শবে কদরের যাবতীয় কাজের ইঙ্গিত দিয়ে এ রাতের অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘হা-মিম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪) কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করতে থাকে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মাজহারি)
লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়, এমনকি এ বছর কে হজ করবে, তা-ও লিখে দেওয়া হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী চারজন প্রধান ফেরেশতাকে এসব কাজে সোপর্দ করা হয়। যথাক্রমে তাঁরা হলেন হজরত ইসরাফিল (আ.), হজরত মিকাইল (আ.), হজরত আজরাইল (আ.) ও হজরত জিবরাইল (আ.)। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন)
সহস্র মাস ইবাদতে যে সওয়াব হয়, কদরের এক রাতের ইবাদত তার চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের অপার মহিমা ও ফজিলতময় রাতে মুমিন মুসলমানদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। এ রাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করা যায়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার আগে করা সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন।’ অন্য হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে আত্মসমর্পিত হূদয় নিয়ে ইবাদতে কাটাবে, আল্লাহ তার ইজ্জত ও মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।’
লাইলাতুল কদরে যে বা যারা আল্লাহর আরাধনায় মুহ্যমান থাকবে, তার ওপর থেকে দোজখের আগুন হারাম করে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সমস্ত রজনী আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা এ বরকতময় রজনীতে বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকো।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকিত পেতে চাইলে কদরের রাত জেগে ইবাদতে কাটিয়ে দাও।’ আল্লাহর অশেষ রহমতে আবৃত এ রাত্রি যাতে বৃথা না যায় সে জন্য ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল এবং অন্তরের আকুতিভরা প্রার্থনার মাধ্যমে রাহমানুর রাহিমের অসীম করুণা ও ক্ষমা ভিক্ষা করা বান্দার জন্য খুবই জরুরি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (বুখারি ও মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন, ‘মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর সন্ধান করো।’ (বুখারি) হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে দণ্ডায়মান হয়, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
লাইলাতুল কদর গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পুণ্যময় রজনী। এ রাত্রি বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। এ রাত হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে সুখ, শান্তি, ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনার এক অপূর্ব সুযোগ। এ রাতে অবতীর্ণ মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ পবিত্র কোরআনের অনুপম শিক্ষাই ইসলামের অনুসারীদের সার্বিক কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ দেখায়।
2 thoughts on "লাইলাতুল কদর এর ফজিলত"