জিপিএস আধুনিক যুগের জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো প্রযুক্তি গুলোর ভিতর অন্যতম। আমরা সবাই কমবেশি জিপিএসের সাথে পরিচিত। মনে করুন, আপনি একদম অচেনা কোন জায়গায় ভুলে চলে এসেছেন।আপনি কোথায় আছে,কিভাবে বাড়ি পৌছাবেন এসব জিজ্ঞেস করার মতো বিশ্বস্ত কাউকে পাচ্ছেন না।কারণ অপরিচিত জায়গায় অনেককেই হেনস্তা হতে হয়।
এ ক্ষেত্রে জি,পি,এস আপনার জন্য আলা-দীনের প্রদীপ প্রদীপ স্বরূপ!
জি,পি,এস ট্রাকিং এর মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার লোকেশন এবং সঠিক জায়গা মতো পৌছে যাবার পথ বের করতে পারবেন।
আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক জি,পি,এস ট্রাকিং এর ব্যাপারে:
জিপিএস কি? এবং এর ইতিহাসঃ
জি,পি,এস হলো ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন একটি বিশেষ ধরণের প্রযুক্তি যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ইত্যাদির ন্যাভিগেশন ইউনিট এর মাধ্যমে নিজের অবস্থান এর খোঁজ অনেক সহজেই করা বা পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ইন্টারনেটের মতো জি,পি,এস’র্ও উদ্ভব ঘটায়। মূলত সত্তর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জি,পি,এস’র উদ্ভব ঘটায়। ইতিহাস ঘেটে যতদুর জানা যায়,ইউ,এস মিলিটারি’রা নিজস্ব প্রয়োজনে জি,পি,এস প্রযুক্তির প্রাথমিক কাজ শুরু করে ১৯৭৭ সালে। যদিও প্রথম দিকে শুধু মাত্র সামরিক কাজ ব্যাবহৃত হতো। পরবর্তিতে এটি জনসাধারণের জন্য এর ব্যবহার উন্মুক্ত করা হয় । ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই জি,পি,এস নেটওয়ার্ক’টিকে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সর্বজনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ততদিনে এই নেট্ওয়ার্ক যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে গেছে।
জিপিএস কীভাবে কাজ করে?
জিপিএস (gps) নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত ২৭ টি স্যাটেলাইট এবং জি,পি,এস রিসিভারের মাধ্যমে। যার মধ্যে ২৪ টি এক্টিভ এবং ৩ টি রিজার্ভ। এই ২৭ টি রিসিভার্ই মূলত এর মূল অংশ।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কিলোমিটার উপরে ৬টি অরবিটে ২৪টি স্যাটেলাইট আছে। যেগুলো পৃথিবীর চারিদিকে ২৪ ঘন্টায় দুইবার করে ঘুরছে।
অরবিটগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে যে কোন সময় কমপক্ষে তিনটি বা চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হয়।
স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত দুধরনের সংকেত প্রেরণ করছে L 1 ও L 2।
এই সংকেতগুলো আসে আলোর গতিতে অর্থাৎ ৩০০,০০০ কিলোমিটার পার সেকেন্ড গতিতে। এবং প্রতিটি সংকেতে Sending time লেখা থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এই সংকেত গুলো গ্রহন করে কিভাবে?
এই সংকেত গুলো গ্রহন এবং প্রক্রিয়া করণ করে জিপিএস রিসিভারের মাধ্যমে।
জিপিএস রিসিভার’এ আসা সংকেতটির রিসিভিং টাইম থেকে সেন্ডিং টাইম বিয়োগ করে রানটাইম বের করে।
রানটাইম দিয়ে ৩০০০০০ কে গুণ করলে রিসিভার থেকে স্যাটেলাইটটির দুরত্ব বের হয়। এভাবে চারটি স্যাটেলাইটের দূরত্ব বের করে রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইটের পজিশনকে কেন্দ্রবিন্দু করে, প্রতিটির দূরত্বকে ব্যাসার্ধ ধরে চারটি ত্রিমাত্রিক বৃত্ত অঙ্কন করে।
তারপর বৃত্তগুলোর Intersection point দিয়ে 3-D ট্রাইল্যাটেরেশন ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে পজিশন নির্ণয় করে।
বুঝতে সমস্যা? আসুন সহজ ভাবে আলোচনা করা যাকঃ
ধরুন আপনার মোবাইল বা পি,সি তে জিপিএস রিসিভার লাগানো আছে। এই রিসিভার আপনার প্রয়োজনে স্যাটেলাইটের সাথে যথা সম্ভব সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবে।প্রত্যেকটি স্যাটালাইটে একটি অ্যাটমিক ক্লোক লাগানো থাকে।
রিসিভার স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত pseudo-random code কে synchronize করে নিজের ঘড়িকে আপ-টু-ডেট করে নেয়, অর্থাৎ স্যাটেলাইট ও রিসিভার উভয়ের ঘড়ির কারেন্ট টাইম একই হয়ে যায়।
জি,পি,এস রিসিভার যত বেশি স্যাটেলাইটের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে এটি আপনার ব্যাপারে ততো বেশি তথ্য দিতে পারবে। যখন আপনার মোবাইল কিংবা জি,পি,এস ইউনিট অন্তত ৩ টি স্যাটালাইট এর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সফল হয়ে যাবে তখন এটি সহজেই আপনার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়ে যাবে। অনেকটা এরকম, “আমি জনাব ‘ক’” “আমার অবস্থান ‘খ’” এবং “এই তথ্য প্রেরণের সময় ‘গ”।
জিপিএস সফটওয়্যার বা জিপিএস ম্যাপ’এ রাস্তাঘাট, পেট্রোল পাম্প, পুলিশ স্টেশন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পর্যটন স্থান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইত্যাদির তথ্য থাকে। যখন জিপিএস অন থাকে তখন এটি কারেন্ট পজিশনের আশেপাশে উল্লিখিত কোন কিছু থাকলে জিপিএস ডিভাইসের ডিসপ্লেতে তা প্রদর্শন করে। এবং প্রতিনিয়ত ও ক্রমাগত ভাবে সিগনাল গ্রহন করতে থাকে।
এছাড়াও জিপিএস- গাড়ি,জাহাজ,প্লেন,বড় বড় শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে,যুদ্ধক্ষেত্রে কোন বিশেষ স্থানের উপর নজর রাখতে প্রভৃতি কাজে ব্যাবহৃত হয়। অনেক সময় পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগ জি,পি,এস সিস্টেম ব্যাবহার করে খুব সহযেই আসামী কিংবা কোন ভিকটিমের উপর নজর রাখতে পারে এবং তাদের গতিবিধি সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
জিপিএস’র আরেকটি সহযোগি হলো, এ-জিপিএস। এ-জিপিএস মূলত অ্যাসিসটেড জিপিএস এর সংক্ষিপ্ত রুপ (A GPS+ Assisted GPS)। এই প্রযুক্তি যেসব ডিভাইসে রয়েছে সেসব ডিভাইসের জিপিএস দ্রুত অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। এই কাজের জন্য প্রযুক্তিটি মোবাইল নেটওয়ার্কের সাহায্য নেয়া। মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান জেনে জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো সহজেই ডিভাইসের সম্ভাব্য অবস্থান নির্ণয় করতে পারবে। অর্থাৎ আপনার ফোন যখন জিপিএস সিগন্যাল অনুসন্ধান করে তখন এ-জিপিএস আপনার মোবাইল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে শুধু সেই স্যাটালাইট গুলোকে নির্ধারণ করে যেগুলো আপনার অবস্থানের আশেপাশে থাকে।
গ্লোনাস কি?
বিশ্ব যুদ্ধ থেকে শুরু করে এখন অবধি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন বা রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে প্রতিদন্দিতা লক্ষিয়মাণ! আমরা আগেই জেনেছি, জিপিএস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী। রাশিয়া এই ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র কে পাল্লা দিতে জিপিএস এর বিকল্প এক প্রযুক্তি তৈরী করেছে সেটাই হলো মূলত, গ্লোনাস। এটি মূলত global navigation satellite system. এটিকে Galileo বলাও হয়। এটি ২০১৩ সালে চালু করা হয়। গ্লোনাস নামে রাশিয়ার নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম আছে যেখানে মহাশূন্য গবেষণা ও সামরিক কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তবে এই প্রযুক্তি এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
তবে উল্লেখ্য,চীনও Beidou-2 নামে তাদের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম তৈরির প্রজেক্ট এ কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাতে জিপিএসের অংশগুলি
এটি তিনটি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত হতে পারে যা নিম্নরূপ:
স্পেস বিভাগ: উপগ্রহগুলিকে বোঝায় । ছয়টি অরবিটাল প্লেনে প্রায় 24 টি উপগ্রহ বিতরণ করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ বিভাগ: এটি উপগ্রহ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের জন্য পৃথিবীতে অবস্থিত স্টেশনগুলিকে বোঝায়।
ব্যবহারকারী বিভাগ: এটি অবস্থান এবং সময় গণনার জন্য জিপিএস উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত নেভিগেশন সংকেতগুলিকে প্রক্রিয়াজাতকারীদের বোঝায়।
পরিশিষ্টঃ
যুগের পরিবর্তনে জিপিএস সিস্টেমের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। আমরা আমাদের প্রয়োজনে এই প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করে চলেছি। এবং অনেক উপকার পাচ্ছি।
জিপিএস হোক বা গ্লোনাস হোক, দুটির উদ্দেশ্য কিন্তু এক্ই! তাই আমরা এই দুটি প্রযুক্তি’কে প্রতিদ্বন্দী না ভেবে নিজেদের প্রয়োজনে উভয় প্রযুক্তি’কেই ব্যাবহার করতে পারি। এতে আমরাই লাভবান হব।
আর্টিক্যাল টা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি,নতুন কিছু জানতে পেরেছেন। এই ব্লগ এবং পোষ্ট সম্পর্কে আমাদের’কে মতামত জানান। এবং নতুন কিছু জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ভাল থাকবেন।
স্মার্টফোনের জন্যে ভালো চার্জার সনাক্ত করবার কিছু টিপস
Source:Shadesinews.Com
Link: https://www.facebook.com/1682458958749221/posts/2096398724021907 (2018)
https://www.shadesinews.com/জিপিএস-ট্রাকিং-কিজিপিএস/
ar apni je source diyechen se source ar 2 year age same content facebook a akti page a tar mane clear je apnar source o copybazz ar ta chara apnar source site kono popular site na je tara copy korte pare na
amniteo apnar source kono boro news site to na jara copy korte pare na
Arekta kotha: nijer chulkani onner upor na mitiye ektu nijer dike dekhun. Manush ke ki ki shikiyechen . Asa kori bujhte parsen..
adminer theke permission niye copy korechi naki churi kore merechis setao tor bapar kintu post korar somoy post ar moddhe source dis ni akhon seta ki tor bap diye jabe
ai karonei ami comment korechi asa kori tor chotto mathai dhukeche