সবাই কেমন আছেন।
আসা করি ভালো আছেন।
আছকে বিষয় হচ্ছে কুরবানীর শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী এবং কি কি করলে কুরবাননী শুদ্ধ হয়।
তো শুরু করা যাক।
১। কুরবানীর পশু যেন সেই শ্রেণী বা বয়সের হয় যে শ্রেণী ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। আর নির্ধারিত শ্রেণীর পশু চারটি; উঁট, গরু, ভেঁড়া ও ছাগল। অধিকাংশ উলামাদের মতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কুরবানী হল উঁট, অতঃপর গরু, তারপর মেষ (ভেঁড়া), তারপর ছাগল। আবার নর মেষ মাদা মেষ অপেক্ষা উত্তম। যেহেতু এ প্রসঙ্গে দলীল বর্ণিত হয়েছে। (আযওয়াউল বায়ান ৫/৬৩৪)
একটি উঁট অথবা গরুতে সাত ব্যক্তি কুরবানীর জন্য
শরীক হতে পারে।(মুসলিম ১৩১৮নং)
অন্য এক বর্ণনা মতে উঁট কুরবানীতেও দশ ব্যক্তি শরীক হতে পারে। ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, হাজ্জের কুরবানীতে দশ এবং সাধারণ কুরবানীতে সাত ব্যক্তি শরীক হওয়াটাই সঠিক। (নাইলুল আওত্বার ৮/১২৬)
কিন্তু মেষ বা ছাগে ভাগাভাগি বৈধ নয়। তবে তার সওয়াবে একাধিক ব্যক্তিকে শরীক করা যাবে। সুতরাং একটি পরিবারের তরফ থেকে মাত্র একটি মেষ বা ছাগ যথেষ্ট হবে। তাতে সেই পরিবারের লোক-সংখ্যা যতই হোক না কেন।
কিন্তু উঁট বা গরুর এক সপ্তাংশ একটি পরিবারের তরফ থেকে যথেষ্ট হবে কি? এ নিয়ে উলামাগণের মাঝে মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন, যথেষ্ট নয়। কারণ, তাতে ৭ জনের অধিক ব্যক্তির শরীক হওয়া বৈধ নয়। তা ছাড়া পরিবারের
তরফ থেকে একটি পূর্ণ ‘দম’ (জান) যথেষ্ট হবে। আর ৭ ভাগের ১ ভাগ পূর্ণ দম নয়।(ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ৬/১৪৯)
অনেকের মতে একটি মেষ বা ছাগের মতই এক সপ্তাংশ উঁট বা গরু যথেষ্ট হবে। (মাজালিসু আশরি যিলহাজ্জাহ, শুমাইমিরী, ২৬পৃঃ আল-মুমতে’ ইবনে উসাইমীন ৭/৪৬২-৪৬৩)
বলা বাহুল্য, একটি পরিবারের তরফ থেকে এক বা দুই ভাগ গরু কুরবানী দেওয়ার চাইতে ১টি ছাগল বা ভেঁড়া দেওয়াটাই অধিক উত্তম।
কুরবানীর সাথে একটি ভাগ আকীকার উদ্দেশ্যে দেওয়া যথেষ্ট নয়। যেমন যথেষ্ট নয় একটি পশু কুরবানী ও আকীকার নিয়তে যবেহ করা। কুরবানী ও আকীকার জন্য
পৃথক পৃথক পশু হতে হবে। অবশ্য যদি কোন শিশুর আকীকার দিন কুরবানীর দিনেই পরে এবং আকীকা যবেহ করে, তাহলে আর কুরবানী না দিলেও চলে। যেমন, দুটি গোসলের কারণ উপস্থিত হলে একটি গোসল করলেই যথেষ্ট, জুমআর দিনে ঈদের নামায পড়লে আর জুমআহ
না পড়লেও চলে, বিদায়ের সময় হাজ্জের তওয়াফ করলে আর বিদায়ী তওয়াফ না করলেও চলে, যোহরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে যোহরের সুন্নাত পড়লে পৃথক করে
আর তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়তে হয় না এবং তামাত্তু হাজ্জের কুরবানী দিলে আর পৃথকভাবে কুরবানী না দিলেও চলে। (মানারুস সাবীল ১/২৮০)
বয়সের দিক দিয়ে উঁটের পাঁচ বছর, গরুর দুই বছর এবং মেষ ও ছাগের এক বছর হওয়া জরুরী। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কুরবানী করা যায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘‘দাঁতালো ছাড়া যবেহ করো না। তবে তা দুর্লভ হলে ছয় মাসের মেষ যবেহ কর।’’ (মুসলিম ১৯৬৩নং)
কিন্তু উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছ’মাস বয়সী মেষের কুরবানী সিদ্ধ হবে; তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক। অধিকাংশ উলামাগণ ঐ হাদীসের আদেশকে ‘ইস্তিহবাব’ (উত্তম) বলে গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে, ঐ হাদীসের মর্মার্থ এ নয় যে, অন্য কুরবানীর
পশু না পাওয়া গেলে তবেই ছ’মাস বয়সের মেষ শাবকের কুরবানী বৈধ। যেহেতু এমন অন্যান্য দলীলও রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঐ বয়সী মেষেরও কুরবানী বৈধ;
প্রকাশতঃ যদিও কুরবানীদাতা অন্য দাঁতালো পশু পেয়েও থাকে। যেমন রসূল (সা.) বলেন, ‘‘ছ’মাস বয়সী মেষশাবক উত্তম কুরবানী।’’(মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৫, তিরমিযী)
উক্ববাহ বিন আমের (রা.) বলেন, (একদা) নবী (সা.) কুরবানীর পশু বিতরণ করলেন। উকবার ভাগে পড়ল এক ছয় মাসের মেষ। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাগে ছয় মাসের মেষ হল?’ প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এটা দিয়েই তুমি কুরবানী কর।’’ (বুখারী ২১৭৮, মুসলিম ১৯৬৫নং)
২। পশু যেন নিম্নোক্ত ত্রুটিসমূহ থেকে মুক্ত হয়;
(ক) এক চোখে স্পষ্ট অন্ধত্ব। (খ) স্পষ্ট ব্যাধি। (গ) স্পষ্ট খঞ্জতা। (ঘ) অন্তিম বার্ধক্য। এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সা.) বলেন, ‘‘চার রকমের পশু কুরবানী বৈধ বা সিদ্ধ হবে না; (এক চক্ষে) স্পষ্ট অন্ধত্বে অন্ধ, স্পষ্ট রোগা, স্পষ্ট খঞ্জতায় খঞ্জ এবং দুরারোগ্য ভগ্নপদ।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
অতত্রব এই চারের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সিদ্ধ হয় না। ইবনে কুদামাহ (রহ.) বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন মতভেদ আমরা জানি না।’ (মুগনী ১৩/৩৬৯)