আপনি কী কখনও আপনার শখের মোবাইল টি ভূল বশত পানিতে ফেলে দিয়েছেন। অথবা এর চেয়েও খারাপ টয়লেটে, গরমে অস্থির হয়ে পকেটে রেখেই বাথরুমে গোসল করতে শুরু করে দিয়েছেন, বা পকেটে রেখেই সাঁতার কেটেছেন, অথবা ভূল বশত মসজিদে অজুর স্থানে মোবাইলটি ফেলে দিয়েছেন। যেভাবেই মোবাইল ভিজুক না কেনো, ভেজা মোবাইল মানেই আপনাকে তা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি দ্রুততার সাথে কিছু পদক্ষেপ নেন, হয়তো আপনার মোবাইল টি বেঁচে যেতে পারে।
ধাপগুলো অনুসরণ
করুনঃ
মোবাইলটি যতো দ্রুত সম্ভব পানি থেকে বের করে ফেলুন। মোবাইল এর প্লাস্টিক কভারটি মোটামুটি শক্ত হয়ে থাকে, কিন্তু এতে পানি ঢুকতে খুব বেশী সময় লাগে না, খুব বেশী হলে ২০ সেকেন্ড। মোবাইলটি তাড়াতাড়ি ধরে নিন। একে ভুলেও চালু করবেন না, কারণ এতে খুব সহজেই শর্টসার্কিট হতে পারে (যদি চালু থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে
দিন)। পানিতে গেলে এক শুকানো অপরিহার্য, কাজ করুক বা না করুক। যদি পানি থেকে বের করতে দেরী করে ফেলেন, তবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাটারি খুলে ফেলুন। এতে মোবাইল এর মধ্যে সকল বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধের
নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। আপনার ফোনটি যদি দ্রুত বেদ করে ফেলে, তবে হয়তোবা তেমন ক্ষতি হয়নি। আর যদি দেরি হয়েও যায়, মনে হয় না যে আপনার মাথা গরম করে ফোনটিকে শুকাতে পারবেন। হাল ছেড়ে দেওয়ার আগে আরও অনেক কিছু করার আছে। মোবাইলের ব্যাটারি খুলে ফেলুন। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপের একটি। বিদ্যুৎ আর পানির মধ্যে কেমন বিক্রিয়া হচ্ছে সেটা না ভাবলেও চলবে, মদ্দা-কথা এরা দুজন কখনও এক সাথে থাকতে পারে না।
মোবাইলের ভিতরে অনেক বিশেষ বিশেষ অংশ আপনি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারেন যদি আপনি এর শক্তির উৎস (ব্যাটারি) টিকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। সিম কার্ডটি খুলে ফেলুন। এতে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী থাকতে পারে। অনেকের কাছে ফোনটির চেয়ে সিম কার্ডের ওই তথ্য গুলোর মূল্যই বেশী। যদিও সিম কার্ড খুব সহজে নষ্ট হয় না, তবে ফোনটি বাঁচাতে পরবর্তী কয়েকটি ধাপ হয়তো সিমের জন্যে সহায়ক হবে না। খুলে শুকনো করে এক পাশে রেখে দিন, যতোক্ষণ আপনার ফোন ব্যবহার উপযোগী না হয়। মোবাইলে ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস গুলোও আলাদা করে
দিন। যেমন: কভার, হোল্ডিং ইত্যাদি। মোবাইল ফোনটি ভালোভাবে শুকান। এক ফোঁটা পানিও মারাত্মক হতে পারে ফোনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবেশ করে। তাই আপনাকে অবশ্যই দ্রুত এবং সতর্কতার সাথে শেষ বিন্দু পরিমাণ পানিও মুছে ফেলতে হবে।
দ্রষ্টব্যঃ
হালকা ভাবে মোবাইল টি মুছবেন। অতিরিক্ত ঝাঁকালে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশে পানি ঢুকে যেখান এখনও পর্যন্ত পানি প্রবেশ করেনি। এক্ষেত্রে, হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। টিস্যু পেপার বা সুতির কাপড় ব্যবহার করুন। হালকা ভাবে প্রতিটি কোণা মুছে ফেলুন। ফোনের যেসব অংশে ছিদ্র বা গর্তের মতো আছে (যেমন: কী-প্যাড), সেখানে টিস্যুর শুকনো অংশই ব্যবহার করুন।
কারণ, ভাজ অংশের পানি ভিতরে চলে জাতে পারে। ব্যাটারি খুলে অভ্যন্তরীণ অংশ মুছতে ভূলবেন না
যেনো। সম্ভব হলে ভ্যাকুম ক্লিনার ব্যবহার করুন। আপনার ফোনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে থেকে একদম ক্ষুদ্র পানির বিন্দু টেনে বের করতে এর জবাব নেই। তাই, যদি বাসায় ভ্যকুম ক্লিনার থেকে থাকে তবে একে ব্যবহার করুন। ফোনটির প্রতিটি সম্ভাব্য অংশে এর ব্যবহার করুন। এতে আপনার ফোনটি
যেতে পারে। আর যদি ড্রায়ার খুব গরম হয়, তবে আপনার ডিভাইস টির ক্ষতি হতে পারে। তাই ভূলেও, হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ফোনটি উল্টে দিন। চাল থেকে বের করার পরে শুকনো একটি তোয়ালেতে ফোনটি রাখুন। মনে রাখবেন, এই সব কিছুর উদ্দেশ্যই হচ্ছে ফোনটিকে পুরোপুরি ভাবে শুকানো। তাই
ভেজা তোয়ালে বা অন্য কিছু ব্যবহার করে এতক্ষণের সকল মেহনত নষ্ট করে দিবেন না। সময় হয়েছে ফোনটি টেস্ট করার আপনি যদি অন্তত ২৪ ঘণ্টা বা এর চাইতে বেশী সময় (সম্ভব হলে) অপেক্ষা করে
উপরের ধাপগুলো পূর্ণ করে থাকেন, তাহলে এখন ফোনটি চালু করতে পারেন। ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যাটারিটি লাগান এবং ফোনটি চালু করুন। টিপসঃ যদি ফোনটি এখনও কাজ না করে, একে ব্যাটারি ছাড়া চার্জারে লাগিয়ে দেখতে পারেন। যদি
দেখেন কাজ হচ্ছে, তাহলে আপনাকে একটি নতুন ব্যাটারি কিনতে হবে। আর যদি তা না হয়, তবে সময় হয়েছে এটিকে একজন
প্রফেশনাল মেকানিক এর কাছে নেওয়ার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি ফোনটিকে ফোনের ব্র্যান্ড অনুযায়ী ডিলারের কাছে বা সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যান। যেমন: নকিয়ার জন্য নকিয়া কেয়ার সেন্টার। তাদের কাছে থেকে পানিতে পড়ার বিষয়টি লুকনো খুব ভাল আইডিয়া হবে না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ভিজলে একে বিশেষ ভাবেই ঠিক করতে হবে, নতুবা সার্ভিস কোনো কাজে দিবে না। শুকানোর পরেও যদি ফোনটি চালু না হয়, আপনি একে পুরোপুরি ভাবে খুলতে পারেন (যদি আপনার প্রাথমিক ধারণা থেকে থাকে) এর কেসিং এবং অন্যান্য সকল অংশ সাবধানতার সাথে খুলে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছুন আপনি আবার ভ্যকুম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো ঢিল অংশ জেন এর ভেতরে চলে না যায়। আর আপনি যদি ফোনটি খুলতে সাহস না পান, তবে আপনার কোনো বন্ধু বা পরিবারের অন্য কার কাছে
সাহায্য চাইতে দ্বিধা বধ করবেন না। তেমনটি সম্ভব না হলে, প্রফেশনাল এর সাহায্য নিন। যদি দেখেন ফোন চালু
হয়েও উল্টো পাল্টা আচরণ করছে, তাহলে বুঝবেন ভিতরে আপনি কিছু পানি মিস করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আবার খুলে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে দেখুন। অথবা, মোবাইল ফোনের প্রফেশনালের সাহায্যে এমন ক্রুটি খুবই সহজে দূর করতে পারেন। আপনি যদি অ্যাপলের আইফোন ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তবে আপনি আপনার স্মার্টফোনটিকে পেপার
তাওয়াল দিয়ে মুছে খুব সহজেই ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারেন। এছাড়া আপনি আপনার আইফোনের জন্য ওয়াটারপ্রুফ কভার কিনতে পারেন যদি আপনার আইফোন 4 বা 4S থাকে। আর যদি আইফোন 3GS বা পূর্বের
ভার্সন থাকে, কভারের সুবিধাটা আপনার কপালে নেই।
টিপসঃ
মোবাইল ফোনের সকল অংশ খুলে শুকনো জায়গায় রাখুন। মোবাইলটি যদি একই সময় ভাজে এবং চালু থাকে, এটা মারাত্মক
হয়ে থাকে। যদি আপনি ভিতরের পার্টস জ্বলে যাওয়ার আগেই এটিকে বন্ধ করতে পারেন, আপনার মোবাইল হয়ত বেঁচে যাবে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা মোবাইলের জন্য ক্ষতিকারক। ধৈর্যের সাথে ফোনটি শুকান। অধৈর্য হয়ে অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করবেন না।
মনে রাখবেন, মোবাইল ফোন ভেজে ফেলা আপনার উদ্দেশ্য নয়। ফোনেটির ভিতরের কিছু অংশে আপনি বিশেষ ভাবে তাপ
দিতে পারেন। যেমনঃ টেবিল ল্যাম্প বা হিটার এর সাহায্যে। আমি এই টিপস গুলো বর্ষাকালের আবহাওয়া এবং এর সমস্যাকে মাথায় রেখে করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার পক্ষে সম্ভব নয় বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া কোনো মোবাইল সার্ভিস করতে দোকানে নিয়ে যাওয়া যখন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে বা অন্য কোনো জরুরি অবস্থায়। হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি নিজেই মোবাইল টিকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারেন।
ফোনটিকে ভেজা অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব শুকাতে শুরু করুন। ফোনটি কোনোভাবেই শুকানোর আগে চালু করার চেষ্টা করবেন না। এতে শর্টসার্কিট হয়ে পুরো ফোনটিই বাতিল হয়ে যাবে। আমি আমার চিনা একজনের দেখেছিলাম একবার এভাবে চালু করায় ফোনের ডিসপ্লে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যদিও তিনি সারাদিন শুকিয়ে ছিলেন মোবাইল ফোন শুকাতে ওভেন ব্যবহার করতে যাবেন। যেমনটি আগে বললাম, আপনি মোবাইলটি ভাজতে বা গলাতে এসব করছেন না। ব্যাটারিটি অতিরিক্ত তাপ থেকে দূরে রাখুন। খুব সহজেই আগুন লেগে যেতে পারে। আজকালকার অধিকাংশ আধুনিক মোবাইল ফোনের ব্যাটারির নিচেই একটি “Iiquid Damage Indicator Sticker” থাকে। যা পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে
রঙ পরিবর্তন করে (যেমনঃ লাল থেকে গোলাপি হয়ে যায়) যাতে করে মোবাইল টেকনিশিয়ানরা বুঝতে পারেন আপনি কী ঘটনা
ঘটিয়েছেন। আমার জানা মতে , কোনো ওয়ারেন্টই “Water Damage”সাপোর্ট করে না। এজন্য যদি মিথ্যা বলে ফ্রি সার্ভিস করাতে চান, স্রেফ বোকা বনে যাবেন । তৎক্ষণাৎ পানি থেকে বের করে ব্যাটারি খুলে ফেললে, আপনার মোবাইল টি বাঁচার সবচেয়ে বেশি আশা থাকবে।
8 thoughts on "[hot post] স্মার্টফোন পানিতে পড়ে গেলে কীভাবে ঠিক করবেন এখনি দেখে নিন।"