জমিদার বাড়ির রহস্য
পর্ব ৮
আর, এন, ইফতি
জহিরের কথা শুনে শুধু আমি নয় বরং উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল।
রিও বললঃ হ্যা, মিস্টার জহির বলেন।
আসলে আমার হাতে সময় কম।
এবার জহির বলা শুরু করলঃ আসলে আমি ছোট বেলা থেকেই প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে অনেক আগ্রহি ছিলাম।
এর পর একদিন বাবার কাছে থেকে জানতে পেলাম আমাদের পুর্ব পুরুষের ইতিহাস।
তখন তিনি এও বলেছিলে
তাদের ধারনা ছিল যে, এই জমিদার বাড়িতে অনেক গুপ্ত ধন লুকিয়ে রাখা আছে।
কিন্তু সেটা কোথায় কেই
জানে না।
এরপর আমি আমার বাবা থাকা কিছু ডাইরি থেকে জানতে পারি, আমাদের পুর্ব পুরুষ মিস্টার জোসিফ আর জিহান দুই ভাই।
জিহান ছিল বড়।
সম্পদের লোভে জিহান তার ছোট ভাই জোসিফ কে খুন করার প্লান করে।
কিন্তু জোসিফ সেটা বুঝে
বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে তিনি কয়েক বছর বরিশাল পালিয়ে থাকেন।
তারপর তিনি যশোর এসে স্থায়ি ভাবে বসবাস করে।
আর জিহান ভেবেছিল
জোসিফ মারা গিয়েছিল।
এদিকে জিহানের ছেলে ছিল একজন এবং সেই ছেলের
একমাত্র মেয়ে হল মিসেস রাজভি।
তার মানে জমিদারির একমাত্র
বৈধ মালিক বলতে আমি আছি।
কারন আমিন জোহান জমিদার বংশের কেউ নয়।
নিতান্ত এটা তার নানা বাড়ি।
বাবা যদিও কখনো এখানে আসেন নী।
তারপরও তিনি নিয়মিত
জমিদার বাড়ির খোজ খবর রাখতেন।
এরপর বাবা মারা যান গত বিশ বছর আগে।
তখন আমি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আবার লেগে পড়ি।
এরপর একদিন বাবার ডাইরি পড়ে যানতে পারি তিনি বার বার লিখেছেন,, তার ধারনা
জমিদার বাড়িতে কিছু একটা
লুকিয়ে রাখা আছে।
কিন্তু সেটা কি বা কোথায় তিনি কিছুই জানেন না।
শুধু উল্লেখ করেছেন, পুর্ব পুরুষের ডাইরিতে বার বার লেখা আছে, গুপ্ত ধনে ভয় আছে।
এরপর চলে আসলাম এখানে।
পরিচয় হয়ে গেল কর্নেল জোহানের মেয়ের সাথে।
কিছু দিনের মাঝে বিয়ে করে ফেলি।
কারন আমি জানি আমার পরিচয় দিলে।
হয়ত এরা কেউ মেনে নিবে না।
তাই বিয়েটা করতে হয়, যাতে জমিদার অবাধ গমনের
কোন বাধা থাকে না।
কিন্তু কোন লাভ হল না।
গত পনের বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও গুপ্ত ধনের হদিশ
পেলাম না।
এদিকে আমার কার্জ কালাপে মিসেস জোহান আমায় সন্দেহ করা শুরু করেন।
হয়ত আমার পিছে লোক লাগিয়ে তিনি আমার পরিচয়
তাই তিনি আমায় সব সময়
চোখে চোখে রাখতেন।
আমি বিষয়টা বুঝে তাকে আমার পরিচয় দেয়।
আমি এও বলে ছিলাম আমি জমিদার বাড়ির কিছু চাইনা।
চাই শুধু চাই জমিদার গুপ্ত ধনের সন্ধান।
তিনি প্রথমে রাজি হলেন।
কিন্তু পরক্ষনে যখন বললামঃ গুপ্ত ধন খুজে পেলে রাষ্টিয় কোশাগারে জমা দিতে হবে।
তখন তিনি বললেনঃএটা তার বাপ দাদার সম্পদ।
তিনি কেন রাষ্টিয় কোশাগারে
জমা দিবে।
অনেক বুঝিয়েছি এটা জনগনের সম্পদ।
এখন রাষ্ট্রর প্রাপ্য।
কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।
ইভেন কোন রুপ সাহায্য তো দুরের কথা আমি জমিদার বাড়িতে আসলে সেটাও ভাল ভাবে নিতে পারতেন না।
কিন্তু মিস্টার রিও।
আমি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে অনেক পড়েছি।
তাই আমার ধরনা, এই বাড়িতে সোনা দানা কিছু নেই।
আছে অন্য কিছু।
রিও এবারঃ তিব্বত থেকে আনা মুর্তিতো?
চিতকার করে বললঃএক্সজাকলি। এক একটা
মুর্তির দাম হবে কয়েক কোটি টাকা।
ঠিক কত গুলো মুর্তি আছে সেটা আমি জানি না।
অনেক বার প্লান করেছি মিসেস জোহানের ঘর থেকে কিছু ডাইরি চুরি করার জন্য।
কারন আমার ধারনা, গুপ্ত ধনের হদিস একমাত্র এই ডাইরিতেই আছে।
কিন্তু বিফল হলাম।
শেষমেষ ভিন্ন প্লান আটলাম।
রিও বললঃ ভুতের নাটিকাটা অনেক জোস ছিল কিন্তু মিস্টার জহির।
_কি আর করার ছিল?
আমার কাছে দুটি উপায় একটা
হল ডাইরি হাতানো।
অন্যটা মিসেস জোহান কে
বাড়ি থেকে বের করানো।
তাই টাকার লোভ দেখিয়ে দারোয়ানকে দিয়ে একটা ভুতের গল্প এলাকায় প্রচার করে দিলাম।
এমনিতে জমিদার বাড়ি, তারপর গ্রামের লোক,
সবটা মিলে অল্পতেই আমার কাজ হাসিল।
মাঝে মাঝে ভয় দেখানোর
জন্য লেজার, আর বাঘরে গর্জন শোনানোর জন্য টেপরেকর্ডার যথেষ্ট ছিল।
আর একটা জিনিস আপনি
নিশ্চয় জানেন মিস্টার রিও,
নিজের মনের মাঝে যদি বিন্দু মাত্র ভয় থাকে। তাহলে আপনাকে ভয় দেখানো পুরোটাই নসসির ব্যাপার।
মালি আর কাজের লোকের
ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশ কাজে দিয়েছে।
অবশেষ প্লান যখন
পুরো সাক্সেস।
তখন এক রাতে প্লান করে চলে আসলাম ডাইরি চুরি করে নিতে।
দারোয়ান আমার সাথে ছিল।
কিন্তু ঘরে ঢুকতেই দেখলাম
মিসেস জোহান একটা লোকের সাথে বেশ উত্তেজিত ভাবে কথা বলছেন।
আমাকে দেখে তাদের আলাপ বন্ধ হয়ে গেল।
তবে দুর থেকে যা শুনে ছিলাম।
তাতে মনে হয়েছে এই লোকটার সাথে মিসেস জোহানের একটা অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
এবং সেটা অল্প বয়স থেকেই।
কিন্তু মিসেস জোনান ডাইরি কেউকে দিতে রাজি নয়।
কিন্তু আমি জানতাম ডাইরিটা কোথায় রাখা আছে।
তাই একটা দেরাজ থেকে যখন আমি ডাইরি বের করতে উদত্য তখন মিসেস জোহান আমাকে বাধা দিলেন।
ডাইরি দেখে সিংহের মত গর্জন দিয়ে লোকটি আমার
পিঠের উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করলেন।
ভাগ্য ভাল আমি সরে যেতেই
আঘাতটা পড়ল
মিসেস জোহানের পিঠে।
মুখ দিয়ে শব্দ করার সময়ও পেলেন না তিনি।
মারা গেলেন মিসেস জোহান।
এবার রিও বললঃআঘাতটা কি চেয়ারের হাতল দিয়ে করা হয়েছিল?
_জি, কি ভাবে বুঝলেন?
_সেটাতো প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম।
কারন হাতলেই একমাত্র চারটা আংগুলের মত একটা নকশা ছিল।
আর সেটা যে চেয়ার থেকে বের করা যায়
সেটা বুঝেছিলাম যখন ওটা ধরে পরিক্ষা করেছিলাম।
কিন্তু মালি সাজেদ সাহেবকে আপনি কেন রক্ষা করতে চাইলেন?
_______ আমার বুক ধপাশ।
কি বলে ভাগিনা।
বৃদ্ধ মালি সাজেদ তাহলে এই খুন করেছে?
জহির বললঃআসলে আমার খুন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না।
খুনের পর সাজেদ আমার হাত পা জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না কাটি করেছিল।
তাই তার উপর আমার দয়া পড়ে গিয়েছিল।
কেননা, মিসেস জোহান সারা জিবন লোকটা কে গুপ্ত ধনের আশা দেখিয়ে
নিজের কাজে ব্যাবহার করেছেন।
আর এই বুড়ো বয়সে, তাকে
এখন মালি বানিয়ে রেখেছে।
জহির থামলেন।
এত মানুষ এক সাথে দাড়িয়ে থাকার পরও চারিদিক
যেন নিরাবতাই ছেয়ে আছে।
রিও বললঃহুম। তবে জানেন কি মিস্টার জহির, খুন করা আর খুনিকে সাহায্য করার মাঝে তেমন পার্থক্য নেই।
এবার দেখলাম ওসি সাহেব জহির আর সাজিদ কে গ্রেফতার করল।
যাবার আগে জহির বললঃমিস্টার রিও, যে সম্পদের খোজ আমি গত
১৫ বছরে পায়নি।
আর আপনি সেটা দুই দিনেই
বের করে ফেললেন।
একটু জানার ইচ্ছা ছিল কি করে পারলেন?
_হা হা হা,, মিস্টার জহির।
আগে মামা বাড়ি থেকে ঘুরে আসুন।
তারপর না হয়, একদিন আলোচনা করা যাবে।
চলবে……..!?
10 thoughts on "জমিদার বাড়ির রহস্য পর্ব ৮"