ইসলাম বলে সেই পশুটি কোরবানি
দিতে, যে পশুটি সবচেয়ে বেশি
পছন্দের, সবচেয়ে বেশি আদরের।
ইবরাহিম (আ.) ৮৬ বছর বয়সে আল্লাহ
তায়ালার কাছে একটি নেক
সন্তানের জন্য দোয়া করেন। আর সেই
দোয়ার ফসল হলেন ইসমাঈল (আ.)।
জীবনের শেষে এসে একটি সন্তান
পেয়ে তিনি অনেক আনন্দিত হলেন,
নিজের জীবনের চেয়েও বেশি
ভালোবাসেন পুত্র ইসমাঈলকে। এমন
সময় আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ
এলো, ইসমাঈলকে কোরবানি দিতে।
চিন্তা করে দেখুন তো, আপনার
আদরের যে সন্তানটি আপনাকে
বাবা, মা বলে ডেকে ডেকে
আপনার হৃদয় শীতল করে দেয়, আপনি
কি পারবেন সে সন্তানটিকে
কোরবানি করতে? হজরত ইবরাহিম (আ.)
কিন্তু তা ঠিকই পেরেছেন। তিনি
এমন আদরের সন্তানকেও একমাত্র
আল্লাহর জন্য কোরবানি দিতে
হাতে ছুরি নিয়ে ছিলেন।

এবার মিলিয়ে দেখুন আপনি যে
পশুটি কোরবানি দিচ্ছেন, সে পশুটির
প্রতি আপনার আদর-ভালোবাসা হজরত
ইবরাহিম (আ.) এর আদর-ভালোবাসার
মতো কিনা? আশা করি উত্তরটি
পেয়েছেন। যদি এমন হয় তবে তো
আলহামদুলিল্লাহ, আর যদি না হয় তবে
আপনার প্রতি হাতজোড় থাকবে এরূপ
ভালোবাসা সৃষ্টি করুন। কেননা হজরত
ইবরাহিম (আ.) এর এই ত্যাগে খুশি হয়েই
তো আল্লাহ তায়ালা উম্মতে
মুহাম্মদির ওপর কোরবানি ওয়াজিব
(নেসাবের মালিক হলে) করেছেন।

যে পশুর প্রতি আপনার কোনো
মমত্ববোধ নেই, সে পশুর রক্ত প্রবাহিত
করে আপনি কী কোরবানি দিচ্ছেন?
জাহেলি যুগের লোকেরা পশু জবাই
করে পশুর গোশত পবিত্র কাবা ঘরের

সামনে রেখে যেত, পশুর রক্ত কাবা
ঘরের দেয়ালে লেপে দিত, তারা
মনে করত, এরূপ করলে তাদের
কোরবানি কাবার মালিকের
কাছে পৌঁছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
তায়ালার এরশাদ করেন, ‘ওগুলোর রক্ত,
গোশত আল্লাহ তায়ালার কাছে
পৌঁছে না, তাঁর কাছে পৌঁছে
তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা হজ ৩৭)।

এ জন্য উত্তম হলো, গৃহপালিত পশু
দ্বারা কোরবানি করা। কিন্তু আমরা
যারা শহরে বসবাস করি তাদের তো
আর সে সুযোগ নেই, হাট থেকে
কিনেই কোরবানি দিতে হয়। তাই
তাদের জন্য করণীয় হলো, অন্তত ঈদের
তিন-চার দিন আগে হাট থেকে পশু
কিনে নিজ বাড়িতে বা নিজ
তত্ত্বাবধানে রাখা। খাবার
খাওয়ানো, আদর-যত্ন করা। এতে করে
কোরবানির পশুটির ওপর আপনার মায়া
জন্মাবে, আর এ মায়াকে আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করার নামই হচ্ছে
কোরবানি।
অথচ কোরবানি এলে আমাদের
ব্যস্ততা বেড়ে যায় কোন পশুতে কত
কেজি গোশত হবে, কোন পশুর কত দাম,
কার গরুটা মোটাতাজা, পাড়ার
সবার গরুর চেয়ে আমার গরুটি
মোটাতাজা কিনা ইত্যাদি
ইত্যাদি নিয়ে। যারা এরূপ
চিন্তাভাবনা করেন তাদের
কোরবানি কতটুকু গ্রহণীয় তা আল্লাহ
ভালো জানেন।
কোরবানির গোশত খাওয়া উম্মতে
মুহাম্মদির জন্য সর্বোত্তম হালাল,
যা নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই।
তবে কথা হলো, যে পশুটিকে তিন-
চার দিন লালন-পালন করতে আপনি
অপারগ, সে পশুটির গোশতই বা আপনি
গ্রহণ করবেন কীভাবে?
তাই আমাদের সবার উচিত,
কোরবানির পশুর প্রতি মায়া ও
মমত্ববোধ সৃষ্টি করা। পশুটিকে
আদরযত্নে নিজের সন্তানের মতো
করে ভালোবাসা। পশুর প্রতি অন্তরে

ভালোবাসা সৃষ্টি করা, অন্তর
থেকে পশুটিকে মায়া করলেই
মায়ার পশুটি কোরবানি দিয়ে
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হবে। এ
জন্যই কোরবানির পশুর যত্ন করা জরুরি।
কোরবানির পশুটিকে জবাই করার
সময়ও অতি আদর ও যত্নসহকারে জবাই
করতে হবে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ
সবাইকে দয়া করার হুকুম দেন, ‘তাই যখন
জবাই করো তখন দয়া করো। জবাই
করার আগে (যাতে পশুর কষ্ট কম হয়)
ছুরিতে ধার দিয়ে নাও।’ (সুনানে
নাসাঈ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৩)। এমনকি
তিনি পশুর সামনে ছুরিতে শান
দিতেও নিষেধ করেছেন। একদিন
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম দেখলেন, এক ব্যক্তি একটি
বকরিকে (জমিনে) শোয়ায়ে (জবাই
করার জন্য) তার সামনে ছুরি ধার
দিচ্ছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকটিকে
বললেন, তুমি কি পশুটিকে কয়েকটি
মৃত্যু দিতে চাচ্ছ? (পশুর কষ্ট বোঝাবার
জন্য) তুমি পশুটিকে শোয়ানোর আগে
ছুরিতে কেন ধার দিলে না?
(মুসতাদরাকে হাকিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা
২৩৩)। যখন পশু জবাই করবেন, তার আগে
অবশ্যই ছুরিতে ধার দিয়ে নেবেন,
পশুটি যেন কষ্ট না পায় সেদিকে
খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।

Leave a Reply