আমাদের প্রায় সবারই কম্পিউটারে গেম খেলার অভ্যাস রয়েছে সেটা হোক ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ কম্পিউটার। তবে আমাদের ব্যবহৃত এই সকল সাধারন কম্পিউটারে গেম খেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা আনন্দদায়ক হয়না। কারন গেম খেলার জন্য কম্পিউটারের কিছু কিছু যন্ত্রাংশ যেমন গ্রাফিক্স কার্ড, র্যাম, কম্পিউটারের স্টোরেজ অনেক ভাল হওয়া দরকার। সেজন্য যারা শুধুমাত্র গেম খেলার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতে চায় তাদের জন্য আলাদা গেমিং ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটার রয়েছে। গেম খেলার জন্য ল্যাপটপের তুলনায় ডেস্কটপ কম্পিউটার অনেক বেশি পরিমানে ব্যবহৃত হয়।
তবে বর্তমানে অনেক ভাল মানের ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাপটপ পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে ডেস্কটপের সমান না হলেও প্রায় কাছাকাছি রকমের গেম খেলার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। এছাড়া সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারনে অনেক গেমারও এখন গেমিং ল্যাপটপ কেনার দিকে ঝুঁকছেন। যেহেতু সাধারন ল্যাপটপের তুলনায় গেমিং ল্যাপটপের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি তাই গেমিং ল্যাপটপ কেনার সময় কিছু ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। ডেস্কটপ কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ গুলো আলাদা ভাবে কিনতে হয় কিন্তু গেমিং ল্যাপটপ কেনা মানে একসাথে পুরো একটা কম্পিউটার কেনা যার অনেক যন্ত্রাংশ যেমন কিবোর্ড, স্ক্রিন পরে পরিবর্তন করা যায় না। তাই খেয়াল রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ব্যাপার নিচে উল্লেখ করা হল।
জি পি ইউ (GPU)
জি পি ইউ হচ্ছে Graphics Processing Unit (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর নাম দেখেই বোঝা যায় এটা কি কাজ করে এবং গেম খেলার জন্য এটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা সমস্ত গেমই খুব বেশি গ্রাফিক্স নির্ভর হয়। জি পি ইউ এর কাজ হচ্ছে কম্পিউটারে যত ধরনের গ্রাফিক্স সম্পর্কিত ইউনিট আছে সেগুলোকে প্রসেস করা। সুতরাং জি পি ইউ যদি ভাল মানের না হয় তাহলে গেম খেলতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
বর্তমানে বেশিরভাগ ল্যাপটপে Nvidia GeForce GTX অথবা RTX GPU ব্যবহার করে থাকে। আরেক GPU প্রস্তুত কারী কোম্পানি AMD এর GPU ল্যাপটপের জন্য এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তাই কেনার সময় অবশ্যই Nvidia কোম্পানির GPU কিনতে হবে। সব গেম যেহেতু একই পরিমান গ্রাফিক্স ব্যবহার করেনা তাই গেমের উপর ভিত্তি করেও আপনি GPU পছন্দ করতে পারবেন। প্রাথমিক পর্যায়ের গেম খেলার জন্য GTX 1650 যথেষ্ট এটা দিয়ে আপনি প্রাথমিক স্তরের বেশিরভাগ গেম খেলতে পারবেন। এর কাছাকাছি GTX 1660 ব্যবহার করে আপনি আপনার GPU কে আরও বেশি শক্তিশালী করতে পারবেন। মধ্যম মানের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গেম খেলার জন্য Nvidia’s GeForce RTX 2060 জি পি ইউ ব্যবহার করতে হবে। যেকোনো ধরনের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গেম খেলার জন্য আপনাকে RTX 2070 মডেলের GPU ব্যবহার করতে হবে। এটা দিয়ে আপনি VR প্রযুক্তি সমৃদ্ধ গেম ও খেলতে পারবেন। তবে বিশেষ গ্রাফিক্স এফেক্ট ও VR প্রযুক্তির সব গেম অনায়াসে খেলতে চাইলে RTX 2080 or RTX 2080 Ti মডেলের GPU সব থেকে ভাল কার্যকরী।
সি পি ইউ (Central Processing Unit)
গেমিং ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারের জন্য CPU এর থেকে GPU এর মান অনেক ভাল হওয়া আবশ্যক। তাই আপনার বাজেটের মধ্যে সব থেকে ভাল GPU কিনে তারপর CPU এর দিকে নজর দিতে হবে। আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে আপনি CPU বাছাই করবেন তবে খেয়াল রাখবেন সেটা যেন কমপক্ষে Core i5 প্রসেসর হয়। এটা দিয়ে আপনি মোটামুটি মানের প্রায় সব গেমই ভাল ভাবে খেলতে পারবেন। বর্তমানে এমন অনেক ল্যাপটপ আছে যেগুলোতে ডেস্কটপ কম্পিউটারের CPU পাওয়া যায়। তাই বাজেট থাকলে Core i7 অথবা Core i9-8950HK মডেলের CPU কিনে ফেলতে পারেন। সাধারণত ল্যাপটপের CPU আপডেট করা যায় না তাই কেনার সময় একটু চিন্তা ভাবনা করেই কিনতে হবে।
র্যাম
গেমিং ল্যাপটপের জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের পরেই র্যাম সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। কেননা কম্পিউটারের গতি যদি ভাল না থাকে তাহলে গেম খেলা প্রায় অসম্ভব। সেজন্যই বেশিরভাগ গেমিং ল্যাপটপে কমপক্ষে ৮ জিবি র্যাম থাকে। তবে মনে রাখবেন গেমিং ল্যাপটপের জন্য ৮ জিবি হচ্ছে সাধারন ব্যাপার যদি বাজেটের মধ্যে থাকে তাহলে ১৬ জিবি র্যাম ব্যবহার করা উচিত। তাহলে আপনি যেকোনো ধরনের গেম আপনার ল্যাপটপে খেলতে পারবেন। যে সমস্ত ল্যাপটপে GTX 1050 অথবা 1050 Ti মডেলের GPU থাকে সেগুলোতে সাধারণত ৮ জিবি র্যাম থাকে তবে এর থেকে উচ্চ ক্ষমতার GPU যেমন GTX 1060 মডেলের অথবা তার থেকে উচু মানের হয় তাহলে সেগুলোতে ১৬ জিবি র্যাম থাকে। তবে ভাল ব্যাপার হচ্ছে র্যাম খুব সহজেই আপগ্রেড করা যায় তাই এখন যদি ১৬ জিবি লাগানো সম্ভব না হয় তাহলে ৮ জিবি দিয়ে শুরু করা যেতেই পারে।
ব্যাটারি
সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারনেই ডেস্কটপের থেকে অনেকে ল্যাপটপ বেশি পছন্দ করে। তবে সত্যি বলতে গেমিং ল্যাপটপ খুব বেশি সময় ব্যাটারি সাপোর্ট দিতে পারেনা তাই আপনি গেম খেলার জন্য ল্যাপটপ খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে পারবেন না। গেম খেলার সময় যদি প্লাগে দিয়ে না রাখেন তাহলে GPU তার ক্ষমতা পুরোটা ব্যবহার করতে পারেনা। আবার আপনি যদি প্লাগে না দিয়েই গেম খেলতে থাকেন তাহলে খুব বেশি হলে ১-২ ঘণ্টা ল্যাপটপ চলবে। তাই ব্যাটারি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা ভাবনা না করলেও চলবে এর থেকে বরং অন্য যন্ত্রাংশের দিকে মনোযোগ দেয়াই ভাল।
শেষ কথা
যেহেতু গেমিং ল্যাপটপের দাম বেশ বেশি তাই দেখে শুনে এমন ল্যাপটপ কেনা উচিত যেটা অন্তত কয়েক বছর ব্যবহার করতে পারেন। তাই সামর্থ্য থাকলে Nvidia GeForce GTX 1060 মডেলের GPU কিনতে পারেন কারন এটাতে বেসিক পর্যায়ের ভার্চুয়াল রিয়ালিটির গেম ও খেলতে পারবেন। স্বাভাবিক ভাবেই যত ভাল গ্রাফিক্স কার্ড হবে গেম খেলার অভিজ্ঞতাও তত ভাল হবে। আগেই উল্লেখ করেছি যে গেমিং ল্যাপটপের জন্য র্যাম ও CPU এর থেকেও GPU অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটারের স্টোরেজ ও দেখে নিতে হবে কারন গেম অন্যান্য সফটওয়ারের তুলনায় অনেক বেশি জায়গা দখল করে তবে স্টোরেজ আপনি পরবর্তীতে অনায়াসেই বাড়িয়ে নিতে পারবেন। আশা করি উপরের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে গেম খেলার জন্য একটি ভাল ল্যাপটপ বাছাই করতে পারবেন।
2 thoughts on "Gaming Laptop ক্রয় করার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার"