১ম পর্বে যে দোয়া করার জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন আর তা কবুল এর ওয়াদা করেছেন আর ২য় পর্বে দোয়া কবুল এর সময় ও মাধ্যম গুলো সম্পর্কে আমরা
অবগত হয়েছি, এ পর্বে দোয়া কবুল হওয়ার শর্ত সম্পর্কে জানবো ইনশা আল্লাহ ।
বিঃদ্রঃ ১ম এবং ২য় পর্ব কমেন্ট এ দিয়ে দেওয়া হল ।

১/ হারাম অর্থ দ্বারা জীবনধারণ করাঃ
দোয়া একপ্রকার এবাদত । এবাদত কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে হারাম থেকে দূরে থাকা । অনুরূপভাবে দোয়া কবুলের জন্যেও শর্ত হচ্ছে হারাম ভক্ষণ না করা ।
আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন: তোমার দায়িত্ব হলো দোয়া করা। আর আমার দায়িত্ব হলো কবুল করা । হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া ব্যতীত অপর কোনো দোয়াই পর্দার আড়ালে থাকে না। (এদ্দাতুদ্‌ দায়ি, অধ্যায়, ৩)

২/ মা-বাবার নাফরমাণিঃ
মা বাবর হক আদায় করতে হবে । যারা মা-বাবার নাফরমানী করে । হাদীসে এসেছে তাদের দোয়া কবুল হয় না । সাধ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতে হবে । যারা আত্মীয় স্বজনের প্রতি লক্ষ্য রাখে না, তাদের হক আদায় করে না, তাদের দোয়া কবুল হয় না ।

৩/ দোয়া কবুলে কল্যাণ না থাকাঃ
যেসব দোয়ায় বান্দার কল্যাণ থাকেনা সেসব দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না ।
ইমাম বাকের (আঃ) বলেন: আল্লাহ তাআলা তাঁর মনোনীত ও অমনোনীত উভয় বান্দাদের পার্থিব কল্যাণ দান করেন । কিন্তু আখেরাতের কল্যাণ শুধুমাত্র মনোনীত বান্দাদের দান করেন । মোমিন ব্যক্তি স্বীয় অজান্তে পার্থিব জীবনে এমন কিছু চেয়ে থাকেন যা তার জন্যে অকল্যাণকর । সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকে তা দেন না । অপরপক্ষে পারলৌকিক জীবনের জন্যে যা চান তাই দেন। আর কাফেরদেরকে পার্থিব জীবনে যা চায় তা চাওয়ার পূর্বেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু বেহেস্তে তাদেরকে কিছুই দেবেন না। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৬৯, পৃঃ ৫২)

৪/ নিষ্ঠুরতা ও নির্দয়তাঃ
কঠোর, নির্মম, নির্দয় ও নিষ্ঠুরদের দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। এ প্রকৃতির মানুষ অহংকারী হয়ে থাকে। ইখলাসের সহিত আল্লাহকে ডাকে না । নির্দয় মানুষের মনকে আল্লাহ তাআলা পাথর কিংবা তার চেয়েও শক্ত বলে ঘোষণা করেছেন:

এর (ঘটনার) পরও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর অথবা তদপেক্ষা কঠিন ! পাথরের মধ্যে কতক এমনও আছে যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয় । আর কতক এমনও আছে যা বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমনও আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে! আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। (সুরা: আল্‌ বাকারা, ৭৪।)
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নিষ্ঠুর ও নির্দয় মানুষের দোয়া কবুল করেন না। (এদ্দাতুদ্‌ দায়ি, অধ্যায়, ৩)

৫/ গোনাহে লিপ্ত হওয়া
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন: আল্লাহর নিকট বান্দা এমন কিছু চেয়ে দোয়া করে যে, যদি তাকে সেটা দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে সে উক্ত বস্তুর মাধ্যমে
গোনাহে লিপ্ত হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের বলেন: ‘তার চাহিদা পূরণ করো না! কেননা সে গুনাহের দিকে অগ্রসর হবে ।’ এ কারণে আমার
পক্ষ থেকে দোয়া গ্রহণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৬৯, পৃঃ ৫২)

৫/ অন্যের প্রতি অত্যাচার করা
অন্যের হক নষ্ট করা এবং অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা, দোয়া কবুল না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ । আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীদের সাহায্য করেন
না । জালিমদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই। (সুরা: আশ শুরা, ৮।)
আমিরুল মোমেনিন হজরত আলী (আঃ) বলেন: আল্লাহ তাআলা হজরত ইসার (আঃ) প্রতি এমর্মে ওহি নাজিল করেন যে, হে ইসা! বনিইসরাইলকে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার কোনো একটি প্রাণীর প্রতিও জুলুম করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও তাদের কোনো দোয়া কবুল করব না!”

৬/ কোনো মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশী কথা-বার্তা বন্ধ রাখা যাবে না । এ রকম লোকের দোয়া কবুল হয় না । এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, মুসলমানের সাথে সু-সম্পর্ক থাকতে হবে ।

৭/ আ’মর বিল মা’রুফ এবং নাহি আনিল মুনকার করতে হবে । অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে হবে । হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মাথা উঁচু করে চিৎকার করতে থাক অথচ তোমাদের দোয়া কবুল হয় না । হবে কিভাবে? তোমাদের চোখের সামনে অনেক অন্যায় কাজ হয়, সাধ্য থাকা সত্ত্বেও তোমরা তাতে বাধা প্রদান করো না ।

৮/ গীবত বর্জন করতে হবে । গীবতকারীদের দোয়া কবুল হয় না । এই রোগে আমরা অনেকেই আক্রান্ত রয়েছি ।

৯/ হাছাদ বা পরশ্রীকাতরতা অর্থাৎ অন্যের ভাল দেখে মনে মনে হিংসা লাগা এবং সেটা ধ্বংস হওয়ার কমনা করা অন্যায় । মনের এই হিংসা পরিত্যাগ করতে
হবে ।

১০/ দিল বা অন্তর তাজা রাখতে হবে । দিল যদি মরে যায়, দিল যদি মুর্দা হয়ে যায়, তাহলে ঐ দিলের আবেদন আল্লাহ শোনেন না । দিল মরে যায় কিভাবে? যারা মোটেও যিকির-আযকার করে না,আল্লাহ কে স্মরণ করেন না, খুব বেশী কথা বলে, খুব বেশী হাসি-তামাসা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে লিপ্ত থাকে তাদের
দিল মরে যায় ।

১১/ বখিলী তথা কিপ্টামি বর্জন করতে হবে । যতটুকু ব্যয় করা দরকার, সেখানেও ব্যয় না করে অর্থ জমা করে রাখার অভ্যাস বর্জন করতে হবে ।

১২/ দোয়া করে আমি যে রকম চাই সাথে সাথে ওরকম পেয়ে যাব, এমন তাড়াহুড়া করা যাবে না । আল্লাহ পাক বান্দার দোয়া কবুল করেন কিন্তু বান্দার ইচ্ছা অনুযায়ী নয় আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী । তাই আল্লাহর প্রতি অঘাত বিশ্বাস রাখতে হবে যে দোতইয়া তিনি কবুল করবেনই ।

আরো অমন অনেক বিষয় বিদ্যমান রয়েছে , এসব বিসয় থেকে যথা সম্ভব বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, তাহলে ইন শা আল্লাহ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া কবুল করবেন, আরে আমরা তো চাইতেই জানি না কি চাব , তিনি তো দেবার জন্য বাহানা খোঁজেন তবুও আমরা চেয়ে তাহার কাছ থেকে নিতে পারি না, এখন যদি আমরা উপরের কাজ গুলো করে আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকি, তাহলে ক্ষতি আর কে হইবে আমি নিজেই হব ।

তাই মহান আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত কাজ গুলো থেকে বেঁচে থাকার ও তাহার নাযাত প্রাপ্ত বান্দাদের তালিকাভুক্ত থাকার তৌফিক এনায়েত করুন, আমিন ।

চলবে……

Leave a Reply