ভিওআইপি’র অসাধুরা এবার লেগেছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধনের বিরুদ্ধে। নিজেদের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হতে পারে এই আশঙ্কায় তারা বন্ধই করে দিতে চায় সিমকার্ড নিবন্ধন। একই ধরনের কাজে লিপ্ত হয়েছে জঙ্গিবাদের মদদদাতারাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ভিওআইপি ব্যবসার প্রভাবশালী মহলটি এখন নানা পথে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার পাশাপাশি বিভিন্ন গুজব চাউর করে দিয়েও নিবন্ধন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চাইছে। প্রাথমিকভাবে সিমকার্ড নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হলে এরই মধ্যে ভূয়া তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত ২০ লাখ সিম বন্ধ হয়ে গেছে।
আর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে এই সিমগুলোর অধিকাংশই অবৈধ আন্তর্জাতিক কল করার কাজে ব্যবহার করা হতো। এতে মাথায় হাত পড়েছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের। তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা এখন বন্ধ প্রায়। আর তাতেই ভিন্ন পথে এই চক্র এবার এমন সব উদ্যোগ নিচ্ছে যাতে সাধারণের মাঝে সিম নিবন্ধনে অনাগ্রহ তৈরি হয়। তারই অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে সংঘবদ্ধভাবে সিম নিবন্ধনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো। সে অসাধু কাজে অন্য অনেকের মতো এরাও বেছে নিয়েছে ফেসবুককে।
ফেসবুকে একটি অপপ্রচার চলছে সিমকার্ড নিবন্ধনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার নিয়ে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে নেওয়া হচ্ছে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট। অসাধু চক্রটি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে, পেজ ওপেন করে কিংবা আরও নানা পদ্ধতিতে বলছে, আঙ্গুলের ছাপ ও তথ্য নিয়ে বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে।
আর এই প্রচারণা মাত্রা এত বেশি ছড়িয়েছে যে তা অপেক্ষাকৃত স্বল্পশিক্ষিত, স্বল্পবোধের মানুষকে সহজেই প্রভাবিত করছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আগেই সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে বলেছেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন- বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধনে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রটি আসল কি-না কেবল সেটাই যাচাই করা হচ্ছে।
বায়োমেট্রিক যন্ত্রে গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ নথিভুক্ত করা বা সংরক্ষণের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। যন্ত্রটি সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত এবং সেখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। এর সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের সার্ভারের সংযোগ নেই। এবং তাদের কাছে কোনও তথ্য সংরক্ষিত হওয়ার সুযোগও নেই।
যেসব বায়োমেট্রিক যন্ত্র দিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র থেকে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে, তা কেবলই আঙুলের ছাপ ধারণ করতে পারে সংরক্ষণের কোনো সুযোগ নেই বলেই জানান তারানা হালিম।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদপত্রকে বলেন, সঠিকভাবে সিমকার্ড নিবন্ধন হলে অবৈধ আন্তর্জাতিক কল ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত তাদেরই বেশি সমস্যা হবে। সেই অপরাধী চক্র কিংবা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মদদেই এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তার কাছেও তথ্য এসেছে। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বানও জানান তারানা হালিম।
অসাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের হোতারাও এ ধরনের অপপ্রচারে সামিল বলেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগগুলো এরই মধ্যে এ বিষয়ে তাদের অনুসন্ধান শুরু করেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
জঙ্গিবাদে সম্পৃক্তরা নানা অবৈধ পথে নামে বেনামে মোবাইল ফোন সিম কিনে এতদিন যে সব তৎপরতা চালিয়ে আসছে, এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া তাতেও বাঁধ সেধেছে। ধারণা করা হচ্ছে অপপ্রচারের তাদেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
ফেসবুকে এই জঙ্গিবাদিদেরও সক্রিয় উপস্থিতি জানা গেছে। বেশ কিছু ইভেন্ট বা পেজে সিমকার্ড নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির বিরোধিতা করতে গিয়ে কৌশলে প্রচার চালানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের পক্ষে।
‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানাই’, ‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাই’ এমন নামে দুটি পেজ ব্যাপকভিত্তিক অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাতে নামে বেনামে, ছদ্মনামে রয়েছে নানা মন্তব্য ও উষ্কানিমূলক কথা।
এর মধ্যে দ্বিতীয় পেজটি খুলেছেন হিমু হাসিবুর রহমান আকাশ নামে একজন। এই পেজে বলা হয়েছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধনের ফলে বহুজাতিক মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশি নাগরিকের আঙুলের ছাপ চলে যাচ্ছে। তিনি কেবল অপপ্রচার করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, এই দাবিতে ৩১ মার্চ শাহবাগে সবাইকে সমবেত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
সংঘবদ্ধ এইসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অবশ্য ফেসবুকেই কথা উঠেছে। অনেকেই এসব পোস্ট বা পেজের ভেতরে তাদের আহ্বানকে সন্দেহের চোখে দেখে পাল্টা মন্তব্যে তাদের এগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের যেসব চক্র ও তৎপরতা ধরা পড়েছে তাদের কাছ থেকে অনেকগুলো করে মোবাইল ফোন সেট ও সিমকার্ড জব্দ করা হতো। জঙ্গি তৎপরতাসহ অন্যান্য অপরাধী তৎপরতায় মোবাইল ফোনের অপব্যবহার এই সিম নিবন্ধনে নিয়ন্ত্রিত হবে এমন প্রত্যাশা সকল মহলের। আর সে কারণে জঙ্গিবাদের হোতারা এর বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে বলেই মত সচেতন মহলের।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এরই মধ্যে কারা এসব পোস্ট দিচ্ছে তাদের সূত্র খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হয়েছে।