খুব ব্যস্ত একটা জায়গা ইন্টারনেট। প্রতিটা সেকেন্ডে ৬ হাজার টুইট, ৪০ হাজার গুগল সার্চ এবং ২০ লাখের বেশি ইমেইল চালাচালি হয়ে থাকে। কিন্তু এই পরিসংখ্যান ইন্টারনেটের বিশাল আকার সম্পর্কে ধারণা দেয়। ইন্টারনেট কি আসলেই এত বড় একটা প্লাটফর্ম?

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বের এক হিসাবে বলা হয়, গোটা বিশ্বে ১০০ কোটি ওয়েবসাইট রয়েছে। তবে এসব সংখ্যা প্রতি মুহূর্তে বদলে যায়। কোন একটি সাইটের মৃত্যু ঘটছে, আবার নতুন একটা তৈরি হচ্ছে। এসব আনাগোনার মধ্যে ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে ‘ডিপ ওয়েব’ ধারণা। আর এ অংশটি গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে নেই। ডিপ ওয়েবে যা থাকে তা অন্যের জন্যে ক্ষতিকর নাও হতে পারে। আবার এতে গোপন এবং কালোবাজারের জিনিসপত্র থাকে যা বিশেষায়িত টর সফটওয়্যার দিয়েই দেখা যায়।

ডিপ ওয়েব ছাড়া বাকি অংশটাকে ইন্টারনেটের উপরিতল বলেন অনেকে। এই অংশে ক্রমাগত পরিবর্তনের কারণেই ইন্টারনেটের বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না।

www.worldwidewebsize.com নামের সাইটটি ইন্টারনেটে সার্চের সংখ্যা বের করার প্রয়াস চালায়। ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ মরিস ডি কুন্ডার এবং তার সহকর্মীরা এ বিষয়ে তাদের একটি পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটান। তারা ৫০টি সাধারণ শব্দ বের করেন যার প্রয়োগে গুগল ও বিং-এ অধিকাংশ সার্চ ঘটে থাকে। এই শব্দের প্রয়োগে সার্চ করা যায় এমন ওয়েব সাইটের সংখ্যা বের করার একটি পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন তারা। এর মাধ্যমে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ ৪.৬৬ বিলিয়ন ওয়েব পেজ রয়েছে অনলাইনে।

এখন প্রশ্ন হলো, ইন্টারনেটে কত তথ্য রয়েছে? এর জবাব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক মার্টিন হিলবার্ট। তিনি বলেন, ইন্টারনে তথ্য ধারণ করে, যোগাযোগের ব্যবস্থা করে এবং তা গণনা করে। ইন্টারনেটের ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করা যেতে পারে কতটা তথ্য আদান-প্রদান হয় তার মাধ্যমে। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতটা তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ হিসাব।

২০১৪ সালের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ইন্টারনেটের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১০ লাখ এক্সাবাইট। এক এক্সবাইট সমান ১ বিলিয়ন বিলিয়ন বাইট। ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পূর্বপাঠ

সিসকোস ভিজ্যুয়াল নেটওয়ার্কিং ইনডেক্সে বলা হয়, বর্তমানে ইন্টারনেট জেটাবাইট যুগে অবস্থান করছে। এক জেটাবাইট সমান ১০০০ এক্সাবাইট। ২০১৬ সালের শেষ থেকে গ্লোবাল ইন্টারনেট ট্রাফিক প্রতিবছর ১.১ জেটাবইট করে বাড়তে থাকবে। এক জেটাবাইট সমান ৩৬ হাজার বছর সময়ের হাই-ডেফিনিশন ভিডিও-এর সমান।

image_172123.c81f772e265991de09ad69a5a6dfb071

২০১২ সালে এক হ্যাকার ইন্টারনেটের আকার পরিমাপের জন্য আইপি অ্যাড্রেসের সংখ্যা গণনা করেন। আইপি হলো ইন্টারনেট প্রোটোকলস। এগুলো ডেটা প্রবাহের পথ হিসাবে কাজ করে। পৃথিবীর অন্তত একটি যন্ত্রের একটি আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। এই হিসাবে ওই হ্যাকার দেখেছেন, পৃথিবীতে ১.৩ বিলিয়ন আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে।

যদি এত সব বাইটের হিসাবে মাথা গুলিয়ে যায়, তবে সমস্যা নেই। ২০১৫ সালে ইন্টারনেটের আকারের শারীরিক আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। জার্নাল অব ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স টপিকস-এ বলা হয়, ধরে নেওয়া হয় যে, একটি ওয়েব পেজকে প্রিন্ট করলে গড়ে ৩৩টি করে এ ফোর সাইজের কাগজ লাগবে যার আকার ৮.২৭x১১.৬৯ ইঞ্চি। সে হিসাবে গোটা ইন্টরনেটকে প্রিন্ট করলে ৩০৫.৫ বিলিয়ন এ ফোর সাইজ কাগজ লাগবে।

২০১১ সালে বিশেষজ্ঞ হিলবার্ট এবং তার সহকর্মীরা গোটা ইন্টারনেটের তথ্যের হিসাব তুলে ধরতে বলেন, বিশ্বের অ্যানালগ এবং ডিজিটাল স্টোরেজ ২৯৫ এক্সাবাইট। একে সিডি রমে ধারণ করতে গেলে যতগুলো সিডি লাগবে তা পাশাপাশি রাখলে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ মাইল পথ অতিক্রম করবে।

গবেষকরা বলেন, ইন্টারনেটের স্টোরেজ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী তথ্য রাখা হচ্ছে ন। প্রতি তিন বছর অন্তর ইন্টারনেটের স্টোরেজ বাড়ছে দ্বিগুণ হারে। তবে খুব শিগগিরই বর্তমান তথ্য যুগ জ্ঞানের যুগে প্রবেশ করবে।

সূত্র : লাইভ সায়েন্স।

logo

Leave a Reply