দুজনের বোলিং অ্যাকশনই কাঠগড়ায়।
তবে হঠাৎ আসা ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়ে
তাসকিন আহমেদ যতটা সহানুভূতি পাচ্ছেন,
ততটা পাচ্ছেন না আরাফাত সানি।
বাঁহাতি এই স্পিনারের বোলিং অ্যাকশন
নিয়ে এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রশ্ন
উঠেছিল। অনেকেরই তাই শঙ্কা, সানির
অ্যাকশনে সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে।
কিন্তু তাসকিনের অ্যাকশনের বৈধতা
নিয়ে ওঠা প্রশ্ন মানতে পারছে না বেশির
ভাগ মানুষ। তাঁরা এতে খুঁজে পাচ্ছেন
ষড়যন্ত্রের গন্ধ। উত্থানের রোমাঞ্চকর
সময়ে এসব করে কেউ হয়তো পেছন থেকে
টেনে ধরতে চাইছে বাংলাদেশের
ক্রিকেটকে।
কাল দিনভর ক্রিকেটার, ক্রিকেট কোচ
থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ দর্শক-
সমর্থকদের মধ্যেও এই নিয়েই আলোচনা
চলেছে। ভারতীয় আম্পায়ার সুন্দরম রবি ও
অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকারের
সন্দেহকেই উল্টো সন্দেহের চোখে
দেখছে মানুষ। দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক
ক্রিকেট খেলছেন তাসকিন ও সানি। এত
দিন কেউ কিছু বলল না, এখন ভারতে গিয়ে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কিনা তাঁদের
অ্যাকশনে সমস্যা আবিষ্কার হলো!
এসব আলোচনার মধ্যেই সন্ধ্যায় এল
আইসিসির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা—তাসকিন
ও সানির বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক।
এই সন্দেহ দূর করতে সাত দিনেরsqqে
পরীক্ষা দিয়ে বৈধ বোলিং অ্যাকশনের
ছাড়পত্র নিতে হবে তাঁদের। আইসিসি

অনুমোদিত চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে
হবে পরীক্ষা। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত দুজনই
বোলিং করতে পারবেন।
সাধারণ্যে ‘ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব’ জনপ্রিয়তা
পেলেও তাসকিনের বোলিংকে শুরু
থেকেই দেখে আসা বিসিবির কোচরা
কিন্তু সংশয়মুক্ত নন। নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক এক কোচ জানালেন, ‘এবারের
এশিয়া কাপের সময়ও আমাদের মনে
হচ্ছিল, হাত ঘোরানোর সময় ওর কনুই
অনেকটা বেঁকে যাচ্ছে। ডেলিভারির
আগে হাত সোজা হয়ে পেছনে না গিয়ে
কোমরের কাছ থেকে পেছনে যাচ্ছে।
তখনই এক সিনিয়র কোচ আশঙ্কা করে
বলেছিলেন, তাসকিনের অ্যাকশন নিয়ে
যেকোনো সময় প্রশ্ন উঠবে।’ সানির
অ্যাকশন নিয়ে আরেক কোচ কোনো
রাখঢাক না রেখেই বললেন, ‘ওর ফেয়ার
ডেলিভারি যেমন আছে, নিজস্ব কিছু
আনফেয়ার ডেলিভারিও কিন্তু আছে…।’
বিসিবির ‘রাডারে’ তাসকিন প্রথম আসেন
অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট দিয়ে। বোলার
হিসেবে তখনো অপরিপক্ব। জাতীয় দলের
সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরান ওই সময়
থেকেই দেখছেন এই পেসারকে। নিজের
অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কাল
মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানালেন,
‘একেবারে শুরুর সময় ওর অ্যাকশনে সমস্যা
ছিল। ডেলিভারির সময় হাত বেঁকে যেত।
পরে বিসিবির পেস একাডেমিতে আমরা
সেটা সংশোধন করি।’ অবশ্য সরওয়ার
ইমরানের বিশ্বাস, নতুন করে সমস্যা হলেও
তাসকিনের কনুই এখন ১৫ ডিগ্রির বেশি
বাঁকা হচ্ছে না। চেন্নাইয়ের পরীক্ষায়
তিনি ভালোভাবেই উতরে যাবেন।
বিসিবির ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট
ম্যানেজার নাজমুল আবেদীনের জহুরি
চোখও সামান্য সমস্যা খুঁজে পেয়েছে
তাসকিনের অ্যাকশনে, ‘ফুল লেংথ
বলগুলোতে সমস্যা না থাকলেও যেসব
বলে ও বাড়তি কিছু করতে যায়, সেগুলোর
অ্যাকশনে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।’
তবে সরওয়ার ইমরানের মতো তাঁরও ধারণা,
সমস্যাটা বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়ার
মতো নয়।
২০১৪-এর অক্টোবরে চেন্নাইয়ের স্যার
রামাচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে
বাংলাদেশ দলের আরেক পেসার আল
আমিনকেও দিতে হয়েছিল বোলিং
অ্যাকশনের পরীক্ষা। তবে তাঁর অ্যাকশনে
সমস্যা ধরা পড়েনি। বিসিবির হয়ে
সেখানে আল আমিনের ‘অভিভাবক’ ছিলেন
নাজমুল আবেদীন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে
জানালেন, ‘ম্যাচে যেসব ডেলিভারিতে
আম্পায়াররা সমস্যা দেখেছেন, সেই
বিশেষ ডেলিভারিগুলোই পরীক্ষার সময়
করতে বলা হবে।’ সেই পরীক্ষায় তাসকিন
ভালোভাবেই পাস করবেন বলে এই
কোচের আশা। আল আমিনের মতো
চেন্নাই থেকে তিনিও ফিরবেন বৈধতার
সনদ নিয়ে।

Leave a Reply