২০১৫ সালটা আল আমিনের কাছে অম্লমধুর এক
বছর। গত বছর বাংলাদেশ দল উড়িয়েছে একের
পর এক সাফল্যের পতাকা, আর সেটা দূর থেকেই
দেখতে হয়েছে তাঁকে। হয়তো কখনো
কখনো বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাসও বেরিয়ে
এসেছে, ‘যদি থাকতে পারতাম দলে’!
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় ‘শৃঙ্খলা
ভঙ্গের’ অভিযোগে হঠাৎ বিশ্বকাপ শেষ হয়ে
গিয়েছিল আল আমিনের। সেই যে বাদ পড়লেন,
প্রায় পুরোটা বছর থাকতে হলো দলের বাইরে।
লম্বা এক বিরতির পর বাংলাদেশ দলে ফিরলেন গত
নভেম্বরে, জিম্বাবুয়ে সিরিজে। দারুণ বোলিংয়ে
বোঝালেন, কেন তাঁকে দলে দরকার।
গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিপিএলে দুরন্ত আল
আমিনকেই দেখা গেল। বরিশাল বুলসের হয়ে
সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষে সেই হ্যাটট্রিকটা
দর্শকদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে বহুদিন!
হ্যাটট্রিকটা করেছিলেন কাকে বোল্ড করে
মনে আছে? টেকনিকে দেশের অন্যতম
সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের মিডল স্টাম্প
আক্ষরিক অর্থেই ভেঙে দিয়েছিলেন! গতি
আর সুইংয়ের মিশেলে সেই ডেলিভারিটা বিশ্বের
সেরা ব্যাটসম্যানও খেলতে পারতেন কিনা
সন্দেহ!
এবার এশিয়া কাপেও স্বরূপে আল আমিন। ভারতের
বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট
এনে দিয়েছিলেন তিনিই। সেদিন ভারতীয়
ওপেনার শিখর ধাওয়ান তো আল আমিনের বলটা

বুঝতেই পারেননি। দলের সর্বোচ্চ ৩ উইকেট
পেলেও ম্যাচ শেষে মুখে হাসি ছিল না তাঁর, দল
যে হেরে গেছে! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও
আল আমিন দুর্দান্ত, পেলেন দলের সর্বোচ্চ ৩
উইকেট। হাসিটা অটুট রইল ম্যাচ শেষেও। কারণ,
দল পেয়েছে দারুণ জয়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে চনমনে আল আমিনকেই
পাওয়া গেল। পেলেন আবারও সর্বোচ্চ ৩
উইকেট। যখনই তাঁর হাতে বল তুলে দেওয়া
হয়েছে, নিয়মিত উইকেট শিকারে আস্থার প্রতিদান
দিয়েছেন অধিনায়কের। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে
আল আমিন নিয়েছেন ১০ উইকেট, বাংলাদেশের
পক্ষে তো বটেই, এশিয়া কাপের মূল পর্বে
খেলা দলগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।
টি-টোয়েন্টিতে তিনি কতটা ধারাবাহিক, এই
পরিসংখ্যানেই তার প্রমাণ মিলবে। ক্রিকেটের
ছোট সংস্করণে আল আমিনের অভিষেক ২০১৩
সালের নভেম্বরে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
আল আমিনের অভিষেকের পর বাংলাদেশ
যতগুলো টি-টোয়েন্টি খেলেছে, এর
মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। এ সময়ে
১৭টি টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৩০ উইকেট।
২০ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে এর পর সাকিব আল
হাসান।
নামের পাশে কতটি উইকেট যোগ হলো, এ
নিয়ে অবশ্য কোনো ভাবনা নেই আল
আমিনের, ‘আসলে কত উইকেট পেলাম, তা
নিয়ে ভাবি না। আমার কাছে উইকেট নেওয়ার
চেয়ে দলে অবদান রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। সব সময়ই
সেটাই করার চেষ্টা করি।’
আল আমিনের চ্যালেঞ্জ
চার বছর পর আবার বাংলাদেশ উঠল এশিয়া কাপের
ফাইনালে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ এশিয়া কাপের
ফাইনালে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমদের সেই
কান্না কি আল আমিনকেও স্পর্শ করেছিল?
জাতীয় দলে তখনো তাঁর আসা হয়নি। মিরপুর
একাডেমি ভবনে বসে দেখেছিলেন
কান্নাভেজা ফাইনাল। সেদিনের স্মৃতি মনে করে
বললেন, ‘অমন হারে কার না খারাপ লাগে। খুব
কষ্টই পেয়েছিলাম।’
সময় আল আমিনকে দাঁড় করিয়েছে নতুন
চ্যালেঞ্জের সামনে। এখন তিনি বাংলাদেশ
দলের সদস্য, মাশরাফি-মুশফিকদের সঙ্গে তিনিও
অধরা শিরোপা জয়ের সন্ধানে নামবেন
রোববারের ফাইনালে। ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল
নিয়ে অবশ্য তাঁকে খুব একটা রোমাঞ্চিত দেখাল
না। তবে ইতিহাস গড়ার স্বপ্নটা ঠিকই উঁকি দিচ্ছে
বাংলাদেশ দলের এই পেসারের মনে, ‘আর দশটা
ম্যাচের মতোই ভাবছি ফাইনালটা। যখন মাঠে নামি,
কিছুই মাথায় থাকে না। থাকে শুধু একটা জিনিস—ভালো
করতে হবে।’
এখন এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণী
মঞ্চেও দুরন্ত আল আমিনের দেখার
অপেক্ষায় সবাই।

Leave a Reply