জমিদার বাড়ি রহস্য
পর্ব ৬
আর, এন, ইফতি।
♪
কি ভয়ে ছিলাম যে, ১৫ মিনিট সেটা বলে বুঝানোর মত নয়।
পুলিশের গাড়ির হর্ন শুনে বুঝলাম পুলিশ এসে গেছে।
এবার রিও বললঃমোবাইলের টর্চ জ্বেলে বের হয়ে এস প্রফেসর।
টর্চ জেলে দেখলাম ভাগিনা বেডের উপর বসে আছে।
আমায় দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিয়ে বললঃ ভয়ে দেখি আধা মরা হয়ে গেছ প্রফেসর।
_ভয় পাব না? কি সাংঘাতিক রে বাবা।
বুলেট যদি গায়ে লাগত তাহলে সোজা উপরে চলে যেতে হত।
আর তুমি হাসছ?
_মরতে একদিন হবে মামা।
কিছু দিন আগে আর কিছু দিন পরে এই আরকি।
_তাই বলে গুলি খেয়ে?
_সেটা যে ভাবেই হোক।
যে ভাবে মৃত্য লেখা আছে সেভাবে মরতে হবে।
_চল। ঢাকা ফিরে যাই।
মামলা চুলায় যাক।
_কি যে বল মামা? খুনের সমাধান প্রায় করেই ফেলেছি।
এখন পালিয়ে যাব?
_মানে?
_মানে হল আমি যে খুনি প্রযন্ত পোছে গেছি সেটা খুনি জেনে গেছে।
তাই আমাকে সরানোর পায়তাড়া শুরু করেছে।
_একটা কাজ কর তাহলে।
_কি প্রফেসর?
_সুমন কে ডাক এখানে। তোমার বের হওয়া মটেও বিপদ মুক্ত নয়।
_কিন্তু সুমনতো এখন সিলেটে।
_সিলেট কেন?
_আহারে তুমি কি ভাবছ?
আমি কেসটা নিয়ে একদম বসে আছি?
_তাহলে?
_সুমন সকালের ফ্লাইটে সিলেট গেছে।
ওখানে মিসেস জোহানের ছেলে আমিন জোহান সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে
এত সময় যশোর চলে এসেছে।
_মানে?
_হ্যা মামা, আমি একা কাজ করতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই সুমনকে লাগিয়ে দিয়েছি।
_তুমিতো মিসেস জোহানের ছেলে আমিন জোহানের কাছে তার নাম জানতে চেয়েছিলে?
তাহলে, সুমন কিভাবে আমিন জোহানের পরিচয় পেল?
_মামা। তুমি ভুলে যাচ্ছ এটা একটা রয়েল ফ্যামিলি।
এর পরিচয় জানার জন্য গুগোল করায় যথেষ্ট।
_তাহলে নাম জানতে চেয়েছিলে কেন?
_আমি চাই আমি সব সময় সন্দেহের বাহিরে থাকি।
তাই এই মিথ্যা টুকু বলতে হয়ে ছিল।
_________ এমন সময় দরজায় নক পড়ল।
স্পস্ট কমিশনারের গলার আওয়াজ পেলাম।
দরজা খুলতেই তিনি বললেনঃ তোমরা ঠিক আছতো?
_হ্যা বাবা; বলল রিও।
_চল। আর এক মুহুর্ত এখানে থাকার দরকার নেই। সার্কিট হাউজে থাকার ব্যাবস্থা হয়েছে।
________ আমরা আমাদের মাল পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
বুঝলার কমিশনার খুব চিন্তিত।
হবেন বা না কেন?
নিজের ছেলের এমন বিপদ কোন বাবা মেনে নিতে পারে।
_______ সারা রাত দেখলাম রিও একবারের জন্য বেডে যায় নি।
চেয়ারের উপর বসে খাতায় কি সব লিখছে আর কাটা কাটি করছে।
কখনো হেটে, কখনো বসে শুধু ভাবছে আর ভাবছে।
আর আমার আনা B&H এর বারটা বাজাচ্ছে।
রাত তিনটা নাগাদ একটা কল আসল রিও ফোনে।
ফোন রিসিভ করতেই বুঝলাম এটা সুমনে ফোন ছিল।
_হ্যা। সুমন? (কানে ফোন দিয়ে বলল রিও)
_………..
_ওকে। দাড়াও লোক পাঠাচ্ছি।
এর পর রিও ল্যান্ড ফোনে
গেট রক্ষির সাথে কথা বলল।
একটু বাদেই সুমনকে আমাদের রুমে দিয়ে এল একজন পুলিশ।
রিও বললঃবললাম যে, এত রাতে না এসে যশোর থেকে সকালে আসতে পারতে।
_কি যে বলেন স্যার। আপনার উপর এটাক হয়েছে সেটা জেনে আর থাকতে পারলাম না;বলল সুমন।
_তা, কি খবর আছে বল?
_স্যার।
আমিন জোহানের ব্যাপারে তেমন কিছু নেই। তবে তিনি এক মাস ছুটি নিয়েছেন গত পনের দিন আগে।
এলাকায় নাকি বেশ প্রভাব আছে লোকটার।
পাখি শিকারের বাতিক আছে।
_আর কিছু
_স্যার। আমিন জোহান সম্পর্কে আপনি যা বলেছিলেন ওটাই।
_কেমন খবর?
_উনি না কি এলাকায় পাগলা পাগলাইটে ছিলেন।
_কেমন?
_ইতিহাস পড়েছেন এম এম কলেজে।
তখন থেকে নাকি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষনা শুরু করেন।
তাই যেখানে সেখান মাটি খোড়া খুড়ি করতেন।
একারনে অনেকেই তাকে হাফ ম্যাড বলে ডাকত।
_এতে অস্বাভাবিক কি আছে?
_অস্বাভাবিক নয়? এই পাগল কি করে বি সি এস পেয়ে
প্রভাশক হতে পারে?
_______ আমি বললামঃজহিরের বাসা কোথায়?
_যশোর। মামা , বলল রিও
_জানলে কি করে?
_গোয়েন্দা হতে হলে গন্ধ শুকে
মানুষের পরিচয় বের করতে হয়।
যদি ভুলে না যাও, তাহলে মনে করে দেখ।
খুন হওয়ার দুই দিন আগে মিসেস জোহান আমার কাছে গিয়ে ছিলেন।
তখন তিমি বলেছিলেন তার মেয়ে জামায় ইতিহাসের প্রভাশক।
তাই ঢাকা থেকেই তার সম্পর্কে খবর নিয়ে ছিলাম।
কারন মহিলা চলে আসার পর দুই দিন ছিল আমার হাতে।
_কিন্তু একটা ডিপার্টমেন্ট এ কি একজন প্রভাশক থাকে?
_সেটা থাকেনা। তবে রয়েল ফ্যামিলির জামাতা একজন ছিল।
_হুম। বুঝলাম
_কিন্তু খবর নেওয়ার কারন?
_যেহেতু আমি আসব বলে কথা দিয়েছিলা মিসেস জোহানকে।
তাই তার ফ্যামিলিচিত্র একটু ঘেটে দেখছিলাম।
তা ছাড়া তুমি মনে হয় জান না।
বাংলার প্রতিটা জমিদার বাড়ির ইতিহাস লেখা বই তুমি পাবে নিল ক্ষেত এর লাইব্রেরী গুলোতে।
বিশ্বাস না হলে দেখ, আমার ব্যাগের মধ্যে নড়াইলের জমিদার বাড়ির ইতিহাস নিয়ে
লেখা দুটা বই আছে।
_তারমানে খুনের আগেই ভুতের তদন্ত শুরু করে দিয়েছিলে?
_জি, মামা।
আমাকে কি মনে হয় তোমার।
_যাক এসব। ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।
♪
রিওর ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি আটটা বেজে গেছে।
ভাগিনার চোখ লাল দেখে বুঝলার সে রাতে ঘুমোইনি।
বললামঃএত সকালে ডাকলে কেন?
রিও তামাশা করে বললঃগুপ্ত ধনে ভয় থাকে জানো মামা?
_এগুলো আবার কোথায় শুনলে?
_শুনি নাই। পড়েছি।
_কোন বইয়ে?
_বইয়ে নয়, জমিদারদের ডাইরিতে।
তবে কি জানো মামা। এই একটি কথায় সারা রাত ভাবছিলাম।
গুপ্ত ধনে ভয় আছে। কেন এই কথা টা প্রতিটা জমিদারের ডাইরিতে লেখা?
_কি পেলে?
_কি পেলাম আর? মিস্টার জোহানের ডাইরি পেলে সব পেয়ে যেতাম।
কিন্তু জোহানের ডাইরি পেলাম না।
_কেন? সব ডাইরিই তো আমরা নিয়ে এসেছিলাম।
নেই সেগুলোর মাঝে?
_না, প্রফেসর।
_তাহলে মিস্টার জোহান হয়ত ডাইরি লিখত না।
_কি ভাবে সিওর হলে?প্রফেসর।
_তিনি যে, ডাইরি লিখতেন সেটা তুমি কি করে শিওর? ভাগিনা।
_কারন, মিসেস জোহান তার নিজের ডাইরিতে মিস্টার জোহানের ডাইরির কথা
অনেক বার উল্লেখ করেছে।
_হুম। তাহলে সেটা গেল কোথায়?
_সেটা আমি কি করে জানব মামা?
_একটা চিন্তা মাথায় এসেছে।
বলল?
_হুম বল।
_তাহলে খুনি কি সেদিন ডাইরি নিতে এসেছিল?
_সেটা ভাবার কারন?
_আহারে। তুমি না সেদিন বলেছিলে খুনি ঠিক খুন করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল না।
_হা হা হা, প্রফেসর। বলতেই হবে। ইদানীংকাল তোমার মাথাও খুব ভাল কাজ করছে।
কিন্তু একটু দেরিতে।
ওকে, চালিয়ে যাও। তুমিও রিও হতে পারবে আগামি দেড়শ বছরের মাঝে।
_হা হা হা। তত দিন আমি মরে ভুত।
_তাহলে আর কি করা? আমি যেটা রাতে ভেবেছি সেটা তুমি এখন ভাবছ প্রফেসর।
চল বের হতে হবে।
এতক্ষন হয়ত সবাই পোছে গেছে।
_মানে?
কারা পোছাল?
_গেলেই দেখতে পাবে।
অভিজান গুপ্ত ধন উদ্ধার।
_মানে। গুপ্ত ধনের হদিশ পেয়ে গেছ?
_পেয়েগেছি বললে ভুল হবে।
_চল তাহলে। আর তর শয়ছে না।
এই প্রথম বার সুমন, রিওর কোন কাজ সরাসরি দেখার সুযোগ পেল।
তাই তার এক্সসাইটমেন্ট এর লেবেলটা দেখার মত ছিল।
বাহিরে নাস্তা করে যখন
জমিদার পাড়ির গেটে পোছালাম।
তখন প্রায় দশটা বেজে গেছে।
দেখলাম কয়েক গাড়ি পুলিশ আর কিছু সাংবাদিকও এসেছে।
রিও কে দেখে কমিশনার আর ওসি সাহেব এগিয়ে আসলেন।
রিওকে ওসি সাহেব বললঃস্যার।
পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।
_কিন্তু সাংবাদিক কেন? রিওর প্রশ্ন,। ওদের কি বলা হয়েছে কিছু?
_জি না, স্যার।
আসলে খুনের পর থেকেই পুলিশের গাড়ি এদিকে দেখলেই
সাংবাদিকরা আঠার মত পিছু লেখে থাকে।
_ রিও সম্পর্কে কেউ কিছু জানে?
_কি যে বলেন না, স্যার।
আপনাকে কেউ চিনে না নাম ছাড়া।
আর তাই সকালেই বলে দেওয়া হয়েছে আপনাকে ফ্লাইটে গত রাতেই ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
_গুড জব। তাহলে এখন আপনার কাজ হলে সাংবাদিকদের অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া।
_______ ওসি সাহেব চলে গেলন।
রিও তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললঃকমিশনার, আপানার স্পেশাল গয়েন্দা অফিসার সাফিনের কি খবর?
_আরে বইলোনা। ও নাকি ভুতের কি সব প্রমান পেয়েছে বাড়িতে।
তবে কেস সলভ।
_তাই নাকি?
_কেন বিশ্বাস হয় না?
_না হওয়ার কি আছে?
_তুমিতো হেরে গেলে, রিও বাবা।
_তাই? আপনার সাফিন গোয়েন্দা কি এখানে আছেন?
_হুম।
_ডাকা যাবে তাকে?
_____ রিওর বাবা চলে যাবার দশ মিনিট পর সাফিন এল।
তত সময় রিও দেখলাম দারয়ানের সাথে কথা বলছিল।
আমি পাশে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে ছিলাম।
কারন খুড়া পা নিয়ে বেশি দাড়িয়ে থাকা অসম্ভব আমার জন্য।
তবে রিও কেন যেন বার বার
দারোয়ানের উপর চটে যাচ্ছিল।
যদিও আমি জানি ভাগিনার রাগ একটু বেশি হলেও সেটা সব সময় সে কন্টোল করে।
কিন্তু দারোয়ান এমন কি করল যে, রিও তার উপর চটে গেল?
সাফিন আসতেই রিও সাফিন কে নিয়ে আমার পাশে এসে বসল।
তারপর রিও বললঃকি খবর সাফিন সাহেব?
_আমার কাজ শেষ ;বলল সাফিন। আপনার কত দুর?
শুনেছি আপনি নাকি দেশের এক নাম্বার কনসাল্টিং ডিটেকটিভ।
কিন্তু কি যে, করলেন?
বুঝলাম না।
_কেন। আপনি মনে হয় খুনি ধরে ফেলেছেন?
_জি হ্যা।
_কে করল খুন?
_সেটা যখন গ্রেফতার করব তখন দেখবেন। মিস্টার, রিও, দ্যা প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
_হা হা হা। ইনসাল্ট করে লাভ নেই।
আমার রক্ত টিকটিকর থেকেও ঠান্ডা।
তবে শুনলাম নাকি ভুতের সন্ধান পেয়েছেন?
_হ্যা। মিস্টার, রিও, ভুতের কথা ঠিক বলব না।
তবে গোদাম ঘরে কোন একটা ঘাবলা আছে।
সেটা আমি নিশ্চিত।
কারন এ প্রজন্ত যত লোক ভয় পেয়েছে সব এই গুদাম ঘরের আশে পাশে।
_হুম। গুড।
__________ এমন সময় দেখলাম ওসি সাহের দুজন লোককে হাতে কড়া পরিয়ে বের হলেন।
আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে এলঃ একি কাজের মহিলা আর তার স্বামি?
রিও মুখ ঘুরিয়ে বিষয়টা দেখল।
তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিয়ে সাফিনের দিকে তাকাতেই
সাফিন বললঃ এরাই হল আসল পাপি।
আসি, রিও সাহেব। আমার কাজ শেষ।
রিও এবার হো হো করে হেসে দিল। তারপর বললঃগাজার নোকা, পাহাড় তলী যায়।
ও মিরা ভাই। হা হা হা…….?
চলবে……
Like My Facebook Fan Page
বাকি পাট গুলি দ্রূত দেন….
বানানে ভুল থাকলে পড়ার আগ্রহ কিছুটা কমে যায়।