নামাজে টুপি পরা জরুরি কি-না এটা নিয়ে আমাদের সমাজে ইদানীং কিছু বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে এটাকে জরুরি মনে করেন না। আবাহমান কাল ধরে গ্রাম-বাংলায় টুপি পরে নামাজ আদায়ের যে সংস্কৃতি এটাকে অনেকেই অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু টুপি মুসলিম উম্মাহর শেয়ার বা জাতীয় নিদর্শন। টুপি রাসুলে করিম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িনরা পরেছেন এবং পরবর্তী সব যুগের মুসলমানরাই পরেছেন। পাগড়ির মতোই একটি ইসলামি লেবাস টুপি। হাদিস ও ইতিহাসের কিতাবে এ ব্যাপারে অনেক গ্রহণযোগ্য আলোচনা রয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) মাথা ঢেকে নামাজ আদায় করতেন, আমাদেরও তাই করা উচিত। নামাজ আদায় করার জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে যথেষ্ট বিনয় অবলম্বন করা প্রয়োজন। পোশাক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজের সময় তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করো’ (সূরা আরাফ : ৩১)। হাসান ইবনে আলী (রা.) নামাজের সময় সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরতেন। একদিন কেউ তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন।
তাই আমি আমার প্রভুর জন্য সুন্দর পোশাক পরি (রুহুল মাআনি : ৪/৩৪৯)। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম গরমের কারণে) পাগড়ি বা টুপির ওপর সিজদা করতেন (বোখারি : ১/৮৬)। যুহাইর (রহ.) বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু ইসহাক সাবিয়ীকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরেছেন (তাবাকাতে ইবনে সাদ : ৬/৩১৪)। তাই ফুকাহায়ে কেরাম নামাজে টুপি পরা সুন্নত বলেছেন এবং অবহেলা করে টুপি না পরে নামাজ পড়াকে মাকরুহ বলেছেন, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে (ফাতাওয়া কাজিখান : ১/১৩৫)। নামাজ পড়া অবস্থায় মাথা থেকে টুপি মেঝেতে পড়ে গেলে বা পাগড়ি খুলে গেলে, খুব সহজেই তা ঠিক করে নিতে পারলে করে নেয়া উত্তম। আমলে কাছিরের মতো খুব বেশি নড়াচড়ার প্রয়োজন হলে, তখন নড়াচড়া না করে এ অবস্থায়ই নামাজ আদায় করে নেবে (জাদিদ ফিকহি মাসায়িল, পৃষ্ঠা ১১৬)। তাই আমাদের টুপি পরার ব্যাপারে অনাদর অবহেলা না করে, নামাজে টুপি পরিধান করে রাসুলে করিম (সা.) এর সুন্নত পালন করা উচিত এবং প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী শরীরের অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে মানানসই টুপি পরিধান করা জরুরি।
ইসলামের কথা -এর অন্যান্য পোস্ট এখানে