আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা জানতেন ইছমত আলীকে হত্যা বা গুম করা হয়েছে। আর ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আসামি করা হয় ইছমতের বড় ভাই ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য কয়েক দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয় তাঁদের।
এভাবেই কেটে যায় দুই বছর আট মাস। সেই ইছমতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মৃত মানুষের জীবিত হওয়ার খবরে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোরা গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
চান্দিনা থানার এসআই মো. মেহেদী হাসান জানান, উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোরা গ্রামে জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মো. সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর ছোট ভাই ইছমত আলীর মধ্যে বিরোধ চলছে। এ কারণে লুকিয়ে থাকেন ইছমত আলী। তাঁকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে সিদ্দিকুর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইছমত আলীর স্ত্রী মাজেদা আক্তার। এ ঘটনায় জেল খাটাসহ বিভিন্নভাবে পুলিশি হয়রানি এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন সিদ্দিকুর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মেহেদী হাসান আরো জানান, গা ঢাকা দেওয়ার পর থেকেই ইছমত হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের আমজাদ খাঁর খামারবাড়িতে কৃষি কাজ করছিলেন। দীর্ঘদিন একই বাড়িতে কাজ করায় কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. আনোয়ার হোসেনের সন্দেহ হয়। তিনি ইছমতের বাড়ির ঠিকানা জানতে চান। ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য আনোয়ার চান্দিনা থানায় একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠির মাধ্যমে জানা যায় ইছমত বেঁচে আছেন।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ইছমতকে সেখান থেকে আটক করে চান্দিনা থানায় আনা হয়। শুক্রবার হাতকড়া পরিয়ে ইছমতকে নিয়ে আলিকামোরা গ্রামে যায় পুলিশ। এ সময় তাঁকে একনজর দেখতে ছুটে আসে গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন। নাছিমা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, মরা ব্যাটা জ্যাতা হইছে। আগে শুনছি মাইরা ফালাইছে, পায় না। এখন শুনি তারে আনছে তাই চাইতাম আইছি। সিদ্দিকুর ও ইছমতের বিরোধ প্রসঙ্গে মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ”তাঁরা একই রক্তের দুই ভাই। একে অপরকে ধ্বংস কইরা দিছে। সিদ্দিক প্রচুর টাকা-পয়সা ব্যয় করছে। আগে আমরা জায়গা-সম্পত্তি বিষয়ে ঝামেলা দূর করার চেষ্টা করেছিলাম।”
প্রত্যেকবার ইছমত সালিস মানলেও পরে আর মানে না। পরে ২০১২ সালের ১৩ জুন গভীর রাতে ইছমত এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। পরে ইছমতের স্ত্রী মাজেদা আক্তার তাঁদের বিরুদ্ধে চান্দিনা থানা ও আদালতে তিনটি পৃথক অপহরণ, গুম ও হত্যার মামলা করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার করার পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁদের গ্রেপ্তার করে। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালায়।
মামলার বিষয়ে ইছমতের স্ত্রী মাজেদা আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর বাড়ি গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ইছমত আলীর সাথে কথা হয় চান্দিনা থানায় পুলিশ হেফাজতে। তিনি দাবি করেন, একদিন তার বড় তাকে মারার চেষ্টা করলে তিনি মনের দুঃখে, রাগে-ক্ষোভে বাড়ি থেকে চলে যান। তিন মাস আগে তার স্ত্রী তাঁর কাছে হবিগঞ্জে যান। ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি তখনই তিনি জানতে পারেন। তার স্ত্রী মামলা করে ভুল করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
One thought on "মৃত্যুর আড়াই বছর পর জীবিত উদ্ধার"