? No Spoiler
‘বাংলা মাস্টারক্লাস সিনেমা’
পর্ব – ০৩
যাদের বাংলাদেশী সিনেমা নিয়ে এলার্জি আছে তাদের জন্য কিছু বাংলা মাস্টারক্লাস কিংবা প্রথম সারির সিনেমার লিস্ট।
লিস্টটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত,যারা নিজের দেশের সিনেমাকে জানতে আগ্রহী তারা দেখতে পারেন সিনেমাগুলো।
প্রতিটি পর্বেই দশটি করে,মোট পাঁচটি পর্বে পঞ্চাশটি দারুন ছবির খোঁজ দেয়ার প্রচেষ্টা থাকবে।বেশিরভাগ সিনেমাই ইউটিউবে আছে।
?— ‘চার সতীনের ঘর’
আমাদের সমাজের বেশ বড় একটা সমস্যা কে সোজাসাপ্টা সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন পরিচালক নার্গিস আক্তার।বলা যায়,এক প্রকার জোর করেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এই সমস্যা কে সবসময় নারীদের দোষ হিসাবে ধরিয়ে দেয়।পারিবারিক ড্রামা জনরার ছবিটিতে চার সতীনের ভূমিকায় ছিলেন যথাক্রমে ববিতা,দিতি,ময়ূরী,শাবনূর।এই চারজনের ইমেজ,অভিনয় লেভেল অনুযায়ীই পরিচালক চুজ করেছেন।তাদের বিপরীতে ছিলেন আলমগীর,এবং ছোট বউয়ের প্রেমিক চরিত্রে মাহফুজ।
আই.এম.ডি.বি : ৬.৪/১০
ব্যক্তিগত : ৮/১০
?— ‘মোল্লা বাড়ির বউ’
আরেকটি কুসংস্কারের উপর বেসড করে সাজানো গল্প।সিনেমাটি শুধু দর্শক নন্দিতই নয় বরং সর্বমহলে প্রশংসিত।সালাউদ্দিন লাভলুর ভাল ভাল নাটক আমরা দেখেছি,তারই একমাত্র সিনেমা,মুক্তির বছর সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমাও।গল্পে কুসংস্কারের রেশ যে একটা পরিবার,কতগুলো সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে সেটা গল্পের লেখক এ.টি.এম শামসুজ্জামান বেশ জোরালো ভাবেই বুজিয়েছে।অসাধারন মেকিং,ঠিকঠাক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক,এবং হাস্যরসে ভরা এই ছবিতে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছে মৌসুমী,শাবনূর,রিয়াজ,প্রান রায় এবং এ.টি.এম শামসুজ্জামান।বলা যায় দুই নায়িকা এবং নায়কের অন্যতম অভিনয় নির্ভর সিনেমাও।পুরো ছবিই আপনাকে আনন্দে রাখবে,কিন্তু শেষের টুইস্টের জন্য যেন প্রস্তুতই ছিলাম না।
আই.এম.ডি.বি : ৭/১০
ব্যক্তিগত : ৮/১০
?— ‘শাস্তি’
রবীন্দ্র গল্প প্রথমবারের মতো পর্দায় আসে শাস্তি সিনেমার মাধ্যমে।এর গল্পটাই অসাধারণ,তবে শাস্তি নামটা আর শেষের শাস্তিটার রেশ কাটতে আপনার বেশ সময় লাগবে।সিনেমাটা দেখার পর আমরা অনেকেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দচয়নে বেশ যত্নশীল হবো।এখন অবধি পূর্নিমার সেরা কাজ,সাথে রিয়াজ,ইলিয়াস কাঞ্চন,চম্পারও দারুন অভিনয়।ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড মিলে গিয়েছিল দুখিরাম ও রাধা চরিত্রের ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার।এই সিনেমার সবথেকে ভাললাগার দিক গল্পটা যেমনি,ঠিক তেমনি প্রেজেন্ট করা হয়েছে।
আই.এম.ডি.বি : ৭.৬/১০
?— ‘শুভা’
‘শুভা’একজন বোবা মেয়ে,এই বোবা মেয়ের গল্পই লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শুভা গল্পে।আর তার সাকসেস পর্দা উপস্থাপন করেছেন চাষী নজরুল ইসলাম।এটিই আমার কাছে,শাকিব খানের একমাত্র কর্মাশিয়াল জনরার বাইরে গিয়ে অভিনয় করা সিনেমা।প্রতাপ চরিত্রে তাকে বেশ ভালই লেগেছে।শান্ত,স্থির,কথাহীন এক সুন্দরী তরুনীর ভূমিকায় পূর্নিমাও ঠিকঠাক।
আই.এম.ডি.বি : ৮.৫/১০
ব্যক্তিগত : ৭.৫/১০
?— ‘চন্দ্রকথা’
‘তুমি বাসো কিনা,আমি তা জানিনা।ভালবাসো কিনা,তাও আমি জানিনা।’এই গানটি আমার বেশ আগে থেকেই পছন্দ।পরবর্তীতে গানটি শুনলাম চন্দ্রকথা সিনেমায়।হুমায়ূন আহমেদ এই গল্পটাও বেশ যত্ন নিয়ে লিখেছেন,এবং এর পর্দা উপস্থাপনও বেশ ভাল।আসাদুজ্জামান নূর,শাওন,ফেরদৌস,আহমেদ রুবেল,চম্পা এরা বেশ ভালই অভিনয় করেছে।একটা সহজ-সরল গল্পকে কিভাবে এলোমেলো করে দেয়া যায় সেটা হুমায়ূন আহমেদ বেশ ভালভাবেই জানত।এই সিনেমার গানগুলো সবই বেশ পছন্দের।
আই.এম.ডি.বি : ৭.৬/১০
ব্যক্তিগত : ৮.৫/১০
?— ‘আগুনের পরশমনি’
যুদ্ধের প্লটে যদি দারুন গল্প,দারুন উত্তেজনার,দারুন পারিবারিক ড্রামার সিনেমা খোঁজা হয় তাহলে আগুনের পরশমনি বেস্ট,শুধু যুদ্ধেরই নয় সিনেমা হিসাবেও বেস্ট।গল্পে যুদ্ধের সময়ের একটা পরিবারের অবস্থা উঠে এসেছে,উঠে এসেছে সেই সময়ের অবস্থাও।ছবিটা যতবারই দেখেছি,ততবারই মনে হয়েছে এটা সিনেমা নয় যেন আমিই এই পরিস্থিতিতে ডুকে পড়েছি।এই ছবির নাম ছোটবেলায় মনে থাকত না,শুধু মনে থাকত একটা ছোট মেয়ে ডিমের খোসার উপর মানুষের ছবি আকঁত।সবাই যে যার চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে।উপন্যাসের মতোই পারফেক্ট নির্মান ছিল।অভিনয় করেছিলেন,আসাদুজ্জামান নূর,বিপাশা হায়াত,শীলা আহমেদ,আবুল হায়াত,ডলি জহুর।
আই.এম.ডি.বি : ৯.১/১০
ব্যক্তিগত : ৯.৫/১০
?— ‘নিরন্তর’
নিরন্তর সিনেমায় শাবনূরকে যখন কাস্ট করা হয়,তখন অনেকেই বলেছিল শাবনূর এরকম অফ ট্রাক গল্পে ভাল করবে না।কিন্ত একজন প্রাইভেট পতিতার চরিত্রে শাবনূর একদম তার অচেনা রুপ দেখিয়েছে।খদ্দেরের বিছানায় সে কি কারিশাম,আবার এই মেয়েটিই সংসারে ফিরে শান্ত বহমান নদীর মতো চুপচাপ।হুমায়ূন আহমেদের অন্যসব উপন্যাসের মতো এটায় খুব আবেগ রাখেনি,তবে জীবনের যে নিষ্টুরতা,বাস্তবতা যে কারও জীবনের নরম অনুভূতি গুলো কেড়ে নেয়,সেটা সে লেখায় ভালই বুজিয়েছে।এবং সিনেমাটি বাংলাদেশ থেকে অস্কারে নমিনেশন পেয়েছিল।
আই.এম.ডি.বি : ৬.৮/১০
ব্যক্তিগত : ৭.৫/১০
?— ‘জয়যাত্রা’
যুদ্ধের প্লটের আরেকটা টানটান উত্তেজনার সিনেমা।একটা ছাউনি দেয়া নৌকায় কতগুলো পরিবারের সদস্যদের ঠাঁই হয়।কত ধর্ম,বর্ণ,মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে সব এক হয়ে গিয়েছিলো একটি নৌকায়।সিনেমার প্রত্যেকটা দৃশ্য জীবন্ত,দৃশ্য কথা বলে।অসাধারন এই সিনেমার গল্প লিখেছেন আমজাদ হোসন,পরিচালক ছিলেন তৌকির আহমেদ।সম্ভবত এই সিনেমায় ই এতগুলো পরিচিত মুখের একসাথে দেখা মিলেছিল।অভিনয় করেছিলেন,মাহফুজ আহমেদ,বিপাশা হায়াত,আজিজুল হাকিম,তারিক আনাম খান,আবুল হায়াত,রোমানা,চাঁদনী,শাহেদ শরীফ,ইনতেখাব দিনার,জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়,মোশাররফ করিম,নাজৃা আনোয়ার,শামস সুমন,হুমায়ুন ফরিদী।
আই.এম.ডি.বি : ৮.৩/১০
ব্যক্তিগত : ৯.৫/১০
?— ‘শ্যামল ছায়া’
যুদ্ধের আরেকটা ফাইনেস্ট মুভির তালিকায় থাকা একটি।জয়যাত্রার মতো এখানেও গল্প আগাবে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায়,তবে একটু আলাদা ভাবে।এখানে কিছু ভিন্ন রঙে জীবনকে চেনা যাবে।শেষের টুইস্টটুকু সত্যিই কমপ্লিট একটা গল্পের মতো মানিয়ে দিয়েছে।অভিনয় করেছিল শাওন,আহমেদ রুবেল,রিয়াজ,তানিয়া আহমেদ,হুমায়ূন ফরিদী।
আই.এম.ডি.বি : ৮.৫/১০
ব্যক্তিগত : ৮.৫/১০
?— ‘কাল সকালে’
আগেই বলেছিলাম আমজাদ হোসেন মানেই কনটেন্টের গুরু।একটি গ্রাম্য সহজ-সরল,বোকা-সোকা মেয়ের যে কি পরিমান ট্রাজেডি সইতে হয় সেটা সে এই গল্পে ভালই তুলে ধরেছে।গল্পের ‘মালতী’ চরিত্রটা যেন সমাজের নিরব ধর্ষকদের অত্যাচারের প্রতীক।পুরো গল্পটাকেই একা টেনে নিয়ে গেছে শাবনূর।এবং এই সিনেমাটি চিত্রনায়িকা শাবনূরের সবথেকে প্রিয় সিনেমা।
আই.এম.ডি.বি : ৭.৪/১০
ব্যক্তিগত : ৮/১০
টু বি কন্টিনিউ. . . . .