পবিত্র কোরআনে কারিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সূরার নাম আল ইমরান। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ২০০টি। সর্বশেষ আয়াতটিকে দীর্ঘ এ সূরার সারাংশ মনে করা হয়। বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা গুরুত্বপূর্ণ চারটি কাজের আদেশ দিয়েছেন। যথা- সবর, মুসাবারা, মুরাবাতা ও তাকওয়া।

আয়াতের প্রথম নির্দেশ সবর করা। সবর অতি প্রয়োজনীয় একটি মানবিক গুণ। আরবি এ শব্দটি বাংলা ভাষায় অহরহ ব্যবহার হয়ে থাকে । অর্থ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ইত্যাদি। আরবিতে সবর বলতে বুঝায়- বেঁধে রাখা, আটকে রাখা, ধরে রাখা। অর্থাৎ মনের বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজেকে সংবরণ করার নাম সবর।
ইসলামের দৃষ্টিতে মনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ মন থেকে মেনে নেওয়ার নাম সবর। আর সবর করতে হবে তিন সময়ে। যথা-
১. সবর আলাত তায়াত
ইবাদত আদায় করতে যেয়ে যদি দেহ ও মনে কষ্ট লাগে তবে সে কষ্ট সহ্য করে ইবাদত-বন্দেগি করার নাম সবর। ব্যস্ত মানুষের জন্য কাজ ফেলে রেখে নামাজের জামাতে শরিক হওয়া কষ্টকর। পূর্ণ দিবস পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা করা কষ্টকর। প্রচন্ড শীতের শেষ রাতে অজু করে ফজরে জামাতে শরিক হওয়া কষ্টকর। সময় নিয়ে নিয়মিত জিকির করা কষ্টকর। নিজের কষ্টের উপার্জন দিয়ে আর্ত, পীড়িত, ঞ্চিত মানুষের সেবা করা কষ্টকর। ঘাম ঝড়ানো অর্থ দিয়ে দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের খেদমত করা কষ্টকর। কিন্তু কষ্ট হলেও এগুলো করতে হবে। আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য, আল্লাহকে পাওয়ার জন্য এ ধরণের কষ্ট করতে হবে।
২. সবর আনিল মাআসি
হারাম থেকে বিরত থাকতে যদি কষ্ট হয় তবে কষ্ট সহ্য করে হারাম থেকে বিরত থাকার নাম সবর। ঘুষ গ্রহনের অবাধ সুযোগ থাকার পরেও চাকরি জীবনে ঘুষ গ্রহণ না করে বেতনের সীমিত পয়সার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সংসারে অনেক চাহিদা ও সাধ অপূরণ থেকে যায়। বেপর্দার পরিবেশে পরনারীর সৃষ্টিসৌন্দর্য অবলোকন করা থেকে দৃষ্টির হেফাজত করা অত্যন্ত কষ্টকর একটি কাজ। গুনাহর সহায়ক সমাজে বাস করে বিভিন্ন সামাজিক গুনাহ থেকে নিজেকে নির্লিপ্ত রাখা কষ্টকর। সমাজ ও সভ্যতার দিক থেকে প্রতিনিয়ত বাহ্যিক ও মানসিক চাপ থাকে সে সব সামাজিক গুনাহতে নিজেকে জড়িত করতে। এ সমাজ, সভ্যতা, পরিবেশ ও সোসাইটিকে উপেক্ষা করে আল্লাহর নাফরমানী থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা বড় কষ্টের কাজ। কিন্তু আল্লাহর জন্য এতটুকু করতেই হবে। প্রিয় মালিকের ভালোবাসা লাভের জন্য এ ধরণের কষ্ট সহ্য করে সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হবে।

৩. সবর আলাল মাসায়িব
জান ও মালের ক্ষয়-ক্ষতিতে অধৈর্য না হওয়া। পার্থিব জীবনে জমির আবাদ-ফসল নষ্ট হতে পারে। পাকা ধানে শিলা পড়ে নষ্ট হতে পারে। গর্ভবতী গরু মারা যেতে পারে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। দাম্পত্য জীবনের বহু বছর পর লাভ করা সন্তান আকস্মিক মৃত্যুবরণ করতে পারে। আগুন লেগে বসত-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে যেতে পারে। তাসবিহর সুতা ছিড়ে দানাগুলো পরপর পরে যাওয়ার মতো চারদিক থেকে বিপদের সংবাদ একের পর এক আসতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে, মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করে পার্থিব জীবনের ভালো-মন্দ সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ ও পরম করুময় আল্লাহ যা করেছেন তা আল্লাহর সিদ্ধান্ত জেনে সহ্যের সঙ্গে মেনে নিতে হবে।
আয়াতের দ্বিতীয় নির্দেশ মুসাবারা। অর্থাৎ জাতির শত্রুদের মোকাবেলায় অবিচল থাকা, পিছপা না হওয়া। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দশ বছরের মাদানি জীবন এবং হজরত সাহাবাদের হিজরত পরবর্তী জীবন আল্লাহর এ নির্দেশ পালনের অসংখ্য দৃষ্টান্তে সমৃদ্ধ।
আয়াতের তৃতীয় নির্দেশ মুরাবাতা। কোরআন ও হাদিসে মুরাবাতা শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথা-
ক. ইসলামি দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া।
খ. নামাজের জামাতের সময়ানুবর্তীতা।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক দিন এক রাত ইসলামি দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া এক মাস রোজা রাখা ও রাত জেগে ইবাদাত করার চেয়ে শ্রেয়। এ অবস্থায় মারা গেলে তার নেকআমলগুলো (কিয়ামত পর্যন্ত আমলনামায়) লেখা হবে। (মৃত্যু পরবর্তী জীবনের) সকল বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে সে নিরপদে থাকবে। -সহিহ মুসলিম: ৫০৪৭
একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলে দিব না; যা পাপ মোচন করবে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবে? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি ইরশাদ করলেন, কষ্টের সময় ভালোভাবে অজু করা, বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া, এক নামাজের পর থেকেই পরবর্তী নামাজের অপেক্ষা করা। -সহিহ মুসলিম: ৬১০
৪. তাকওয়া
আয়াতের চতুর্থ নির্দেশ তাকওয়ার জীবন-যাপন করা। পুরো জীবন বা জীবনের সকল অঙ্গন তাকওয়ার আলোয় আলোকিত করা। তাকওয়া বলতে বুঝায় আল্লাহর ভয়। প্রকাশ্যে-গোপনে, জনসম্মুখে-নির্জনে এক জন মানুষ প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে যত কাজ করে থাকে সব কাজে এ কথা স্মরণ রাখা যে, হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে এ কাজের কৈফিয়ৎ দিতে হবে, জবাব দিতে হবে। পৃথিবীর কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন। পৃথিবীতে কৈফিয়ৎ নেয়ার কেউ না থাকলেও আল্লাহ ঠিকই কৈফিয়ৎ নিবেন।
আয়াতের সারকথা হলো- সুখে-দুঃখে, অভাবে-প্রাচুর্যে, পছন্দে-অপছন্দে সবক্ষেত্রে আল্লাহর পছন্দনীয় জীবনব্যাবস্থা ইসলামকে অনুসরণ করা এবং নিজের জীবন দিয়ে হলেও এর হেফাজত করা।
যে ব্যক্তি তাকওয়ার সঙ্গে সামগ্রিক ইসলামের চর্চা করবে এবং ইসলামের হেফাজত করবে আয়াতের শেষাংশে তার জীবন সফল হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। জীবনের সফলতা বুঝানোর জন্য আরবিতে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- ফালাহ। প্রতিদিনের আজানেও আহ্বান জানানো হয়, ‘এসো ফালাহের দিকে।’ ফালাহ বলতে এমন সফলতাকে বুঝায়, যার পর আর কখনোই কোনো ধরণের ব্যর্থতা আসবে না। যে সফলতা লাভের পর কোনো ইচ্ছা অপূরণ থাকবে না। কোনো কষ্ট থাকবে না। এ ধরণের সফলতা একমাত্র জান্নাতেই পাওয়া সম্ভব।

♦♦♦♦Visit My Site .. ♦♦♦

3 thoughts on "জীবনে সফল হওয়ার উপায়"

  1. জাজাকাল্লাহ হায়ের.
  2. OrOnNo Contributor says:
    সোবহানআল্লাহ
  3. anandams Subscriber says:
    ইউরোপ আমেরিকার মানুষ কোন সূরা পরে সফল হয়ছে..?

Leave a Reply