আইফোন বিক্রির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল অ্যাপল। গত প্রান্তিকে অ্যাপলের মোট লাভের ৬৮ শতাংশ এসেছে শুধু আইফোন বিক্রি থেকে। আইফোন ভক্তরা তাঁদের ব্র্যান্ডের প্রতি যথেষ্ট অনুগত হলেও বর্তমান হাই এন্ড বা ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলকে দারুণ প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে।

অতীত ইতিহাস বিবেচনায় ধরলে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাপলের নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন বাজারে আসতে পারে। প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নতুন এই আইফোন নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা গুঞ্জন। নতুন আইফোনকে বলা হতে পারে ‘আইফোন ৭’।
আইফোন ৭ স্মার্টফোনটিকে বাজারে টেক্কা দিতে প্রস্তুত স্যামসাং ও এলজি। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন স্মার্টফোন এস ৭ ও এলজির জি ৫ স্মার্টফোন দুটি এ বছরের জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড ফোন হিসেবে আইফোনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।
স্যামসাং এস সিরিজের নতুন স্মার্টফোন
গত বছরে বাজারে আসা গ্যালাক্সি এস ৬ স্মার্টফোনটি ছিল স্যামসাংয়ের সবচেয়ে যুগান্তকারী স্মার্টফোন। এস সিরিজের স্মার্টফোনে প্রচলিত প্লাস্টিক নকশা পরিবর্তন করে স্যামসাং এবারে ধাতব কাঠামো ও কাচ ব্যবহার করে আরও উন্নত স্মার্টফোন এনেছে। নতুন স্মার্টফোনে যুক্ত হয়েছে আরও উন্নত ডিসপ্লে ও দ্রুতগতির প্রসেসর। এস ৭ ও এস ৭ এজ নামে দুটি সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে। ৫.১ ইঞ্চি পর্দার এস ৭ এবং ৫.৭ ইঞ্চি পর্দার এস ৭ এজ অ্যান্ড্রয়েড মার্শমেলো অপারেটিং সিস্টেমে চলে। এস ৭ স্মার্টফোনটিতে ৩ হাজার মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি, ৪ গিগাবাইট র‍্যাম, ৩২ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ মেমোরি, ১২ মেগাপিক্সেল ব্যাক এবং ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা যোগ করা হয়েছে। গ্যালাক্সি এস ৬ স্মার্টফোনের চেয়ে এস ৭ স্মার্টফোনে ব্যাটারিতে চার্জ থাকবে বেশি। এস ৭ স্মার্টফোনে মেমোরি বাড়ানোর সুবিধা যুক্ত হয়েছে। মাইক্রোএসডি স্টোরেজ যুক্ত করা যাবে এস ৭ স্মার্টফোনে। এ ছাড়া এ ফোনটিকে পানিরোধী করে তৈরি করেছে স্যামসাং।

স্যামসাংয়ের এস ৬ এর চেয়ে এস ৭ স্মার্টফোনে দৃশ্যত খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও ফোনটিকে সহজে ধরার জন্য কিছুটা বাঁকা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফোনের ক্যামেরাটিও হয়েছে আরও উন্নত। ভালো ছবি তোলার জন্য ফোনের অ্যাপারচার ও মেগাপিক্সেল কমানো হয়েছে। একে বলা হচ্ছে ‘সুপার ফাস্ট’ ক্যামেরা। গ্যালাক্সি এস-৭ এজে সুপার অ্যামোলেড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ব্যবহারকারী তিন দিক দিয়ে পর্দা ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আছে ‘অলওয়েজ অন ডিসপ্লে’ নামে নতুন সুবিধা। ফলে স্ট্যান্ডবাই মোডে রেখেই নোটিফিকেশন, সময় কিংবা ক্যালেন্ডার দেখা যাবে। এ ছাড়া ফোনটি গিয়ার ভিআর হেডসেট সমর্থন করবে। স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারি নতুন স্মার্টফোন গ্যালাক্সি এস-৭ ও এস-৭ এজের ঘোষণা দিয়েছে স্যামসাং। সম্প্রতি ফোনটি ঢাকায় দেখানো হয়। এ ফোন দেশের বাজারে ছাড়া হবে আগামী ১৮ মার্চ। বাংলাদেশে শুধু এস ৭ এজ বিক্রি করবে স্যামসাং মোবাইল বাংলাদেশ। দাম ৭৯ হাজার ৯০০ টাকা।
এলজির মডুলার ফোন

বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন ব্যবসা চাপের মুখে পড়েছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে স্মার্টফোন বিক্রিতে শীর্ষে ছিল স্যামসাং। কিন্তু এলজি সেরা পাঁচে জায়গা করে নিতে পারেনি। ২০১৬ সালে বাজারে নিজেদের স্থান শক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যান্ড্রয়েড মার্শমেলো অপারেটিং সিস্টেমচালিত ধাতব কাঠামোর স্মার্টফোনটিতে ৫.৩ ইঞ্চি কোয়াড এইচডি পর্দা, ৪ গিগাবাইট র‍্যাম, ৩২ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ মেমোরি এবং ২৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি আছে। ১৬ মেগাপিক্সেল ব্যাক ক্যামেরা এবং ৮ মেগাপিক্সেল সামনের ক্যামেরা আছে। অতিরিক্ত মেমোরি কার্ড যোগ করার সুযোগ আছে স্মার্টফোনটিতে।
এলজির নতুন স্মার্টফোনের নিচের বেজেলটি পরিবর্তনযোগ্য এবং তাতে বিভিন্ন মডিউল যুক্ত করে স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায়। অর্থাৎ, এলজির এই ফোনটি মডুলার ফোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পিসিতে যেভাবে যন্ত্রাংশ হালনাগাদ করা যায়, স্মার্টফোনেও এখন থেকে যন্ত্রাংশ হালনাগাদ করা যাবে। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে মডুলার স্মার্টফোনের ঘোষণা দেয় এলজি। ফোনটিতে বিশেষ ফিচার হিসেবে রয়েছে বিঅ্যান্ডও সাউন্ড সিস্টেম ও ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স।
এলজি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, মডুলার ফোন তৈরির পেছনে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মডুলার স্মার্টফোন তৈরির লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের মোবাইল ফোনের নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের সুযোগ ব্যবহারকারীর হাতে দেওয়া। ফোনের নিচের অংশ খুলে নতুন হার্ডওয়্যার এর সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। ৫ দশমিক ৩ ইঞ্চি মাপের অলওয়েজ অন ডিসপ্লের ফোনটিতে রয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ প্রসেসর। এই ফোনটি ডিজিটাল ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহারের সুযোগও রেখেছে এলজি।
তিন ফোনের লড়াই

One thought on "তিন ফোনের লড়াই"

Leave a Reply