চলচ্চিত্র আমরা সবাই দেখতে
ভালোবাসি। ঢালিউড, বলিউড ও হলিউডের
ছবিই বেশি দেখে বাংলাদেশের দর্শক।
এসব ছবিতে কিছু দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়
কিন্তু সেগুলো আবার হুবহু এক হয় না।
স্থানভেদে দৃশ্যগুলো ভিন্ন হয়। তো
চলুন দেখে নিই একই দৃশ্য তিন ‘উডে’
কেমনভাবে উপস্থাপন করা হয়।
নায়ক-নায়িকার প্রেম হওয়া
ঢালিউড : যুগ যুগ ধরে এখানে নায়ক আর
নায়িকার প্রেম হয়ে আসছে একজন
আরেকজনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে।
এখন হতে পারে তাদের হাত থেকে
বই পড়ে যাবে কিংবা নায়ক-নায়িকার ওপর
হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে।
বলিউড : নায়িকা কোনো এক খোলা
ময়দানে হেঁটে যাবে, তখন চারপাশে
জোরে বাতাস বইবে, সবাই নায়িকার
দিকে তাকিয়ে থাকবে হাঁ করে, নায়িকার
চুল বাতাসে উড়বে, তখন নায়ক নায়িকাকে
দেখবে আর ঠাশ করে প্রেমে
পড়ে যাবে।
হলিউড : নায়ক নায়িকাকে কোনো এক
বারে দেখবে, গিয়ে নায়িকাকে
বলবে, ‘ক্যান আই বাই ইউ এ ড্রিংক?’ ব্যস!
হয়ে গেল নায়ক-নায়িকার প্রেম।
নায়ক-নায়িকার প্রেমের দৃশ্য
ঢালিউড : কোনো এক পশুচারণ ভূমি
দেখবেন সেখানে, কিংবা কোনো
নদীর পাড়, কিংবা কক্সবাজারের
সমুদ্রসৈকত। সেখানে নায়ক-নায়িকা
একসঙ্গে খুবই অদ্ভুত ভঙ্গিতে
কোমরে হাত দিয়ে নাচানাচি করছে!
বলিউড : আপনার দৃশ্যপটে আসবে
মরুভূমি কিংবা কোনো এক বরফের
দেশ। কিংবা ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড়
দেশ। সেখানে ওই ঢালিউডের মতোই
নায়ক-নায়িকারা বরফের পাহাড়ে নাচানাচি
করে, কিংবা মরুভূমির বুকে। মাঝে মাঝে
তাদের চাঁদে গিয়েও নাচানাচি করতে
দেখা যায়।
হলিউড : এখানে রোমান্টিক গানগুলো
একটা রুমের মাঝেই তারা খরচ বাঁচিয়ে
শুটিংয়ের কাজ সেরে ফেলে। গানে
কী হয় তা এখানে লেখা যাবে না, মাফ
করবেন।
মারামারির দৃশ্য
ঢালিউড : এখানে নায়ককে দেখা যাবে
কোনো এক দোতলা থেকে ই-য়া-হু
বলে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে মারামারি শুরু
করে দেবে। কিংবা একটা গাড়ি নিয়ে
একটা ইটের দেয়াল ভেঙে দৃশ্যপটে
এসে মারামারি শুরু করবে কিংবা কাচের
দরজা ভেঙে তার মাঝখান দিয়ে লাফ
দিয়ে এসে।
বলিউড : এখানে খুব অদ্ভুত ধরনের
মারামারির দৃশ্য দেখা যায়। দেখা যায় নায়ক
রাস্তায় গাড়ির ওপর দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে
গিয়ে গুন্ডাপান্ডাদের ধরে পেটাচ্ছে
কিংবা নায়িকাকে কোলে নিয়ে এক ঘুরানি
দেবে তাতে সব গুন্ডাপান্ডা খালাস!
হলিউড : এখানে মারামারির দৃশ্য কেবল
ঢালিউডের একটু আপডেটেড ভার্সন।
ঢালিউডের নায়ক দোতলা থেকে লাফ
দেয়, এখানে দেখা যায় নায়ক
বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে লাফ দেবে,
পারলে তো মঙ্গল গ্রহ থেকে লাফ
দিয়ে পৃথিবীর বুকে পড়বে। এরা গাড়ি
ভাঙায় বিশ্বাসী নয়। মনে করুন, এদের
জন্য তো দু-তিনটা গাড়িবোমা-টোমা
মেরে উড়িয়ে দেওয়া কোনো
ব্যাপারই না। অবস্থা বিশেষে এরা গোটা
বিল্ডিংও বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়।
পারলে তো গোটা পৃথিবীও।
মৃত্যুদৃশ্য
ঢালিউড : এখানে কেউ মারা যাওর একদম
শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নেওয়া হবে,
তারপর ডাক্তার তাদের অপারেশনের
জন্য এক লাখ টাকা চাইবে, নায়ক এ জন্য
রিকশা চালানো শুরু করবে। তারপর টাকা
দেওর পরও মারা গেল? টেনশনের
কিছুই নেই! নায়ক বা নায়িকা মৃত ব্যক্তিকে
স্লো মোশনে স্পর্শ করলেই
বেঁচে উঠবে।
বলিউড : এখানে কেউ মারা যাওয়া মানে
বৃষ্টি হবে, বৃষ্টিতে কান্নাকাটির একটা
রোমহর্ষক দৃশ্য দেখানো হবে,
মজার বিষয় হলো, এখানে কারো মৃত্যুর
কালে যে চরিত্রগুলোর মাঝে ঝগড়া-
বিবাদ ছিল, তাদের মাঝে মিল হয়ে যায়।
হলিউড : এখানে আসলে মৃত্যু বলতে
কিছু নেই। কখন কোথায় কে কোথা
থেকে উঠে আসে তার কোনো
ঠিক নেই। পরিচালক চাইলেই কেউ মৃত,
চাইলেই জীবিত। একজন এখানে দশবার
মরলেও আপনি শিওর হতে পারবেন না
যে সে মারা গেছে!
সিনেমার শেষ দৃশ্য
ঢালিউড : একটা কঠিন মারামারি হবে, পুলিশ
আসবে তারপর সন্ত্রাসীদের ধরে
নিয়ে যাবে। তারপর নায়িকার বাবা নিজের
ভুল বুঝতে পেরে নায়কের হাতে তার
মেয়ের হাত তুলে দেবে। তারপর
পর্দায় ভেসে উঠবে ‘এরপর তারা
সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল’
বলিউড : এখানে সাধারণত দেখা যায়
পুরো সিনেমায় যা দেখানো হয় তা
দেখে যাতে দর্শক বিরক্ত না হয় কিংবা
গাল না দেয় তার কারণে সিনেমার
শেষেই সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং
ব্যাপারটাকে রাখা হয়, যাকে সবাই
‘আইটেম সং’ বলে।
হলিউড : এখানে সিনেমার শেষটাতে
এসেও একটা প্যাঁচ লাগবে, আপনি
হয়তো ভাববেন আপনি এতক্ষণ যা
দেখলেন তার পুরো কাহিনীই
উল্টো হয়ে গেছে। শেষ দৃশ্যটা
এমন হতে পারে, নায়ক এগিয়ে আসছে
আর তার পেছনে একটা বোমা বিধ্বস্ত,
অগ্নিদগ্ধ শহর।
ডিজাইন । সবার ডিজাইন এক হলে তো হবে না….