আমরা যারা নতুন ওয়েবসাইট বানাতে চাই, তারা সর্ব প্রথম যে দুটি সমস্যায় পড়ি তা হলো- ১. ডোমেইন কোত্থেকে কিনব? ২. ভাল ওয়েব হোস্টিং কোথায় পাওয়া যাবে? এই জন্য নানা প্রশ্ন মাথায় এসে ভিড় করে! কারা ভাল প্রভাইডার? যাদের কাছে থেকে হোস্টিং কিনছি বা ডোমেইন কিনছি, তারা ভাল সাপোর্ট দেবে কিনা? কম খরচের উপর কিভাবে চালিয়ে দেওয়া যায়? আসুন মুল আলোচনার আগে জেনে নেই, কেন একটা ভাল সাইট থেকে ডোমেইন বা হোস্টিং কেনা প্রয়োজন?
কেন একটা ভাল সাইট থেকে ডোমেইন হোস্টিং কেনা প্রয়োজন?
আমরা যদি আমাদের ওয়েব সাইটকে একটা বাড়ির সাথে তুলনা করি তাহলে হোস্টিংকে বলতে পারি সেই বাড়ির প্লট বা জমি। যেখানে বাড়িটা তৈরী করা হবে। আর ডোমেইন হলো সেই বাড়ির ঠিকানা। যেমনঃ ধরুন আপনার বাড়ি খুলনায়। কিন্তু আপনি যদি কাউকে বলেন যে আপনার বাড়ি খুলনা তাহলে তার পক্ষে আপনার বাড়ি খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেউ যদি আপনার বাড়ির ঠিকানা জানে, তাহলে সেই ঠিকানা ধরে খুব সহজেই সে আপনার বাড়িতে চলে আসতে পারবেন। এখানে খুলনা হচ্ছে আপনার বাড়ির হোস্টিং আর বাড়ির ঠিকানা হচ্ছে ডোমেইন নেইম। এখন কথা হলো আপনি বাড়ি বানানোর আগে এমন জমি কিনলেন যেটা আগে হয়তো ডোবা বা নালা ছিল। পেয়ে গেলেনও খুব কম দামে। এমন জায়গায় কি আপনার বাড়ি খুব বেশি টেকসই হবে?
ইদানিং অনলাইনে বড় বড় বিজ্ঞাপনে দেখা যায় কেউবা ডাটা সেন্টারের মালিক আবার কেউবা বাংলাদেশী হোস্টগেটর, কেউবা বাংলাদেশের ১ নম্বর কোম্পানী, আবার কেউবা দাবি করে তারা তিন হাজার/পাঁচ হাজার/দশ হাজার+++ দেশী বিদেশী ওয়েব সাইট হোস্ট করে বসে আছে। কিছু কিছু প্রোভাইডার আপনাকে বলবে তাদের কাছ থেকে হোস্টিং কিনলে মনে হবে আপনার ওয়েব সাইট বুঝি আপনার নিজের কম্পিউটার এর হার্ড ডিস্ক থেকে ব্রাউজ করতেছেন।
কেউ কেউ বলবে তারা বাংলাদেশের সেরা ডেডিকেটেড সার্ভার প্রোভাইডার। দেশী বিদেশী অনেক হোস্টিং কোম্পানি তাদের কাছ থেকে সার্ভার নিয়ে হোস্টিং ব্যবসা করে। অথচ মজার ব্যাপার কি জানেন, খোজ নিয়ে দেখা যায় তারা তাদের নিজেদের ওয়েব সাইট হোস্ট করে আছে অন্য একটা দেশী প্রোভাইডারের কাছে! আবার কেউ কেউ আপনাকে বলবে, ভিজিটর বাড়লে কখনো আপনার ওয়েব সাইট ডাউন হবে না, স্লো হবে না। অথচ কাজের বেলায় দেখা যায় তাদের নিজেদের ওয়েব সাইট খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আসল কথা হচ্ছে, কথা বলতে ট্যাক্স লাগে না, আবার লিখতেও ট্যাক্স দিতে হয় না। সুতরাং প্রবলেম টা কোথায়?
সমস্যা হচ্ছে সবাই খোঁজে সস্তা কোথায় পাওয়া যাবে। যেমন জাম এর দামে আম, ডিম এর দামে মুরগী কিনতে চায় অনেকে। বুঝুন কি অবস্থা! মনে রাখবেন, দামি জিনিসের একটাই সমস্যা, দাম বেশি, বাকি সব ভালো, সস্তা জিনিসের একটাই সুবিধা, দামে সস্তা, বাকি সব খারাপ। ভালো কোম্পানী কোনগুলো তা চিনতে আপনাকে বিজ্ঞানী হতে হবে না।
কি কি প্রবলেম ফেস করতে হতে পারে ভাল সাইট থেকে ডোমেইন হোস্টিং না কিনলেঃ
ভাল সাইট থেকে হোস্টিং না কিনলে যেসব সমস্যা হতে পারেঃ
১। অনেক সময় সাইট ডাউন থাকে। সাইটে ঢুকতে গেলে লোড হতেই থাকে। যদিও এই ডাউনটাইম হয়তো খুব বেশি সময় এর জন্য নয়। তবে এটা আপনার সাইটের SEO এর জন্য ব্যাড ইফেক্ট ফেলবে। অনেক ভিজিটর হারাবেন। ভিজিটর আপনার সাইটে ঢুকতে গিয়ে এরকম ডাউন অবস্থা পেলে পরবর্তীতে আপনার সাইটে ঢুকতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
২। আইপি জনিত সমস্যা হইতে পারে। এটা সস্তা হোস্টিং এর জন্য খুবই কমন সমস্যা। এই ধরনের হোস্টিং এ সাইট হোস্ট করা হলে অনেক আই পি থেকেই সাইট লোড হবে না। ফলস্রুতিতে কি হতে পারে বুঝতেই পারছেন।
৩। আর একটা সমস্যা হতে পারে, সেটা হলো যেকোন সময় কোনরুপ কারন ছাড়াই আপনার সাইট ডিলিট হয়ে যেতে পারে। আপনার অনেক কস্ট করে বানানো সাইটের যদি এই হাল হয় তবে তো ফ্রী হোস্টিং ই অনেক ভাল
ভাল সাইট থেকে ডোমেইন না কিনলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
১. সর্ব প্রথম সমস্যা হতে পারে DNS নিয়ে।
২. আই পি জনিত সমস্যাও হতে পারে।
ডোমেইন হোস্টিং কেনার সময় কি কি জিনিস মাথায় রাখবেন ?
১। ডিস্ক স্পেস অথবা ব্যান্ডউইথ এর ঝামেলা আছে কি না?
অনেকেই শুরুর দিকে মনে করে তার ওয়েব সাইট করতে প্রচুর ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ লাগবে। দেখা যায় অনেকের ওয়েব সাইট করতে ৫০০ মেগাবাইট হোস্টিং দরকার। কিন্তু না বুঝে কিনে ফেলেছে, ৫ জিবি/১০ জিবি প্যাকেজ। ফলস্বরুপ তাকে প্রতি বছর টাকা দিতে হয় অযথা। সুতরাং আপনার ওয়েব সাইটের জন্য কতটুকু ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ লাগবে তা হিসাব করে নিন। এবং সেই ভাবে আপনার হোস্টিং প্যাকেজ কিনুন, যাতে আপনাকে অযথা টাকা দিতে না হয়। এবং ভবিষ্যতে যদি আপনার অতিরিক্ত ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তাহলে পরবর্তী প্লানে আপগ্রেড করে নিবেন। এখন প্রায় সব কোম্পানিই প্যাকেজ আপগ্রেড সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে আপনার যদি গান/মুভি/ভিডিও নিয়ে ওয়েব সাইট করার ইচ্ছা থাকে তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বড় ওয়েব স্পেস এর দিকে নজর দিতে হবে।
২। কোন টেকনিক্যাল ত্রুটি হলে মানিব্যাক গ্যারান্টি আছে কি না?
মানিব্যাক গ্যারান্টি ওয়েব হোস্টিং এর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশিরভাগ কোম্পানিই ৩০ দিনের মানিব্যাক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কোম্পানি মানিব্যাক গ্যারান্টি দিচ্ছে কিনা।

৩। সাপোর্ট সার্ভিস সব সময় সহজলভ্য থাকবে কি না?
ওয়েব হোস্টিং এ সাপোর্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার হোস্টিং সার্ভার যদি কখনো ডাউন হয় আর যদি তা জানাতে এবং উত্তর পেতে কয়েক দিন লেগে যায় তাহলে লক্ষ ভিজিটর হারাতে পারেন। আর যদি আপনি রিসেলার ক্লায়েন্ট হোন তবে তো মহা বিপদে পড়বেন। আপনার ক্লায়েন্টকে কোন উত্তর দেয়ার মতো কিছু থাকবে না। তাই কোম্পানির সাপোর্ট কত দ্রুত তা নিশ্চিত হয়ে নিন। হোস্টিং কোম্পানিকে জিজ্ঞাসা করুন তাদের গ্যারান্টেড সাপোর্ট রেসপন্স টাইম কেমন। এবং কি কি মাধ্যমে সাপোর্ট দিয়ে থাকে। প্রয়োজন পড়লে, কোম্পানীর কাছে ইমেইল করে এইসব বিষয় জেনে নিন।
৪। প্রোডাক্ট এর প্রাইসিং রিজনেবল আছে কি না?
আপনার ডোমেইন হোস্টিং এর প্রাইজিং ও একটা বড় বিবেচ্য বিষয়। স্বাভাবিক মূল্যের থেকে অতিরিক্ত কয়েক গুন বেশী দাম দিয়ে ডোমেইন হোস্টিং কিনলেই আপনি লাভবান বা নিরাপদ থাকবেন এই আশা করাটা বোকামী। যারা ইতিমধ্যে সুনামের সাথে ডোমেইন হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে, তাদের প্রাইজিং দেখেন, তাহলে আশা করি আপনার প্রোডাক্ট এর দাম এর ব্যাপারে ধারনা হয়ে যাবে।
তাহলে ভাল ডোমেইন হোস্টিং কাদের কাছ থেকে পাব?
ডোমেইন ও হোস্টিং কেনার আগে যেখান থেকে কিনতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে একটু ভাল মত খোজ খবর নিয়ে নেবেন। অভিজ্ঞ যারা আছে তাদের কাছে থেকেও জেনে নিতে পারেন বাংলাদেশে কারা কারা ভাল ডোমেইন হোস্ট প্রোভাইড করে। এছাড়াও বাইরের থেকেও কোন কোন ভাল ডোমেইন হোস্ট আছে। কারন আপনি যখন ডোমেইন হোস্ট কিনে সাইট বানাবেন, যেই সাইটই বানান না কেনো আপনার যথেস্ট পরিশ্রম যাবে ঐ সাইটের পেছনে। তাই যে কোন সময় এই সাইট হারানো কখনোই আমাদের কাম্য নয়।
সাধারন ব্লগ বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট করার জন্য বাংলাদেশ থেকে একটু দেখে শুনে ভাল প্রভাইডারের কাছ থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নিতে পারেন। তবে যারা প্রফেশনাল ওয়েবসাইট বানাতে আগ্রহী তাদে আমি রিকমেন্ড করব ইন্টারন্যাশনাল কিছু সাইট থেকে ডোমেইন ও কেনার জন্য। এই সকল সাইট দীর্ঘদিন যাবত বিজনেস করছে এবং ইউজাররা সম্পূর্ণ স্যাটিসফাইড। এরা প্রতিশ্রুতির কোন ব্যতিক্রম কখনও করেনি।
আমার দৃষ্টি ডোমেইন সার্ভিস প্রভাইডারঃ
NameCheap,
com,
GoDaddy,
net,
1&1,
iWantMyName,
HOVER,
Domain Monster,
NameSilo
আমার দৃষ্টিতে সেরা হোস্টিং সার্ভিস প্রভাইডারঃ
ipage,
bluehsot,
hostgator,
com,
com,
com,
1&1,
Ideahsot,
Web Hosting Hub,
Dreamhost
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইসব ইন্টারন্যশনাল সাইটে বাংলাদেশ থেকে পেমেন্ট করবেন কি করে?
কীভাবে এসব সাইটে ডোমেইন হোস্টিং কেনার জন্য পেমেন্ট করবেন?
ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইটগুলি থেকে ডোমেইন বা হোস্টিং কেনার জন্য আপনাকে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে পেপাল। কিন্তু পেপাল বাংলাদেশ থেকে সাপোর্ট করে না। মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে। আর অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম নেটেলার বা স্ক্রিল ব্যবহার করতে হলে, টাকা লোড করা খুব ঝামেলার। তাই আপনাদের জন্য খুব সুন্দর সমাধান হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা QCard !
আপনি হয়ত জানেন না, গ্লোবাল পেমেন্ট প্রসেসর কোম্পানি কিউকার্ড এর নতুন অফিস হয়েছে ঢাকায়। এখন বাংলাদেশ থেকে QCard এর দ্বারা যেকোনো কাজে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে অনায়াসে। যেকোনো বিদেশী ডোমেইন – হোস্টিং সাইট থেকে ডোমেইন কিংবা হস্টিং কেনার সময় আপনি চাইলে এই কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন। আজই একটি কিউকার্ড নিয়ে আপনার ডোমেইন হোস্টিং কেনার সমস্যা দূর করতে পারেন।
আরও বিস্তারিত জানুন তাদের ওয়েবসাইট থেকেঃ mastercards.co
সব কথার শেষ কথা
সব কথার শেষ কথা- ভাল জায়গায় ভাল জমি কিনে বাড়ি বানালে সেই বাড়ি মজবুত ও টেকসই হবে। কিন্তু ভাল জায়গায় জমি কিনতে গেলে খরচাও একটু বেশি পড়বে। আমি অবশ্যই চাইব না আমার বানানো শখের বাড়িটা কোন বাজে যায়গায় বানাতে। এতে করে বাড়ি ধ্বসে পড়ার বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে যেকোনো সময়! আমি চাইব কিছু টাকা বেশি খরচ করে হলেও ভাল জায়গা দেখে বাড়ি বানানোর জন্য।
তাই সবচেয়ে ভাল হয় যদি কোন ভাল ইন্টারন্যাশ্নাল সংস্থা থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা। এতে কোন ভবিষ্যতের সমস্ত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে। আর বাইরের সাইটে পেমেন্ট নিয়ে কোন টেনশন করবেন না।

free tv এখানে যান,click here

2 thoughts on "ডোমেইন হোস্টিং কেনা নিয়ে আমার ভয়ংকর বিভীষিকার কাহিনী! আসুন সমাধান খুঁজি!"

Leave a Reply