সুপ্রিয় Trickbd কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক
সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আধুনিক বিশ্বে
সর্বাধিক ব্যবহৃত স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেমে
অ্যান্ড্রোয়েড এর সর্বশেষ ভার্সন “অ্যান্ড্রোয়েড এম” সম্পর্কিত
আমার আজকের টিউন।
অ্যান্ড্রোয়েড হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়
স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম। নিত্য নতুন ফিচার আর
কয়েকদিন পর পর আপডেটের কারনে এখনো অ্যান্ড্রোয়েড
জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। নতুন ফিচার সংযোজন এবং
গ্রাহকদের সর্বাধিক সুবিধা দিতে সম্প্রতি অ্যান্ড্রোয়েড
তাদের আরও একটি ভার্সনের ঘোষনা দিয়েছে। অ্যান্ড্রোয়েড
নতুন এই ভার্সনটির কোন বিশেষ নামকরন অফিশিয়ালি করা না
হলেও এটাকে প্রাথমিক ভাবে “অ্যান্ড্রোয়েড এম” (Android M)
হিসাবেই বলা হচ্ছে। যদিও নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমের
ফাইনাল রিলিজ হয়নি, তবে পরীক্ষামূলক হিসাবে গুগল এর
ডেভেলপার প্রিভিউ উন্মোক্ত করেছে। সব ধরনের ত্রুটি
বিচ্যুতিকে সংশোধন করে খুব শীঘ্রই এর ফাইনাল ভার্সন পাওয়া
যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। একটা নতুন অপারেটিং সিস্টেম
উন্মোক্ত করা হলেই সেটার ফিচারস এবং সুযোগ সুবিধা নিয়ে
মানুষের আগ্রহের সীমা থাকে না। আর যদি ট্রিকবিডির একঝাঁক
প্রযুক্তি প্রেমিদের কথা ভাবি তাহলে তো কথায় নেই। তাই
ট্রিকবিডি পরিবারের জন্য আজ প্রথম বারের মতো উন্মোচিত হতে
যাচ্ছে “অ্যান্ড্রোয়েড এম” এর সাতকাহন।
Android M – গুগলের নতুন অপারেটিং সিস্টেম
আমার মনে হয় বিশ্ববাসীকে প্রযুক্তির নিত্য নতুন
সুবিধাগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য গুগল সব সময়
মুখিয়ে থাকে। তা না হলে কয়েকদিন পর পর কেউ নতুন অপারেটিং
সিস্টেম রিলিজ করে। একটা অপারেটিং সিস্টেম বাজারে
আসতে না আসতেই দেখা যায় অন্যটা আসার উপক্রম হয়ে যায়।
ক’দিন আগেই গুগলের নতুন স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম ললিপপ
রিলিজ হলো। তার কয়েক মাস পরেই আবার এই “অ্যান্ড্রোয়েড
এম”! তবে ধারনা করা হচ্ছে এবারের অপারেটিং সিস্টেম
স্মার্টফোন পারসোনালাইজেশনের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক
পরিবর্তন আনবে। কারন বর্তমানে রিলিজ হওয়া এবং আমার
আজকের টিউনের বিষয়বস্তু ডেভেলপার প্রিভিউটাই কিন্তু শেষ
কথা নয়, ফাইনাল রিলিজ কিন্তু এখনো বাকি!
গুগল কর্তৃক রিলিজ হওয়া ডেভেলপার প্রিভিউ এর নাম
“অ্যান্ড্রোয়েড এম” রাখা হলেও ফাইনাল নাম কী হবে সেটা
এখনো নির্ধারন হয়নি। তবে ফাইনাল রিলিজে নাম যেটাই হোক
না কেন, সেটা কিন্তু অবশ্যই অ্যান্ড্রোয়েড ৬.০ হিসাবেই থাকবে।
ডেভেলপার প্রিভিউয়ে থাকা বাগ গুলো ফিক্স করার পরে
“অ্যান্ড্রোয়েড এম” যে অন্য অপারেটিং সিস্টেমগুলোর চাইতে
দ্রুতগতিতে আগাবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে
“অ্যান্ড্রোয়েড এম” এ ইউজার কন্ট্রোল বাড়ানোর ক্ষেত্রে
ম্যাসিভ একটা পরিবর্তন আসবে বলেই সবার ধারনা। যাহোক,
ভবিষ্যতে কী হবে না হবে সেটা না ভেবে চলুন এক নজরে জেনে
আসি যে, “অ্যান্ড্রোয়েড এম” এ এমন কী আছে যেটা এই
অপারেটিং সিস্টেমকে অন্যদের চেয়ে স্পেশাল প্রমাণ করবে!
অ্যাপ ইনফো এবং পারমিশনস –App Info And Permissions
অ্যান্ড্রোয়েড এম এ অ্যাপ্লিকেশনগুলো পার্সোনালি
হ্যান্ডল করার জন্য গ্রাহকদের সব থেকে বেশি সুবিধা দেওয়া
হয়েছে। অর্থাৎ অ্যাপসগুলো রান করার জন্য আপনার পারমিশন এর
প্রয়োজন হবে। আগে কোন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার সময়
কেবল পারমিশনের প্রয়োজন হতো। এখন সেগুলো রান করতেও
পারমিশন প্রয়োজন হবে। তাছাড়া স্টোরেজে অ্যাপস
ইন্টারফেইসগুলো আগের চাইতে অনেক সুন্দর দেখাবে। উপরন্তু
অ্যাপস লিংক, ডিসপ্লে সবগুলোই নিজের মতো করে কাস্টমাইজ
করতে পারবেন।
এখন কথা হলো, অ্যাপস রানটাইমে পারমিশন বলতে আসলে
কী বুঝানো হচ্ছে? আপনি যখন কোন অ্যাপলিকেশন ইনস্টল করতে
যাবেন তখন যে পারমিশন অপশনগুলো আসে সেগুলো কি কখনো পড়ে
দেখেছেন? আসলে অ্যাপস পারমিশনগুলোর মধ্যে থাকে লোকেশন
প্রত্যেকটা অ্যাপস আপনার কার্যক্রম রেকর্ড করতে পারে। তবে
আপনি যদি প্রত্যেকটা অ্যাপস এর ক্ষেত্রে পারমিশন সেটিংস
পরিবর্তন করে দেন তাহলে আপনাকে আর এসব সমস্যায় পড়তে হবে
না। অন্যন্য ভার্সনে আলাদা করে পারমিশন সেটিংস পরিবর্তন
অপশন না থাকলেও “অ্যান্ড্রোয়েড এম” এ এই ফিচারটি সংযুক্ত
করা হয়েছে।
Doze – ডিভাইসের ব্যাটারী ডাক্তার
“অ্যান্ড্রোয়েড এম” চালিত ডিভাইসের ব্যাটারি
লাইফকে ইমপ্রোভ করার জন্য নতুন যে ফিচারটি সংযুক্ত করেছে
তার নাম হলো – Doze। এই শব্দটি এসেছে Deep-Sleep State এর
সংক্ষেপ হিসাবে যা আপনার ফোনের ব্যাটারী ম্যানেজমেন্টে
এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিবে। এই ফিচারটি সংযুগের ফলে
ডিভাইসের প্রায় অর্ধেক শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে।
তারমানে আপনার ডিভাইসের ব্যটারী আগের চেয়ে দ্বিগুন সময়
ব্যবহার করা যাবে। তবে এই ব্যাটারী সাশ্রয় কেবল ডিভাইসের
স্লিপ মোডে থাকার সময় পাওয়া যাবে।
ডিভাইস যখন আইডল মোডে থাকবে তখন Doze ফিচারটি
অটোমেটিক একটিভেট হয়ে যাবে। এছাড়াও এই ফিচারটি গতি
নির্ণায়ক পদ্ধতির ব্যবহার করে ফোন আনটাচড হওয়া মাত্রই
একটিভেট হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস সচল
রেখে Doze প্রায় সব ধরনের একটিভিটি স্লিপ মোডে নিয়ে যেতে
পারে। এটাই মুলত এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
Android Pay – ভার্চুয়াল পেমেন্ট সিস্টেম
গুগল Wallet এর মতো অ্যান্ড্রোয়েড পে হলে হলো একটি
NFC পেমেন্ট ফিচার, যা আপনাকে NFC এনাবল অ্যান্ড্রোয়েড
ডিভাইস হতে কোন পার্টনার স্টোরের NFC টার্মিনালের সাথে
ল্যানদেন করতে সাহায্য করবে। তবে গুগল ওয়ালেট এর সাথে এর
বিশেষ পার্থক্য হলো এটি ডিভাইসে পূর্বে থেকেই ইনস্টল করা
থাকবে। অ্যামেরিকাতে এটার বহুল ব্যবহার থাকলেও আমাদের
দেশের জন্য এটা কতোটা উপযোগি এ বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের মতামত কাম্য।
Google Now on Tap – একের ভেতরে অনেক কিছ
Google Now হলো অ্যান্ড্রোয়েড এর জন্য একটি ভার্চুয়াল
সহকারী যেটা আপনার ডিভাইসের আবহাওয়া বার্তা, ট্রাভেল
রিমাইন্ডার, নিউজ এবং সার্চ সুবিধাকে বর্ধিত করবে। আর Now
on Tap ফিচার আপনাকে অনেকটা মাল্টিপল ডিসপ্লের মতো
সুবিধা দিবে। তার মানে ধরুন ফোনে কোন কাজ করছেন, এমন
অবস্থায় আপনার কোন মেসেজ আসলো আর তার ভেতরের কোন
কন্টেন্ট সার্চ করার প্রয়োজন হলো। এমন অবস্থায় শুধুমাত্র হোম
বাটন প্রেস করে Now on Tap ফিচারের সাহায্যে আপনি কন্টেন্ট
সার্চ করতে পারবেন।
Fingerprint – নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও একধাপ
ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি অ্যান্ড্রোয়েড নিরাপত্তায় যে
কতোটা বড় পদক্ষেপ সেটা নিশ্চয় এতোটা বিশদভাবে বর্ণনার
প্রয়োজন নেই। ফোন যখন আর্থিক লেনদেনের একটি মাধ্যম হয় তখন
সেটাকে নিরাপদ রাখাটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়ায়। তাছাড়া
মোবাইল ফোন আমাদের একান্তই ব্যক্তিগত জিনিস। এটাতে
অন্যের হস্তক্ষেপ এড়াতে, নিজের মতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার
করতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি অনেক বেশি সহায়ক হবে বলে মনে
হয়।
Two-Way Charging – ব্যাটারী চার্জিংয়ে এক নতুন
দিগন্ত
স্বাভাবিক ভাবে আমরা ব্যাটারীকে শুধুমাত্র চার্জ
গ্রাহক হিসাবে দেখে থাকি। চার্জিং উৎস হিসাবে ব্যাটারীকে
বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু “অ্যান্ড্রোয়েড এম” অপারেটিং
সিস্টেমে আপনি একই ফোন দিয়ে অন্য ফোনকেও চার্জ করতে
পারবেন। যেভাবে আমরা কোন পোর্টেবল ব্যাটারী দিয়ে করে
থাকি। Android M এ ব্যাটারী চার্জ করার জন্য USB টাইপ C
অর্থাৎ USB-C চার্জার ব্যবহৃত হবে। যেটাকে রিভার্সিবল চার্জার
বলা হয়।
তবে মনে রাখতে হবে দুটো ডিভাইস যদি USB-C
কানেকটিং কেবল সাপোর্ট না করে তাহলে এ পদ্ধতি সম্ভব হবে
দ্রুত চার্জ হবে এই নতুন সিস্টেমে। ফোনের ধীরগতির চার্জের দিন
মনে হয় তাহলে শেষ হতে চলেছে।
App Links – ঝামেলাবিহীন ফাইল ওপেনিং
নতুন কোন ফাইল বা লিংক ওপেন করতে গেলে যদি ডিফল্ট
অ্যাপ সেট করা না থাকে তাহলে বিরক্তির সীমা থাকেনা!
কারন নতুন লিংক কোন অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে ওপেন হবে তা
আপনাকে ডিফাইন করে দিতে হয়। “অ্যান্ড্রোয়েড এম” এ এই
সমস্যাটা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যাবে। কারন কোন লিংক
ওপেন করার জন্য সিস্টেম কর্তৃক একটি ফেরিফাইড অ্যাপ্লিকেশন
থাকবে যেটা দিয়ে লিংকটি ওপেন হবে। এক্ষেত্রে ডেভেলপার
আপনার হয়ে কাজটি করে দিবে। যা অনেক দ্রুতগতির, স্মোথ এবং
ঝামেলাবিহীন হবে।
সামগ্রিক পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং সংস্কার
নতুন ফিচারগুলো দেখে এখনোই নিশ্চয় চোখ ছানাবড়া হয়ে
গেছে তাইনা? কিন্তু নতুন মানে তো নতুনই, যেখানে বিষ্মিত করার
মতো আরও অনেক কিছুই থাকবে। আসলে আমি এতোক্ষণ মেজর
কিছু সংযোজনের কথা বর্ণনা করলাম। কিন্তু ফিচারগুলো শেষ
হতে যে এখনো অনেক সময় বাকী। চলুন সংক্ষেপে দেখে আসি
আরও কী আছে এতে-
এতে রয়েছে কাস্টমাইজেবল লকস্ক্রিন মেসেজ ফিচার, যার
সাহায্যে আপনি লকস্ক্রিনে আপনার পছন্দ মতো কোন লেখা
প্রদর্শন করতে পারবেন। এর আগে এখানে শুধু ইউজার নেইম প্রদর্শন
করা যেতো।
ভলিয়্যুম কন্ট্রোলের জন্য সুন্দর ড্রপডাউন অপশন। যা আপনাকে
আলাদা আলাদা ভাবে রিংটোন, মিডিয়া, এলার্ম এর
ভলিয়্যুমগুলো সরাসরি কন্ট্রোলবার হোভার করে নিয়ন্ত্রন করতে
সাহায্য করবে।
Do Not Disturb হলো একটি এডভান্স সাইলেন্ট ফিচার। এর
সাহায্যে আপনি নির্দিস্ট দিনে নির্দিস্ট টাইমের জন্য অটো
সাইলেন্ট মোড একটিভ করে রাখতে পারবেন। কিছু রুলস সেট করার
মাধ্যমে এটার অনেক এডভান্স ফিচার পাওয়া যাবে।
অ্যাপ্লিকেশন নোটিফিকেশন অপশনে পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা
করতে পারবেন। তারমানে কী কী নোটিফিকেশনে শো করবে
সেটা আপনি নিজে নির্ধারন করে দিতে পারবেন।
ডেভেলপার অপশনের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন USB Configuration
যার সাহায্যে MTP (Media Transfer Protocol), PTP (Picture TP),
RNDIS (USB Ethernet), Audio Source, MIDI ইত্যাদি অপশনগুলো
হ্যান্ডল করতে পারবেন।
এক্সটার্নাল স্টোরেজগুলো এমনভাবে ফরমেটেড হবে যেন সেগুলো
ইন্টারনাল স্টোরেজের মতো ব্যবহৃত হয়। এরফলে ডাটা ট্রান্সফার
প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুততর হবে।
শেষ কথা
গুগলের প্রত্যেকটা প্রচেষ্টা থাকে মানুষকে অবাক করে
দেওয়ার মতো। মাঝে মাঝে ভাবি গুগল না থাকলে মানুষ মনে হয়
প্রযুক্তি কী জিনিস সেটা এতো ভালোভাবে বুঝতে পারতো না।
তবে গুগলের নিত্য নতুন এরকম অপারেটিং সিস্টেম রিলিজ হওয়া
অনেকেই ভালো চোখে দেখে না। কারন দামী একটা ফোন কেনার
কয়েক মাস পরেই যখন সেটা ব্যাকডেটেড হয়ে যায় তখন দুঃখের
সীমা থাকে না। জানি কিছুদিন পরে এই অপারেটিং সিস্টেমও
পুরাতন হয়ে যাবে। তবুও ফিচার দেখে প্রশ্ন জাগে, আরও কি কিছু
বাকী রাখছে গুগল?
আমি ফেবুতে
Credit: সানিম মাহবীর ফাহাদ