মাইনক্রাফট : একটি সীমাহীন সম্ভাবনা।
আচ্ছা একটি গেম বানাতে কি প্রয়োজন? প্রোগ্রামিং এর? অবিশ্যি সত্য হলেও শুধু মাত্র প্রোগ্রামিং জানলেই একটি গেম বানানো যায় না। একটি উপভোগ্য গেম তৈরি করতে চাই একটি আইডিয়া। শুধু গেম নয় জীবনের সকল স্তরেই প্রয়োজন। মাইনক্রাফটও একটি আইডিয়া ছিল। মার্কাস প্যাসন নামের একজন খুবই সিম্পল প্রোগ্রামারের মাথায় এই ভিডিও গেম বানানোর আইডিয়া আসে। তবে অন্যান্য কোনো গেমের মতো না। একটি সীমাহীন সম্ভাবনার গেম। যেখানে কোনো প্লট নেই, কোনো বাউন্ডারি নেই। একটি মানুষ তার জীবনে যেটি সব থেকে বেশি চায় সেটি হচ্ছে নিজের স্বাধীনতা। আর এই গেমটিতে সেটিই রয়েছে যা আমার মনে হয় না এর আগে কোনো গেমে ছিল। আর থাকলেও তা কেবল নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এক কথায় মাইনক্রাফট নিজের মধ্যেই একজন গেমারের একটি জগৎ।
আধুনিক ভিডিও গেম গুলোর প্রায় সব গুলোই বড় বর স্টুডিও, হাজার হাজার কর্মচারী দ্বারা তৈরি করা হয়। Assassin’s Creed Valhalla এর মতো বড় বড় ব্লকবাস্টার গেম গুলোতে পুরো পৃথিবীর আনাচে কানাচে থেকে মানুষজন কন্ট্রিবিউট করে। ফ্রিল্যান্সার ডেভলপার রাও নানা স্টেজে কাজ করে। কিন্তু মার্কাস ছিল একা। ২০০৯সালের গ্রীষ্মের সকালে মার্কাস সিন্ধান্ত নেয় সে একটি এক্সপেরিমেন্ট করবে। Dwarf Fortress এবং Infiniminer গেমের একটি রিমিক্স তৈরি করে সে। পুরো এক সপ্তাহ ধরে কাজ করে। এটি ছিল মাইনক্রাফট এবং তার সোনালী যাত্রার প্রথম অধ্যায়। সে TIGSource নামের একটি ফরামে এইটি পোস্ট করে। প্রায় মাস খানেক পরে সে গেমটির জন্য ১০ ইউরো করে চার্জ করা শুরু করে এবং কিছু দিনের মধ্যেই গেমটির ৪০ কপি বিক্রি হয়।
নচ বুঝতে পারে তার কি করা উচিৎ এবং সে তাই করে। সে পুরো একটি গেম একেবারে প্রকাশ না করে, গেমারদের ফিডব্যাক বুঝে সময়ের সাথে ধীরে ধীরে গেমকে আপডেট করতে থাকে। গেমিং কমিউনিটিতে একধরনের সাড়া পরে যায় এবং মানুষজন মাইনক্রাফট নিয়ে ডিসকাস করতে থাকে। আর মানুষজন নিজেরাই এই জিনিসের এডভার্টাইজমেন্ট করতে থাকে। রেডিট এর মতন সোস্যাল প্লার্টফ্রমই এডভার্টাইজমেন্ট এর কাজ করে দিত।
“The main thing is that people started talking about the game”-Notch.
খুব শীঘ্রই Mojang Studio এর প্রতিষ্ঠা করেন নচ।তার সাথে ছিল Jacob Porser, যে কিনা তার কলিগ ছিল King.com এ। নভেম্বর ২০১০ এ গেমটির একটি বেটা ভার্সন রিলিজ করা হয়। ২০১১তে গেমটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম শেষ হয় এবং সেই সালের ১৬ আগস্টে শুধুমাত্র এক্সপেরিয়া প্লে এর জন্য প্লে স্টোরে পাবলিশ করা হয়, ৬.৯৯ ডলার মূল্যে। এর পর ৭ অক্টোবর সকল Android এবং ১৭ই নভেম্বর সকল IOS ডিভাইস গুলোর জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
ডিসেম্বরে গেমটির চিফ ডিজাইনার এর দায়িত্ব পান Jens Bergensten। গেমটিতে ধীরে ধীরে ডেভলপারদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং গেমটি সফলতার উচ্চতায় একধাপ করে আগায়। ২০১৩ সালে গেমটি PS3(Play Station 3) এর জন্য রিলিজ করা হয়। এটাই গেমের বড় ধামাকা ছিল না। এই একই সালে গেমটিতে একটি মেজর আপডেটের মাধ্যমে আরো অনেক গুলো নতুন বায়োমস এবং ফিচারস এড করা হয়। ফলে মাইনক্রাফট ওয়াল্ডে একটি বড় পরিবর্তন আসে।
নচের পুরো কাহিনী শেষ সীমায় পৌছায় পুরো স্টুডিও এবং গেমটা বিক্রির মাধ্যমে। ২০১৪ সালে ২.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে মাইক্রোসফট মাইনক্রাফট গেমটিকে কিনে নেয় । এটি বিক্রির সিন্ধান্ত পুরোটাই গেম নির্মাতা নচের নিজের ছিল।সে ফ্যান দের ক্রিটিসিজমে ক্লান্ত হয়ে এই সীধান্তে পৌঁছায়। অবশ্য ডিলটি তাকে একরাতে বিলিয়নার বানিয়ে দেয়।
সেই বছরই মাইনক্রাফট প্রায় সকল প্লার্টফ্রমে এক্টিভ হতে থাকে। Xbox One, PS4 এবং PS Vita-তেও।শেষ দুটি রিলিজ খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল কারণ তখন IP এড্রেস মাইক্রোসফট এর মালিকানাধীন ছিল, যারা অবশ্যই নিজেদের প্রতিযোগীদের প্লার্টফ্রমে খুব কমই গেম প্রকাশ করে। এক অর্থে এটিই ক্রস-প্লার্টফ্রম আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
২০১৫ সালে তেমন ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটে নি,যদিও Wii U এর জন্য একটি ভার্সন রিলিজ করা হয়। তারপর মাইক্রোসফট তাদের ফ্রাঞ্চাইজটি আরো বড় করার চিন্তা ভাবনা করে এবং Telltale তাদের নিজস্ব একটি ভার্সন ডেভলপ করে Sandbox -এ। এই কলেবরেশনের ফল সরূপ ফ্যানরা এজটি স্টোরি মোড দেখে যেটা কিনা সাধারণ প্লার্টফ্রম গুলোর পাশাপাশি নেটফ্লিক্সেও রিলিজ পায়। ২০১৬ সালে Mojang একটি মাইনক্রাফটের একটি এডুকেশনাল ভার্সন রিলিজ করে স্কুলের জন্য।ওহ হ্যা, এই সময়ে মাইনক্রাফটে পোলার বিয়ার এড করা হয়। এটাও অবশ্যই একটা হিস্টোরিকাল ইভেন্ট। এই ভাল্লুক গুলোর তান্ডবে আমি অনেকবার মারা গিয়েছি গেমে:”( আপনাদের মধ্যে যারা এই ভাল্লুক গুলোর আক্রমনে মারা গিয়েছেন তারা কমেন্টে জানাবেন। এরপর গেমের আপডেট কিছুটা স্লো হয়ে গেলেও ফ্যানরা আরো অনেক কিছু পায়। একটি রোলপ্লে গেমনো রিলিজ করা হয় Minecraft Dungeons নামে।
এই ছোট একটি স্কোয়ার আকৃতির কেবল গেমারদের নির্মল বিনোদনই দেয় নি। এই গেমটি ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতেও সাহায্য করে। এমনকি Stockholm এর একটি স্কুলে মাইনক্রাফট গেমটিকে কম্বলসারি করা হয় কারণ এটি মেধা বিকাশে সহায়তা করে। গেমটিকে ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের কাহিনি ও কন্সপাইরেসি। এমনই একটি কন্সপাইরেসি হচ্ছে গেমটিতে একটি ভূত বা পেতাত্মা বসবাস করে যা প্রায়শই গেমারদের গেমের ভিতরে নানা ধরনের আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ড করে ভয় দেখায়। যার নাম হিরোব্রাইন।গেমের মধ্যে অনেকেই এর দেখা পেয়েছে। শুনতে বেশ হাস্যকর হলেও একসময় এই বিষয়টিও মাইনক্রাফট গেমের একটি অংশ ছিল। গেমের উপকরণ বলা চলে। আমার মনে হয় না এমন কোনো মাইনক্রাফটার আছে যে কিনা প্রথম প্রথম গেমে এই হিরোব্রাইনকে নানা খোজাখুজি করে নি। একটি ক্যান্সারে মারা যাওয়া টিনেজ ছেলে গেমটিকে নিয়ে লিখেছিলো একটি আবেগ আপ্লুতকর চিঠি তার বন্ধুর কাছে। এমন আরো নানা কাহিনী নানা ভাবে গেমটিকে করেছে আরো সমৃদ্ধ।
মাইনক্রাফট ভিডিও গেমের দুনিয়া
এই মাইনক্রাফট (Minecraft) ভিডিও গেমের দুনিয়ায় গত ১২ বছর ধরে রাজত্ব ধরে রাখা একটি এডভেঞ্চার গেম। ২০০৯ সালে Markus Persson Cave Game নামেএ যেই গেমটি তৈরি করেছিলেন তখনকি তিনি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন এটি একসময় বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রি হওয়া গেম হবে। এখন পর্যন্ত মাইনক্রাফট এর ২০০ মিলিয়ন এর অধিক কপি সেল হয়েছে। ২০২২সালে মাইনক্রাফট এর উপর একটি ফিল্মও পেতে যাচ্ছে ফ্যানরা। আর এটি হয়ত কেবল শুরু।
7 thoughts on "মাইনক্রাফট : একটি সীমাহীন সম্ভাবনা। মাইনক্রাফট এর ইতিহাস"