৬৭৬৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে কোন এক সফরে আমরা বের হলাম। এ সফরে লোকজন ভীষণ কষ্টে পড়ে। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার সঙ্গীদেরকে বললো, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গীদের জন্য তোমরা কিছু ব্যয় করো না, যাতে তারা তাঁর নিকট থেকে সরে পড়ে। যুহাহার (রাঃ) বলেন, এ হলো ঐ ব্যক্তির কিরাআত যে, “মান হাওলাহু” পড়ে। আর সে এও বললো, আমরা মদ্বীনায় ফিরে গেলে সেখান থেকে অবশ্যই প্রবল দুর্বলকে বহিস্কৃত করবে। এ কথা শুনে আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট এসে তার এ কথাবার্তা সম্পর্কে তাঁকে অবিহিত করলাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন। সে জোরদার কসম খেয়ে বললো যে, সে এমন কাজ করেনি। আর বলল, যায়িদ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট মিথ্যা কথা বলেছে। যায়িদ (রাঃ) বলেন, তাদের এ কথায় আমি মনে ভীষণ কষ্ট পেলাম। তখন আল্লাহ তাআলা আমার সত্যবাদিতার পক্ষে নাযিল করেন,’ইযা যা আকাল মুনাফিকুন’ তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ডাকলেন যাতে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, তখন তারা তাদের মাথা ফিরিয়ে নিল। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেছেনঃ ‘কাআন্না হুম খুশুবুল মূসান্নাদা’ তারা দেয়ালে ঠেকাল কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। যায়িদ (রাঃ) বলেন, বাহ্যত তারা ছিল মানুষ খুবই সুন্দর।

৬৭৬৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর কবরের নিকট আসলেন এবং তাকে তার কবর হতে উঠিয়ে স্বীয় হাটুর উপর রাখলেন এবং তিনি তার উপর থুথু দিলেন এবং তাকে স্বীয় জামা পরালেন। আল্লাহই এ সম্পর্কে ভাল জানেন।

৬৭৬৯। আহমাদ ইবনু ইউসূফ আযদী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবায়কে কবরে হকানোর পর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার নিকট আসলেন। পরবর্তী অংশ সুফিয়ানের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

৬৭৭০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর ইন্তেকালের পর তদীয় সন্তান আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট আসলেন এবং তার পিতার কাফনের জন্য রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর জামাটি চাইলেন। তিনি তাঁকে জামাটি দিয়ে দিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে তার পিতার সালাতে জানাযা পড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সালাতে জানাযা আদায়ের জন্য দাঁড়ালেন। এমতাবস্হায় উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাপড় চেপে ধরে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তার জানাযা কি আপনি পড়াবেন? আর আল্লাহ তাআলা তার সালাতে জানাযা পড়াতে আপনাকে নিষেধ করেছেন। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ বিষয়ে তো আল্লাহ তাআলা আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করুন- উভয়ই সমান, আপনি সত্তরবার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমি সত্তরেরও অধিকবার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবো। উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সে তো মুনাফিক ছিল। এরপরও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সালাতে জানাযা আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তায়াআলা নাযিল করলেনঃ “তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য জানাযার সালাত আদায় করবেন না এবং তার কবর পার্শে দাড়াবেন না।

৬৭৭১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে রয়েছে যে, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুনাফিকদের সালাতে জানাযা আদায় করা সস্পূর্ণরুপে ত্যাগ করলেন।

৬৭৭২। মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমার মাক্কী (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বায়তুল্লাহর নিকট তিন ব্যক্তি একত্রিত হলো। এদের দুঁজন ছিল কুরায়শী এবং একজন ছিল সাকাফী অথবা দু-জন ছিল সাকাফী এবং একজন ছিল কুয়ায়শী। তাদের হৃদয়ে বুদ্ধিমত্তা খুব সামান্যই ছিল! তবে পেটে যথেষ্ট চর্বী ছিল। তাদের একজন বললো, আমরা যা বলি আল্লাহ সব শুনেন, একথা কি তোমরা জানো না? তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বললো, আমরা উচ্চস্বরে কথা বললে আল্লাহতা শুনতে পান। তবে আস্তে কথা বললে আল্লাহ তা শুনেন না। তখন তৃতীয় ব্যক্তি বললো, উচ্চস্বরে কথা বললে যদি শুনতে পান তবে আস্তে কথা বললেও শুনতে পাবেন। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন, তোমরা গোপন করতে পারতে না এই কারণে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। কিন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে এর অনেক কিছু আল্লাহ জানেন না। ”

৬৭৭৩। আবূ বকর খাল্লাদ বাহিলী (রহঃ) ইয়াহইয়া আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭৭৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আবূ বারী (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওহুদ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলেন। এমতাবস্হায় কিছু লোক রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গ ত্যাগ করে চলে এলো। তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবাগণ দুদলে বিভক্ত হয়ে পড়লো। কেউ বললো, আমরা তাদের হত্যা করে ফেলবো, আর কেউ বললো, আমরা তাদের হত্যা করব না। তখন নাযিল হল, “তোমাদের কি হলো, তোমরা মুনাফিকদের সমন্ধে দু-দল হয়ে গেলে, যখন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্হায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তোমরা কি তাকে সৎ পথে পরিচালিত করতে চাও এবং আল্লাহ কাকেও পথভ্রষ্ট করলে তুমি তার জন্য কখনো কোন পথ পাবে না। ”

৬৭৭৫। যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) শু”বা (রাঃ) থেকে এ সনদে অনূরবুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৭৭৬। হাসান ইবনু আলী নেওয়ানী ও মুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর জীবদ্দশায় কতিপয় মুনাফিক ব্যক্তির অভ্যাস এই ছিল যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন যু্দ্ধের জন্যে বের তখন তারা পশ্চাতে থাকতো এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর বিরুদ্ধাচরণ করে বলে থাকাতেই তারা আনন্দ লাভ করতো। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যাগমন করলে তারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু)হাত পেশ করতো, শপথ করতো এবং আশা করতো যেন তারা যা করেনি এমন কার্যের প্রশংসা করা হয়। তখন নাযিল হলঃ ‘যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাল করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে-আপনি কখনো এরুপ মনে করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি।

৬৭৭৭। যুহায়র ইবনু হারব ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মারওয়ান তার দারোয়ান রাফিকে বললেন, তুমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট যাও এবং বল, নিজে যা করেছে তাতে আনন্দিত হওয়া এবং যা করেনি তাতে প্রশংসিত হতে চেয়ে আমাদের কেউ যদি শান্তি পায় তবে আমরা সকলেই শান্তি পাব। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ আয়াতের সাথে তোমাদের কি সম্পর্ক? এ আয়াত তো আহলে কিতাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ আয়াত পাঠ করলেন-”স্বরণ কর, যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছিলেন, তোমরা মানুষের নিকট স্পষ্টভাব প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না। ” এরপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) পাঠ করলেন, তিনি যা দিয়েছেন তাকে যারা অগ্রাহ্য করে ও তুচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে; সুতরাং তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট। অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) পাঠ করলেন, ‘যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করে নাই তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে, এরুপ আপনি কখনো মনে করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে। ” অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, কিতাবীদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার পর তারা তা গোপন করে এবং পরিবর্তে তারা তাঁকে অন্য কথা বলে দিল। এরপর তারা এমন ভান করে বের হল যে, জিজ্ঞাসিত বিষয়ের যথাযথ উত্তর তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে প্রদান করেছেন এ কারণে তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট প্রশংসা কামনা করল এবং জিজ্ঞাসিত বিষয়টি গোপন করার মাধ্যমে তারা যে কাজ আঞ্জাম দিয়েছে এতে খুবই আনন্দিত হল। (এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা মর্মন্তুদশাস্তির কথা ঘোষণা দিয়েছেন।

৬৭৭৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আম্মার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আলী (রাঃ)-এর বিষয়টিতে তুমি যে পন্থা অবলম্বন করলে, একি তোমার রায় না এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে কোন নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্ব সাধারণকে যে কথা বলেননি, এমন কোন কথা তিনি আমাকে বলে যাননি। তবে হুযায়ফা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সাহাবাদের মধ্যে বারজন মুনাফিক লোক আছে। এদের আটজন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; যতক্ষন না সূচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করে। দেয়ানা- (এক প্রকার বড় ধরনের ফোড়া) আট ব্যক্তিকে খতম করে দিবে। আসওয়াদ (রহঃ) বলেন, অবশিষ্ট চার ব্যক্তি সমন্ধে শুবা কি বলেছেন, আমার তা মনে নেই।

৬৭৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না এবং মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) কায়স ইবনু উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আম্মার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের এ লড়াই সম্পর্কে বলুন তো, তা কি আপনাদের নিজস্ব, মতের ভিত্তিতে? তবে মত তো ভুলও হতে পারে, ঠিকও হতে পারে। অথবা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এ ব্যাপারে বিশেষভাবে আপনাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বসাধারণকে যে নির্দেশ দেননি, এমন কিছু তিনি বিশেষ ভাবে আমাদেরও দেননী। তিনি বলেন:আমার উম্মাতের মধ্যে বার জন মুনাফিক হবে। বর্ণনাকারী শুবা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন,আমার উম্মাতের মধ্যে বার জন মুনাফিক হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের ঘ্রানও পাবে না, যতক্ষন না সূঁচের ছিদূপথে উট প্রবেশ করবে। তাদের মধ্যে আট জনের (ধ্বংসের) জন্য “দূবায়লা” যথেষ্ট হবে। “দুবায়লা” হল “অগ্নিফোড়া” যা কাঁধের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে বুক ভেদ করে বেরোবে।

৬৭৮০। যুহারয়র ইবনু হাবর (রহঃ) আবূ তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকাবায় উপস্থীত এক জনেরও হুযায়ফা (রাঃ)-এর মধ্যে মানুষের মাঝে যেমন মনোমালিন্য হয়ে থাকে তেমন কিছু ছিল। সে তাকে প্রশ্ন করলো, তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, বল, আকাবায় উপস্থিত লোকদের সংখ্যা কত ছিল? হুযায়ফা (রাঃ)-কে লোকেরা বলল, সে যেহেতু জিজ্ঞাসা করেছে, তাই আপনি বলে দিন। তিনি বললেন, আমাদের অবহিত করা হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দ। আর যদি তুমিও তাদের মধ্যে হয়ে থাক, তবে তাদের সংখ্যা হবে পনের। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, এদের বারজন পার্থিব জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য যুদ্ধ করেছেন এবং যেদিন সাক্ষীগণ দাড়াবে সেদিনও। বার জন ওযর পেশ করে বলেছিল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আহবানকারীর আওয়াজ আমরা শুনিনি এবং কাওমের লোকদের প্রয়াসও আমাদের জানা ছিল না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রস্তরময় ময়দানে ছিলেন। অতঃপর তিনি সেখান থেকে এগিয়ে চললেন এবং বললেন, (আমাদের গন্তব্যস্হলের) পানি অতি সামান্য। কেউ আমার আগে সেখানে যাবে না। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে দেখলেন যে, কতিপয় লোক তার আগেই চলে এসেছে। সেদিন তিনি তাদের প্রতি অভিসম্পাত করলেন।

৬৭৮১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আবূবারী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুরার মাটিতে কে আরোহণ করবে? যে আরোহণ করবে, তার গুনাহ মাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যেমন বনী ইসরাঈলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। জাবির (রাঃ) বলেন, প্রথমে ঐ ঘাটিতে আরোহণ করলো আমাদের বনী খাযরাজের ঘোড়াগুলি। তারপর লোকেরা পিছনে আসল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের সকলকেই ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, লাল উষ্ট্রের মালিক ব্যতীত। তখন আমরা ঐ লোকটির নিকট গিয়ে বললাম, এস, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। সে বলছেন, আমি যদি আমার হারানো উটটি পেয়ে যাই তবে অবশ্য আমার জন্য তোমাদের সঙ্গীর দুআর থেকে শ্রেয়। জাবির (রাঃ) বলেন, এ লোকটি তার হারানো উষ্ট্রি তালাশে ছিল।

৬৭৮২। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মুরার ঘাঁটিতে কে আরোহণ করবে? পরবর্তী অংশ মুআযের হাদীসের অনুরুপ। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে যে, তখন তিনি এক বেদুঈনকে দেখলেন, সে তার হারানো উট সন্ধান করে আসছে।

৬৭৮৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী নাজ্জারের এক ব্যক্তি আমাদের মাঝে ছিল। সে সূরা বাকারা এবং সূরা আলে-ইমরান পড়ে ছিল। সে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর লেখার দায়িত্ব পালন করতো। পরে পালিয়ে সে কিতাবীদের সাথে ভীড়ে যায়। রাবী বলেন, তারা তাকে খুব সম্মান করল এবং বললো, এ লোকটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাতিব ছিল। এতে তারা খুবই আনন্দিত হলো। তারপর বিলম্ভ হয়নি, আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যেই তাকে ধ্বংস করে দিলেন। এরপর তারা তার জন্য গর্ত করে তাকে তাকে গেড়ে দিল। সকালে দেখা গেল যে, যমীন তার লাশ উপরে ফেলে দিয়েছে। এরপর আবার তারা গর্ত করে তাকে পুতে দিল। সকালে এবার দেখা গেল যে, যমীন তার লাশ মাটির উপর ফেলে দিয়েছে। তারপর আবার তারা তার জন্য গর্ত করে তাকে তাতে গেড়ে রাখলো। সকালে দেখা গেল, এবারও যমীন তার লাশ মাটির উপর ফেলে দিয়েছে। কাজেই তারা তাকে নিক্ষিপ্ত অবস্হায় ছেড়ে দিল।

৬৭৮৪। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন এক সফর হতে প্রত্যাগমন করে মদ্বীনার নিকটবর্তী স্থানে পৌছলে এমনভাবে প্রবল বায়ু প্রবাহিত হয় যে, মনে হচ্ছিল যেন আরোহীকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কোন মূসাফিকের মৃতূর কারণে এ বাতাস প্রবাহিত হয়েছে যখন তিনি মদ্বীনায় পৌছলেন, তখন দেখা গেল, এক বড় মুনাফিকের মৃত্যু হয়েছে।

৬৭৮৫। আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম আনবারী আয়াস (রহঃ) বলেন যে, আমার পিতা বর্ণনা করেছেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তির সেবা করলাম। আমি আমার হাত তার শরীরে রেখে বললাম, কসম! আজকের মত এমন তাপমাত্রা আমি আর কোন ব্যক্তির দেখিনি। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন এর থেকেও অধিক তাপমাত্রা সম্পন্ন ব্যক্তিটির সংবাদ আমি কি তোমাদের দিব না? তারা ঐ সওয়ার ব্যক্তি যারা ঘাড় ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। একথা তিনি বললেন, সে সময়কার তাঁর সঙ্গীদের মধ্য থেকে দুইজনের প্রতি লক্ষ্য করে।

৬৭৮৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মূহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মূসাফিকের উপমা ঐ বকরীর ন্যায়, যা দুই পালের মাঝে উভ্রান্তের ন্যায় ঘূরতে থাকে। একনার এ দ্বিকে আমার ঐ দিকে।

৬৭৮৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে, একবার আসে আবার যায় ঐ পালে।

.

Leave a Reply