, তাহলেতো ব্লগ তৈরির উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেল। একটি ব্লগের আর্টিকেলের ভিতরে আপনার নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ড পরিমাণমত থাকলে, ব্লগের প্রতিটি পোস্টে যদি নিয়মিত মানুষ মন্তব্য করে, অনেক বেশি মানুষ আর্টিকেলটি পড়লেই সেটিকে সফল ব্লগ বলা যেতে পারে।
এত বক বক না করে এবার জেনে নেয়া যাক, একটি কার্যকরী ব্লগ তৈরির জন্য কি কি বিষয় অনুসরণ করা উচিত?
১. যখন আপনার ব্লগটি নতুন
যখন আপনার ব্লগটি নতুন থাকে, তখন দায়িত্ব অনেক বেশি থাকে। ব্লগে প্রতিটা আর্টিকেল পোস্ট করার পর সেটিকে যত জায়গাতে সম্ভব হয়, সকল জায়গাতে শেয়ার করুন। ব্লগ না, ব্লগের আর্টিকেলকে প্রচার করুন। ব্লগে খুব দ্রুত ভাবে কোয়ালিটি সম্পন্ন অনেকগুলো পোস্ট করুন। যাতে যারা আপনার কাছ থেকে ব্লগটির কথা শুনে ব্লগে প্রবেশ করবে, তারা যেন এখানে এসে হতাশা না হয়, সত্যিকারেরভাবে যাতে কিছু পায় এখানে, তাহলে তারাতো নিয়মিত এখানে আসবেই, সাথে অবশ্যই সেই পাঠক তার বন্ধুদেরকেও এখানে আসার কথা বলবে। আপনার পোস্টগুলোতে যদি পাঠক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু নতুন কিছু খুজে পায়, তাহলেই শুধুমাত্র এই ব্লগটির কথা অন্যদেরকেও বলবে। সুতরাং সেই দিকেই নজর দিতে হবে। আরেকটি কথা, অবশ্যই পোস্টগুলো হতে হবে সহজবোধ্য এবং পড়তে উপভোগ্য।
২. ব্লগের পোস্টে নিজের কোম্পানীর প্রচারণা
আমরা জানলাম কনটেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্লগে আপনি সকল কিছু মেনে পোস্ট করছেন এবং পাঠক পাচ্ছেন কিন্তু একটি সময়ে এসে দেখলেন ভিজিটর কমে গেছে। কারণ খুজলে দেখা যাবে আপনি ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে টি-২০ ম্যাচ খেলা শুরু করেছেন। আপনাকে বুঝতে হবে, টি-২০ ম্যাচে ভাল খেললেও কাউকে যেরকম ভাল খেলোয়ার বলিনা, ভাল খেলোয়ার হতে হলে টেস্ট ম্যাচ অবশ্যই ভাল খেলতে হয়। ভাবছেন, কথা হচ্ছে ব্র্যান্ডিং এর বিষয়ে। এখানে আবার টি-২০ ম্যাচ, টেস্ট ম্যাচ কেন আসল।
ব্যবসায়িক ব্লগের প্রতিটি পোস্টে ব্যবসার প্রচারণা চালনার মনমানষিকতাকেই টি-২০ ম্যাচের সাথে তুলনা করছি। কোম্পানীর অ্যাডভার্টাইজিং এর জন্য তৈরি করা হয়নি। তৈরি করা হয়েছে কিছু নিয়মিত পাঠক এবং আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর তৈরি করার জন্য। পরে সেই পাঠকরাই আপনার ক্লায়েন্ট হবে। আপনি খুব দ্রুত ফলাফলের আশাতে যদি প্রতিটি পোস্টের মধ্যেই কোম্পানীর বিজ্ঞাপন চালিয়ে আছেন, তাহলে পাঠকতো হারাবেনই, কাস্টমার পাওয়াতো অনেক দূরের হিসেব। আপনি আপনার লেখার মধ্যে পাঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এমন কিছু লিখতে পারেন, যাতে সে নিজেই বুঝতে পারে, কি তার জন্য উপযুক্ত। তখন সে নিজেই আপনার পণ্যকে খুজে নিবে। অর্থাৎ খেলতে হবে টেস্ট ম্যাচ। এটা যদি পারেন, তাহলেই আপনি সফল হবেন।
৩. আপনার আর্টিকেলগুলো পাঠকদের জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণনা
ব্যাপারটিকে উদাহরণ দিয়ে বললে বুঝতে সহজ হবে। ধরি, আপনি গ্রাফিকস সম্পর্কিত একটি ব্লগ তৈরি করলেন।আপনি জানেন যে, ব্লগে নিয়মিত পোস্ট করতে হয়। সুতরাং নিয়ম মত আপনি পোস্ট শুরু করেছেন। আপনার প্রথম পোস্টের টাইটেল: গ্রাফিকস ডিজাইন কাকে বলে? আর ২য় পোস্টের টাইটেলঃ ফটোশপ তৈরির ইতিহাস। এই বিষয়গুলো জানার জন্য খুব বেশি মানুষ আগ্রহী না। সুতরাং এরকম বিষয়ে পোস্ট করলে, ব্লগের পোস্ট বাড়তে পারে, কিন্তু পাঠক বাড়বেনা।
৪. ব্লগের পোস্টটি পড়ার জন্য হয়ত খুব বেশি উপভোগ্য না
মনে রাখতে হবে, পত্রিকার কিংবা বইয়ের পাঠক এবং ব্লগের পাঠক একনা। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকে লেখক হিসেবে খুবই বিখ্যাত, কিন্তু ব্লগে তাদের লেখা কেউ পড়তে চায়না। কারণ তাদের লেখাগুলোতে খুব বেশি প্রাণ নাই হয়ত। খুব কঠিন, ভাব গম্ভীর ভাষা দিয়ে লিখলে সেটি পাঠক টানতে পারেনা। খুব সহজভাবে, আকর্ষণীয় টাইটেল, সাবটাইটেল সহকারে কোন কিছু লিখলে এবং পোস্ট করার সময় লেখার সাথে আকর্ষণীয় ছবি ব্যবহার করলে সেটির পাঠক পাওয়া যায়, খুব সহজে। রোবোটিক লেখা পরিত্যাগ করে এমনভাবে লেখুন, যাতে মনে হয় যেন আপনি পাঠকের সাথে সামনাসামনি কথা বলছেন। তাহলেই ব্লগের জন্য নিয়মিত কিছু পাঠক পেয়ে যাবেন, যারা আপনার পরবর্তী পোস্টের জন্য অপেক্ষা করবে।
৫. লেখার বিষয় বস্তু নির্ধারণে ভুল
ব্লগে পোস্ট করে ভরে ফেললে হবেনা। মানে বলতে চাচ্ছি, শুধূ পোস্ট বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে পোস্ট করে গেলেই হবেনা। সময় নিয়ে বের করুন, কোন বিষয়ের উপর কোন পোস্ট করলে সেটির প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে, এক্ষেত্রে সময়ের আলোচিত বিষয় নিয়ে লিখলে সেটি মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরি করতে পারে। যে কীওয়ার্ডের উপর লিখতে চাচ্ছেন, সেটি সম্পর্কিত বিভিন্ন কিছু লিখে গুগলে সার্চ করেন। অন্যদের লেখার বিষয়বস্তু দেখে নিজের লেখার জন্য ভাল বিষয় খুজে পাবেন।
৬. লেখা প্রকাশের সময়ের ধারাবাহিকতা বজায় না থাকা
লেখা প্রকাশের একটা ধারাবাহিকতা না থাকলেও আপনার পাঠক কমে যাবে। ২-৩টি ভাল আর্টিকেল যদি পোস্ট করতে পারেন, তাহলেই দেখবেন আপনার পরবর্তী পোস্ট পড়ার জন্য সবাই অপেক্ষা করবে। ঠিক তখন থেকেই যদি আপনার পোস্ট প্রকাশের সময়ের ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা রাখা যায়, তাহলে খুব অল্প সময়ে অনেক ভাল ফলাফল পাবেন। এমন করতে পারেন যে, আপনার ব্লগে প্রতি ৪দিন পর পর নতুন পোস্ট প্রকাশ করবেন। খুব বেশি সময় বিরতি, কিংবা খুব কম বিরতি দিয়ে লেখা প্রকাশ করা, দুটির কোনটি ভালনা।
৭. ব্লগে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন অপশন না থাকা
আপনার ব্লগে যদি কোন ইমেল ইনফরমেশন না থাকে বা আপনার ব্লগে কোন RSS ফিড না থাকে তাহলে একজন পাঠক আপনার নতুন নতুন পোস্টগুলোর ব্যপারে জানতে পারেনা। কারন কারণ সে হয়ত বা আপনার ব্লগে এসেছিল গুগল সার্চ এর মাধ্যমে। আর তার জন্য আপনার ব্লগে একটা ইমেল সাবস্ক্রিপশন বাটন থাক উচিত যার মাধ্যমে একজন পাঠক আপনার লেখাগুলো তার ইমেলে পেয়ে যাবে নিমেশেই আর এর মাধ্যমে সে নিয়মিত আপনার নুতন পোস্টের ব্যপারে জেনে যাবে। আবার এমন টা ও দেখা গেছে যে একজন আপনার লেখা ইমেলের মাধ্যমে তার পরিচিত জনদের কে পাঠাচ্ছে যেটা সে পেযেছিল আপনার ইমেল সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে।
৮. সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার বাটন নাই
ব্লগের প্রতিটি পোস্টের সাথে সোশ্যাল শেয়ার বাটন থাকলে পাঠক আপনার পোস্টটি তার সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে শেয়ার করার ব্যপারে উৎসাহ পাবে। অন্যরা তাদের নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি পোস্টটির লিংক শেয়ার করে তাহলে তাদের অ্যাকাউন্টে থাকা বন্ধুরা পোস্টটির ব্যপারে জানতে পারবে। তাহলে তারাও আপনার পোস্টটি আপনার ব্লগে গিয়ে পড়ার আগ্রহ পাবে। ব্লগের পোস্টটি যদি ২০ জন তাদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে এবং যদি গড়ে একজনের বন্ধু থাকে ১০০ জন তাহলে ২০০০ জন মানুষ আপনার পোস্টটি সম্পর্কে জানতে পারবে।
৯. আপনার ব্লগের কোন প্রচার নেই।
পণ্যের মার্কেটিং করার জন্য যেমনভাবে আপনার ব্লগে পোস্ট করা হয়, তেমনিভাবে সেই পোস্টটিকেও প্রচার করার জন্য আপনাকে ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলেতো সেই পোস্টের ব্যাপারে কেউ জানতে পারবেনা। যতবেশি মিডিয়াতে আপনি পোস্টটিকে প্রচার করতে পারবেন, ততবেশি আপনার পণ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে। সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, গেস্ট ব্লগিং সাইট, ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে পোস্টটিকে প্রচার করতে পারবেন। তাছাড়া আপনার ব্লগটিকে অবশ্যই আপনার মুল ওয়েবসাইটের নেভিগেশনে ব্লগ নামে একটি লিংক তৈরি করে সেটির মাধ্যমে যুক্ত করতে পারেন।
১০. ব্লগপোস্টটি সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করা হয়নি
ব্লগের সফলতা নির্ভর করে নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড দিয়ে গুগল থেকে সার্চের মাধ্যমে আসা ভিজিটরের কারনে। ব্লগের পোস্ট এসইও নিয়ম অনুযায়ি সঠিকভাবে অপটিমাইজেশন করলেই সেটিকে গুগলে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ব্লগের পোষ্ট যদি গুগল রোবট index না করে তাহলে আপনার ব্লগ তার গ্রহন যোগ্যতা হারাবে। একটা জরিপে দেখা গেছে যে প্রায় প্রতিটা কম্পানি প্রায় ৪৫% ব্যাকলিঙ্ক পায় তাদের আর্টিকেল থেকে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে প্রতিটি পোস্টের লিংককেই আলাদাভাবে এসইও করতে হবে।
সবশেষে সংক্ষিপ্তভাবে বললে বলতে পারি, কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট বিরতিতে ব্লগে পোস্ট করুন। পোস্টগুলোকে অবশ্যই এসইও ফ্রেন্ডলি ভাবে তৈরি করুন। পোস্ট করা শেষে বিভিন্ন মিডিয়াতে সেগুলো শেয়ার করুন। ব্লগে অবশ্যই সোশ্যাল শেয়ার করার এবং ইমেইল সাবস্ক্রাইব করার মত সহজ ব্যবস্থা রাখুন। আশাকরি উপরের নিয়মঅনুযায়ি ব্লগটিকে সাজালে এবং ব্লগিং করলে সফল হবেনই। ব্যর্থ হওয়ার কারণ দেখিনা।
10 thoughts on "ব্লগে ভিজিটর কেন পাচ্ছেন না ? ব্লগে ভিজিটর আনার কয়েকটি অব্যর্থ উপায়।"