একদিকে চলছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভর্তি কার্যক্রম আর অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়ে গেছে। তাই যারা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়শুনা করতে চান তারা একবার হলেও Tamim Shahriar Subeen ভাইয়ের এই লিখাটি পড়বেন!
কেন CSE পড়বা না !
… কম্পিউটার সায়েন্স একটা অদ্ভুত বিষয়। বাংলাদেশে এই বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করার পরে কেউ কেউ সরাসরি গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটে চলে যায়। এছাড়াও এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানীতেও যায়। এসব জায়গায় একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটের বেতন হয় জায়গাভেদে তিন থেকে সাত লক্ষ টাকা! তাহলে তো সবারই সিএসই পড়া উচিত। কিন্তু আসলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাশ করার পরে দশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি জোটাতেই হিমশিম খায়, গুগল-ফেসবুক তো অনেক দূরের কথা। দেশের মধ্যেও যারা চাকরি পায়, তাদের কারো কারো বেতন শুরুতে ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর কারো কারো বেতন ১০-১৫ হাজার টাকা। এর কারণ কী? এত বৈষম্য কেন? সবই কি মামা-চাচার জোর?
কারণটা হচ্ছে দক্ষতা। কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে যারা খুব শীর্ষস্থানীয় ছাত্রছাত্রী, তারা গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চলে যায়, কিন্তু এরকম তো হাতে গোণা। বাকীদের জন্য কিন্তু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ছাড়া আর খুব ভালো অপশন নাই। যদিও আরো কিছু ক্যারিয়ার রয়েছে, কিন্তু এটাই প্রধান অপশন। তো এই কাজ করার জন্য প্রোগ্রামিং জানা লাগে। আর প্রোগ্রামিংটা ঠিক অন্য লেখাপড়ার মতো নয়, যে খালি পড়ে গেলাম, শিখে ফেললাম। এটা হচ্ছে একটা দক্ষতা, যেটা শিখতে হয়, করতে পারতে হয়। আবার এটা ঠিক ইট ভাঙ্গার মতো দক্ষতাও নয়, এখানে লেখাপড়া লাগে, যুক্তি-বুদ্ধি-বিশ্লেষণ লাগে। তো অসুবিধা কী? আমরা প্রোগ্রামিং শিখে ফেলবো। কিন্তু শিখতে পারবা না, কেন, সেটা বলছি।
প্রোগ্রামিং শিখতে পরিশ্রম করা লাগে – পড়া এবং প্র্যাকটিস করা। আর এই প্র্যাকটিস করার জন্য আবার মাথাও খাটাতে হয়, এটা কিন্তু দেখে দেখে টাইপ করা ধরণের প্র্যাকটিস না। মাঝে-মধ্যে অজানা সমস্যা চিন্তা করে সমাধান করতে হয়। প্রোগ্রামিং শেখার সময় একটা ছোট সমস্যার সমাধান করতে ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যায়। তো আমরা কিন্তু ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত মোটামুটি মুখস্থ করেই পার করে এসেছি। বড়জোর কিছু অঙ্ক হয়তো বোঝার চেষ্টা করেছি। আমাদের কখনওই একটা প্রবলেম করার জন্য ৪-৫ ঘণ্টা সময় দেয়া লাগে নাই। আশা করি, বিষয়টা পরিষ্কার। এখন কথা হচ্ছে, সময় দেওয়া লাগলে দিবো, যত পরিশ্রম করার দরকার করবো, টিচারের সাহায্য নিবো। কথা কিন্তু এখানেই।
প্রথমত, টিচারের সাহায্যের আশা ছেড়ে দাও। বেশিরভাগ জায়গাতেই ভালো টিচার নাই। কারণ প্রোগ্রামিংয়ে যারা খুব ভালো, হাতোগোণা কয়েকজন বাদে কেউ আসলে বাংলাদেশে শিক্ষকতা করে না। তাই আমি অনেকের কাছেই শুনি, ক্লাসে টিচার ঠিকমতো প্রোগ্রামিং বুঝাতে পারে না। চাকরির ইন্টারভিউ যে নিবে, সে তো এটা শুনে বলবে, “তাতে আমার কী?” এখন তুমি ভাবতে পারো, প্রোগ্রামিং তো নিজের চেষ্টাতেও শেখা যায়। আমি নিজে চেষ্টা করে শিখবো। সেটাও হবে না, কেন, জানতে হলে এই লেখার বাকী অংশ পড়।
আসলে, প্রোগ্রামিংয়ের পেছনে তুমি সময় দিতে পারবা না। তোমার ভার্সিটির ক্লাস করা লাগে, আর ঢাকায় থাকলে তো আবার রাস্তা-ঘাটেও অনেক সময় ব্যায় হয়। এছাড়া আমরা সামাজিক জীব, বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন আছে। কত রকমের প্রোগ্রামে যাওয়া লাগে। এদিকে আবার রাতের বেলায় প্রিমিয়ার লীগ, লা লিগা, উয়েফা – কতকিছু। আর ক্রিকেট খেলা তো আছেই – না দেখলে পাপ হয়। তারপরে আছে কত রকমের সিরিয়াল, গেম অব থ্রোনস, হেন-তেন, না দেখলে সমাজে মান থাকে না। এত কিছুর পরে আবার আছে মোবাইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। আমি তো নোটিফিকেশনের কাছে যাই না, নোটিফিকেশন আমার কাছে আসে! এজন্যই বলি, সময় দিতে পারবা না। আর পরিশ্রমও করতে পারবা না, সময় দিতে পারলেই না পরিশ্রম করবা। সুতরাং সময় থাকতে নিজের ভালো বুঝে নাও। কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে বেকার থাকার চেয়ে অন্য কিছু কর।
আর কম্পিউটার সায়েন্স কিন্তু অনেক বোঝার বিষয়। যাদের গণিতের সাধারণ বিষয়গুলো বুঝতেই সমস্যা হয়, তাদের আসলে এই দিকে না আসাই ভালো।
যারা আমার কথায় এখনও একমত হও নাই, তারা আমার লেখা প্রোগ্রামিং শেখার একটা বই আছে, (http://cpbook.subeen.com-এ গিয়ে ফ্রি-তে বইটা পড়া যায়)। সেই বইটা কিছুদিন পড়। যদি মনে হয়, এই জিনিস নিয়া আগামী চার বছর ব্যাপক খাটাখাটনি করতে পারবা এবং আগামী ২০-৩০ বছর এইরকম বিদঘুটে জিনিসকেই নিজের পেশা হিসেবে নিতে পারবা, তাহলে কম্পিউটার সায়েন্স পড়লেও পড়তে পারো।
ইচ্ছা থাকলে সব কিছুই হয় …