উত্তর আমেরিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া অঞ্চল থেকে দেখা যাবে এ অত্যাশ্চর্য দৃশ্য। চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা ৫১ মিনিটে, চলবে রাত ১০টা ৮ মিনিট পর্যন্ত। তবে বাংলাদেশ থেকে এ চন্দ্রগ্রহণ দেখতে হলে আকাশে চাঁদ ওঠা পর্যন্ত, অর্থাৎ সন্ধ্যারাত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, একই মাসে দু’বার পূর্ণিমার চাঁদ দেখা গেলে দ্বিতীয় পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় ব্লু-মুন। নামে ‘নীল চাঁদ’ হলেও নীল রঙের সঙ্গে এ চাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এসময় চাঁদকে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল দেখাবে বলে এ চাঁদকে বলা হচ্ছে ‘সুপার মুন’। চন্দ্রগ্রহণের সময় একই সঙ্গে দেখা যাবে ‘ব্লাড মুন’ও। পৃথিবীর ছায়ায় অবস্থানের কারণে চাঁদ রক্তিম বা রক্তরঙা হয়ে ওঠে।
‘তারপর তুমি এলে, মাঠের শিয়রে-চাঁদ;…একদিন হয়েছে যা—তারপর হাতছাড়া হ’য়ে হারায়ে ফুরায়ে গেছে—আজো তুমি তার স্বাদ ল’য়ে আর-একবার তবু দাঁড়ায়েছো এসে!’ বলেছিলেন জীবনানন্দ দাশ ‘কার্তিক মাঠের চাঁদ’কে উদ্দেশ করে।
কবিতার এই চাঁদের মতোই দেড় শ বছর আগে ‘হারিয়ে’ যাওয়া এক চাঁদ আগামীকাল আমাদের জানালায় দাঁড়াবে, মাঘী পূর্ণিমার রাতে।
এর নাম ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’। ‘তিন’ রকমের চাঁদ—ব্লাড মুন, ব্লু মুন, সুপারমুন নিয়ে গ্রহণ বলেই এমন নাম। বাংলাদেশ থেকেও সন্ধ্যায় পূর্ব দিগন্তে দেখা যাবে এই রক্তলাল চাঁদ।
বিভিন্ন সংগঠন টেলিস্কোপে এই চাঁদ দেখানোর জন্য নিয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। আগারগাঁও, উত্তরা, পূর্বাচল, কুয়াকাটাসহ নানা জায়গায় তারা স্থাপন করছে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প। সর্বশেষ ১৫২ বছর আগে ১৮৬৬ সালে এমন বিরল দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু সুপারমুনে গ্রহণ হচ্ছে, তার লাল রং দেখাবে বেশি উজ্জ্বল। এই ‘ব্লাড মুন’কে অনেকে তাম্রচাঁদও বলছে। কারণ আকাশ পরিষ্কার থাকা সাপেক্ষে চাঁদের রং উজ্জ্বল লাল থেকে তামাটে রং হতে পারে।
যে পূর্ণ চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে তাকে বলে সুপারমুন। নাসার হিসাবে, সাধারণ পূর্ণিমার চাঁদ যত বড় হয় তার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি বড় দেখায় সুপারমুনকে, পৃথিবীর কাছে চলে আসে বলে। ফলে এই চাঁদ জোছনা দেয় ৩০ শতাংশ বেশি। সুপারমুনের সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণ বেশি দুর্লভ নয়। যে কারণে এবার ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’-এর ফিরে আসায় দেড় শতাধিক বছর লেগেছে সেটা হচ্ছে ‘ব্লু মুন’। নীল চাঁদ গুণেমানে সাধারণ চাঁদই। হঠাৎ এক মাসে দ্বিতীয়বার পূর্ণিমা হলে সেই চাঁদকে বলে ‘নীল চাঁদ’। মাসের দ্বিতীয় চাঁদটি সুপারমুন হওয়া, আবার সেই সুপারমুনে গ্রহণ লাগা সৌরঅঙ্কে সহজ নয়! এ কারণেই ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’ ফিরে আসতে দেড় শ বছর নিয়েছে।
কখন দেখা যাবে : ঢাকার সময় আজ বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। দিগন্তের কাছে চাঁদ লাল বর্ণ ধারণ করবে। তাই শুধু বিস্তৃত উন্মুক্ত স্থান থেকেই দেখা যাবে। ৬টা ৫১ মিনিটে পূর্ণ গ্রহণ শুরু হবে, চাঁদও উজ্জ্বল লাল দেখাবে। ৭টা ২৯ মিনিটে চাঁদের পূর্ণগ্রাস হয়ে যাবে। পৃথিবীর পুরো ছায়ায় ঢেকে গেছে চাঁদ। ৮টা ৭ মিনিটে পূর্ণ গ্রহণ সমাপ্ত হবে। ৯টা ১১ মিনিটে আংশিক গ্রহণ শেষ হবে। ১০টা ৮ মিনিটে চাঁদের পাশের উপচ্ছায়াও সরে যাবে।
টেলিস্কোপে দেখুন : আকাশ কুয়াশামুক্ত থাকলে ছাদ বা মাঠ থেকে এ গ্রহণ দেখা যাবে, চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখায় কোনো ঝুঁকিও নেই। তবে যারা টেলিস্কোপে আরো ভালো করে দেখতে চায় তাদের জন্য রয়েছে অনেক উদ্যোগ। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তাদের মানমন্দিরে এবং কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পৃথক ক্যাম্প খুলছে। বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিত্সু চক্র রাজধানীর মাণ্ডায় গ্রিন মডেল টাউনে পর্যবেক্ষণকেন্দ্র খুলবে। এই ক্যাম্প থেকে ছবি ও বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। রাজশাহী, বরিশাল, পঞ্চগড় ও ঝিনাইদহ জেলায়ও তারা ক্যাম্পের ব্যবস্থা করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটি রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলের স্বর্ণালি আবাসিক এলাকার ল্যাবএইডের প্রজেক্ট মাঠে পর্যবেক্ষণের আয়োজন করছে।
এদিকে উত্তরার দিয়াবাড়ীর ফ্যান্টাসি আইল্যান্ডে ক্যাম্পের আয়োজন করছে আজাদ টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সহযোগী হিসেবে থাকছে ইকোট্যুরিজম নেচার স্টাডি অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। আজাদ টেকনোলজির মূল কর্ণধার শাফায়াত আজাদ গত সোমবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ১০টা ৮ মিনিট পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি পরিচালনা করবেন। দর্শনার্থীদের জন্য ছয় ইঞ্চি এবং তিন ইঞ্চি ডায়ামিটারের দুটি টেলিস্কোপ থাকবে। এ ছাড়া অনেকে টেলিস্কোপ নিয়ে আসবে একসঙ্গে দেখতে। আজাদ জানান, দিয়াবাড়ী পার্কটি সন্ধ্যা ৬টা থেকে খুলে দেওয়া হবে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে। টিকিট ছাড়া ঢোকা যাবে। শিশুদের দেখার স্বার্থে কিছু রাইডও সচল রাখবে পার্ক কর্তৃপক্ষ। টিকিট কেটে দেখা যাবে।
আজ সুপার ব্লু ব্লাড মুন নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে শুরু হয়ে এশিয়া ছাড়িয়ে উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল থেকেও কমবেশি দেখা যাবে।
সৌরবর্ষপঞ্জিতে ১২ চান্দ্রমাস থাকে। মাস গড়ে ২৯.৫ দিনের হয়। চান্দ্রমাস কেবল ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে বলে প্রতিবছরই গড়ে ১১ দিনের মতো কম হয়ে থাকে। গড়ে প্রতি ২ দশমিক ৭ বছর সৌরবর্ষপঞ্জিতে এক মাসে দুটি পূর্ণিমা এবং প্রতি ১৯ বছরে সাতবার দেখা পাওয়া যায় ব্লু মুনের। সাধারণত ১৯ বছর পর বছরে দুইবার ব্লু মুনের দেখা পাওয়া যায়। এর আগে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে ব্লু মুনের সাক্ষাৎ মিলেছিল। আজ ৩১ জানুয়ারি পূর্ণিমা পড়ছে এবং ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন যাবে বলে শেষ হবে পূর্ণচন্দ্র ছাড়াই। ফলে আগামী মার্চ মাসেও দুইবার পূর্ণিমা দেখা যাবে, পাওয়া যাবে একটি ব্লু মুন। এরপর একই বছরে দুইবার ব্লু মুন দেখা যাবে ২০৩৭ সালে।
[সুত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]
তাহলেই নীতিমালা সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।
আর হ্যাঁ,
পোষ্টে রিওয়ার্ড এড হলে বাতিল করা হবে।
শুধুমাত্র জেনুইন পোষ্ট হলেই রিওয়ার্ড দেয়া হবে
je ai moon dekte pari nai?????