আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমি আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোয়াই ইতোমধ্যে আমার এই ধারাবাহিকের দুইটি Post-এর মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাতে সক্ষম হয়েছি যে কীভাবে কিছু মানুষ ও বিজ্ঞানীরা কুরআনের শব্দের সুক্ষ্ম শব্দের ভুল অর্থ বুঝে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক করে বেড়াচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমি এর তৃতীয় Post নিয়ে কথা বলবো ইংশা আল্লহ।

 

আগের Post সমূহ:

প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০১] বিষয়ঃ মহাবিশ্ব

প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০২] বিষয়ঃ মহাবিশ্ব

 

তো চলুন এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।

 

আকাশ নিঃসন্দেহে পৃথিবীর আগে সৃষ্টি হয়েছে। আর এই একই কথা কুরআনেও বলা হয়েছে, তবে একটু ভিন্নভাবে। আর এটাকে অনেকে বুঝতে না পেরে কুরআনের ভুল ধরতে উঠে পড়ে লাগে। মহান আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনের সূরা বাক্বারাহ-র ২৯ নম্বর আয়াতে বলেন-

 

هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ لَكُم مَّا فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ ٱسْتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَسَوَّىٰهُنَّ سَبْعَ سَمَٰوَٰتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ

 

এর অর্থ হচ্ছে- “এটাই তিনি যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি মনোনিবেশ করেন মহাকাশের দিকে যাকে তিনি সাতটি স্তরে বিন্যস্ত করেন। আর শুধু তিনিই সব বিষয়ে সবকিছু জানেন।” (২:২৯)

 

এখানে আরবিতে ব্যবহৃত ثُمَّ শব্দটির অর্থ হচ্ছে “আবার” । কিন্তু এটি অনেক ক্ষেত্রে তারপর বা এরপর ইত্যাদি প্রকাশে ব্যবহার হয়। আর এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে বলে যে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ভুল বলেছেন। কারণ, আকাশ তো পৃথিবীর আগেই সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তারা এটা দেখে না যে আল্লাহ তায়ালা একথা বলেননি যে আকাশকে তিনি পৃথিবীর পরে সৃষ্টি করেছেন, তিনি বলেছেন যে আকাশকে তিনি পৃথিবী সৃষ্টির পরে সাজিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রথম আসমান সাজানোর ব্যাপারেও আরেকটা প্রসঙ্গ চলে আসে। তারা বলে, আকাশে তো বেশিরভাগই তারা, আর তারা (তারকা) তো পৃথিবী সৃষ্টির অনেক আগেই সৃষ্টি। কিন্তু এটাও তো দেখা উচিত যে, পৃথিবী সৃষ্টির পরও অসংখ্য ধূমকেতু, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বা এখনও হচ্ছে। আর এগুলো সবই প্রথম আসমানে সুবিন্যস্ত। কাজেই এইসব ব্যাখ্যা দিয়ে কুরআনের আয়াত ভুল প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

 

মহান আল্লাহ তায়ালা এই কথাটা সূরা হা-মীম সিজদাহ-র ১১-১২ তম আয়াতে আরও স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, “তারপর তিনি মহাকাশে খেয়াল করলেন, যা ছিলো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তারপর তিনি ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও জমিনকে বললেন, ‘উভয়ই এসো, স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়’। ওরা নিবেদন করলো, ‘আমরা সানন্দে আনুগত্য স্বীকার করছি।’ তারপর সময়েে দুই স্তরে তিনি মহাকাশকে সাতটি স্তরে বিন্যস্ত করলেন। প্রত্যেক স্তরের জন্য বিধিবিধান প্রদান করলেন। নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলেন প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলেন সুরক্ষিত। এর সবই মহা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর পরিকল্পনা।” (৪১: ১১-১২)

 

এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, পৃথিবীর পরে মহাকাশ সৃষ্টি হয়েছে সে কথা কোথাও বলা নেই, বরং বলা হয়েছে যে মাটি এবং আকাশ আলাদা ছিল। আল্লাহর নির্দেশে তারা এক হয়। বিজ্ঞানও একই কথাই বলে। আকাশ অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীর কাছে এসে ঘনীভূত হয় যা আগে ছিল ধোঁয়ার মতো, যদিও পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বেই তার আবির্ভাব ঘটে। আসলে আকাশ হচ্ছে গ্যাস ছাড়া আর কিছুই না যাকে আমরা Atmosphere নামে চিনি। এবার আসি আকাশকে সাজানোর কথায়। আগেই আলোচনা হয়েছে যে আকাশে তারা ছাড়াও আরও অসংখ্য মহাজাগতিক বস্তু রয়েছে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আলো রয়েছে এবং সেগুলো পৃথিবী সৃষ্টির পরেও সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে এক্ষেত্রে কুরআনের ভুল ধরা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

 

আমরা যদি একটু ভালো করে খেয়াল করি, তাহলে দেখা যাবে কুরআন কিন্তু বিজ্ঞানের কথাগুলোরই সমর্থিত। কিন্তু কিছু মানুষে এটা বুঝতে না পেরে এটা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করে। আমাদের উচিত তাদেরকে বুঝিয়ে বলা যাতে তারা বুঝতে শিখে যে কুরআন এবং ইসলামই শাশ্বত।

 

আপনারা অনুগ্রপূর্বক যতো পারেন এই Post টা Share করবেন। আর সকলে দোয়া করবেন যেন পরের Post টা খুব জলদি উপহার দিতে পারি, যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন। সবাই ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

2 thoughts on "প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০৩] বিষয়ঃ মহাবিশ্ব"

    1. Azim Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ।

Leave a Reply