মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)
একদিন মসজিদে বসে আছেন।
সাহাবীরাও তাকে ঘিরে বসে
আছে। এমন সময় আমাদের প্রিয় নবী হযরত
মোহাম্মাদ (সাঃ) বললেন, এখন যে
ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে সে
বেহেশতের অধিবাসী। একথা শুনে
উপস্থিত সব সাহাবীরা অধীর আগ্রহে
তাকিয়ে রইলেন মসজিদের প্রবেশ
মুখে। সবার মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলছে,
হয়তো হযরত আবু বকর (রাঃ) বা হযরত উমর
(রাঃ) অথবা এমন কেউ আসছেন যাদের
বেহেশতের সুসংবাদ আল্লাহপাক
ঘোষণা করেছেন।
এমন সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে
মসজিদে প্রবেশ করলেন একজন সাধারণ
আনসার সাহাবী। এমনকি তার নাম
পরিচয় পর্যন্ত জানা ছিল না
অধিকাংশের। এর পরের দিনেও
সাহাবীরা মসজিদে বসে আছেন
মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে
ঘিরে। মহানবী হযরত মোহাম্মাদ
(সাঃ) আবারও বললেন, এখন যে
ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে সে
বেহেশতের অধিবাসী। সেদিনও
মসজিদে প্রবেশ করলে সেই আনসার
সাহাবী।
তৃতীয় দিন মহানবী হযরত মোহাম্মাদ
(সাঃ) সাহাবীদের লক্ষ্য করে আবার
ঘোষণা দিলেন, এখন যে ব্যাক্তি
মসজিদে প্রবেশ করবে সে বেহেশতের
অধিবাসী। সাহাবীরা দেখলো
সেই খুব সাধারণ সাহাবী মসজিদে
ঘটার পর, সাহাবীদের মধ্যে কৌতূহল হল
এই সাধারণ সাহাবী সম্পর্কে জানার
জন্য। তিনি কেন অন্যদের চেয়ে
আলাদা তা জানতে হবে।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে
আমর আল আ’স (রাঃ) চিন্তা শুরু করলেন,
এই সাহাবীর বিশেষত্ব কি আছে তা
জানতে হলে তাকে নিবিড় ভাবে
পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাই তিনি সেই
সাহাবীর নিকটে গিয়ে বললেন,
আমার বাবার সাথে আমার মনো-
মালিন্য হয়েছে, তোমার বাড়িতে
কি আমাকে তিন দিনের জন্য থাকতে
দেবে? সেই সাহাবী রাজী হলেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আল আ’স
(রাঃ) তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ
করতে থাকলেন এবং খুঁজতে থাকলেন
এমন কি আমল তিনি করেন। সারা দিন
তেমন কোন কিছুই চোখে পড়ল না।
তিনি ভাবলেন হয়তো তিনি রাত
জেগে ইবাদত করেন। না সেটিও নয়,
রাতের নামায পড়ে তিনি তো
ঘুমাতে চলে গেলেন। উঠলেন সেই ফজর
নামাজ পড়তে। পরের দুটি দিনও একই
ভাবে কেটে গেল। হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে আমর আল আ’স (রাঃ) বিশেষ
কোন আমল বা আচরণ আবিষ্কার করতে
পারলেনা যা অন্যদের চেয়ে
আলাদা।
এজন্য তিনি সরাসরি সেই
সাহাবীকে বললেন, আমার বাবার
সঙ্গে আমার কোন মনো-মালিন্য হয়নি,
আমি
তোমাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য
তোমার বাড়িতে এসেছিলাম। কারণ
মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)
জান্নাতি। এখন তুমি আমাকে বল
আলাদা কি এমন আমল করো? জবাবে
সেই সাহাবী বললেন, আমাকে তুমি
যেমন দেখেছ আমি তেমনই, আলাদা
কিছুতো আমার মনে পড়ছে না। এই কথা
শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আল আ’স
(রাঃ) তাকে বিদায় জানিয়ে চলে
যেতে থাকলেন।
এমন সময় সেই সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে আমর আল আ’স (রাঃ) কে ডেকে
বললেন, তোমাকে আমার একটা
অভ্যাসের কথা বলা হয়নি, আমি রোজ
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে
তাদেরকে ক্ষমা করে দেই, যারা
আমার প্রতি অন্যায় করেছে বা
আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাদের প্রতি
কোন প্রকার ক্ষোভ আমার অন্তরে পুষে
রাখিনা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর
আল আ’স (রাঃ) একথা শুনে বললেন,
এজন্যই তুমি সবার থেকে আলাদা,
এজন্যই তুমি
জান্নাতি। মহানবী হযরত মোহাম্মাদ
(সাঃ) বলেছেন, যে মানুষের প্রতি
দয়া করেনা, আল্লাহও তার প্রতি দয়া
করেনা। [বুখারী ও মুসলিম]
One thought on "যে অভ্যাসের কারণে একজন সাহাবী দুনিয়া থেকে বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।"