ভবিষ্যত জীবনের চিন্তা করে আমাদের সকলেরই উচিত কর্মজীবনে আয় করা টাকা থেকে কিছু টাকা যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে সঞ্চয় করে রাখা। আপনি যদি অল্প অল্প করে অনেকগুলো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরণের আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হলে সহজে এই সঞ্চয়কৃত টাকা দিয়ে তার সমাধান করে নিতে পারেন। এখন সঞ্চয় করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাংকে, যেগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। তবে ইসলামিক দৃষ্টিতে অনেকেই ব্যাংকিং খাতের সাথে জড়াতে চান না, ব্যাংকে সঞ্চয় করতে চান না। কারণ ব্যাংগুলোতে টাকা সঞ্চয় করলে এর বিপরীতে অতিরিক্ত মুনাফা বা সুদ প্রদান করে থাকে। তবে আপনি চাইলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। অর্থাৎ এইসব বাদ দিয়ে একটি পদ্ধতিতে টাকা সঞ্চয় করতে পারেন। আর সেটি হলো প্রাইজবন্ড। এখানে একটি বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি এই প্রাইজবন্ডের বিপরীতে ৬ লক্ষ টাকার পুরস্কার পেতে পারেন। তাই প্রাইজবন্ড আসলে কী? এটা নিয়েই আজকের এই টপিকে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো।
প্রাইজবন্ডঃ
মধ্যবিত্তদের সঞ্চয়ের অন্যতম স্মার্ট মাধ্যম হচ্ছে প্রাইজবন্ড। মাত্র ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডে আপনি পেতে পারেন সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা। দেশের সকল বয়সি মানুষের মাঝে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড নামে এই প্রাইজবন্ড পদ্ধতিটি চালু করে। এটি যেকোনো সময় ভাঙ্গানো যায় এবং ক্রয় করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ১৯৪৭ সালে এই প্রাইজবন্ড চালু হয়। প্রথম প্রাইজবন্ডের মূল্য ছিলো ১০ টাকা এবং ৫০ টাকা। ১৯৯৫ সাল থেকে ১০০ টাকা মূল্যের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর ১০ টাকা এবং ৫০ টাকা মূল্যের প্রাইজবন্ড তুলে নেওয়া হয়। আপনি যদি উক্ত প্রাইজবন্ড ক্রয় করেন তাহলে এর উপর প্রতি বছর ৪ বার লটারি বা ড্র অনুষ্ঠিত হয় যাতে আপনি সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা পুরস্কার পেতে পারেন। এছাড়াও এটির যেহেতু টাকার সমান মূল্য রয়েছে সেহেতু এটিকে আপনি চাইলে যেকোনো মুহুর্তে ভাঙ্গাতে পারবেন অর্থাৎ যে পরিমাণ টাকার প্রাইজবন্ড আপনার থাকবে সে পরিমাণ বিক্রি করতে পারবেন। আর এইভাবে আপনি সহজে সঞ্চয় করতে পারেন।
প্রাইজবন্ড ক্রয় ও বিক্রয়ঃ
প্রাইজবন্ড আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিস সহ পাশাপাশি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক ছাড়া অন্য সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক, সারাদেশে প্রায় ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং পোস্ট অফিসে প্রাইজবন্ড ক্রয় এবং ভাঙ্গানো বিক্রয় করা যায়। প্রাইজবন্ড কিনতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যকোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকে সঞ্চয় করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে।
ড্র বা লটারির সময়ঃ
আমরা উপরেই জেনেছিলাম যে বছরে প্রায় ৪ বার প্রাইজবন্ডের লটারি বা ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের ৩১শে জানুয়ারি, ৩০শে এপ্রিল, ৩১শে জুলাই এবং ৩১শে অক্টোবর প্রাইজবন্ডের এই ড্র বা লটারি অনুষ্ঠিত হয়। বছরের এই চারটি নির্ধারিত তারিখে যদি কোনো কারণে সরকারি ছুটি থাকে তাহলে ছুটির পরের কার্যদিবসে এই ড্র বা লটারি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাইজবন্ডের সিরিজ ও পুরস্কারঃ
সিকিউরিটি এবং ড্র বা লটারির সুবিধার্থে প্রাইজবন্ডকে টাকার মতো সিরিজ নম্বর আকারে ভাগ করা হয়েছে। প্রাইজবন্ডের বর্তমানে ৬৭টি সিরিজ চালু রয়েছে, যেমন: কক, খখ, গগ ইত্যাদি। এইরকম প্রতিটি সিরিজে রয়েছে ছেচল্লিশটি নম্বর। এগুলো থেকে প্রাইজবন্ডে প্রথম পুরস্কার পাবে ৬৭টি জন। দ্বিতীয় পুরস্কার পাবে ৬৭টি জন। তৃতীয় পুরস্কার পাবে ১৩৪ জন। চতুর্থ পুরস্কারও পাবে ১৩৪ জন। আর সর্বশেষ পঞ্চম পুরস্কার পাবে ২৬৮০ জন। প্রথম পুরস্কার ৬ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ১ লক্ষ টাকা করে দুইটি। চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা করে দুইটি। পঞ্চম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া ১০ হাজার টাকা করে মোট চল্লিশটি।
প্রাইজবন্ড কী ইসলামি শরিয়াহ সম্মত কিনাঃ
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে প্রাইজবন্ড শরিয়াহ সম্মত কিনা তা হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে লটারি জুয়ার সমান, লটারিতে একজন মানুষ লাভবান হয় ঠিকই। আর বাকি সবাই নিঃস্ব হয়ে যায়। তবে প্রাইজবন্ডে কেউ কেউ লাভবান হলেও কিন্তু কেউ নিঃস্ব হয় না। আপনি একটি প্রাইজবন্ড ক্রয় করার পর যদি প্রাইজবন্ডের ড্র নাও পেয়ে থাকেন তা কিন্তু বিক্রি করতে পারতেছেন এখানে নিঃস্ব হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যে টাকার প্রাইজবন্ড ক্রয় করলেন সেই টাকায়ই আবার বিক্রি করতে পারতেছেন। তাই এই বিবেচনা থেকে প্রাইজবন্ডকে ক্রয় করা এবং ড্র’কে জায়েজ বলা যায়।
পূর্ববর্তী প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের পরিসংখ্যানঃ
পূর্ববর্তী বেশ কয়েক বছরের প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর যারা ড্র পেয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ তাদের প্রাপ্ত পুরস্কার গ্রহণ করেছে। আর বাকি ৫০ ভাগ মানুষই তাদের পুরস্কার গ্রহণ করেননি অর্থাৎ পুরস্কারের জন্য আবেদন করেননি। এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে একজন মানুষ পুরস্কার পাওয়ার পরও কেন পুরস্কার গ্রহণ করেন না বা আবেদন করেন না। এখানে বেশকিছু কারণ রয়েছে এর জন্য। প্রথম কারণ হচ্ছে অনেকেরই প্রাইজবন্ডের ড্র কখন হয় সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকে না। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে অনেকসময় যখন প্রাইজবন্ডের ফলাফল প্রকাশিত হয়, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং পেপার পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। সে সকল খবর গ্রহিতার কাছে ঠিকমতো পৌছায় না। তাই অনেকসময় বিজয়ী হওয়ার ফলেও সঠিক সময় মিলিয়ে না দেখার কারণে পুরস্কার প্রাপ্ত থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এখন সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ধরুন আপনি ১০, ২০ বা ৩০টি প্রাইজবন্ড ক্রয় করেছেন। সেগুলোকে প্রতিটি ফলাফলের সময় আপনাকে মিলিয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু এর অধিক যদি হয় অর্থাৎ ১০০ বা হাজারটা হয় তখন সেগুলো একটা একটা করে মিলিয়ে দেখা খুবই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যার ফলেই মূলত এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে চিন্তা করবেন না এর একটি সহজ সমাধান রয়েছে।
প্রাইজবন্ড মিলিয়ে দেখার সহজ সমাধান বা পদ্ধতিঃ
প্রতি বছর যখন প্রাইজবন্ডের ফলাফল প্রকাশ হয় তখন যদি আপনার কাছে হাজার হাজার প্রাইজবন্ড থাকে তখন সেগুলো প্রতিটি একটি একটি করে মিলিয়ে দেখা খুবই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এতে মিসিংও হতে পারে। কিন্তু আপনি চাইলে আপনার এই কাজটি আপনি একটি ডিজিটাল থার্ট পার্টির মাধ্যমে করে নিতে পারবেন। হুম ঠিকই পড়েছেন আপনার হয়ে আপনার হাতে থাকা সকল প্রাইজবন্ডের মধ্যে কোনো প্রাইজবন্ড ড্রতে নির্বাচিত হয়েছে কিনা তা একটি থার্ট পার্টি চেক বা যাচাই করে জানিয়ে দিবে। আর এই থার্ট পার্টি হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট। যে কিনা আপনাকে ইমেইল করে জানিয়ে দিবে আপনার হাতে থাকা হাজার হাজার প্রাইজবন্ডের মধ্যে কোনটি ড্রতে নির্বাচিত হয়েছে কিনা। আর আপনাকে এই সুবিধাটি দিচ্ছে পাচুর্য ডটকম নামে একটি থার্ট পার্টি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটে আপনার হাতে থাকা সকল প্রাইজবন্ডের নম্বর যদি আপনি তুলে দেন বা এন্ট্রি করে দেন। তাহলে যখনি প্রাইজবন্ডের ড্র হবে তখন আপনার কোনো প্রাইজবন্ড যদি ড্র তে নির্বাচিত হয় তখন তারা আপনাকে এসএমএস এবং মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। যার ফলে আপনাকে আর কষ্ট করে ফলাফল প্রকাশের পর একটি একটি করে মেলাতে হবে না, তারাই আপনার হয়ে মিলিয়ে দেখে আপনাকে জানিয়ে দিবে। এছাড়াও সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আপনি যখনি আপনার হাতে থাকা প্রাইজবন্ডের নম্বরগুলি এখানে সেভ করবেন তখনিই এর মধ্যে কোনটি যদি পূর্বের ২ বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া ড্রতে সিলেক্ট হয়ে থাকে তাহলে তাও আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তো এই অটোমেটিক সিস্টেমটি চালু করতে উক্ত ওয়েবসাইটে কী কী করতে হবে তা জানার জন্য আপনাকে নিচের পোস্টের লিংকে ক্লিক করে সেটি জেনে নিতে পারেন।
হাজার হাজার প্রাইজবন্ডের মধ্যে আপনি ড্র পেয়েছেন কিনা জানুন মেইল এবং এসএমএস এর মাধ্যমে অটোমেটিকভাবে।
আর এই ছিলো মূলত প্রাইজবন্ড সম্পর্কে আমার আজকের টপিক। আশা করি আজকের এই টপিকের মাধ্যমে প্রাইজবন্ড কী এবং এর সুবিধা ইত্যাদি জেনে নিতে পেরেছি। আর আপনার হাতে থাকা প্রাইজবন্ডটি ড্রতে নির্বাচিত হয়েছে কিনা তা অটোমেটিকভাবে জানতে কিভাবে কী করতে হবে এর জন্য উপরোল্লিখিত টপিকটি দেখে আসুন।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট – www.TutorialBD71.blogspot.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।
One thought on "বাংলাদেশের প্রাইজবন্ড কী আসুন তা দেখে নেই।"