শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে
৯ বছরের ছেলে সিয়াম পালনে
মুকাল্লাফ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) নয়। কারণ
সে এখনও সাবালক হয়নি। তবে
আল্লাহ তা’আলা ইবাদতের ওপর
সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব
বাবা-মা’র ওপর অর্পণ করেছেন। ৭ বছর
বয়সী সন্তানকে নামাজ শিক্ষা
দেয়ার জন্য বাবা-মার প্রতি আদেশ
জারি করেছেন। নামাজে অবহেলা
করলে ১০ বছর বয়স থেকে বেত্রাঘাত
করার নির্দেশও দিয়েছেন।
সাহাবীরা তাদের সন্তানদের
ছোটবেলা থেকে রোজা
রাখাতেন, যেন তারা এ মহান
ইবাদত পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে
পারে। এ আলোচনা থেকে সন্তান-
সন্ততিকে উত্তম গুণাবলী ও ভালো
কাজের ওপর গড়ে তোলার গুরুত্ব ও
প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
রোজার ব্যাপারে এসেছে :
রুবাই বিনতে মুআওয়েজ ইবনে আফরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আশুরার সকালে মদিনার
আশেপাশে আনসারদের এলাকায় (এই
ঘোষণা) পাঠালেন : ‘যে ব্যক্তি
রোজা অবস্থায় সকাল শুরু করেছে,
সে যেন তার রোজা পালন সম্পন্ন
করে। আর যে ব্যক্তি বে-রোজদার
হিসেবে সকাল করেছে সে যেন
বাকি দিনটুকু রোজা পালন করে।’
এরপর থেকে আমরা আশুরার দিন
রোজা পালন করতাম এবং আমাদের
ছোট শিশুদেরও রোজা রাখাতাম।
আমরা শিশুদের নিয়ে মসজিদে
যেতাম এবং তাদের জন্য উল দিয়ে
খেলনা তৈরি করে রাখতাম।
তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে
তাকে সেই খেলনা দিয়ে
ইফতারের সময় পর্যন্ত সান্ত্বনা দিয়ে
রাখতাম। (হাদিসটি বর্ণনা করেছেন
ইমাম বুখারি। নং ১৯৬০ ও মুসলিম, নং
১১৩৬)
যে বয়সে শিশু রোজা পালনে
বাবা-মা তাকে প্রশিক্ষণমূলক
রোজা রাখাবেন। এটি শিশুর
শারীরিক গঠনের ওপর নির্ভর করে।
আলেমরা কেউ কেউ এ সময়কে ১০ বছর
বয়স থেকে নির্ধারণ করেছেন।
শিশুদের রোজা পালনে অভ্যস্ত করে
তোলার কিছু পন্থা :
# শিশুদের কাছে রোজার ফজিলত
সম্পর্কিত হাদিসগুলো তুলে ধরতে
হবে। তাদের জানাতে হবে সিয়াম
পালন জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম।
জান্নাতের একটি দরজার নাম হচ্ছে
‘আর-রাইয়্যান’। এ দরজা দিয়ে শুধু
রোজাদাররা প্রবেশ করবে।
# রমজান আসার আগেই কিছু রোজা
রাখানোর মাধ্যমে সিয়াম পালনে
তাদের অভ্যস্ত করে তোলা। যেমন-
শা’বান মাসে কয়েকটি রোজা
রাখানো। যাতে তারা
আকস্মিকভাবে রমজানের রোজার
সম্মুখীন না হয়।
# প্রথমদিকে দিনের কিছু অংশে
রোজা পালন করানো। ক্রমান্বয়ে
সেই সময়কে বাড়িয়ে দেয়া।
# একেবারে শেষ সময়ে সেহেরি
গ্রহণ করা। এতে করে তাদের জন্য
দিনের বেলায় রোজা পালন সহজ
হবে।
# প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে
পুরস্কার দেয়ার মাধ্যমে তাদের
রোজা পালনে উৎসাহিত করা।
# ইফতার ও সেহেরির সময় পরিবারের
সকল সদস্যের সামনে তাদের প্রশংসা
করা। যাতে তাদের মানসিক উন্নয়ন
ঘটে।
# যার একাধিক শিশু রয়েছে তাদের
মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব
সৃষ্টি করা। তবে খুবই সতর্কতার সাথে
খেয়াল রাখতে হবে যাতে
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া
শিশুটির প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা
না হয়।
# তাদের মধ্যে যাদের ক্ষুধা লাগবে
তাদের ঘুম পাড়িয়ে অথবা বৈধ
খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা। এমন
খেলনা যাতে পরিশ্রম করতে হয় না।
যেভাবে মহান সাহাবীরা তাঁদের
সন্তানদের ক্ষেত্রে করতেন।
নির্ভরযোগ্য ইসলামী
কিছু অনুষ্ঠান রয়েছে এবং রক্ষণশীল
কিছু কার্টুন সিরিজ রয়েছে। এগুলো
দিয়ে তাদেরকে ব্যস্ত রাখা যেতে
পারে।
# ভালো হয় যদি বাবা তার
ছেলেকে মসজিদে নিয়ে যান।
বিশেষতঃ আসরের সময়। যাতে সে
নামাজের জামাতে হাজির
থাকতে পারে। বিভিন্ন দ্বীনি
ক্লাসে অংশ নিতে পারে এবং
মসজিদে অবস্থান করে কুরআন
তিলাওয়াত ও আল্লাহ তা’আলার
জিকিরে রত থাকতে পারে।
# যেসব পরিবারের শিশুরা রোজা
রাখে তাদের বাসায় বেড়াতে
যাওয়ার জন্য দিনে বা রাতের কিছু
সময় নির্দিষ্ট করে নেয়া। যাতে
তারা সিয়াম পালন অব্যাহত রাখার
প্রেরণা পায়।
# ইফতারের পর শরিয়ত অনুমোদিত
ঘুরাফিরার সুযোগ দেয়া। অথবা
তারা পছন্দ করে এমন খাবার, চকলেট,
মিষ্টি, ফল-ফলাদি ও শরবত প্রস্তুত
করা।
আমরা এ ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতে
বলছি যে, শিশুর যদি খুব বেশি কষ্ট হয়
তবে রোজাটি পূর্ণ করতে তার ওপর
অতিরিক্ত চাপ দেয়া উচিত নয়।
যাতে তার মাঝে ইবাদতের প্রতি
অনীহা না আসে অথবা তার মাঝে
মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি না করে
অথবা তার অসুস্থতা বৃদ্ধির কারণ না
ঘটায়। কেননা ইসলামী শরিয়তে সে
মুকাল্লাফ (ভারার্পিত) নয়। তাই এ
ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত এবং
সিয়াম পালনে আদেশ করার
ব্যাপারে কড়াকড়ি না করা উচিত। এই পোষ্ট যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে একবার গরিবের সাইট থেকে ঘুরে আসুন। FesTalBD.CoM
One thought on "শিশুদের রোজা পালনে অভ্যস্ত করার পন্থা।"