কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় – বর্তমান বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকার বসে আছে। চাকরি নেই বাজারে। কিন্তু তা বলে বসে থাকলে কি জীবণ চলবে? সময় ঠিকি অতিবাহিত হবে এবং সেই সাথে আমাদেরও সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হবে।
আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে চাকরির পিছনে ছোটার পরিবর্তে নিজে একটি চাকরি তৈরি করার মনমানসিকতার উদ্ভব ঘটাতে হবে। একজন উদ্যোক্তা হতে হবে। শিক্ষিত একজন ব্যক্তি যদি উদ্যোক্তা হয় তবে সে যেমণ নিজের চাহিদা পূরণ করছে তেমনি কিছু লোককে সেখানে চাকরি দিয়ে বেকার সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করতে পারে। এখন আমাদের জানতে হবে উদ্যোক্তা কি? কারা উদ্যোক্তা হতে পারবে?
উদ্যোক্তা শব্দটি ফ্রেঞ্চ শব্দ থেকে এসেছে এর অর্থ হল “গ্রহণ করা”। উদ্যোক্তাদের সংজ্ঞায়িত করা হয় এইভাবে যে, যারা আর্থিক লাভের লক্ষ্য নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে থাকে। অর্থাৎ কেউ একজন আর্থিক লাভ করতে চাইলো কিন্তু ঝুঁকি নিলো না তাহলে সে উদ্যোক্তা হতে পারবে না। উদ্যোক্তা হওয়ার শর্তই হলো ঝুঁকি।
একজন উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রচেষ্টা, একটি নির্দিষ্ট লিখিত উদ্দেশ্য এবং তার গঠনপ্রণালী। একজন ব্যক্তি যেকোনো সময় নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। শুধু দরকার অদম্য মনোবল এবং ঝুঁকি নেয়ার সাহস। একজন উদ্যোক্তা হতে নিচের টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় সেই সম্পর্কেঃ
১। নিজের অবস্থান নির্ণয়
একজন উদ্যোক্তা হতে হলে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটা হলো নিজের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। আপনি যদি আপনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করুন। অন্য কারো উপর দোষ দিয়ে কোন লাভ হবে না। আপনার পরিবর্তন আপনাকেই করতে হবে।
আপনি মানসিক ভাবে আগে প্রস্তুত হোন যে আপনি ঝুঁকি নিতে সক্ষম। আপনি এখন যে অবস্থানে আছেন সেখান থেকে ব্যবসা শুরু করলে আদৌ উন্নতি সম্ভব নাকী ক্ষতি হবে সেগুলো আগে বিবেচনা করুন। কেননা আপনার ব্যক্তিগত অবস্থান সম্পর্কে শুধু মাত্র আপনিই জ্ঞাত। তাই উদ্যোক্তা হতে হলে আগে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানুন।
আরো পড়ুনঃ Winter Morning Paragraph
২। নির্দিষ্ট ব্যবসা চিহ্নিত করুণ
আপনি আগে ভাবুন বর্তমান বাজার সম্পর্কে। আপনার এলাকায় বাজারে কিসের চাহিদা আছে সে সম্পর্কে পড়াশোনা করুন। ২-৪ মাস সময় নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করুন। বাজারে কোন জিনিসের চাহিদা কেমন কোন জিনিসের দাম কেমন কোন জিনিস সহজলভ্য হবে ক্রেতাদের জন্য এসকল বিষয় বিবেচনা করুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন “কোন জিনিসটা বা কোন কাজটা আপনাকে কর্মশক্তি দান করে, আপনার আগ্রহ কিসের উপর বেশি?
”কারণ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এমন ধরণের কাজকে বেছে নিতে বলেছেন যে কাজটি করলে আপনার মাঝে ক্লান্তি আসবে না বরং কাজের স্পৃহা আরো বেড়েই যাবে। তাই নিজেকে নিয়ে একটু সময় নিয়ে ভাবুন। এবং সার্বিক দিকে নজর রাখুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন। দেখবেন এমন একটা ব্যবসার সন্ধান পেয়ে যাবেন যার মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন।
৩। বড় বড় উদ্যোক্তা যারা সফল হয়েছেন তাদের সাথে পরামর্শ করুন
আপনার চারপাশে এমন অনেক লোক আছে যারা নিজেরা একসময় কোন কাজের উদ্যোগ নিয়েছিলো এবং তারা সফলও হয়েছে। এবং এখন তারা বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের বিষয়ে খোঁজ নিন। তাদের কাছে জান, পরামর্শ নিন তাদের কাছে থেকে। তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তারা আপনাকে সঠিক গাইডলাইন দিতে পারবে।
৪। পরিশ্রম করতে হবে
আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো যেমণ প্রাণ আরএফএল কোম্পানি, আকিজ গ্রুপস এন্ড কোম্পানি ইত্যাদির মতো বিশাল বিশাল কোম্পানি গুলো এক দিনে এতো বড় হয়নি। গত ৩০-৪০ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেই তারা আজ এই পর্যন্ত এসেছে। তাই আপনি যদি বড় ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হতে চান আপনাকে অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে।
কেন পরিশ্রমই হলো উন্নতির চাবিকাঠি। তাই আপনি যদি অলস হয়ে থাকেন আর চিন্তা ভাবনা করেন বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক হবেন তাহলে আপনি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছেন। বাস্তবে ফিরে আসুন। পরিশ্রমী হওয়ার চেষ্টা করুন আপনার ভাগ্য বদলে যাবে।
৫। পরিকল্পনা
মানুষ যদি ২ দিনের জন্য কোথাও বেরাতেও যায় তবে তার জন্যও পূর্ব পরিকল্পনা থাকা আবশ্যিক। আর আপনি একজন বড় ব্যবসায়ী হবেন সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা ছাড়া এক ধাপ দেয়াও আপনার ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি হতে পারে। আপনাকে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
কিভাবে শুরু করবেন, কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন, কোন ব্যবসা পরিচালনা করবেন, কোন পণ্য নিয়ে উদ্যোগ নিবেন, কত জন কর্মি লাগবে, কতক্ষণ সময় তাদের দিয়ে কাজ করাবেন, তাদের বেতন ভাতা কত হবে, কিভাবে কাজ করালে আপনার ব্যবসায় এর বেশি উন্নতি হবে।
এবং কত টাকা খরচ করতে হবে একক সময়ে এসকল বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রেখে আপনাকে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এবং সেই পরিকল্পনা মাফিক সামনে এগতে হবে। তবেই আপনি সফলতার মুখ দেখতে পাবেন।
৬। নির্ধারিত ক্রেতা নির্ণয়
আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করবেন আগে আপনাকে দেখতে হবে সে পণ্যের বাজার চাহিদা কেমন। ক্রেতারা কি আপনার পণ্য আদৌ কিনবে কিনা এবং কত দামে কিনবে সেগুলো ভেবে দেখতে হবে। ক্রেতারা যে দামে কিনতে চায় সে দামে আপনি পণ্য সরবরাহ করলে আপনার কি পরিমাণ লাভ হবে সব ভাবনা চিন্তা করে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই আগে ক্রেতা নির্ধারন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ Sound pollution
৭। অর্থায়ন
উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং ব্যবসা পরস্পর সংযুক্ত। নিজের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার বিশদ বিবরণ তৈরি করুন এবং প্রত্যেকটি আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখুন। বাইরের তহবিল জোগাড় করার আগে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমান এবং প্রত্যেকটি টাকার উপযুক্ত ব্যবহার করুন।
৮। প্রচারণা করুন
আপনার পণ্য সম্পর্কে মানুষের মাঝে ভালো ধারনা তৈরি করতে হবে। এবং মানুষের মধ্যে আপনার পণ্যের প্রচারণা চালাতে হবে। তবেই আপনার পণ্য বেশি ক্রেতা দ্বারা গৃহিত হবে।
আরো জানুনঃ ১ বিটকয়েন সমান কত টাকা
৯। মান উন্নয়ন
সেবাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করুন। আপনি যতো বেশি সেবা দিতে সক্ষম হবেন ততো বেশি আয় করতে পারবেন। ব্যবসার প্রধান লক্ষ অর্থ উপার্জন কে না করে সেবাকে করুন। মানব সেবায় নিয়োজিত হোন দেখবেন আপনি এমনিতেই লাভবান হবেন। আপনার পন্যের মান উন্নোয়ন করুন। মানের দিক দিয়ে কখনোই আপোষ করবেন না।
উপরোক্ত পয়েন্টগুলো অনুসরণ করে কাজ শুরু করুন ইনশাআল্লাহ আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। আবার হাজির হবো নেক্সট কোনো আর্টিকেল নিয়ে। আমাদের আজকের এই কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো তথ্য ও প্রশ্ন জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দিবেন।
আরো পড়ুনঃ জীবন নিয়ে উক্তি
One thought on "কিভাবে ভালো উদ্যোক্তা হওয়া যায়"