দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকি। যার কারণে আমাদের অনেক সময় আইনের দ্বারস্থ হতে হয়। আমাদের বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই আইন সম্পর্কে কম জানে। যার ফলে আমাদের অনেক হয়রানি হতে হয়। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো আইনের একটি টপিক নিয়ে তা হলো জিডি। এই টপিকের মাধ্যমে জিডি কি? কিভাবে করবেন? থানায় ও অনলাইনে জিডি করার নিয়ম ইত্যাদি জানতে পারবেন।
জিডি (GD) হলো জেনারেল ডায়েরি বা অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদ বিষয়ক রেজিস্ট্রার। জিডি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নানাবিধ কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কখনো কোনো হুমকির মুখোমুখি হলে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারিয়ে গেলে, রাস্তায় চলার পথে কেউ আপনাকে উত্ত্যক্ত করলে ইত্যাদি কারণে আমরা থানায় জিডি করার দরকার। কিন্তু আমরা অনেকেই এই বিষয়ে না জানার কারণে হয়রানির শিকার হই।
কোনো ঘটনা যখন মামলা যোগ্য না হয় তখন তা জিডি বা জেনারেল ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখে। এটি প্রতিদিন সকাল ৮ টায় খুলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার সংবাদগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন কারণে থানায় জিডি করা যায়। মূল্যবান কোনো কিছু হারালে যেমনঃ পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে, মূল্যবান রশিদ, চেকবই, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি।
কোনো প্রকার হুমকি পেলে ভয় ভীতি দেখানো হলে, কেউ নিখোঁজ হলে বা পালিয়ে গেলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে, অপরাধ সংগঠন হওয়ার আশংকা থাকলে ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে জিডি আপনি জিডি করতে পারেন।
বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থানায় জিডি করতে হয়। কিন্তু আপনাকে এটিকে ঝামেলা মনে করলে চলবে না। জিডি করার নিয়ম খুব একটা কঠিনও নয়।
থানায় জিডি করার কিছু উপকারিতাও আছে। সেগুলোও আপনাদের জানতে হবে। তাহলে জিডি করলে কি কি সুবিধা বা উপকারিতা পাবেন?
যে স্থানে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে সে যায়গার আওতায় যে থানাটি রয়েছে সেখানেই আপনাকে জিডি করতে হবে। নিজের এলাকার থানাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। অন্যথায় পরবর্তীতে আপনাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
থানায় জিডি করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিজের নাম এবং থানার নাম উল্লেখ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি সাদা কাগজে আবেদন পত্র জমা দিতে হবে। আবেদন পত্রটি অন্যান্য সাধারণ আবেদন পত্রের মতোই।
সাধারণ ডায়েরি করতে তেমন কিছুই লাগেনা। যিনি জিডি করবেন তাকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জিডি করতে হয়। তাছাড়া জিডি করা সম্পূর্ণ ফ্রী।
থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি লেখার কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনাকে অবশ্যই এই নিয়ম কানুন মেনেই সাধারণ ডায়েরি লিখতে হবে। চলুন, নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. আমরা যেহেতু আবেদন পত্রটি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দেবো তাই আমাদের লেখতে হবে বরাবর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
২. এরপর লিখতে হবে বিষয়ের নাম যেমন : জিডি করার জন্য আবেদন।
৩. কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার যদি আশংকা থাকে সে ক্ষেত্রে আপনাকে আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
৪. যদি আপনাকে কেউ হুমকি দেয় তাহলে আপনাকে হুমকি দেওযার স্থান, তারিখ, সময়, এবং যদি কেউ সাক্ষী থাকে তার নাম এবং তার পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।
৫. যে ব্যাক্তি আপনাকে হুমকি দিয়েছে যদি তার পরিচয় আপনি জেনে থাকেন তাহলে তার নাম অথবা যদি একাধিক ব্যাক্তি হয় তাদের নাম, পিতার নাম, এবং পূর্ণ পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।
৬. যদি অপরাধী অপরিচিত হয় তাহলে তাকে চিহ্নিত বা শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে।
৭. জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
৮. সবার শেষে জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, এবং তার পূর্ণ পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।
তারিখঃ ………………
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
………………..থানা, ।
বিষয় : সাধারণ ডায়েরি করার আবেদন।
জনাব,
বিনিত নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী নাম ………….
বয়স : ………………………………………………………
পিতা/স্বামী : ………………………………………………..
ঠিকানা : …………………………………………………….এই মর্মে জানাচ্ছি যে আজ/গত …………………….. তারিখ ……………. সময় …………….জায়গা থেকে আমার নিম্নবর্ণিত কাগজ/মালামাল হারিয়ে গেছে।
বর্ণনা : (যা যা হারিয়ে গেছে তা লিখ)
বিষয়টি থানায় অবগতির জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করার অনুরোধ করছি।
বিনীত নিবেদক
……………………
মোবাইল নং: ………..
তারিখ:……………..
থানায় ডিউটি অফিসার জিডি নথিভুক্ত করেন। আপনি যদি জিডি করার আবেদন পত্রটি লিখতে না পারেন তাহলে তাকে আবেদন ফরমটি পূরণ করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে তাকে কোনো টাকা দিতে হবে না। জিডির দুইটি কপি থাকে। একটি থানায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। আর অন্যটি আপনাকে জিডির নম্বর, তারিখ, এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল লাগিয়ে দেওয়া হবে।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসে সব কিছু করা যায়। তেমনি ভাবে আপনার জিডি ও ঘরে বসে করা যায়। তবে অনলাইনে শুধুমাত্র হারানো বা প্রাপ্তি সংক্রান্ত জিডি করতে পারবেন। অন্যান্য বিষয়ে বর্তমানে অনলাইনে জিডির সুযোগ নেই। তনে অদূর ভবিষ্যতে যেকোনো বিষয়ে অনলাইনেই জিডি করা যাবে বলে আশা করা যায়।
অনলাইনে জিডি করতে আপনার যা করতে হবে তা হলো। প্রথমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জিডি করার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
এনআইডি কার্ড বা স্মার্টকার্ডের নম্বর।
জন্ম তারিখ।
আপনার সচল মোবাইল নম্বর।
১ম ধাপঃ স্ক্রিনশটে দেওয়া তিনটি বক্স পূরণ করুন। এরপর জমা দিন বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার মোবাইলে পাওয়া গোপন সংখ্যা বা OTP দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই ম্যাসেজে পাওয়া নম্বরটি ১ মিনিটের মধ্যে জমা দিতে হবে।
এই কোডটি আপনার জিডির পাসওয়ার্ড হিসেবে কাজ করবে। পরবর্তীতে জিডির তথ্য ও কার্যক্রম চেক করতে এই কোডটি লাগবে।
২য় ধাপঃ এই ধাপে জিডি সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে কয়েকটি ঘর পূরণ করতে হবে।
নিজের জন্য অথবা অন্যের পক্ষে জিডি নির্বাচন করুন।
জিডির ধরণ নির্বাচন করুন। (হারানো/নিখোঁজ, পাওয়া)
কি হারিয়েছেন তার ধরণ নির্বাভন করুন এবং সে অনুযায়ী ডান দিকের বক্স থেকে হারানো ডকুমেন্ট/প্রোডাক্ট, যানবাহন, গৃহপালিত পশু/পাখি নির্বাচন করুন।
এরপর যে থানায় জডি করবে তা নির্বাভন করুন এবং ঘটনার তারিখ ও সময় ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাচন করুন।
অনলাইন জিডির ফরম
৩য় ধাপঃ
২য় ধাপে প্রদানকৃত তথ্যগুলো দেখতে পাবেন। প্রয়োজন হলে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ছবি যুক্ত করুন। ছবি অবশ্যই ২০০ কিলোবাইটের মধ্যে হতে হবে।
একটি কাগজে আপনার স্বাক্ষর দিন। সেই ছবি তুলে ২০০ কেবির মধ্যে আপলোড করুন।
ইমেইল এড্রেস প্রদান করুন।
সাবমিট বাটনে ক্লিক করে জিডি সম্পন্ন করুন।
আপনার জিডি করা সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো সময় জডির সর্বশেষ অবস্থা জানতে ইউজারনেমে আপনার মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ডের ঘরে মোবাইলে পাওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করতে পারেন।
থানা থেকে জিডি ইস্যু হলে মোবাইলে ম্যাসেজ করএ জানিয়ে দেওয়া হবে। চাইলে প্রোফাইলে লগিন করে সেটি ডাউনলোড করা যাবে।
আশা করি, থানায় জিডি করার নিয়ম কানুন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। যেকোনো প্রয়োজনে জিডি করুন, নিরাপদ থাকুন। TrickBD এর সাথেই থাকুন।
পোস্ট টি এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টি তে দেখবেন।
যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আমার সাথে। আমার ফেসবুক আইডি
You must be logged in to post a comment.
Good post
কাবিন নামা নিয়ে পোস্ট করুন কিভাবে পূরণ করতে হয়,,, অনেকেই জানতে চান
insha’Allah khub sighroi kora hbe?
জ্বি করুণ অনুরোধ থাকলো
useful, thanks.