আসসালামুয়ালাইকুম
সকালে উঠেই টপকোডারে এ লেখা দেখলাম “একটি শিশুকে একই আইফোন দিলে সে দিনরাত অ্যাংগ্রি বার্ডস খেলবে, শিশুটিকে কোডিং শিখালে সে আইফোনটার জন্য সফট্ওয়্যার তৈরি করবে” দারুণ এই লেখাটা দেখে মনে হলো কেন আমরা প্রোগ্রামিং বা কোডিং শিখবো সেটা নিয়ে বাংলায় কিছু লিখি। এ লেখাটি প্রোগ্রামিং নিয়ে যাদের কোনো ধারণা নেই বা খুব সামান্য ধারণা আছে তাদের আগ্রহী করে তোলার একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা।
কম্পিউটার একটি অসম্ভব ক্ষমতাবান কিন্তু নির্বোধ একটি যন্ত্র। একটি যন্ত্র ৫০জন সাধারণ মানুষের কাজ একাই করতে পারে কিন্তু ৫০টি যন্ত্র একটি অসাধারণ মানুষের কাজ করতে পারেনা(Hubbard, Elbert)। প্রোগ্রামিং শিখে আমরা একেকজন হয়ে উঠতে পারি সেই মানুষটি যে এই যন্ত্রকে ইচ্ছামত কথা শোনাতে পারে। তুমি যা বলবে যেভাবে কম্পিউটার তাই করবে, এটাই হলো সোজা কথায় প্রোগ্রামিং। হয়তো বলতে পারো এখনইতো কম্পিউটার সেটা করে, আমি গান শুনাতে বললে সে শুনিয়ে দেয়, আমি গেম খেলতে চাইলে সে আমার সাথে খেলতে শুরু করে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হলো একজন প্রোগ্রামার আগেই কম্পিউটারকে বলে রেখেছে যে তুমি গান শুনতে চাইলে সে যেন শুনিয়ে দেয়। সে যদি বলে রাখতো গেম খেলতে চাইলে পড়তে বসার উপদেশ দিতে তাহলে কম্পিউটার তাই করতো, তোমার কিছু করার থাকতোনা। প্রোগ্রামার হলো সে যার কথায় কম্পিউটার উঠা-বসা করে। দারুণ একটা ব্যাপার এটা, তাইনা?
কিন্তু তুমি কেন প্রোগ্রামিং শিখবে? বড় বড় কথা বলার আগে সবথেকে প্রথম কারণ আমি বলবো কারণ “প্রোগ্রামিং দারুণ মজার একটি জিনিস!”। কম্পিউটারের সাথে অন্য যন্ত্রের বড় পার্থক্য হলো এটা দিয়ে কতরকমের কাজ করানো যায় তার সীমা নেই বললে খুব একটা ভুল হবেনা। তাই প্রোগ্রামিং জানলে যে কতকিছু করা যায় তার তালিকা করতে বসলে শেষ করা কঠিন। তুমি দিনের পর দিন প্রোগ্রামিং করেও দেখবে জিনিসটা বোরিং হচ্ছেনা, প্রায় প্রতিদিনই নতুন মজার কিছু শিখছো, নতুন নতুন টেকনোলজী আবিষ্কারের সাথে সাথে তুমি আরো অনেক রকম কাজ করতে পারছো অথবা তুমিই করছো নতুন আবিষ্কার! আজ হয়তো জটিল কোনো সমীকরণ সমাধান করার জন্য ফাংশন লিখছো, কাল এসব ভালো লাগছেনা বলে লাল-নীল রঙ দিয়ে একটি অ্যানিমেশন বানাতে বসে গেলে, তোমার সৃষ্টিশীলতার সবটুকুই কাজে লাগাতে পারবে প্রোগ্রামিং এর জগতে।
একটি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে কম্পিউটার বা মোবাইল দিয়ে কি করে? রাশিয়া-চীনের ছেলেমেয়েরা অনেকেই হয়তো অ্যাসেম্বলিতে কোড লিখে, কিন্তু জরিপ না করেও বলা যায় আমাদের দেশে বেশিভাগই মুভি দেখা, ফেসবুক , গেমস ছাড়া খুব বেশি কিছু করেনা। আসলে কম্পিউটার দিয়ে কি করা যায় তার ধারণাও অনেকের নাই। ছেলে বা মেয়েটিকে প্রোগ্রামিং শিখিয়ে দেয়া হলে তার জগৎটাই পাল্টে যাবে। সে তখন সারাদিন গেমস না খেলে হয়তো একটি গেমস বানিয়ে ফেলবে। আমি বাংলাদেশেরই কিছু স্কুল-কলেজ পড়ুয়া প্রোগ্রামারদেরজানি যারা বাংলা কিবোর্ড নিয়ে কাজ করে, ওপেন সোর্স কমিউনিটিতে অবদান রাখে। প্রোগ্রামিং জানলে তুমি বুঝতে পারবে কম্পিউটার শুধু বিনোদনের যন্ত্র নয়, কম্পিউটার তৈরা করা হয়েছিল এর ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বড় বড় গবেষণা,হিসাব করার জন্য, তুমি যদি গবেষণা নাও করো অন্তত এই ক্ষমতাটা ব্যবহার শিখবে, সৃষ্টিশীল অনেক কাজ করতে পারবে। কম্পিউটারের জগতে অসাধারণ কিছু অগ্রগতি হয়েছে খুব কম বয়েসী প্রোগ্রামারদের দিয়ে, বিল গেটস স্কুলে থাকতেই চমকে দেয়ার মত কিছু প্রোগ্রাম লিখেছিলেন, প্রোগ্রামিং কনটেস্টে হাইরেটেড কোডারদের অনেকেই স্কুল-কলেজ এখনও শেষ করেনি।
প্রোগ্রামিং করা মানে আনন্দের সাথে শেখা। এই শেখাটা খালি কম্পিউটারের মধ্য সীমাবদ্ধ না, অধিকাংশ ভালো প্রোগ্রামারদের খুবই ভালো গাণিতিক এবং লজিকাল জ্ঞান থাকে। দাবা খেলার মতোই প্রোগ্রামিং পুরোটাই লজিকের খেলা, কোন কাজের পর কোনটা করলে কি হবে, কিভাবে করলে আরো দ্রুত ফলাফল আসবে এইসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে মস্তিষ্কের লজিকাল সেক্টরটা ডেভেলপ করে। আমার মতে চিন্তা করার মত আনন্দের এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ ২য়টি নেই। বিশেষ করে কম বয়সে প্রোগ্রামিং শিখালে সে চিন্তাশক্তি বৃদ্ধির যেই সুফলটা পাবে সেটা সারাজীবন কাজে লাগবে, সে যদি প্রোগ্রামিং পরে ছেড়েও দেয় তারপরেও চিন্তা করার ক্ষমতাটা থেকে যাবে।
প্রোগ্রামিং কি শুধু কম্পিউটার সাইন্স যারা পড়ে বা পড়তে চায় তারা শিখবে? সেটার কোনো যুক্তি নেই, তুমি যেই বিষয় নিয়েই পড়ছো বা পড়তে চাও, প্রোগ্রামিং তুমি আনন্দের জন্যই শিখতে পারো এবং চাইলে তোমার কাজেও লাগাতে পারো। তুমি বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়ে লেখাপড়া করলেতো কথাই নেই, তোমার গবেষণায় প্রতি মূহুর্তে কম্পিউটার লাগবে, তুমি বিজনেস, আর্টস পড়লেও প্রোগ্রামিং কাজে লাগবে। তুমি কোম্পানির জন্য দারুণ একটি ওয়েবসাইট বানাতে পারো, একটি সফটওয়্যার বানাতে পারো যেটা যেসব কাজ বোরিং সেগুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে করে দিবে! আমি অনেক সময় ছোটো-খাটো কিন্তু বোরিং কাজ করার সময় চট করে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলি, তারপর সেটাকে কাজ করতে দিয়ে ঘুম দেই!
অরিজিনাল পোস্ট লিংক
http://www.shafaetsplanet.com/?p=1437