মাশরাফি, টি-টোয়েন্টির দিন কি তবে
ফুরোল?
সরাসরি কোনো উত্তর নেই।
এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকে
অনেকবারই প্রশ্নটা উঠেছে। কখনো
বলেছেন, ‘এখনো ঠিক করিনি’। কখনো বা
‘ভেবে দেখছি’।
কাল সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক উত্তর,
‘এটা নিয়ে বাসায় গিয়ে ভাবব।’
আসলেই কি তাই! ব্যাপারটা কি
ভাবাভাবির পর্যায়ে আছে নাকি
সিদ্ধান্তটা নিয়েই রেখেছেন, আনুষ্ঠানিক
ঘোষণাটা কখন দেওয়া উচিত শুধু তা
নিয়েই দ্বিধা।
দ্বিতীয়টাই হয়তো ঠিক। এই বিশ্বকাপের
পরই টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিচ্ছেন, ঘনিষ্ঠ
মহলে এ কথা বলেছেন অনেক দিন আগেই।
পত্রপত্রিকায় তা ছাপাও হয়ে গেছে।
যেটি একদমই পছন্দ হয়নি মাশরাফির। কারণ
একটাই, তাঁর অবসরের আগাম ঘোষণায়
বিশ্বকাপের মতো একটা বড় টুর্নামেন্টে
দলের মনোযোগ যদি অন্যদিকে সরে যায়!
টি-টোয়েন্টি খেলাটা খুব পছন্দ করেন
বলে ‘অপবাদ’ নেই। যখন শুরু করেছিলেন, সব
স্বপ্নই ছিল টেস্ট ক্রিকেটকে ঘিরে। টি-
টোয়েন্টির নামও অবশ্য তখন কেউ
শোনেনি। সেই টেস্ট ক্রিকেট মাশরাফির
হৃদয়ে গভীর এক ক্ষতের নাম। একটু টোকা
পড়লেই যা থেকে এখনো রক্ত ঝরে।
অসম্ভবের পায়ে শিকল পরিয়ে একবারের
জন্য হলেও আবার সাদা পোশাকে মাঠে
নামার কথাও বলেন কখনো কখনো। শেষ
পর্যন্ত তা হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর
মাশরাফিরও জানা নেই। টি-টোয়েন্টিতে
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই সংশয় নেই। আজ
ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে
ম্যাচটিতেই হয়তো টি-টোয়েন্টিতে
বাংলাদেশের হয়ে শেষবারের মতো মাঠে
নামছেন মাশরাফি। আগে থেকে ঘোষণা
দিয়ে নামছেন না, এই যা!
সামনে আর টি-টোয়েন্টির বড় চ্যালেঞ্জই
বা কোথায়! ২০০৭ সালে শুরু হয়ে দুই বছর
পরপর হয়ে আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
মাঝখানে একবার পরপর দুই বছরও হয়েছে।
মাস কয়েক আগেই আইসিসি সিদ্ধান্ত

নিয়ে ফেলেছে, এবারের পর থেকে
ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিও ৫০ ওভারের
বিশ্বকাপের মতো চার বছর পরপর হবে।
পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাই ২০২০
সালে। এর অনেক আগেই মাশরাফির গায়ে
‘সাবেক ক্রিকেটার’-এর তকমা লেগে
যাবে। নিজেই বলে রেখেছেন, আগামী
বছর ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্তই
ক্যারিয়ার নিয়ে তাঁর স্বপ্নের সীমানা।
বিশ্বকাপের বছরেই না আন্তর্জাতিক টি-
টোয়েন্টির এমন রমরমা! নইলে অন্য
বছরগুলোয় তো দু-তিনটির বেশি টি-
টোয়েন্টিই খেলে না টেস্ট দলগুলো।
বাংলাদেশ খেলে আরও কম। মাশরাফির
টি-টোয়েন্টি ছাড়ার সিদ্ধান্তে নিশ্চয়ই
এসবও বিবেচনায় এসেছে। শেষ পর্যন্ত যদি
এই বিশ্বকাপই টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির
শেষ দেখে ফেলে, একটা তৃপ্তি নিয়েই
যাবেন তিনি। ওয়ানডেতে অনেক দিনই
বলার মতো শক্তি হয়ে ওঠা বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টিটাও খেলতে শিখেছে তাঁর
সময়েই। গত এক বছরে পাকিস্তানকে দুবার
হারিয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাকে
একবার। ভারতকে হারাতে হারাতেও
পারেনি নিছকই চিন্নাস্বামীর ওই
রাতটিতে ভুতুড়ে কিছু ভর করায়।
সিদ্ধান্তটা যদি চূড়ান্ত করে ফেলেই
থাকেন, আজ টস করতে নামার সময়
মাশরাফির হয়তো মনে পড়বে, অধিনায়ক
মাশরাফির পুনর্জন্ম এই টি-টোয়েন্টিতেই।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার
বিপক্ষে টেস্টে তখন তিন সংস্করণেরই
অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম যখন চোটে
পড়লেন, তামিম ইকবাল তখন সহ-অধিনায়ক।
সাধারণ যুক্তিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি
টি-টোয়েন্টিতে তামিমেরই
বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা।
কিন্তু বিসিবি অধিনায়ক বানিয়ে দিল
মাশরাফিকে। তামিম আর সহ-অধিনায়ক
থাকতে চাইলেন না। তিনি নাকি আরও
বেশি করে ব্যাটিংয়ে মন দিতে চান। সহ-
অধিনায়ক থাকলে ব্যাটিংয়ে মন দিতে
সমস্যা হয়, এমন কথা ইহজন্মে কেউ
শোনেনি। তামিমের বলা কারণটা তাই
কেউই বিশ্বাস করেনি। অভিমান থেকেই
ওই সিদ্ধান্ত। মাশরাফির এমনই মহিমা যে,
সেই তামিমই এখন সম্ভবত এই দলে
অধিনায়কের সবচেয়ে বড় ভক্ত।
এর আগেও দুই দফায় বাংলাদেশের
অধিনায়ক হয়েছেন। শুরু হতে না হতেই
যাতে যতি টেনে দিয়েছে চোট।
অধিনায়ক মাশরাফি নিজেকে চেনালেন
এমন এক সময়ে, যখন আবার অধিনায়ক
হওয়ার কথা নিজেও ভেবেছিলেন কি না
সন্দেহ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি টি-
টোয়েন্টিতে মাশরাফি ছিলেন
আপৎকালীন অধিনায়ক। ২০১৪ সালের
নভেম্বরে এসে সেই মাশরাফিই সীমিত
ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্থায়ী
অধিনায়ক হয়ে গেলেন। অন্য অনেক দেশে
অনেক বছর ধরেই চলে আসা অধিনায়কত্ব
ভাগ করে দেওয়ার রীতি বাংলাদেশে
কতটা কাজ করবে, এ নিয়ে যদি কোনো
সন্দেহ থেকেও থাকে, তা দূর করতে একটুও
সময় নেননি মাশরাফি। জিম্বাবুয়েকে
হোয়াইটওয়াশ করে যে জয়যাত্রার শুরু,
সেটি বিস্তৃত হয়েছে বিশ্বকাপ হয়ে
পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষে সিরিজ পর্যন্ত। অধিনায়ক
মাশরাফির মুকুটে সর্বশেষ পালকটা যোগ
হলো গত এশিয়া কাপে। শ্রীলঙ্কা ও
পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ
ফাইনালে খেলবে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে
কেই-বা তা ভেবেছিল!
আজ ইডেনে নামার আগে বাংলাদেশের
৬১টি টি-টোয়েন্টির ৪৮টিতেই খেলেছেন।
নেতৃত্ব দিয়েছেন ২২টিতে, যার ৯টিতে
জয়। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর যাত্রা শুরু
ম্যাচসেরার ট্রফি হাতে নিয়ে। ২০০৬
সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে
বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে
ব্যাটিংয়ে ৩৬ রান ও বোলিংয়ে ২৯ রানে
১ উইকেটের পুরস্কার। ম্যাচসেরা হয়েছেন
আর একবারই—২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের
বিপক্ষে (৩০ রান ও ৪/১৯)।
এই সবকিছুকে স্মৃতি বানিয়ে টি-
টোয়েন্টির দিন আজই কি শেষ, মাশরাফি? Download Heroes of 71 : Retaliation
Portbliss Games APK for Android

One thought on "আজই কি শেষ, মাশরাফি?"

  1. Md Fahim Author says:
    কপি করা পোস্ট

Leave a Reply