Review & Trivia || Contain Spoiler













এক বৃদ্ধ সিজার তার শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করে যান তার প্রাণপ্রিয় জেনারেলের কাছে৷ আর এটাই কিনা কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য৷ সিজারের ছেলে তাকে মেরে সিংহাসন দখল করে নেয় এবং তার বাবার সে প্রাণপ্রিয় আর্মি জেনারেল মেক্সিমাস আনুগত্যে বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে সহ তার পুরো পরিবারকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে ৷ বাধ্য হয়ে জেনারেল মেক্সিমাসও দাঁড়িয়ে যান রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে! তার প্রতিশোধের জার্নিটাই প্রতিপাদিত হয়েছে এ গল্পে৷ 

ধুন্ধুমার একশন আর রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারের জন্য প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলো বেশ চাহিদা জুগিয়ে এসেছে বহু বছর। আর সে চাহিদা পুরণেই এ প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে বহু বই, এবং নির্মিত হয়েছে অনেক মুভি৷ গ্লাডিয়েটর মুভিটিরও মূল প্রতিপাদ্য নেওয়া হয়েছে একটি বই থেকে। ১৯৫৮ সালের ‘ড্যানিয়েল পি. ম্যানিক্সের লেখা বই “দোস এবাউট টু ডাই” এর সারাংশ হল এ মুভি। বইটি “দ্য ওয়ে অভ দি গ্লাডিয়েটরস্” নামেও পরিচিত। মুভির স্ক্রিপ্ট লেখার মূল দায়িত্বে ছিলেন ডেভিড ফ্রানজোনি। ড্রিমওয়ার্ক্ পিকচার্স এর নিবেদনে এবং রিডলি স্কটের পরিচালনায় গ্লাডিয়েটরের প্রাথমিক ফোটোগ্রাফি শুটিং শুরু হয় মূলত ১৯৯৯ সালেই৷ মাল্টার ফোর্ট রিকাসলি কে ক্যামেরায় রোমের কলোসিয়ামের দৃশ্যে ধারণ করা হয়৷ ফোর্ট রিকাসলিকে মাত্র কলোসিয়ামের এক তৃতীয়াংশ রুপ দেওয়া গেছে৷ বাকী দুই অংশ ‘কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি ইফেক্টস্’ এর সাহায্যে ক্রিয়েট করা হয়েছে৷ এবং সেটার জন্য তারা প্লাস্টার এবং প্লাইউডের সাহায্যে ৫২ ফিটের একটি আস্ত দেয়ালই বানিয়েছিল৷ এবং শুধু এটাতেই খরচ হয়ে গেছে ১ মিলিয়ন ডলার। ইমেজারি ইফেক্টস এর কাজগুলো করেছে ব্রিটিশ প্রোডাকশন হাউজ ‘দ্য মিল’

তাজ্জব ব্যাপার হল প্রক্সিমোর চরিত্রে অভিনয় করা অলিভার রীড মাল্টাতে শুটিং চলাকালেই হার্ট এট্যাক করে মারা যান৷ তখনো তার সব সিন শ্যুট করা হয়নি৷ কিন্তু ভিন্ন কোনো অপশন না ভেবে সরাসরি অলিভার রীডের ডাবল ফেস ইমেজ নির্মাণ করে দেয় ‘দ্য মিল’ এটা এতটাই নিখুঁত ছিল যে পার্থক্য ধরাই যায়নি কোনটা আসল অলিভার রীড আর কোনটা তার কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ৷ আর এর পিছনে খরচ পড়েছে ৩.২ মিলিয়ন ডলার।

আরোও আশ্চর্যজনক লেগেছে অপেনিং ব্যাটল সিন। এটা মূলত শ্যুটিং করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সারি শহরের ফার্নহাম এলাকার বর্ন উড বনে৷ ঠিক একই বনে শ্যুট করা হয়েছে “ব্যান্ড অভ ব্রাদার্স, ওয়ারহোর্স, থর : দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড, রবিন হুড, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, ওল্ফম্যান এবং অ্যাভেঞ্জার্স : এজ অভ উল্ট্রন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ব্রিটিশ রয়্যাল ফরেস্ট্রি কমিসন রিডলি স্কটকে অরণ্যবিন্যাসের অনুমতি দিয়েছিল, এবং ব্যাটল সিনে আগুনে যেসব গাছের সলিলসমাধি হচ্ছিল সেগুলো ছিল বাস্তব এবং সেটার জন্য রিডলি স্কটকে কোনো বাড়তি খরচ বহন করতে হয়নি৷

শ্যুটিং কে বাস্তবসম্মত রুপ দিতে খরচ করা হয়েছে দেদারসে। শুধু পোষাক এবং সাজ সজ্জার জন্যই বানানো হয়েছিল ২৭,৫০০ আর্মার স্যুট। এর মাঝে ১০০ ছিল স্টিল আর্মার এবং ৫০০ নরম জাতীয় স্যুট৷ 

কাশফুল বনে রাসেল ক্রো’র যে হাতটি দেখা যায় তা আসলে ক্রো’র স্টান্ট ডাবল স্টুয়ার্ট ক্লার্কের হাত। এবং যে বাড়িটিকে ক্রো’র ফ্যামিলির বাড়ি হিসেবে দেখানো হয়েছে তা মূলত ক্রো’র নিজেরই অস্ট্রেলিয়াতে একটি বাড়ি৷

হাস্যকর হলেও সত্য যে মেক্সিমাসের চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছিল হাল্ক মুভিতে হাল্ক সিকিউরিটি গার্ড ভূমিকায় অভিনয় করা লুও ফেরিগনোকে। তবে প্রডাকশন হাউজ থেকে মেল গিবসন কে প্রথমে এ চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়। কিন্তু তিনি নিজে থেকেই নাকচ করে দেন৷ কারণ তখন তার বয়স ছিল ৪৩ বছর৷ এ চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে সেটা বড় বেশী বয়স হয়ে যায়৷ পরে অবশ্য এন্টনিও ব্যান্ডারেস এবং হিউ জ্যাকম্যানকেও বিবেচনা করা হয়।

পরে সব জল্পনা কল্পনা ছাপিয়ে নাম লেখান রাসেল ক্রো৷ এবং বাজিমাত করে দেন৷ হিউ জ্যাকম্যান হলে কেমন হত তা বলতে পারব না৷ কিন্তু ক্রো যে এই চরিত্রের জন্য পারফেক্ট ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। অভিনয়ে এমন পারদর্শীতা ফুটে উঠেছে তাঁর মাঝে, মনেই হবে না ক্রো আলাদা কেউ, বরং মনে হবে তিনিই যেন মেক্সিমাস৷ স্বমহিমায় উদ্ধত সত্যবাদিতায় বিনত এক জেনারেলের কণ্ঠে যে গাম্ভীর্যতা থাকা দরকার তাঁর পুরোপুরি সঠিক ব্যবহার করেছেন রাসেল ক্রো ৷ বিশেষ করে কলোসিয়ামে তার পরিচায় দানের ডায়লগগুলো তো সবারই মুখস্ত৷ এ মুভির একশনে যেমন দর্শকের রক্ত টগবগ করে ফুটে তেমনি এর ডায়লগগুলোতে ছুটে উন্মাদনার ঝর৷












অন্যদিকে এন্টাগনিস্ট  কমোডাসের চরিত্রে অভিনয় করা জোয়াকিন ফিনিক্সের কথা আর কী বলব! একেবারে সেয়ানা সেয়ানা লড়াই হয়েছে মেক্সিমাস আর কমোডাসের মাঝে৷ যেমন তার প্রোটাগনিস্ট তেমন তার এন্টাগনিস্ট। জোকারে অতটা বুঝতে পারিনি কিন্তু এই মুভিতে বুঝতে পারলাম তার যেকোনো চরিত্রকে অদ্ভুত ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ দক্ষতা আছে৷ আমার মনে হয় না অন্য কেউ মেক্সিমাসের বিপরীতে এন্টাগনিস্ট হিসেবে এত পারফেক্ট হতে পারত!

তার বোনকে বলা am i not merciful?  কথাটি স্ক্রিপ্টে ছিল না৷ কিন্তু ফিনিক্সের এমন ডায়লগে তার বোনের মাঝে যে ভয়ের প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছিল তা ছিল একদম জেনুইন৷ সেজন্যই এটা পরে মূল দৃশ্য হয়ে যায়। এন্টাগনিস্ট হিসেবে অভিনয়ে ফিনিক্স দর্শকদেরকে তৃপ্ত করেছে বলাই যায়!

ব্রিটিশ আমেরিকান যৌথ এ সিনেমা ২০০০ সালের মে মাসের ১ তারিখে প্রথমে লস এঞ্জেলসে  প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়৷ এবং থিয়েটারিক্যালি আমেরিকায় ৫ মে এবং ইংল্যান্ডে ১১ মে রিলিজ হয়৷ রিলিজের পরপরই সিনেমাটির ধুন্ধুমার প্রশংসা শুরু হয় এবং প্রতিনিয়ত জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে৷ বিশেষ করে জোয়াকিন ফিনিক্স এবং রাসেল ক্রো’র অভিনয় ক্রিটিকদের কাছে আলাদা প্রশংসা পায়৷ সাথে ভূয়সী প্রশংসায় ভূষিত হয় স্কটের বিরল পরিচালনা, অসাধারণ ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস্, দূর্দান্ত স্ক্রিনপ্লে, চোখ ধাধানো একশন সিকুয়েন্স এবং মন মাতানো মিউজিক স্কোর৷
যেখানে হ্যান্স জিমার আছে মিউজিকে, সেখানে যে সোনা ফলবেই তা কি আর বলতে হয়৷

আমেরিকা জুড়ে সে বছর এর গ্রসিং ছিল ১৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পুরো বিশ্বব্যাপী ছিল ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার। সে বছরের অন্যতম বক্স অফিস সফল মুভি৷

অবশেষে মুভিটি রেকর্ডের ষোলকলা পূরণ করে অসংখ্য এওয়ার্ড জিতে নেয়। এর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি অস্কার জিতে নেয় ৭৩তম অস্কার এওয়ার্ডে। যার মাঝে স্বরণীয় হয়ে আছে রাসেল ক্রো’র একাডেমি এওয়ার্ড ফর বেস্ট এক্টর। অন্যান্য অস্কার এওয়ার্ডগুলো হলো বেস্ট পিকচার, বেস্ট কস্টিউম ডিজাইন, বেস্ট সাউন্ড এবং বেস্ট ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস্। একইসাথে এটি ৫৪তম বাফটা এওয়ার্ডে ৪টি এওয়ার্ড জিতে নেয়৷ বেস্ট ফিল্ম, বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি, বেস্ট প্রডাকশন ডিজাইন এবং বেস্ট এডিটিং।

মুভিটিকে ঐতিহাসিক কখনোই ধরা যাবে না৷ কারণ নাম গুলো ছাড়া কাহিনী সবই কাল্পনিক। অন্যদিকে ম্যাক্সিমাস নামে আসলে কেউ নেই৷ আবার কমোডাস কখনো তার বাবাকে মারেইনি৷ তিনি মরেছেন প্লেগ রোগে। তার মৃত্যুর পর কমোডাস ১২ বছর রোম শাসন করেন। তবে কমোডাসের মৃত্যুটাও স্বাভাবিক মরণ ছিল না৷ তাকে নার্সিসাস নামের এক বীর মেরেছিল। রোমের রিপাবলিকান গঠন, কমোডাস মেক্সিমাস ফাইট সবই ফিকশন৷

তবে মেক্সিমাস কাল্পনিক হলেও তার মাঝে অনেক সত্যিকারের রোমান বীরদের মিশেল পাওয়া যায়৷ যেমন : নার্সিসাস যে কমোডাসের হত্যাকারী।
স্পার্টাকাস : যিনি দাস বিদ্রোহ ঘটিয়ে ছিলেন।
সিনসিনানাটাস : যিনি রোমকে বাইরের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়েছিলেন৷
এবং মারকাস নোনিয়াস মাকরিনাস : যিনি ছিলেন একজন বিশ্বস্ত জেনারেল৷
সুতরাং এসব দিক ভেবে বলা যায়, ফিকশন বলেই যে তা বস্তাপচা তা নয়, বরং এটি একটি ট্র‍্যু হিস্টোরিক্যাল ফিকশন৷ যার গুরুত্ব বাস্তবতার মতই। সেজন্যই স্কট কিছু হিস্টোরিয়ানদেরকে এডভাইসর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন!!!

Gladiator | Action, Adventure, Historical
Imdb: 8.5/10 | English | 2h 51m 
Cast: Russell Croew, Joaquin Phoenix, Connie Nielsen, Oliver Reeds

 

 

এরকম আরও রিভিউ পেতে ঘুরে আসুন ব্লগটি: www.lamidnight.com

6 thoughts on "গ্লাডিয়েটর মুভির বাংলা ফুল রিভিউ"

  1. obaidollah Contributor says:
    ডাউনলোড লিংক কই
  2. bappi banik Author says:
    Downlod link na dite parle plz review korben na..
    1. Najmul Author Post Creator says:
      ট্রিকবিডির নীতিমালায় এমন নিয়ম দেওয়া নাই।
    2. bappi banik Author says:
      সব নীতিমাল থাকে না। কিন্তু ব্যাক্তিগত ভাবে ভেবে দেখুন। লিংক দিলে ভাল হত না খারাপ হত।
    3. YASIR-YCS Author says:
      Eita movie review এখানে লিংক অবশ্যই দিতে হবে এমন কোনো প্রয়োজন দেখি না আমি।

Leave a Reply