যেকোনো ধরনের হুমকির শিকার হলে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে থানায় গিয়ে জিডি করার কথা ভাবেন। কিন্তু থানায় গিয়ে কীভাবে জিডি করতে হয়, তা হয়ত অনেকেই জানেন না। জিডি হলো সাধারণ ডায়েরি বা জেনারেল ডায়েরি বা কোনো বিষয়ে সাধারণ বিবরণ। এ আইনি সহায়তা পেতে একটি বিবরণ লিখিতভাবে থানায় জমা দিতে হয়। সুস্থ মস্তিষ্কের এবং প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো ব্যক্তিই থানায় জিডি করতে পারবেন।

যেসব কারণে জিডি করা হয় : বিভিন্ন কারণে জিডি করা হয়। যেমন- কেউ ভয় দেখালে বা হুমকি দিলে অথবা নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে থানায় জিডি করা হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলে জিডি করা যায়। এসবের বাইরেও কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত সনদ, দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলেও জিডি করা যায়। এছাড়া কেউ কারও সম্পদের ক্ষতি করলে, প্রাণনাশের হুমকি দিলে, বাসার কেউ হারিয়ে গেলে বা পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে জিডি করা জরুরি। কেননা, সন্দেহভাজন কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় বা হারানো কিছুর জন্য জিডি করা হলে ওই ঘটনা ঘটার পর দোষী ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে বা হারানো জিনিস খুঁজে পেতে এবং আইনি সহায়তা নিতে জিডির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৃতভাবে এবং আইনগতভাবে জিডি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ১. সাধারণ জিডি, যা কোনো অপরাধ সংঘটন সম্পর্কিত এবং ২. বিশেষ জিডি, যা কোনো অপরাধ সংঘটন সম্পর্কিত নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ জিডি করতে হয় আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে। যেমন- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড ইত্যাদি হারিয়ে গেলে।

কীভাবে জিডি করবেন : জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করা উচিত। নিজের এলাকার থানাকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। তবে ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এক থানায় আর জিডি করবেন অন্য থানায়, এমনটি করা সমীচীন নয়। কেননা, এতে আইনি সহায়তা নিতে ঝামেলা পোহাতে হয়। জিডি করতে হয় দরখাস্ত আকারে। জিডি করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর। নিচে থাকবে থানার নাম। বিষয় হিসেবে উল্লেখ করতে হবে যে ব্যাপারে জিডি করতে চান তার নাম (যেমন- হারানোর ব্যাপারে লিখতে পারেন হারানো সংবাদ সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন)। বিবরণ অংশে আপনাকে ঘটনার বিস্তারিত লিখতে হবে। অবশ্যই আপনাকে আশঙ্কার কারণ, যার জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে বা যে হুমকি দিয়েছে, তার নাম, ঠিকানা, হুমকির স্থান, তারিখ ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয় উল্লেখ করতে হবে। কিছু হারিয়ে গেলে তার বিস্তারিত বিবরণ এবং পারলে তার কোনো নমুনা (যেমন- ছবি) দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবেন। সব শেষে নিচে আপনার নাম, ঠিকানা ও টেলিফোন বা মোবাইল ফোন নম্বর লিখে দেবেন। যদি কোনো বিষয়ে এখনই কোনো মামলা না করতে চান, তাহলে জিডিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিতে হবে যে, এ বিষয়ে আপাতত কোনো মামলা করবেন না। তবে মনে রাখবেন, পুলিশ যদি মনে করে যেকোনো মারাত্মক অপরাধ ঘটেছে, তাহলে জিডি থেকেও মামলা হতে পারে।

জানা জরুরি : জিডি করতে যেকোনো পরামর্শের জন্য থানার সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাঁকে লিখে দিতে অনুরোধ করুন এবং এজন্য তাঁকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না। আবেদনের একটি কপিতে জিডি নম্বর, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল লাগিয়ে আপনাকে প্রদান করা হবে এবং জিডিটি নথিভুক্ত হবে। জিডির কপিটি আপনি নিজের জন্য অবশ্যই ভালোভাবে সংরক্ষণ করবেন। জিডি হওয়ার পর তা কর্তব্যরত কর্মকর্তা থানার ওসির কাছে পাঠাবেন। জিডিটি যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন বিষয়ে হয়, তবে থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবেন এবং কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা আবেদনকারীকে অবহিত করবেন।

2 thoughts on "আইন জানুন আইন মানুন পর্ব ৭: থানায় জিডি/সাধারণ ডায়েরি করার পদ্ধতি"

Leave a Reply