বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ফোনই চলে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে। এর যেমন সুবিধা আছে তেমনি ঝুঁকিও আছে। কারণ অপারেটিং সিস্টেমে কোনো বাগ ( নির্মাণ ত্রুটি) থেকে গেলে তা পুরো কমিউনিটিতে আঘাত হানে। ফেলে দেয় সকল মোবাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে।
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে এমন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে কম করে হলেও ১২টি। যাদের ভেতর স্যামসাং, ব্ল্যাকবেরি, গুগলের নেক্সাস, এলজি থেকে শুরু করে হালের হুয়াওয়ে কিংবা অপ্পো সবাই ব্যবহার করে এই অপারেটিং সিস্টেম। এসব প্রতিষ্ঠানের নামীদামী ফোন এখন পড়ে গেছে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে। কারণ বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে।
অ্যান্ড্রয়েডের কিছু স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়নকারী (ডেভেলপার) এই বাগগুলো চিহ্নিত করেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোন এখন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে এমনকি ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোও। এর প্রধান কারণ, প্রায় প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যবহার করা হয় আমেরিকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোয়ালকমের প্রসেসর চিপ। আর এই প্রসেসরগুলো উৎপাদনের সময় থেকেই কিছু ক্রটি থেকে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
কোয়ালকম এই সমস্যার নাম দিয়েছে ‘কোয়াড রুটার’ অর্থাৎ চারটি কারণে বা চারটি বাগের কারণে যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনের রুটে গিয়ে তার সকল তথ্য হ্যাক করা যাবে। তাই একে অভিহিত করা হচ্ছে কোয়াড রুটার। এইভাবে রুটে প্রবেশ করে ফোনের সকল সেটিংস থেকে শুরু করে মোবাইলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়া সম্ভব। এমনকি তৃতীয় পক্ষের অ্যাপসও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। শুধু তাই নয়, আপনার মোবাইলে যদি একবার কেউ এই ক্রটির সূত্র ধরে প্রবেশ করতে পারে তবে সে আপনার ফোন থেকে শুধু আপনার ডাটা ডাউনলোডই করতে পারবে না, করতে পারবে আপলোডও!
ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে গুগলের নেক্সাস ৫এক্স, নেক্সাস ৬পি, এইচটিসি`র ওয়ান এম৯, এইচটিসি ১০ এবং স্যামসাং এর গ্যালাক্সি এস৭ এবং এস৭ এজে এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। কোয়ালকম স্বীকার করেছে তারা এই বিষয়ে গত এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের ভেতরই অবগত আছে। এবং এ বিষয়ে ফোন নির্মাতাদের নাকি জানানোও হয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে, যেহেতু ফোন নির্মাতারা বিষয়টা জানে তাই সকল সমস্যা তারাই সমাধান করে ফেলেছে। এটা নির্মাতার ওপর নির্ভর করছে তারা এ বিষয়ে কিভাবে সমাধান দিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন গ্রাহকদের সংগঠনরা চাচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা ধরে না এগিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে একটি প্ল্যাটফর্মে এনে সমাধান দিক। এদিকে মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
আর যেসব ফোন এখন থেকেই এই সমস্যাগুলো আছে, তার জন্যে অ্যান্ড্রয়েড একটা ‘আপডেট’ দেবে, যেটা ইনস্টল করলে বর্তমান সমস্যার সমাধান করা যাবে। যদিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি ঠিক কবে নাগাদ এই আপডেট আসবে। গতবছর গুগল ঘোষণা দিয়েছিল তাদের নতুন লঞ্চ করা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো কমপক্ষে তিন বছর সিকিউরড থাকবে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার উল্টো ফল দেখা গেল!
কম্পিউটার সিকিউরিটি ফার্ম চেক পয়েন্ট তাই অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকদের পরামর্শ দিচ্ছে, সকল ফোন সময়মত যাতে সফটওয়্যার আপডেট করা হয়। এতে করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অটুট থাকবে। তাই যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তারা তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ভার্সনগুলো সময়মত আপডেট করে নিলে আর এ ধরনের সমস্যা হবেনা। সমস্যা হলো গুগল বা স্যামসাং তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোন বা দামী ফোনগুলোর ব্যাপারে বেশ নজর দেয়। হয়তো অচিরেই এইসব ফোনের বাগ সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু কমদামি ফোনের কী হবে? সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
? আরো নতুন কিছু পেতে TipsAdd.Com ?
13 thoughts on "ঝুঁকির মুখে প্রায় ১০০ কোটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন"