♥♥আসসালামু আলাইকুম♥♥

সবাই কেমন আছেন?আশা করি সবাই ভালো আছেন।আর আপনাদের দোয়ায় আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

কেয়ামতেরর আলামত এর আজকে শেষ পার্ট নিয়ে আলোচনা করব।এই পার্টে থাকছে শেষ ১৫ টি।

২৮) পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দেয়া হবেঃ
২৯)বেপর্দা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
৩০) মুমিনের স্বপ্ন সত্য হবেঃ
৩১) সুন্নাতী আমল সম্পর্কে গাফিলতী করবেঃ
৩২) নতুন মাসের চাঁদ উঠার সময় বড় হয়ে উদিত হবেঃ
৩৩) মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবেঃ
৩৪) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবেঃ
৩৫) মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবেঃ
৩৬) হঠাৎ মৃত্যুর বরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
৩৭) আরব উপদ্বীপ নদ-নদী এবং গাছপালায় পূর্ণ হয়ে যাবেঃ
৩৮) প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফসল হবেনাঃ
৩৯) ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় বের হবে ঃ
৪০) জড় পদার্থ এবং হিংস্র পশু মানুষের সাথে কথা বলবেঃ
৪১) ফিতনায় পতিত হয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করবেঃ
৪২) কাহতান গোত্র থেকে একজন সৎ লোক বের হবেইত্যাদি।

বিস্তারিত আলোচনাঃ

২৮) পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দেয়া হবেঃ
কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত হচ্ছে মুসলমানেরা কেবল পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দিবে।(মুসনাদে আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন)। এ বিষয়টি বর্তমান যামানায় সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেক লোকই পরিচিত ব্যতীত অন্য কাউকে সালাম দেয়না। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলিমকেই সালাম দিতে বলেছেন। কেননা সালাম বিনিময় করা মুসলমানদের ভিতরে ভালবাসা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম। তিনি বলেনঃ তোমরা ঈমানদার না হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেনা। আর একে অপরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার হতে পারবেনা। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের সন্ধান দেবনা যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে পারবে? তোমরা বেশী করে সালামের প্রচলন করোমুমিন।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান)।

২৯)বেপর্দা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে মহিলারা ইসলামী পোষাক পরিত্যাগ করে এমন পোষাক পরিধান করবে যাতে তাদের সতর ঢাকবেনা। তারা মাথার চুল ও সৌন্দর্য্যের স্থানগুলো প্রকাশ করে ঘর থেকে বের হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের আলামত হচ্ছে মহিলাদের জন্য এমন পোষাক আবিস্কার হবে যা পরিধান করার পরও মহিলাদেরকে উলঙ্গ মনে হবেমুমিন।(ইমাম হায়ঝামী বলেন: ইমাম বুখারী এই হাদীছের বর্ণনাকারীদের থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন, মাজমাউজ্ জাওয়ায়েদ, ৭/৩২৭)।অর্থাৎ তাদের পোষাকগুলো এমন সংকীর্ণ ও আঁট-সাট হবে যে, তা পরিধান করলেও শরীরের গঠন ও সৌন্দর্যের স্থানগুলো বাহির থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যাবে।
এই হাদীছটিতে নবুওয়াতের সুস্পষ্ট মু’জেযা রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে যা বলেছেন তা আজ হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে।

৩০) মুমিনের স্বপ্ন সত্য হবেঃ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে আখেরী যামানায় মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন মিথ্যা হবেনা; বরং ঘুমন্ত অবস্থায় সে যা স্বপ্নে দেখবে তা সত্যে পরিণত হবে। যার ঈমান যত মজবুত হবে তার স্বপ্নও তত বেশী সত্য হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدْ رُؤْيَا الْمُسْلِمِ تَكْذِبُ وَأَصْدَقُكُمْ رُؤْيَا أَصْدَقُكُمْ حَدِيثًا وَرُؤْيَا الْمُسْلِمِ جُزْءٌ مِنْ خَمْسٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ وَالرُّؤْيَا ثَلَاثَةٌ فَرُؤْيَا الصَّالِحَةِ بُشْرَى مِنَ اللَّهِ وَرُؤْيَا تَحْزِينٌ مِنَ الشَّيْطَانِ وَرُؤْيَا مِمَّا يُحَدِّثُ الْمَرْءُ نَفْسَهُ فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُمْ فَلْيُصَلِّ وَلَا يُحَدِّثْ بِهَا النَّاسَ
যখন কিয়ামত নিকটবর্তী হবে তখন মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন মিথ্যা হবেনা। যে মুমিন মানুষের সাথে কথা-বার্তায় সত্যবাদী হবে তাঁর স্বপ্ন বেশী সত্যে পরিণত হবে। মুমিনের স্বপ্ন নবুওয়াতের পয়তাল্লিশ ভাগের একভাগের সমান। স্বপ্ন তিন প্রকার। (১) মুমিনের সত্য স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ স্বরূপ| (২) যে সমস্ত স্বপ্ন মনের ভিতর দুশ্চিন্তা আনয়ন করে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। (৩) আর এক প্রকারের স্বপ্ন অন্তরের কল্পনা মাত্র। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে অপছন্দনীয় কিছু দেখে সে যেন বিছানা থেকে উঠে নামাযে দাঁড়িয়ে যায় স্বপ্নের কথা কারো কাছে প্রকাশ না করেমুমিন।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুত তা’বীর)।
ইবনে আবি হামজাহ বলেনঃ আখেরী যামানায় মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়ার অর্থ এই যে, অধিকাংশ সময় স্বপ্নে যা দেখেছে তাই বাস্তবে পরিণত হবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবেনা। অথচ ইতিপূর্বে তা অস্পষ্ট হওয়ার কারণে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতো। ফলে কখনও ব্যাখ্যার বিপরীত হতোমুমিন।

শেষ যামানায় স্বপ্ন সত্যে পরিণত হওয়ার কারণ এই যে তখন মুমিন লোকের সংখ্যা কমে যাবে। ফলে সে সময় মুমিন ব্যক্তি কোন সহযোগী
ও শান্তনা দানকারী খুঁজে পাবেনা। তাই সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে তাকে শান্তনা দেয়া হবে।(ফাতহুল বারী, ১২/৪০৬)।
কোন্‌ যামানায় মুমিনের স্বপ্নসত্যে পরিণত হবে তার ব্যাপারে আলেমদের কয়েক ধরণের বক্তব্য রয়েছেঃ
ক) এটি হবে কিয়ামতের পূর্বে যখন ইল্‌মে দ্বীন উঠিয়ে নেয়া হবে, ইসলামী শরীয়তের নাম-নিশানা মিটে যাবে এবং ফিতনা-ফাসাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হবে।
খ) আখেরী যামানায় যখন মুমিনের সংখ্যা কমে যাবে এবং কুফর, পাপাচারিতা ও মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে তখন মুমিনের স্বপ্ন সত্যে পরিণত হবে। মুমিন লোকের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে এক সময় তারা একাকীত্ব অনুভব করবে এবং নিজেদেরকে অসহায় মনে করবে। অন্য একজন মুমিনের সাথে বসে কথা বলার এবং মনের ভাব বিনিময় করার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এহেন কঠিন পরিস্থিতে স্বপ্নের মাধ্যমে মুনিদেরকে শান্তনা প্রদান করা হবে।
গ) এটি হবে আখেরী যামানায় ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে নেমে আসার পর। কারণ খোলাফায়ে রাশেদার যুগের পর ঈসা (আঃ)এর যামানা হবে সর্বোত্তম যামানা। সে যুগের মানুষ অত্যন্ত সত্যবাদী হবে। কাজেই তাদের স্বপ্নও সত্য হবে। (আল্লাহই ভাল জানেন)

৩১) সুন্নাতী আমল সম্পর্কে গাফিলতী করবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেঊ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন বসার পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়ে নেয়| (মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের সলাত)| কিছু সংখ্যক লোক ব্যতীত কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানেরা এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটির উপর আমল ছেড়ে দিবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের আলামত হচ্ছে লোকেরা মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করবে কিন্তু তাতে দু-রাকাত নামায পড়বেনা।( সহীহ ইবনে খুজায়মা। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং ৬৪৯)।

৩২) নতুন মাসের চাঁদ উঠার সময় বড় হয়ে উদিত হবেঃ
মাসের প্রথম দিন আমরা চাঁদকে একেবারে চিকন ও সরু অবস্থায় উঠতে দেখি। কিন্তু কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে চাঁদ প্রথম দিনেই অনেক বড় হয়ে উদিত হবে। দেখে মনে হবে এটি দুই দিন বা তিন দিনের চাঁদ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হচ্ছে, চন্দ্র মোটা হয়ে উদিত হবে। বলা হবে এটি দুই দিনের চাঁদমুমিন।(তাবরানী, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস সাগীর হাদীছ নং-৫৭৭৪)।

৩৩) মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবেঃ
কিয়ামতের পূর্বে ব্যাপকভাবে মিথ্যা কথা বলার প্রচলন ঘটবে। এমনকি এক শ্রেণীর লোক নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করে মানুষের মাঝে প্রচার করবে। বাস্তবে তাই হয়েছে। ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের নামে বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী ও জাল হাদীছ তৈরী করে এক শ্রেণীর লোক মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের কিছু লোক তোমাদের কাছে এমন কথা বর্ণনা করবে, যা তোমরাও শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে। তারা যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারেমুমিন।(মুসলিম, মুকাদ্দিমা)।হাদীছের ভাষ্য সত্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানকালে মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি বলা হয় বর্তমানে একজন সত্যবাদী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন তাতেও অতিরঞ্জিত হবেনা বলে মনে হয়। যাচাই-বাছাই না করেই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে লোকেরা মোটেও দ্বিধাবোধ করেনা। প্রচার মাধ্যমগুলো অনবরত মিথ্যা সংবাদ প্রচার করার কারণে সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যায়।

৩৪) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ شَهَادَةَ الزُّورِ وَكِتْمَانَ شَهَادَةِ الْحَقِِّ
কিয়ামতের পূর্বে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবেমুমিন।(মুসনাদে আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন)।বর্তমান সমাজে সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। অপর পক্ষে সত্যের সাক্ষী দেয়ার লোক খুব কমই পাওয়া যায়।

৩৫) মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ َتَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِد
কিয়ামতের আলামত হচ্ছে, মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার দেখা-শুনার জন্যে মাত্র একজন পুরুষ থাকবেমুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ইলম)।এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের পূর্বে ফিতনার সময় ব্যাপক যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে যেহেতু কেবল পুরুষেরাই অংশগ্রহণ করে থাকে তাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পুরুষেরা অকাতরে নিহত হবে। ফলে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) এই মতটিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেনঃ হাদীছের প্রকাশ্য অর্থ হলো কোন কারণ ছাড়াই শুধু কিয়ামতের আলামত হিসেবে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা আখেরী যামানায় পুরুষের তুলনায় বেশী নারী সৃষ্টি করবেন। বর্তমানেও এ আলামতটি প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন দেশে জরিপ করে দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেশী। ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। মোটকথা স্বভাগত ও যুদ্ধ উভয় কারণে পুরুষের সংখ্যা কমতে পারে।

৩৬) হঠাৎ মৃত্যুর বরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে হঠাৎ করে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেমুমিন।(মাযমাউয্ যাওয়ায়েদ ৭/৩২৫, সহীহুল জামে আস-সাগীর, হাদীছ নং ৫৭৭৫)।
বর্তমানে এরকম ঘটনা প্রায়ই শুনা যায়। দেখা যায় একজন মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ। হঠাৎ শুনা যায় সে মৃত্যু বরণ করেছে। সুতরাং মানুষের উচিৎ মৃত্যু আসার পূর্বেই আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।

৩৭) আরব উপদ্বীপ নদ-নদী এবং গাছপালায় পূর্ণ হয়ে যাবেঃ
বর্তমানে আরব উপদ্বীপে কোন নদী-নালা নেই। গাছপালার সংখ্যা খুবই কম। চাষাবাদের উপযোগী ভূমির পরিমাণ অতি নগণ্য। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আরব উপদ্বীপের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং তা গাছপালা ও নদী-নালায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَعُودَ أَرْضُ الْعَرَبِ مُرُوجًا وَأَنْهَارًا
ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যে পর্যন্ত না আরব উপদ্বীপ গাছপালা ও নদী-নালায় পূর্ণ হবে।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুয যাকাত)।হাদীছের প্রকাশ্য বর্ণনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে আরব দেশসমূহে কিয়ামতের পূর্বে পানির অভাব হবেনা। তাতে প্রচুর পরিমাণ নদী প্রবাহিত হবে। ফলে গাছ-পালা ও নানা উদ্ভিদ উৎপন্ন হবে এবং বন-জঙ্গলে ভরে যাবে।

৩৮) প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফসল হবেনাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُمْطَرَ النَّاسُ مَطَرًا لَا تُكِنُّ مِنْهُ بُيُوتُ الْمَدَرِ وَلَا تُكِنُّ مِنْهُ إِلَّا بُيُوتُ الشَّعَرِ
ততদিন কিয়ামত হবেনা যতদিন না আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এতে মাটির তৈরী ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়বে এবং পশমের ঘরগুলো রক্ষা পাবে।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুয যাকাত)।তিনি আরো বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُمْطَرَ النَّاسُ مَطَرًا عَامًّا وَلَا تَنْبُتَ الْأَرْضُ شَيْئًا
ততদিন কিয়ামত হবেনা যেপর্যন্ত না ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু যমিনে কোন ফসলই উৎপন্ন হবেনা।(মুসনাদে আহমাদ, ইমাম হায়ছামী মাউমাউজ্ যাওয়াদে রর্ণনা করেছেন, ৭/৩৩০। ইমাম ইবনে কাছীর বলেন: হাদীছের সনদ খুব ভাল। নেহায়া, ১/১৮০)। স্বাভাভিক নিয়ম হলো বৃষ্টির মাধ্যমে যমিনে

ফসল উৎপন্ন হবে। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে স্বাভাভিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

৩৯) ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় বের হবেঃ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ফুরাত নদী থেকে একটি সোনার পাহাড় বের হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَحْسِرَ الْفُرَاتُ عَنْ جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ يَقْتَتِلُ النَّاسُ عَلَيْهِ فَيُقْتَلُ مِنْ كُلِّ مِائَةٍ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ وَيَقُولُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ لَعَلِّي أَكُونُ أَنَا الَّذِي أَنْجُو
তত দিন পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যতদিন না ফুরাত নদী থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় বের হবে। মানুষেরা এটি দখল করার জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এযুদ্ধে শতকরা নিরানব্বই জনই নিহত হবে। তাদের প্রত্যেকেই বলবেঃ আমিই এযুদ্ধে রেহাই পাবো এবং সোনার পাহাড়টি দখল করে নিবো।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)।তিনি আরো বলেনঃ
(يُوشِكُ الْفُرَاتُ يَحْسِرُ عَنْ كَنْزٍ مِنْ ذَهَبٍ فَمَنْ حَضَرَهُ فَلَا يَأْخُذْ مِنْهُ شَيْئًا)
অচিরেই ফুরাত নদী থেকে একটি সোনার গুপ্তধন বের হবে। সে সময় যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে যেন তা থেকে কোন কিছুই গ্রহণ না করে।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস-সাফা)।

৪০) জড় পদার্থ এবং হিংস্র পশু মানুষের সাথে কথা বলবেঃ
কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে হিংস্র প্রাণী এবং জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। তিনি অন্যান্য সৃষ্টিজীবকেও কথা বলার ক্ষমতা দিতে মোটেই অক্ষম নন।
ইমাম আহমাদ (রঃ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, জনৈক রাখাল মাঠে ছাগল চরাচিছল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ এসে একটি ছাগলের উপর আক্রমণ করলো। রাখাল বাঘের পিছনে ধাওয়া করে ছাগলটি ছিনিয়ে আনল। বাঘটি একটি টিলার উপর বসে বলতে লাগলোঃ তুমি কি আল্লাহকে ভয় করোনা? আল্লাহ আমাকে একটি রিজিক দিয়েছিলেন। আর তুমি তা ছিনিয়ে নিলে। রাখাল বললঃ কি আশ্চর্য্য ব্যাপার! মানুষের ন্যায় বাঘও আমার সাথে কথা বলছে। বাঘ বললোঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়ে আশ্চর্য্যজনক খবর দিবোনা? মদীনায় মুহাম্মাদ (সাঃ) অতীতে যা ঘটেছে এবং আগামীতে যা ঘটবে তা সম্পর্কে মানুষকে সংবাদ দিচ্ছে। রাখাল তার ছাগলের পাল নিয়ে মদীনায় প্রবেশ করে ছাগলগুলো এক স্থানে রেখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে এসে ঘটনা খুলে বলল। এতক্ষণে নামাযের সময় হয়ে গেল। নামায শেষে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাখালকে বললেনঃ æতুমি সবার সামনে ঘটনা খুলে বলমুমিন। সে ঘটনা বর্ণনা শেষ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ রাখাল সত্য বলেছে। ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না হিংস্র প্রাণী মানুষের সাথে কথা বলবে। মানুষ তার হাতের লাঠির সাথে কথা বলবে, পায়ের জুতার সাথে কথা বলবে। এমনকি ঘরের স্ত্রী তার স্বামীর অনুপস্থিতে কি করছে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাকে বলে দিবে।(মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং-১২২)।

৪১) ফিতনায় পতিত হয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي مَكَانَه
ততদিন কিয়ামত হবেনা যতদিন না লোকেরা কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে এবং বলবেঃ হায় আফসোস! আমি যদি এ কবরের অধিবাসী হতাম।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)।তিনি আরো বলেনঃ ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না একজন লোক কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তার উপর গড়াগড়ি করবে এবং বলবেঃ হায় আফসোস! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থানে হতাম। ফিতনা ও মুসীবত সহ্য করতে না পেরেই সে এরূপ কথা বলবে।(মুসরিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)।
যখন ফিতনা বিস্তার লাভ করবে পৃথিবীর অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং ইসলামী শরীয়ত মিটে যাবে তখন এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যদিও এখনও এধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি কিন্তু যেহেতু এমর্মে সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তাই এটি অবশ্যই সংঘটিত হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ তোমাদের উপর এমন এক সময় আসবে তখন যদি কেউ মৃত্যু বিক্রি হচ্ছে বলে জানতে পারে তবে মৃত্যু ক্রয় করে নেয়ার চেষ্টা করবে।(ফাইযুল কাদীর, ৬/৪১৮)।

৪২) কাহতান গোত্র থেকে একজন সৎ লোক বের হবেঃ
আখেরী যামানায় কাহতান গোত্র থেকে একজন সৎ লোক আগমণ করবে। মানুষ তাঁর নেতৃত্বে ঐক্য বদ্ধ হয়ে তাঁর আনুগত্য করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ رَجُلٌ مِنْ قَحْطَانَ يَسُوقُ النَّاسَ بِعَصَاهُ
ততদিন কিয়ামত হবেনা যতদিন না কাহতান গোত্র থেকে একজন লোক বের হয়ে তার লাঠির মাধ্যমে লোকদেরকে পরিচালিত করবে।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)। লাঠির মাধ্যমে জনগণকে পরিচালিত করার অর্থ হলো আখেরী যামানায় তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ তার আনুগত্য করবে। তিনি হবেন একজন সৎ লোক। হাদীছের ভাষ্য থেকে বুঝা যায় তিনি কঠোর হবেন। তবে সকলের বিরুদ্ধে কঠোরতা করবেন না। অপরাধীদের বিরুদ্ধেই কেবল তিনি কঠিন হবেন।(أشراط الساعة, يوسف عبد الله الوابل ص 219)|

আজকে এখানেই শেষ করলাম।সবাই ভালো থাকুন সুস্হ থাকুন এই বলে শেষ করছি।আপনাদের সারা পেলে আরও ভালো ভালো ইসলামিক পোস্ট নিয়ে হাজির হব।

♥♥আল্লাহ হাফেজ♥♥

13 thoughts on "[ইসলামিক পোস্ট]কিয়ামতের আলামতসমূহ।৪২ টি আলামত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।[part 3 last part]"

  1. Naim sdq Author says:
    যদি আপনার লিখা হয় তবে বলব ভালই লিখেছেন ! নিয়মিত ইসলামিক পোষ্ট করতে থাকেন। আমি সাপোর্ট দেব সবসময়।
    1. MD Mizan Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাই

      উৎসাহিত করার জন্য।
      সাড়া পেলে ইনশাআল্লাহ আরো ভালো ভালো
      ইসলামিক পোস্ট নিয়ে হাজির হবো।
    2. MD Mizan Author Post Creator says:
      ভাই প্রথম পার্ট ২ টা পড়েন
      আশা করি ভালো লাগবে।
    3. Naim sdq Author says:
      আপনাকে বলতে চাচ্ছি নিজ হাতে লিখে টিউন করুন। কপি নয়।
    4. Anik Contributor says:
      ইসলামিক এই জাতীয় পোস্ট কপি করেই লিখতে হয় ভাই। অন্যথায় নিজেকে আলেম-ওলামা হতে হবে। কিন্তু সেটা যখন সম্ভব না তখন এমন কপি করা কিছু খারাপ নয়। তাছাড়া উনি নিশ্চয়ই অন্য কারো লেখা কপি করেননি। ইন্টারনেট ঘেটে সংগ্রহ করেছেন।
    5. Naim sdq Author says:
      আপনার সাথে একমত।
    6. MD Mizan Author Post Creator says:
      জ্বি ভাই আপনার সাথে আমি একমত।আমি কারও কপি করিনি।
    7. MD Mizan Author Post Creator says:
      জ্বি ভাই আমি নেট ঘেটে পোস্ট করেছি।সত্যি বলতে ভাই অনেক কষ্ট হয়েছে লিখতে।
      ২ টা পোস্ট করতে সারাদিন গেলো
      কেউ বিশ্বাস করবে না জানি।
      একটু একটু করে খোজা কপি করা আবার পেস্ট করা
      এক এক করে BBA কোড যোগ করা।
  2. . Contributor says:
    থার্টি ফার্স্ট নাইট যে পালন করবে তাকে মুসলমান বলে গণ্য করা যায় না।
    কারণটি জানতে হলে আমাকে রিপ্লে দিন?
    বলে দিব।
    1. MD Mizan Author Post Creator says:
      জ্বী ভাই বলেন।
  3. BlaCk & WhitE (TaNjiD) Author says:
    অনেক অনেক ধন্যবাদ।।। এইরকম ইসলামি পোস্ট করেন। আমি আপনার সাথেই আছি।।।।। ???
    ,,,কিয়ামত ঘনিয়ে আসছে… ৭৫% প্রমাণিত হচ্ছে।
    1. MD Mizan Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাই

      সাপোর্ট করার জন্য।
      সাথেই থাকুন ভাই ইনশাআল্লাহ ভালো ভালো
      ইসলামিক পোস্ট পাবেন।

Leave a Reply