আজকের লেখার শুরুতেই কয়েকটা নাম বলছি,
খেয়াল করে দেখুন কোনোদিন
শুনেছেন কিংবা পড়েছেন কিনা-
ড্রিমল্যান্ড, প্যারাডাইস র্যাঞ্চ, হোম বেজ এবং
ওয়াটারটাউন। কী? শুনেছেন কখনো এ
নামগুলো? নাম দেখে অন্তত এটা অনুমান
করতে পারার কথা যে, এগুলো কোনো
স্থানের নাম, মানুষের নয়। তাহলে এটা কোন
জায়গা?
আচ্ছা, আপনি কি ‘এরিয়া ৫১’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের
একটি জায়গার নাম শুনেছেন? যদি শুনে থাকেন,
তাহলে বলবো উপরের উল্লেখ করা সেই
চারটি নামও আসলে এই এরিয়া ৫১ এরই অন্য নাম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর অত্যন্ত
গোপনীয় এ ফ্যাসিলিটির অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের
দক্ষিণাঞ্চলে। এখানে বর্তমানে ঠিক কোন
বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে তা জানার কোনো
উপায় নেই। তবে ইতিহাস বলে যে, বিভিন্ন
এয়ারক্রাফট ও ওয়েপন সিস্টেম নিয়েই
পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয় এ জায়গাটিতে।
শুরু থেকেই গোপনীয়তার দুর্ভেদ্য
চাদরে মোড়ানো বলে এরিয়া ৫১ নিয়ে রহস্য
ঘনীভূত হয়েছে দিনকে দিন। জমাট বাধা এ
রহস্য থেকেই কালক্রমে জন্ম নিয়েছে
বেশ কিছু কন্সপিরেসি থিওরি। আমাদের
আজকের এ লেখার মূল উদ্দেশ্য সেই
কন্সপিরেসি থিওরিগুলোই তুলে ধরা। পাশাপাশি
সেই থিওরিগুলো কিভাবে এলো এবং
বর্তমানে সেখানে কী চলছে তারও উত্তর
খোঁজার চেষ্টা করা হবে আজ। চলুন তবে
দেরি না করে এলিয়েন, ইউএফও, চাঁদে
অবতরণ ইত্যাদি নিয়ে কন্সপিরেসি থিওরিগুলোর
সাথেই পরিচিত হওয়া যাক আগে।
রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে বানানো হয় এলিয়েন
স্পেসক্রাফটঃ
১৯৮৯ সালের কথা। বব লাজার নামের এক দাবী
করে বসেন যে, তিনি কিছুদিনের জন্য এরিয়া
৫১ এরই একটি অংশে কাজ করেছিলেন, যার নাম
এস-৪। সেই জায়গাটি এতটাই গোপনীয় যে,
ঐ প্রজেক্টে তিনি এবং তার অন্যান্য
সহকর্মীদের যে বাসে করে নেয়া
হয়েছিলো, তার জানালাগুলো বন্ধ ছিলো
যাতে করে তারা যাতায়াতের রাস্তা মনে রাখতে
না পারেন।
এস-৪ এর বিমান ছাউনিতে লাজার এমন সব ফ্লাইং
সসার দেখতে পেয়েছিলেন, যেগুলো
কোনোভাবেই পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে
না বলে দাবী লাজারের। সেগুলোর শক্তি
সরবরাহ করা হচ্ছিলো এন্টিম্যাটার রিঅ্যাক্টরের
মাধ্যমে, জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো
লালচে-কমলা বর্ণের একটি পদার্থ যার
নাম ‘এলিমেন্ট-১১৫’ । সসারটি এতটাই শক্তিশালী
গ্র্যাভিটি ওয়েভ তৈরি করছিলো যে, সেটার
উদ্দেশ্যে কোনো গলফ বল ছুঁড়ে
মারলে সেটাও ফিরে আসছিলো!
লাজারের মতে, সামরিক খাতে ব্যবহারের
উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার রিভার্স
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করছিলো
ইউএফও (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং
অবজেক্ট)! দুর্ভাগ্য বলতে হবে লাজারের।
একবার বন্ধুদের নিয়ে তিনি লুকিয়ে সেসব
সসারের টেস্ট ফ্লাইট দেখতে গিয়ে ধরা
পড়ে যান। এরপরই তার চাকরি চলে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এলিয়েনদেরঃ
ইউএফও’র কথা যখন এসেছে, তখন
অবধারিতভাবেই আরেকটি যে সত্তার কথা
আসে তা হলো এলিয়েন অর্থাৎ ভিনগ্রহের
প্রাণী। আর এই ভিনগ্রহের প্রাণীদের নাকি
জেলখানার আসামীর মতোই জিজ্ঞাসাবাদ করা
হয় এরিয়া-৫১ এ! এমনটাই দাবি করেছেন ঐ
ইউএফও তত্ত্বের প্রবক্তা বব লাজার।
একবার যখন তিনি এস-৪ এর একটি হলওয়ে ধরে
যাচ্ছিলেন, তখন পাশের একটি ঘরের ছোট
জানালা দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য উঁকি দেন তিনি।
তখন ঘরের ভেতরে ছোট, ধূসর বর্ণের
একটি প্রাণীকে সাদা কোট পরিহিত দুজন
মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন
তিনি! পরে অবশ্য তার পেছনে আসা প্রহরীর
ঝাড়ি খেয়ে বেচারা সেখান থেকে সরে
যেতে বাধ্য হন।
১৯৯৭ সালে এমন দাবি করেছিলেন ভিক্টর
নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি এরিয়া ৫১ এ চাকরি
করেন বলে দাবি করেছিলেন। তিনিও
এলিয়েনদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারটি
দেখেছিলেন বলে জানান। এমনকি তিনি একটি
ঝাপসা ভিডিও করেছিলেন যেখানে দেখা যায়
যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হাতে গুলি
খাওয়া এক বহির্জাগতিক পাইলটের সাথে
টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা
চালাচ্ছেন এরিয়া ৫১ এর একজন অফিসার।
এলিয়েনদের ময়নাতদন্তঃ
এরিয়া ৫১ এর ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা
বোধহয় এলিয়েনদের শান্তিতে থাকতে
দিতে চান নি। তাই শুরুতে তাদের স্পেসক্রাফট
চুরি, এরপর জিজ্ঞাসাবাদের ঝামেলা
পোহানোর পর একেবারে তাদের
ময়নাতদন্ত করিয়ে ছাড়লেন!
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি
দিককার কথা। হঠাৎ করে সতের মিনিটের একটি
ভিডিও টেপ ছড়িয়ে পড়েছিলো যেখানে
দেখা যায় বায়ো-হ্যাজার্ড প্রোটেকশন স্যুট
পরিহিত একদল মানুষ ছোটখাট একটি
এলিয়েনের দেহ নিয়ে গবেষণা করছেন।
তবে ভিডিওটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে
অনেকেই জানান যে, গবেষক দলের
অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি নড়াচড়ার ধরনটা
ছিলো বেশ আনাড়ি রকমের, যা একে ভুয়া
হিসেবে প্রমাণিত করে!
বছরখানেক পরে ভিডিওটির পরিচালক আরেকটি
ডকুমেন্টরি বানান। সেখানে তিনি দাবি করেন
যে, তাদের দলটি আসলেই এলিয়েনের
ময়নাতদন্ত করেছিলো। তবে মূল ভিডিওর
ক্লিপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা নকল আরেকটি
ভিডিও বানিয়ে সেটিই বাজারে ছেড়েছিলেন!
তবে আপনি যদি এলিয়েনদের ময়নাতদন্ত
তত্ত্বে এরপরও বিশ্বাস করতে চান, তাহলে
হতাশ হবেন না। কারণ ২০১২ সালে ‘Alien from
Area 51: The Alien Autopsy Footage
Revealed’ শিরোনামে একটি ডিভিডি
বেরিয়েছিলো, যেখানে আবার সতর্কতা
হিসেবে লেখা আছে- ‘Graphic Material’ !
২০১৪ সালে সর্বশেষ এমন আরেকটি ভিডিও
দেখা যায়। সেই ভিডিওতে প্রায় ৪ ফুট লম্বা
গিয়েছিলো।
চাঁদে অবতরণ স্রেফ সাজানো ঘটনাঃ
“That’s one small step for man, one
giant leap for mankind”
চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখার পর মহাকাশচারী
নীল আর্মস্ট্রংয়ের এই কথাটি স্থান করে
নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তবে এরিয়া ৫১
কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের মতে,
অ্যাপোলো-১১ দিয়ে চাঁদে অবতরণের
ঘটনাটি স্রেফ ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না!
এ ধারণাটির প্রবক্তা কনস্পিরেসি লেখক বিল
কেসিং। তার মতে, ষাটের দশকের শেষের
দিকে নাসার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে,
তীব্র তেজষ্ক্রিয়তার জন্য চাঁদের বুকে
অবতরণ করা কোনো মানুষ আর বেঁচে
ফিরতে পারবে না! কিন্তু এতদিন ধরে চালানো
এই প্রোগ্রামও বাতিল করা সম্ভব ছিলো না। তাই
তারা আশ্রয় নেয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা
জালিয়াতির!
এজন্য অ্যাপোলো-১১ জনগণের
দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার পরই গোপন
একটি মিলিটারি এয়ারক্রাফটে করে ক্রুদের
নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পূর্বপ্রস্তুত একটি মুভি
স্টেজে! এর কিছুদিন পরে সেখানেই স্থাপন
করা সব ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেন নীল
আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। এরপর সেই ভিডিওই
বিশ্বজুড়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় নাসার পক্ষ
থেকে।
কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের কল্পনার দৌঁড়ের গতি
যে এক্ষেত্রে উসাইন বোল্টকেও হার
মানিয়েছিলো, তা বোধহয় না বললেও চলে।
মাটির তলায় ৪০ তলা বাঙ্কারঃ
এরিয়া-৫১ এ যে আসলে কী আছে সেই
সম্পর্কে জনগণের ধারণা বেশ কম। এই কম
ধারণা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছে
নানা কল্পনার শাখা-প্রশাখা।
এই যেমন মাটির তলার বাঙ্কারটির কথা বলা যায়।
কোনো কোনো কন্সপিরেসি থিওরিস্টের
মতে, এরিয়া-৫১ এ মাটির নিচে বিশাল বাঙ্কার গড়ে
তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর সেখানেও
রয়েছে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক আশীর্বাদপুষ্ট
বিমানের আনাগোনা। সেই বিমানগুলোকে
সেখানে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে করে
স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও সেগুলোর
কোনো হদিস কেউ না পায়। কারো মতে
সেই বাঙ্কারগুলো ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু!
আবারো বব লাজারের শরণাপন্ন হওয়া লাগে
বাঙ্কারের কথায়। তার মতে, এলিয়েনদের
সেই স্পেসক্রাফটগুলো লুকিয়ে রাখা হয়
পাহাড়ের নিচে। সেই বাঙ্কারের
প্রবেশপথে রয়েছে বিশাল বড় দরজা যার
ডিজাইন আশেপাশের মাটির মতোই করা। ফলে
দূর থেকে দেখে একে পাহাড়ের অংশই
ভাববে যে কেউ!
মানুষ-এলিয়েন সংকরঃ
এখন যে কন্সপিরেসি থিওরির কথা বলবো,
সেটা শুনলে আশ্চর্য হবার পাশাপাশি বেশ মজাও
লাগার কথা। কারো কারো মতে, এরিয়া ৫১ এ
আসলে একসাথে কাজ করছে আমেরিকান
সরকার এবং ভিনগ্রহের প্রাণীরা।
তাদের ধারণানুযায়ী, সেখানে দুই পক্ষের
মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষ ও এলিয়েনের এমন
সংকর প্রজাতি বানাতে কাজ চলছে যাদের
দেখলে মনে হবে তারা মানুষ। কিন্তু শারীরিক
ও মানসিকভাবে তারা হবে সেই এলিয়েনদের
মতোই! তারাই নাকি ভবিষ্যতের পৃথিবীতে
নেতৃত্ব দিবে। অনেকে আবার কল্পনার
ডানাকে আরো অনেক দূর প্রসারিত করে
বলে যে, এখানে যে সংকর প্রজাতির জন্ম
দেয়া হচ্ছে, তারা আসলে এলিয়েন নিয়ন্ত্রিত।
ভবিষ্যতে যদি কোনো কারণে অঙ্গ
প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে, তাহলে এলিয়েনরা
গবেষণাগারে জন্মানো এসব সংকর প্রাণীর
অঙ্গই ব্যবহার করবে!
আবহাওয়া পরিবর্তনের পরীক্ষানিরীক্ষাঃ
আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের
তথ্য মোতাবেক, গত শতাব্দীর চল্লিশের
দশকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের
সেনাবাহিনী মেঘের পরিবর্তন করে
বৃষ্টিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা
নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলো। আবার ১৯৬২
থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে
ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড অ্যাটমস্ফেরিক
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ
কমানোর জন্য কাজ করেছিলো, যদিও
তাদের সেই গবেষণা ততটা ফলপ্রসূ হয় নি।
এ থেকেই অনেকে ধারণা করে থাকে যে,
আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য এমন বিভিন্ন
পরীক্ষাও চলে এরিয়া ৫১ এ।
ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টঃ
‘ম্যাজেস্টিক ১২’ নামে সুপরিচিত একটি টার্ম
আছে, যা দিয়ে আমেরিকার একটি গোপন
দলকে বোঝায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও সামরিক
বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সেই দলটি
নাকি গত ছয় দশক ধরে নিরলস পরিশ্রম করে
যাচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা করার জন্য যাতে
আমাদের এই ধরণীটি একইসাথে মানুষ এবং
অভিজাত এলিয়েনরা পরিচালনা করতে পারবে!
ম্যাজেস্টিক ১২ নাকি ইতোমধ্যেই
এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ করতে
সক্ষম হয়েছে। ১৯৪৭ সালে সূত্রপাত হওয়া এ
প্রজেক্টের মাধ্যমে এলিয়েনদের বিভিন্ন
প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এসেছে বলে
দাবি কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের। বিনিময়ে
এলিয়েনরা পেয়েছিলো বিভিন্ন পশুপাখি,
এমনকি মানুষের উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
চালানোর অধিকার!
সময় পরিভ্রমণ ও টেলিপোর্টেশনঃ
মাঝে মাঝেই আমাদের ইচ্ছা করে অতীতে
ফিরে গিয়ে নিজের ছোটবেলার সেই
সত্তাটাকে একবার দেখে আসতে,
কৈশোরের রঙিন সময়গুলোতে ফিরে
যেতে কিংবা জীবনে নেয়া ভুল
সিদ্ধান্তগুলো অতীতে গিয়ে
কোনোভাবে পাল্টে দিতে। এছাড়াও
অতীতের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে
সামনাসামনি দেখা করতে কিংবা অতীতের বিখ্যাত
কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতেও ইচ্ছা
করে কারো কারো। শুধু অতীতের কথাই বা
বলছি কেন? বর্তমান নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকা
মানুষগুলো মাঝে মাঝেই জানতে চায় তাদের
ভবিষ্যতে কী আছে তা জানতে। এ সবই
সম্ভব হতো যদি সময় পরিভ্রমণ নামক বিষয়টি
সম্ভব হতো।
এবার আসা যাক টেলিপোর্টেশনের কথায়।
সায়েন্স ফিকশন গল্প ও সিনেমার পাগলেরা এ
বিষয়টির সাথে পরিচিত অনেক আগে থেকেই।
মুহুর্তের মাঝেই এক জায়গা থেকে আরেক
জায়গায় চলে যেতে পারার বিষয়টিকেই সাধারণত
ও শক্তি উভয়েরই স্থানান্তর সম্ভব বলে মনে
করা হয়। মানব কল্পনার এ বিষয় দুটো নিয়ে এরিয়া
৫১ এ কাজ চলছে বলে মনে করেন
অনেকে।
এতটুকু পড়ার পর যে কারো মনেই প্রশ্ন
জাগবে যে, “এত কনস্পিরেসি থিওরি যে
জায়গাটাকে ঘিরে, সেখানে আসলে হয়টা
কী? আর এত রহস্য জন্মালোই বা
কিভাবে?” এমন প্রশ্ন আসাটা খুবই স্বাভাবিক। এখন
তাহলে এ দুটো প্রশ্নের উত্তরই খোঁজা
যাক। শুরু করছি প্রথম প্রশ্নটি দিয়ে।
এজন্য আমাদের চলে যেতে হবে দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়টাতে। তখনকার
সোভিয়েত ইউনিয়নের মতিগতি, তারা কী নিয়ে
গবেষণা করছে, তারা কোনো আকস্মিক
হামলা করে বসবে কিনা ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় নিয়ে
বেশ উত্তপ্ত ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের
রাজনীতিবিদদের মস্তিষ্ক। পঞ্চাশের
দশকের শুরুর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের
বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য
অপেক্ষাকৃত নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান পাঠায়
যুক্তরাষ্ট্র। তবে সোভিয়েত বাহিনীর হাতে
সেগুলো ভূপাতিত হবার আশঙ্কা ছিলো।
অবশেষে ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি.
আইজেনহাওয়ার এক গোপন
প্রোজেক্টের অনুমোদন দেন। সেই
প্রোজেক্টের লক্ষ্য ছিলো এমন
এয়ারক্রাফট বানানো যেগুলো অনেক উচ্চতা
থেকেও শত্রুপক্ষের বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি
করতে পারবে। এ প্রোগ্রামের ফসল
হিসেবেই পরবর্তীতে তারা তৈরি করেছিলো
ইউ-২ স্পাই প্লেন।
এ প্লেনগুলোর চালনার প্রশিক্ষণ ও
পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর জন্য দরকার
ছিলো লোকালয় থেকে দূরবর্তী গোপন
কোনো জায়গা। শেষ পর্যন্ত নেভাডা
মরুভূমির দক্ষিণে গ্রুম লেকের কাছাকাছি এলাকায়
সন্ধান মেলে পছন্দনীয় সেই জায়গার। এ
জায়গাটিই আজ সকলের কাছে এরিয়া ৫১ নামে
পরিচিত।
১৯৫৫ সালের জুলাই থেকে ইউ-২ স্পাই
প্লেনের টেস্ট ফ্লাইট শুরু হয়। মজার ব্যাপার
হলো, এর অল্প কিছুদিনের মাঝেই
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গা
থেকে ‘ইউএফও’ দেখার দাবি করতে শুরু
করে লোকজন। এর পেছনের কারণটা
অবশ্য বেশ মজার।
ইউএফও দেখতে পাওয়ার দাবি করা মানুষগুলোর
অধিকাংশই ছিলো কমার্শিয়াল এয়ারলাইনের পাইলট।
তৎকালে এরোপ্লেনগুলো সাধারণত ১০,০০০
থেকে ২০,০০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়তো।
মিলিটারি এরোপ্লেনগুলো উড়তো আরো
উঁচু দিয়ে, প্রায় ৪০,০০০ ফুট। অনেকেই ধারণা
করতো যে, ‘মানুষের তৈরি’ কোনো
এরোপ্লেন এর বেশি উঁচু দিয়ে উড়তে
পারবে না! আর ঠিক এ জায়গাতেই লেগে
গেলো যত গোলমাল। কারণ ইউ-২ প্লেনটি
উড়ে যেত ৬০,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতা
দিয়ে!
ব্যাস, এখানেই মানুষের মনে ঢুকে গেলো
অবিশ্বাস। “এটা মানুষের বানানো হতেই পারে
না। এটা অবশ্যই এলিয়েনদের বানানো
কোনো ইউএফও!”
বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য
জানতেন যে, ইউএফও দাবি করা জিনিসগুলো
আসলে তাদের গোপন প্রোজেক্টের
ইউ-২ স্পাই প্লেন। কিন্তু এ সত্যটি জনসম্মুখে
বলা বারণ ছিলো তাদের জন্য। কারণ এটি ছিলো
একটি টপ সিক্রেট প্রোজেক্ট। ফলে
লোকমুখে ছড়াতেই থাকে ইউএফও
দেখতে পাওয়ার সেসব ভিত্তিহীন দাবি।
পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে ইউ-২ এর
অপারেশন স্থগিত করা হলেও এরিয়া-৫১ এ
চলতে থাকে অন্যান্য আরো স্টেলথ
এয়ারক্রাফট নিয়ে গবেষণা। এগুলোর মাঝে
ছিলো A-12, Bird of Prey, F-117A এবং Tacit
Blue। ফলে গুজবের ডালপালার বিস্তৃতি
কখনোই থেমে থাকে নি। এরপরই আসে
১৯৮৯ সালে বব লাজারের সেই বিষ্ফোরক
মন্তব্য যা সেখানে কাজ করা ইঞ্জিনিয়ারদের
অনেকেই ভালভাবে নেন নি। তখন সেখানকার
বিজ্ঞানীদের মানসিক অবস্থা বোঝাতে
গিয়ে প্রায় তিন দশক ধরে এরিয়া ৫১ নিয়ে
গবেষণা করা এরোস্পেস ইতিহাসবিদ ও লেখক
পিটার মার্লিন বলতে বাধ্য হন, “Some are even
mad because they worked on these things
and built these amazing planes. This is
Earth technology. You got folks claiming it’s
extraterrestrial when it’s really good old
American know-how.”
এখন তাহলে প্রথম প্রশ্নের উত্তটা খোঁজার
মধ্য দিয়ে আজকের দীর্ঘ এ লেখাটির ইতি
টানা যাক। এরিয়া ৫১ এখনো বহাল তবিয়তেই
চলছে। এখন এর সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে।
তবে ভেতরে যে ঠিক কী নিয়ে কাজ
চলছে তা নিয়ে বাইরের জগতে বসে অনুমান
করা খুব কঠিন। আর অনুমান করলেও সেটা সঠিক
কিনা তা যাচাইয়ের কোনো উপায়ও নেই।
পিটার মার্লিনের মতে এরিয়া ৫১ এ বর্তমানে
উন্নততর স্টেলথ টেকনোলজি, অ্যাডভান্সড
ওয়েপন, ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার এবং
ইউএভি (আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিক্ল) নিয়ে কাজ
হচ্ছে। ওদিকে ইউ-২ বিষয়ক ইতিহাসবিদ ক্রিস
পোককের মতে এখন সেখানে বিশেষ
ধরনের এয়ারক্রাফট, রেডিও কমিউনিকেশনের
অত্যাধুনিক কোনো প্রযুক্তি, ডিরেক্টেড
এনার্জি ওয়েপন এবং লেজার নিয়ে গবেষণা
চলছে।
কী মনে হয় আপনার? কনস্পিরেসি
থিওরিস্টদের মতো আপনিও কি মনে করেন
ইউএফও, এলিয়েন, ওয়ান-ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট
নিয়ে কাজ চলছে এরিয়া ৫১ এ? নাকি মার্লিন,
পোককের মতো ইতিহাসবিদদের কথাই সঠিক
যা বানচাল করে দেয় অনেকের স্বপ্নের
ইউএফও আর এলিয়েনদের? সঠিক উত্তরটা কি
আদৌ পাওয়া সম্ভব?
caliye jao…
continue ………