আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
ফজর নামাজ আর মিস করবেন না
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন→ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে, যদি নামায ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমল নষ্ট হিসেবে বিবেচিত হবে।( তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ২৭৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আরো বলেছেন→ যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে মহান আল্লাহতালার রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো।( সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ১৩৭৯)
আজকের আর্টিকেলে ফজরের নামাজের ফজিলত এবং অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন নিঃসন্দেহে আপনি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। অন্যান্য নামাজের তুলনায় ফজরের নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। কারণ যে সময়টিতে সবাই ঘুমের ঘোরে ব্যস্ত থাকে। সেই সময়টিতে আরামের ঘুম ভেঙ্গে সকাল সকাল উঠে নামাজ আদায় করা সবার জন্য সহজ নয়। তাই ফজর নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে ওঠা এবং জামাতের সাথে তা আদায় করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর সম্পর্কে অনেক সওয়াবের কথা হাদীসটি ঘোষণা করে গেছেন।
এক নাম্বারঃ জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। সুবাহানাল্লাহ। বিখ্যাত তাবেয়ি আবু বকর বিন উমারাহ তাঁর পিতা রুআয়বাহ থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লামকে বলতে শুনেছি →যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগে নামাজ আদায় করে, এমন কোনো ব্যক্তি কখনো জাহান্নামে যাবে না।( মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ১৩২২)
দ্বিতীয় নাম্বারঃ ফজরের নামাজে দাঁড়ানো সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। হযরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধরাত্রি পর্যন্ত(নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল। সুবাহানাল্লাহ। (মুসলিম হাদিস নাম্বার ১৩৭৭)
তৃতীয় নাম্বারঃ কেয়ামতের দিন সরাসরি আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন →যে ব্যক্তি তার আরামের ঘুম ভেঙ্গে তারা ফজরের নামাজ পড়বে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আল্লাহর দিদার লাভ করবে।( সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৭৩)
সুবাহানাল্লাহ। এটি হলো বান্দার জন্য সর্বোত্তম পুরস্কার। হযরত জারির বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, একবার আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তিনি রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ওই চাঁদকে তোমরা যেমন রেখেছ ঠিক তেমনি অচিরেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের স্পষ্ট দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার আগের সালাত আদায় করো তাহলে তোমরা তাই আর্জন করবে। সুবহানাল্লাহ।
অতঃপর তিনি পবিত্র কোরানের এই আয়াতটিও বলেনঃ সূর্য উদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবিহ পাঠ করুন। (সূরা কাহাফ আয়তনে ৩৯)
চতুর্থ নাম্বারঃ ঐ দিনের পুরোটা সময় আল্লাহর জিম্মায় থাকার বিরল সৌভাগ্য লাভ করা যায়। ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এই আকর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। সুবাহানাল্লাহ। (মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ১৩৭৯)
পঞ্চম নাম্বারঃ ফজরের নামাজ কিয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন→ রাতের অন্ধকারেই মসজিদগুলোতে যাতায়াতকারীদের কেয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। সুবাহানাল্লাহ। (ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ৭৮১)
ষষ্ঠ নাম্বারঃ সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন →তোমাদের কাছে দিনে ও রাতের যে ফেরেশতারা আসে তারা ফজর ও আসরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্য ছিল, তারা উপরে উঠে যায়, আল্লাহ সবকিছু জানেন তবুও ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, হে ফেরেশতারা আমার বান্দাদের কেমন রেখে আসলে…? তখন ফেরেশতারা বলে আমরা তাদের নামাজ অবস্থায় রেখে এসেছি হে মাবুদ! যখন গিয়েছিলাম তখনও আমরা তাদের নামাজ রত অবস্থায় পেয়েছি আর যখন চলে এসেছি তখন ও আরামের ঘুম ত্যাগ করে তারা নামাজ পড়েছিল। সুবাহানাল্লাহ।( বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৫৫)
সপ্তম নাম্বারঃ পরিপূর্ণ এক হজ এবং ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়। যদি কোন ব্যক্তি সূর্য উঠা পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরের শামিল থাকে অর্থাৎ ফজরের নামাজ আদায় করার পর সূর্য উঠা পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরের শামিল হওয়া ব্যক্তি। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন→ যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে, আল্লাহর জিকিরে যুক্ত থাকে, সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে, সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ এক হজ এবং ওমরার সাওয়াব পাবে। পরিপূর্ণ এই শব্দটি তিনি তিনবার বলেছেন এর গুরুত্ব আমাদের বোঝানোর জন্য। সুবহানাল্লাহ। ( সুনানে তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ৫৮৬)
আট নাম্বারঃ দুনিয়া ও আখেরাতে সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন →ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও এর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়ে উত্তম। সুবাহানাল্লাহ।( মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ১৫৭৩)
নয় নাম্বারঃ মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন→ মুনাফিকদের উপর ফজরের ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিকতর ভারী নামাজ আর নেই, যদি তাঁরা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হত। (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ২৫৪৩)
শুধু ইসলামী দিক থেকেই নয়, বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেও ভোরে ঘুম থেকে উঠা শরীর ও মনকে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে, তাদের সারাদিন ভালো সুন্দর কাটে। কর্মক্ষেত্রেও সফল হওয়া যায়। ব্রেন ভালো থাকে, অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি সহ আরো অনেক সফলতা পাওয়া যায়। শুধু ভোর ভোর আকাশ নিকষ অন্ধকার থাকাতেই ঘুম থেকে উঠে মসজিদে গমন করা এবং ফজরের জন্য অপেক্ষা করা। এটি শরীরের জন্য কতটা সুস্থতা ও মানসিক চাপের মুক্তির কারণ তা আমরা অনেকেই জানিনা।
ফজরের নামাজ আদায়ের জাগতিক উপকারিতার কথা আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এভাবে বলেছেন→ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার গানের পশ্চাদ অংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতিটি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায় তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়, তার ওপর অজু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তারপর উঠে সালাত আদায় করলেই আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য নিয়ে। (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ১১৪২)
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি