আসসালামুয়ালাইকুম সুপ্রিয় পাঠক, ডিজিটাল যুগে ভাইরাস একটি বড় হুমকি। তাই মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে, ভাইরাস কি? ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়? ভাইরাস কত প্রকার এবং কি কি? আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় কি কি? ভাইরাস থেকে নিজের মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারকে বাঁচানোর উপায়।
আমরা অনেকেই জানি না ভাইরাস কি? এবং ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়। তাই আমরা ডিজিটাল জগতে অনেকাংশেই অনিরাপদ। ডিজিটাল এই দুনিয়ায় আমাদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই ভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকা উচিৎ। এছাড়াও ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় এবং এরসাথে সাথে ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়ও আমাদের জানতে হবে।
আজকের এই পোস্টটির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা। ভাইরাস কীভাবে ক্ষতি করতে পারে এ বিষয়ে জানানো। এছাড়া আলোচনা করা হবে কিভাবে আপনি ভাইরাস থেকে বাঁচাতে পারবেন এবং আপনার ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করবেন। আপনার তথ্য গুলোকে নিরাপদে রাখতে ভাইরাস থেকে মুক্ত লাভের উপায় জানা আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়বেন।
একটি কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের ম্যালওয়্যার ( ম্যালওয়ার অর্থ দূষিত বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার ) যা কার্যকর হলে অন্যান্য কম্পিউটার প্রোগ্রামিকে নিজের মতো করে পরিবর্তন করে এবং নিজস্ব কোড সেখানে কপি করতে পারে। যাতে পরবর্তীতে এটি অতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে সে ব্যবস্থা সয়ংক্রিয় ভাবে করে থাকে। বুঝতেই পারছেন কতটা ক্ষতিকর। আসুন ভাইরাস সম্পর্কে সহজে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। যেমন করোনা ভাইরাসের নাম তো সবাই জানেন। আরো জানেন এটা কতটা ক্ষতিকর ও মারাত্মক। করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় এ সম্পর্কেও সবাই জানি। এটাতো জীবদেহের ভাইরাসের একটি মাত্র উদাহরণ দিলাম। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন- কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদিতে ধরনের ছড়াই তা হচ্ছে মূলত এক ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম। জীবদেহের ভাইরাসের সাথে এই ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়ারের ছড়ানোর এবং ক্ষতি করার উপায় প্রায় একই ধরনের। কারণ কম্পিউটার ভাইরাস কেবল প্রোগ্রামের ভেতরেই ক্ষতিসাধন ও সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া এটি নিজের সংখ্যা ইচ্ছে মত বৃদ্ধি করতে পারে। এভাবে কম্পিউটারের যেকোনো ফাইল বা প্রোগ্রামকে করাপ্ট করতে পারে। আর যদি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে ভাইরাস আরো বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এমনকি নিজের সকল গোপন তথ্য গুলো যেমন ব্যাংক একাউন্ট, পাসওয়ার্ড, পিন , একাউন্ট নম্বর ইত্যাদি চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে। তাহলে ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় যদি সংক্ষেপে বলি। তবে কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত এক্সিকিউটেবল ফাইল যেমন .exe বা .dll ফাইলের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যখন সংক্রামিত ফাইলটি কার্যকর করা হয়, তখন ভাইরাস কোডটিও কার্যকর করা হয় এবং ভাইরাসটি কম্পিউটারে অন্যান্য এক্সিকিউটেবল ফাইলগুলিকে সংক্রামিত করে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাসগুলি নেটওয়ার্ক এবং অপসারণযোগ্য মিডিয়া যেমন USB ড্রাইভ এবং সিডির মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ভাইরাস একটি ইমেল সংযুক্তির সাথে সংযুক্ত হতে পারে, বা এটি একটি USB ড্রাইভে স্থাপন করা যেতে পারে যা তারপর অন্য কম্পিউটারে ঢোকানো হয়।
অতঃপর ভাইরাসের কারণে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ডিলেট বা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। আসুন আমরা আরো বিস্তারিত ভাইরাস সম্পর্কে জানি।
বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস রয়েছে, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিছু সাধারণ ধরনের ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে:
এই ভাইরাসগুলি নিজেকে এক্সিকিউটেবল(executable) ফাইলের সাথে সংযুক্ত করে এবং যখন সংক্রামিত ফাইলগুলি কার্যকর করা হয় তখন তাদের প্রতিলিপি(Copy) তৈরি করে।
এই ভাইরাসগুলি হার্ড ড্রাইভের বুট সেক্টরকে সংক্রমিত করে, যা কম্পিউটারকে সঠিকভাবে বুট করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
এই ভাইরাসগুলি ম্যাক্রোকে সংক্রামিত করে, যা ছোট প্রোগ্রাম যা নথি এবং অন্যান্য ফাইলগুলিতে এম্বেড করা যেতে পারে। যখন একটি ম্যাক্রো-সংক্রমিত ফাইল খোলা হয়, তখন ভাইরাস কোডটি কার্যকর করা হয়।
এই ভাইরাসগুলি একটি ওয়েব ব্রাউজারের সেটিংস পরিবর্তন করে, যেমন: হোমপেজ বা ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন।
এই ভাইরাসগুলি নিজেদেরকে বৈধ প্রোগ্রাম হিসাবে ছদ্মবেশ ধারণ করে, কিন্তু যখন সেগুলি কার্যকর করা হয়, তারা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে।
আমরা সাধারণ কিছু ভাইরাসের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলাম যেগুলো সচরাচর দেখা যায়। এথেকে আমরা জানতে পারলাম কোন ধরনের ভাইরাস কি রকমের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এবার আমাদের জানতে হবে, ভাইরাস আক্রান্ত হলে আমরা কিভাবে বুঝবো? ভাইরাস আক্রান্ত হলে যত দ্রুত উপলব্ধি করা যায় ততই ভালো।
কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস গুলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা এটা বোঝা খুবই জরুরি। কিছু লক্ষণ দেখা গছলেই আমরা বুঝতে পারবো যে তা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে আমরা খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবো। ভাইরাস আক্রান্ত হলে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বা কোন কাজ গুলো করতে হবে তা আলোচনা করার পূর্বে এর লক্ষণের ব্যাপারে আমাদের অবগত হতে হবে।
কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রমণের কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
একটি ভাইরাস সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করে বা ফাইলের ক্ষতি করে কম্পিউটারকে ধীর করে দিতে পারে। এ জন্য অনেক সময় দেখে থাকবেন আপনার কম্পিউটার আগের থেকে অনেক স্লো হয়ে গেছে। তাই স্লো হয়ে গেলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করতে পারেন যে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
একটি ভাইরাসের কারণে ফাইলগুলিকে দূষিত করে বা সিস্টেমে ওভারলোড করে কম্পিউটার ক্র্যাশ হতে পারে। তাই ইতিমধ্যেই অনেকেই কম্পিউটারে ক্রাশ পপ আপ বা নোটিফিকেশন দেখে থাকবেন। এটি মূলত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে।
একটি ভাইরাস বিজ্ঞাপন বা অন্যান্য ক্ষতিকারক সামগ্রী সহ পপ-আপ উইন্ডো প্রদর্শন করতে পারে। আপনিও হয়তো কখনো না কখনো এমন অপ্রত্যাশিত অ্যাড দেখে থাকবেন।
একটি ভাইরাস ফাইলগুলিকে ক্ষতি করতে বা মুছে ফেলতে পারে, যা ডেটা ক্ষতির কারণ হতে পারে বা প্রোগ্রামগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দিতে পারে। যা আমরা আগেই আলোচনা করেছি।
একটি ভাইরাস সিস্টেম সেটিংস পরিবর্তন করতে পারে, যেমন: ডিফল্ট নিরাপত্তা সেটিংস বা স্টার্টআপ প্রোগ্রাম। এটি ব্রাউজারের সেটিংস কীভাবে পরিবর্তন করে তা আমরা ভাইরাসের টাইপের ভেতর দেখেছি। সেটিং পরিবর্তন করে ভাইরাস আরো জোরদার আক্রমন করতে পারে।
এসব সাধারণ লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে ভাইরাস আপনার কম্পিউটারকে আক্রমন করেছে। এইবার তাদের প্রতিহত করার পালা। সবথেকে ভালো হয় যদি আগে থেকেই আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। ভাইরাস আক্রমণের পর প্রতিরোধের ব্যবস্থা করায় উত্তম। চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ভাইরাসের আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করার জন্য আপনি অনেকগুলি জিনিস করতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে:
অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ভাইরাস এবং অন্যান্য ম্যালওয়্যারগুলির জন্য আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করতে পারে এবং সেগুলিকে সরিয়ে দিতে পারে৷ তাই ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ ও নিশ্চিত উপায়।
ভাইরাসের নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসতে পারে , যা পুরাতন অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো ডিটেক্ট করতে পারে না। তাই অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো আপডেট রাখা ভালো। সফ্টওয়্যার ডেভেলপাররা প্রায়শই সিকিউরিটি আপডেটগুলির দূর্বলতা গুলো খুঁজে বের করে ফিক্স করে তাই সব সফটওয়্যার আপডেট রাখা উচিত।
অজানা প্রেরক বা আপনি বিশ্বাস করেন না এমন প্রেরকের কাছ থেকে পাওয়া ইমেল সংযুক্তি খুলবেন না৷ হতে পারে তারা কোনো ফিসিং লিঙ্ক পাঠিয়ে। আর না জেনে তাতে প্রবেশ করায় আপনার ডিভাইসটি হ্যাক হওয়ার এবং আপনার সেনসিটিভ তথ্যগুলো চুরি হওয়ার হুমকি থাকে।
এমন ওয়েবসাইটগুলি পরিদর্শন করা এড়িয়ে চলুন যা ক্ষতিকর বলে পরিচিত বা পাইরেটেড সফ্টওয়্যার বিতরণ করে৷ এধরনের ওয়েবসাইট আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন। কারণ এগুলো সাধারণ ওয়েবসাইটের থেকে একদম আলাদা।
আপনার সমস্ত অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
আপনি যদি মনে করেন আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে, তাহলে আপনাকে অবিলম্বে আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার দিয়ে একবার সম্পূর্ণ স্ক্যান করা উচিত। যদি অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার একটিও ভাইরাস খুঁজে পায়, তাহলে অবিলম্বে এটিকে অপসারণ করে ফেলুন ।
বর্তমানে এই ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হলে এই ক্ষতি কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজন। কারণ কখন কী রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি তা বলা যায় না। তবে আমরা বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস নিয়ে জানলাম। এছাড়াও জানলাম ভাইরাস কীভাবে আমাদের ডিভাইস গুলোর ক্ষতি করে। ভাইরাস থেকে প্রাথমিক ভাবে বাঁচার উপায়গুলোও আপনাদের সাথে তুলে ধরলাম এই পোস্টটিতে। আশা করি পোস্টটি আপনার জন্য অনেক হেল্পফুল হবে। আর পোস্টটি জনসচেতনতামূলক ছিল তাই সবার সাথে শেয়ার করুন যাতে তারাও উপকৃত হন।
You must be logged in to post a comment.
Translated
সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় পোস্ট করুন।
অন্যথায় ট্রেইনার পদ বাতিল হতে পারে।