অনেকেরই প্রায় সময় বলতে শুনি “আমার একটা ওয়েব সাইট বানানোর খুব ইচ্ছা।” তো তারা কি করে বিভিন্ন সাইট থেকে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল ও আর কিছু লাগিন এর কাজ জেনে একটা ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল দিয়ে সুন্দর দেখে একটা ফ্রিতে পাওয়া প্রিমিয়াম থিম একটিভ করে বানিয়ে ফেলে একটা ওয়েব সাইট।

এত সোজা একটা ওয়েব সাইট বানানো ?? !! না এত সোজা কাজ না। ওয়েব সাইট তৈরির সাথে অনেক কিছু জরিত আছে। সেটাই নিচে গাইড লাইন আকারে আলোচনা করা হল।

ডোমেইন নেইম নির্বাচনঃ

ওয়েব সাইট বানালে অবশ্যই একটা ডোমেইন নাম লাগবে। মানে যেই নাম অ্যাড্রেস বারে দিয়ে ক্লিক করলেই ওই নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটটি চলে আসবে। ডোমেইন নাম যে কোন একটা হলেই হয় এটা ভুল আবার সত্য। মানে যদি আপনি প্রফেশনাল ভাবে সাইট তৈরি করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে ইউনিক নাম নির্বাচন করতে হবে। শুধু ওই নামটা খালি থাকলেই হবে না তার সাথে আরও কিছু জিনিস যুক্ত করতে হবে। যেমনঃ

১.যেই নামে ডোমেইন নিবেন গুগলে ওই নামটি সার্চ দিয়ে দেখবেন ওই নামে কোন ফেসবুক পেজ, গুগল প্লাস পেজ, টুইটার একাউন্ট, ইউটিউব একাউন্ট ইত্যাদি আছে কিনা। যদি থাকে তবে সেই নাম না নেওয়া ভাল।

২.ডোমেইন নামের মদ্ধে “-/_” হাইফেন বা হ্যস চিহ্ন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।

৩.ডোমেইন নামটা ৭/৮ অক্ষরের মদ্ধে যদি নিতে পারেন তবে ভাল। বেশি বড় নিবেন না।

৪.ইংরেজিতে জটিল বানান এমন ডোমেইন নাম নিবেন না। এতে ভিজিটর সহজে নাম মনে রাখতে পারবেনা। আপনার সাইটের নাম লিখতে গিয়ে ভুল লিখে অন্য সাইটে চলে যাবে।

৫.একটি নামে ডোমেইন আছে তার আশে পাশের বানানের ডোমেইন নাম নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। যেমনঃ www.facebook.com আছে আপনি নিয়ে নিলেন www.facebooks.com বা www.face-book.com

৬.ডোমেইন নামটা উচ্চারনে সুন্দর ও সহজ শব্দ বা যে সব শব্দ আমরা সব সময় ব্যবহার করি এমন শব্দ দিয়ে ডোমেইন নাম নেবার চেষ্টা করুন।

৭.আপনি যে ধরনের সাইট বানাতে চান সেটার সাথে মিল রেখে ডোমেইন নাম কিনুন।

হোস্টিং কেনাঃ

ডোমেইনের পরেই যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হল হোস্টিং। হোস্টিং হল আপনি যে সাইটটা তৈরি করবেন সেটা যাবতীয় স্ক্রিপ্ট, ফাইল ও এত দরকারি জিনিসপত্র রাখার জন্য জায়গা এর আপনি বা আপনার ভিজিটর যে ওয়েব সাইটটা ভিজিট করতেছে সেটা জন্য কিছু কে.বি খরচ হয়। সেটাকে বলা হয় ব্যান্ডউইথ। এগুলো সহ আরও অনেক কিছু সম্বলিত থাকে হোস্টিং এর মদ্ধে। হোস্টিং কি এটা আর কিছু বললাম না কারন বেশির ভাগ মানুষই জানেন এটা কি। আর কেউ যদি না জানেন মন্তব্যতে জানাবেন। বিস্তারিত বুঝানোর চেষ্টা করবো।

হোস্টিং কোনটা নিবেন, কতটুকু নিবেন !!!

আমরা সাধারন ভাবে যে সাইট বানাব তার জন্য শেয়ার হোস্টিং নিলেই হবে। আর দাম খুব কম। কেউ যদি একটু ভাল স্পীড বা ভাল সার্ভিস পেতে চান তারা ভি.পি.এস নিতে পারেন। সাধারন ভাবে আমাদের ১ জিবি জায়গা(Space) হলেই যথেষ্ট এটাই সহজে খরচ হবেনা। তবে ব্যান্ডউইথ টা একটু বেশি নেওয়া ভাল কারন। জত ভিজিটর বাড়বে তত ব্যান্ডউইথ খরচ হবে। আর কিছু জিনিস দেখবেন। যেমনঃ কয়টা সাবডোমেইন বানানোর সুযোগ দিবে, কয়টা ডাটাবেস তৈরি করতে দিবে। ইত্যাদি।

তথ্য সংগ্রহঃ

আপনি কি কাজের জন্য সাইট বানাতে চান। ব্লগ সাইট, পার্সোনাল ইনফরমেশন সাইট, বিজনেস সাইট, পোর্টফলিও সাইট ইত্যাদি। কোনটা বানাতে চান। যেটা বানাবেন সেইটার আনুশাঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করুন। যেমনঃ বিজনেস সাইট হলে বিজনেস সম্পর্কিত তথ্য, স্কুল ওয়েব সাইট হলে স্কুল সম্পর্কিত তথ্য ইত্যাদি।

প্লাটফর্ম নির্বাচনঃ

আপনি যেই ওয়েব সাইটটা বানাবেন সেটা কিসে বানাবেন HTML এ নাকি PHP তে নাকি কোন CMS(WordPress, Joomla, Drupal) ব্যবহার করবেন। যদি ব্লগ সাইট হয় তবে CMS হিসাবে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে পারেন। যদি বিজনেস সাইট হয় তবে HTML আর মাদ্ধমে করতে পারেন বা চাইলে PHP তেও করতে পারেন। অবশ্য আরও অনেক প্লাটফর্ম এ করা যায় যেমনঃ ASP.NET, Python, Ruby, ColdFusion ইত্যাদি।

সাইট ডেভলপঃ

এবার শুরু ওয়েব সাইট ডেভলপের কাজ। সাইট ডেভলপের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখবেন। যেমনঃ

১.ওয়েবসাইটের সুন্দর একটি লোগো বানাবেন। সেটা সাইতে ব্যবহার করবেন।

২. সাইটের ব্যাকগ্রউন্ডে আকর্ষণী একটি ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করবেন যাতে সাইটটি সুন্দর ভাবে ফুতে উঠে। তবে ব্যাকগ্রউন্ড এ এমন কোন কালার ব্যবহার করবেন না যেটা চোখে বেশি লাগে মানে বেশি উজ্জ্বল কালার।

৩.সাইটের ফন্ট বেশি ছোট রাখবেন না। ভিজিটরের যাতে পরতে কোন সমশা না হয় এমন সাইজ ব্যবহার করবেন। ফন্ট কালার কালোই ভাল দেখা যায়।

৪.সাইটের আউটলুক সুন্দর করার চেষ্টা করবেন। যাতে ভিজিটর ভিজিত করে শান্তি পায়।

৫.ভিজিটরকে যাতে ধরে রাখা যায় বেশি ক্ষণ বা যাতে এবার ফিরে আসে সেই বাবস্থা করুন। যেমনঃ RSS ফিড যোগ করুন। সাইড বারে ও পেজের/ পোষ্টের শেষে একই রকম পোস্ট বা বেশি পঠিত পোস্ট লিঙ্ক রাখুন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় লিঙ্ক সাইড বারে দিন।

৬. সাইটে যদি বিজ্ঞাপন থাকে মানে এডসেন্স বা অন্য কিছু। তবে অতিরিক্ত আঁকারে বিজ্ঞাপন দিবেন না। বিজ্ঞাপন গুলো সাজিয়ে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করবেন।

ওয়েব সিকিউরিটি দিনঃ

বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলতেছে তাতে ওয়েব সাইটের সিকিউরিটি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। না হলে যেকোনো সময় হ্যাক হয়ে জেতে পারে।

Web Security

একটি ছোট্ট মজার ঘটনা বলি – “বেশ কিছু দিন আগে আমি এক ক্লাইন্ট এর একটি বিজনেস সাইট ডেভলপ করে দেই। তো একদিন সন্ধ্যার দিকে ক্লাইন্টকে ফোন করে বলি তার সাইটের কাজ শেষ সে এখন সাইট অন্যকে দেখাতে পারবে। (তখন আলসেমি করে পরে করব বলে সাইটে কোন সিকিউরিটির দেই নি) যাইহোক সেতো সাইট দেখে বেশ খুশি। পরদিন সকালে ৯.৩০ এর দিকে আমাকে সেই ক্লাইন্ট ফোন করে বলে রাহাত আমাদের সাইটটা না কেমন যেন কালো কালো লাগতেছে আর কেমন যেন একটা ছবি। আমি বললাম আপনার সাইটের রঙ তো সবুজ আর নীল তাহলে কালো হবে কেন !!! আপনি মনে হয় ভুল অ্যাড্রেস দিছেন। পরে আমি খুলে দেখি আসলেই কালো কালো দেখায় মানে সাইটটাতে একটি হ্যাকারের ডিফেজ পেজ ঝুলছে”

ঘটনাটা বলার কারন সাইট বানানোর সাথে সাথেই সিকিউরিটি দেওয়াটা যে কতটা জরুরি সেটা বুঝালাম।

এস.ই.ও করুনঃ

এসইও(SEO) বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলতে বুঝায় বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে একটি সাইটকে তুলে ধরা সাইটে কি আছে তা সার্চ ইঞ্জিনকে বুঝানো। আমরা যেকোনো কিছু লিখে গুগলে সার্চ দিলে দেখা যাবে অনেক পরিমানে ফলাফল পাওয়া যায় এর মধ্যে প্রথম ২/৩ পেজে যে সাইট গুলো আমরা পাই সেগুলোই আমরা দেখে থাকি। এটাই হল এসইও মানে সাইটে এসইও করলে সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইটকে আগে নিয়ে আসবে আগে থেকলে ভিজিটররা বেশি দেখবে। এটাই মূলত এসইও র কাজ।

SEO

এছাড়াও আরও কিছু কাজ করুন। যেমনঃ সাইটের যেই নাম ঠিক সেই নামেই ফেসবুকে একটি পেজ, গুগল প্লাসে একটি পেজ, টুইটার একাউন্ট এছাড়াও আরও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক গুলোতে একই নামে একাউণ্ট খুলুন ইত্যাদি।

এতক্ষণ ধরে গাইড লাইনটি পরার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি এটা নতুনদের উপকারে আসবে।

যারা ঘরে বসে নিজে নিজে ওয়েব ডেভলপমেন্ট শিখতে চান তারা আমার লেখা এই পোস্টটি পরতে পারেন – গাইড লাইনঃ ঘরে বসেই ওয়েব ডেভলপমেন্ট শিখুন।

 

 

3 thoughts on "একটি ওয়েব সাইট তৈরির গাইড লাইন (নতুনদের জন্য)"

  1. Akib sg Author says:
    অনেক ধন্যবাদ ভাই
  2. Pulok Author says:
    web site sekhar kono bangla PDF thakke link din plz
  3. arjyogoutam Contributor says:
    thanks dada!!

Leave a Reply