৪৮ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫২ রান।
টি-টোয়েন্টিতে যেটি অনায়সেই হয়ে
যাওয়ার কথা। সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের
দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া বেঙ্গালুরুর
উইকেট তো ছিলই। কিন্তু এর পরই ম্যাচের
রং খানিকটা বদলে গেল। ১২ থেকে ১৮—৩৬
বলে হলো মাত্র ৩৩ রান। রবীন্দ্র
জাদেজা-রবিচন্দ্রন অশ্বিনের একেকটি
টার্ন, জসপ্রীত বুমরাহর ভয়ংকর ইয়র্কার
যেন মৃত্যুবাণ হয়ে ছুটে যাচ্ছিল
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের দিকে।
ভারতীয় বোলারদের সঙ্গে বাংলাদেশের
ব্যাটসম্যানদের খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ শেষে
সমীকরণ দাঁড়াল ৬ বলে ১১ রান। উইকেটে দুই
অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ-
মুশফিকুর রহিম। পান্ডিয়াকে দুই চার মেরে
ম্যাচটা প্রায় হাতের মুঠোয় নিয়ে
এসেছিলেন মুশফিক। এরপরই নাটক! পর পর দুই
ফুলটস বলে আউট মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ! ১
বলে দরকার ২ রান। হলো না। ১ রানের
হারের দুঃখ নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ।
এমন হারের পর ব্যাটসম্যানরা কে কী
করলেন, তা জানার আর কী আগ্রহ থাকে?
ব্যাটসম্যানদের রানগুলো যেন শুধুই
যন্ত্রণাদায়ক সংখ্যা। বলার মতো হলো
শুধু বোলারদের পারফরম্যান্সই। গত দুই
আইপিএলে বেঙ্গালুরুর উইকেটে প্রথমে
ব্যাটিং করা দলের গড় রান ১৮৯। এমন
ব্যাটিং-বান্ধব উইকেটেই ভারতকে কাল
১৫০-এর নিচে আটকে ফেলেছেন
বাংলাদেশের বোলাররা। ভারতের
রানরেট ৭.৩০, যেটি কিনা দুই দলের
মুখোমুখি লড়াইয়ে ধোনিদের সর্বনিম্ন।
ভাগ্যের এই খেলায় বারবার হেরে যাওয়া
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন
মুর্তজা অবশেষে ‘জয়ে’র দেখা পেয়েছেন!
এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ
ম্যাচের পর প্রথম টসে জিতে মাশরাফি
নিলেন ফিল্ডিং। মহেন্দ্র সিং ধোনির
কথাই প্রমাণ করে মাশরাফির সিদ্ধান্তের
যৌক্তিকতা। টস জিতলে ভারতের
অধিনায়কও নিতেন ফিল্ডিং!
অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা
প্রমাণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন
বোলাররা, সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিং।
বোলিং আক্রমণেও নেতৃত্ব দিলেন
মাশরাফি সামনে থেকেই। ১২ ওভারের
মধ্যেই শেষ করলেন নিজের বোলিং
কোটা, ছিলেন একেবারেই কৃপণ— ৪
ওভারে দিলেন ২২ রান। মাশরাফি রান
আটকেছেন, উইকেট তুলেছেন মুস্তাফিজুর
রহমান ও আল আমিন। দুজনই নিয়েছেন ২টি
করে উইকেট।
সাকিব আল হাসানের বোলিংও হয়েছে
দারুণ। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ১
উইকেট। শিখর ধাওয়ানকে এলবিডব্লু করে
সাকিবের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখে
বোঝা যাচ্ছিল, সাফল্যের জন্য কতটা
উন্মুখ ছিলেন তিনি। মাত্র ১ ওভারে
বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে মাহমুদউল্লাহ
৪ রানে ১ উইকেট নিয়ে অধিনায়কের
আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের
পরও ভারতের শুরুটা হয়েছিল ভালোই।
রোহিত শর্মা-ধাওয়ানের ওপেনিং
জুটিতে হয়েছে ৩৬ বলে ৪২ রান। ব্রেক
থ্রুটা এনে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। ওয়ানডে,
টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে পাঁচ সাক্ষাতে এ
নিয়ে রোহিতকে ৪ বার আউট করলেন
মধ্যে ২ ওপেনারকে হারিয়ে বেশ চাপে
পড়ে যায় ভারত।
বিরাট কোহলি-সুরেশ রায়নার তৃতীয়
উইকেট জুটিতে ৪০ বলে ৫০ রান অবশ্য
খানিকটা পথ দেখায় ভারতকে।
কোহলিকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে
ম্যাচে ফেরান শুভাগত হোম। ৯৫ থেকে
১১৭— এই ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়েই
ভারত বড় রানের দিকে ছুটতে পারেনি। এই
সময়টায় হ্যাটট্রিকেরই সুযোগ
পেয়েছিলেন আল আমিন।
স্লগ ওভারে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের
চড়াও হতে মুস্তাফিজ-আল আমিনরা। ১৬
থেকে ১৮ পর্যন্ত তিন ওভারে মাত্র ১১ রান
নিতে পেরেছে ভারত। শেষ ৫ ওভারে
ভারত করতে পেরেছে ৩৪ রান, হারিয়েছে
৪ উইকেট। বাংলাদেশের বোলাররা ডট
বলই দিয়েছেন ৪৫টি।
দুর্দান্ত বোলিং-
ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটসম্যানদের ভুলে
শেষমেশ জয়ের দেখাটা আর পেল না
বাংলাদেশ।