*বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম*

কি হবে আগামী বিশ্ব পর্ব

                                                                              –শাফিউল আলম

 

 

 


 

ঠকস ! ঠকস !! ঠকস !!! ঠকস !!!!

গভীর রাত্রে , ঘোড়ার পায়ের শব্দে বিদ্যুত বেগে চলছে এক যুবক । গভীর জংগল । মাঝে মাঝে গাছের ফাকে ফাকে বৃষ্টির পানি পরতেছে তার গায়ে । ঝিঝি পোকার শব্দ তো আছেই । পাতার ফাকে ফাকে , খাজে কাজে ,শুধু আকাশের হালকা আলো রাত্রিবেলায় আসছে । এই হল সেই জংগল যেই জংগল , এ মাঝে মাঝেই মারামারি কাটাকাটি হয় । দস্যূরা মাঝে মাঝেই ভদ্র মানুষদের রাস্তার পার্শে থেকে , ধরিয়ে নিয়ে  এসে এইখানেই নির্যাতন করে । আর মেয়েদেরও দেহব্যবসা চলে এই জায়গায় । কিন্তু জংগল টা অনেক বড় নয় শুধু , বিশাল বড় । তাই সে ভাবে কিছুই টের পাওয়া যায় না ।

 

ঘোড়া চলছে দুরুন্ত বেগে । বিশাল দৈত্বাকার দেহের অধিকারী অশ্বরোহী যুবক । পাহারের উচু তে ঘোড়া টা থামালো । কঠিন অন্ধকার ধু ধু এলাকা । ঘোড়া থেকে নামলো । হাতে কম্পাস । কোমরে তরবারী ।

পাহাড় এর উচু অংশের উপর এক পা তুলে দিয়ে , সামনে দিকে তাকালেন । দেখলেন নিচে অনেক নিচু জায়গা । শুধু পানি আর পানি । বৃষ্টি পরছে ।কঠিন বৃষ্টি । পরনে কালো প্যান্ট এবং সাদা শার্ট । চোখে থেকে সানগ্লাস সরিয়ে নিয়ে , পকেটে রাখলেন । পিঠের উপর তীর-ধনুক ।  এই সেই জংগল যেখানে মাওলানা উসমান এর মাথায় বাড়ি দিয়ে মুখে রুমাল পেচে তাকে অজ্ঞান করিয়ে ফেলা হয় । এরপর , কোন ভাবে তাকে ধরিয়ে গ্রেফতার করা হয় । চারপার্শে শেয়ালের ডাক ছিল তার সংগি ।

যুবক টিকে পিছন থেকে হাত দিল তার কাধে । পিছন ফিরে তাকালো । দেখল , অচেনা একজন মানুষ । চোখে সানগ্লাস লাগালো । এতরাত্রে , বৃষ্টির মদ্ধ্যে তাও আবার জংগলে , ধু ধু অন্ধকারের মদ্ধ্যে সে যে কিভাবে সানগ্লাস পরে আছে এইটাই ভাবা মুশকিল । কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল সূক্ষ্য ।সে অনুমান করলো কোন এক ডাকাত সর্দার তার সামনে দাড়িয়ে ।

যুবকটি বলল: কি চাই ?

হটাত লোক ধ্রাম করে এক লাথি মারায় পাহাড় থেকে সে পড়ে গেল । পানির মদ্ধ্যে । অনেক উচু থেকে সে এভাবে পরবে ভাবেনি । ধ্রাম করে পানির মদ্ধ্যে পরে যেতেই তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল । আর ঝড় ? সে তো বয়েই জলছে । প্রচুর জোড়ে বৃষ্টি আর ঝড় হতেই আছে ।

 

পরেরদিন রাত্রি বেলায়………….

 

ঠক ঠক ঠক ঠক ! হেটে আসছে কতোয়াল । তবে আজ সে একা নয় । সাথে একজন চাকর টাইপের লোকও আছে । মাওলানা উসমান এর রুম চেন্জ করা হয়েছে । নতুন রুম এ আছে শোয়ার ব্যবস্থা ।আছে নতুন মর্শাল । আর এই রুমের ছাদ রয়েছে । তাছারাও পার্শেই খোলা মাঠ । যা জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখা যায় । তখনও চলছিল ঝড় এবং বৃষ্টি । কতোয়াল সাহেব এসে টেবিলের উপর হারিকেন রাখলেন । এরপর সাথে থাকা লোক দু কা’প চা নিয়ে এসেছেন । এক কাপ রাখা হল মাওলানা উসমান এর সামনে ।

কতোয়াল সাহেব টেবিলে বসেই বললেন: আজকে আপনার যাওয়া রেডি ।

 

মাওলানা উসমান কিছুটা বুঝতে পারলেন না । হ্যাবলার মত চেয়ে আছে ।

 

কতোয়াল সাহেব বলল: আজকে আপনি আপনার বাড়ি থেকে ঘুড়ে আসুন ।

 

মাওলানা উসমান এবার সেরিয়াস মুডে , কতোয়াল সাহেবের দিকে তাকালেন । বললেন: বলেন কি ?

কতোয়াল মুচকি হাসলেন । বললেন: হ্যা । সব কার্য আমি করে রেখেছি । আপনার বিশ্বাসের জোড়ে আমি ছেড়ে দিচ্ছি । এর কারণ শুধু একটিই আপনি ইসলামের জন্য দাওয়াত প্রচার করেন । আপনাকে জেলে ফেলে রাখলে আমিও নতুন কিছু জানতে পারবো না । আপনি আজকে বাড়ি যাবেন , আর আপনার পোশাক নিয়ে আসবেন । যদি নিরাপত্তা চান তাহলে ভোর হওয়ার আগেই আসবেন । কোন কারণে যদি দেরি হয়  , সেটি আলাদা বিষয় । তবে দ্রুতই আশার চেষ্টা করবেন ।

 

মাওলানা উসমান খুশি হলেও , অনেকটা বেজার মুখ । একটু পর বললেন: সাহেব ? কিন্তু ভাবছি , বাড়িতে যাওয়ার পর সবাই যদি আমাকে চিনে ফেলে । তবে ?

 

কতোয়াল: আপনার বাড়িতে কে কে আছেন ?

উসমান: শুধু আমার স্ত্রী । সে এখন কোথায় আমি জানিনা ।

কতোয়ালের শরীর শিউরে উঠলো । একটু কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন । তারপর বললেন: কি বলব , আপনাকে নিখোজ থেকে মৃত পর্যন্ত ঘোষণা হয়ে গেছে কিছুদিন আগে । এখন প্রকাশ্য ভাবে আপনাকে কেও দেখলে এমনিতেই চমকে যাবে । আর অন্তত সরকারের এটি বলা উচিত ছিল , যে আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে , আপনি আইনি-হেফাজতে আছেন , তাহলে আপনার বাড়ির লোক অন্তত হেফাজতে থাকত । কিন্তু আফসোস , আপনি আপনার স্ত্রী কোথায় আছে সেটিও জানে না ।

 

মাওলানা উসমান ঝড় ঝড় করে নিরবে চোখ দিয়ে পানি ছাড়ল । কান্নার কোন শব্দ তার হয় না । তার বাবা-মা , স্ত্রী সবাই জানে গত এক মাসে মাওলানা উসমান মারা গেছেন । মাওলানা উসমানের চোখ মুছিয়ে দিল কতোয়াল । কতোয়াল সাহেব বলল: মাওলানা উসমান ? আপনার কথা শুনেই আমি এখন নামায কাযা করিনা । আপনাকে শুধু ছেড়ে দিচ্ছি আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতালার জন্য । আপনার সমপূর্ণ দায়িত্ব আমার হাতে । আমি চাইনা আপনি কষ্ট করে আপনার দাওয়াতী কাযের জন্য যে মস্তিষ্ক বানিয়েছেন , সেটি নষ্ট হয়ে যাক ! আপনার চেষ্টায় প্রশাসনিক যত সাহায্য দরকার আমি করবো । এতে আমার চাকরী থাক আর যাক ।

 

মাওলানা উসমান , কতোয়াল সাহেবের চোখ এর দিকে তাকিয়ে দেখলেন , এই চোখ মিথ্যা বলতে পারে না । তিনি তার হাত ধরে বললেন: আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক । আমিন ।

 

কতোয়াল সাহেব , ব্যগ থেকে বের করলেন ,  শার্ট, প্যন্ট এবং সাথে একটি ক্যাপ । এরপর টেবিলে রাখলেন । বললেন: এটা আপনাকে পরে নিতে হবে । কারণ , আপনার পরণের পান্জাবী , টুপি পরা দেখলে যে কেও আপনাকে চিনতে পারবে । তাই আপনার উচিত লেবাস চেন্জ করে , আপনাকে যেন দেখে মনে হয় , আপনি কোন একটি দুনিয়াবী চিন্তা চেতনার মানুষ ।

 

মাওলানা উসমান , পোশাকটির দিকে তাকিয়ে ভাবলেন: কিছু করার নেই কতোয়াল সাহেবের কথা ভুল নয় । এটি এখন আমাকে পরতে হবে ।

 

ড্রেস চেন্জ করে নিলেন মাওলানা উসমান । কতোয়াল সাহেব বললেন: আমার একজন লোক , এখানে থাকবেন । যিনি সবসময় বিছানায় শুয়ে থাকবেন যাতে বাহির থেকে দেখে মনে হয় উসমান সাহেব আছে এর মদ্ধ্যে । তাই আপনি না আশা পর্যন্ত এই লোক এখানেই শুয়ে থাকবে । আপনি আসবেন তারপর এই লোকের ডিউটি শেষ । তাড়াতাড়ি চলে যান এবং তাড়া তাড়ি আসার চেষ্টা করবেন । যদি কোন ক্রমে রাত্র শেষ হয়ে যায় আর আপনি যদি না আসেন তাহলে ভুলেও জেলখানার আশে-পাশে , দিনের বেলা আসবেন না । এতে প্রহরীদের চোখে পরে যাবেন । আসলে পরেরদিন রাত্রে আসবেন । মনে থাকবে ?

 

মাওলানা উসমান সম্মতি দিল হ্যা । মাওলানা উসমান কে েএকটি খন্চর দেওয়া হল । আর বলা হল: যদি কোন সময় দেখেন কোন দূঘটনা ঘটেছে সেখানে আপনার প্রাণ নাসের সম্ভবণা আছে সেখানে এটি ব্যবহার করবেন ।

মাওলানা উসমান , খন্চর দেখে তার নিজেরই গা শিউরে উঠল । তবুও হাতে নিয়ে পকেটে রাখল । সাথে কিছু মুদ্রা দেওয়া হল তাকে । মাথায় ক্যাপ , গায়ে , শার্ট এবং জ্যাকেট আর প্যান্ট । তাকে তুলে দেওয়া হল একটি ঘোড়ার উপর । জেলখানার ঠিক পিছনের দরজা দিয়ে তাকে বের করে দেওয়া হল । প্রহরীদের আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । মাওলানা উসমান কতোয়াল সাহেবের হাত ধরে বললেন: যদি আমার আসতে দেরি হয় , প্লিজ অপেক্ষা করবেন  , এমনটা ভাববেন না , যে আমি পালিয়ে যাবো ।

 

হাসলেন কতোয়াল । বললেন: পালিয়ে গেলে আপনি , আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন , আমার আমানত নষ্ট করলেন , আর তাছাড়াও  আপনার জীবন নিয়ে ঝুকিতে থাকবেন । হয়ত আমার চাকরী টা যেতে পারে । তবে আমি আপনার প্রতি  বিশ্বাস রাখি । চিন্তা করবেন না ।

 

টিপ টিপ বৃষ্টি আর ঝড় হচ্ছে । মাওলানা উসমান  ঘোড়ার উপরে হাক ছাড়লেন ।  ঘোড়া দৌড়ানো শুরু করলো । ঠক্কস ! ঠক্কস !! ঠক্কস !!! মাওলানা উসমান তার জায়গাটি অচেনা হলেও কতোয়াল সাহেব , খুব ভালোভাবে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন , কোথায় কিভাবে কোন রাস্তা খুজে বের করতে হবে। সাথে কম্পাস দেওয়া হয়েছে এবং ম্যাপ ও দেওয়া হয়েছে । মাওলানা উসমান চলতেই আছে কিন্তু তার মন পরে আছে অন্য জায়গায় । তার মন পরে আছে , কখন কতোয়াল সাহেবের আমানত পুনরায় সে ফিরিয়ে দিবে । অথ্যাত, সে আবার কখন জেলখানায় ফিরিয়ে গিয়ে কতোয়াল সাহেবকে চিন্তামুক্ত করবে ।  এই মন নিয়ে ছুটন্ত আশায় , দৌড়ান্ত ঘোড়ায় হাক ছাড়িয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন । মাথায় বৃষ্টি পরছে সেদিকে খেয়াল নেই তার ।

রাতের অর্ধেক টা পেরিয়ে গেল কিন্তু , তার , বাড়ির কাছে আশা হল না । কারণ সে এখনও অনেকদূর । পথেই পরে গেল ঠিক সেই জংগল যেই জংগলে তাকে ঠিক মাথায় আঘাত করা হয়েছিল । তার মনে হল , এই রাস্তা দিয়েই বেশ কিছুদিন আগে কোরআন শরিফের তাফসির মাহফিল করে আসছিলেন গরুর গাড়িতে চড়ে । আর ঠিক মাঝপথেই দস্যূর আক্রমন করে তার মাথায় আঘাত করা হয় । সেই জায়গাটিও চোখে পরল । ঘোড়াটিকে থামিয়ে দিলেন ।

ঘোড়া থেকে নেমে মর্শারের আলো জালিয়ে দেখলেন  , এখনও সেই রক্তের দাগ মিশে যায় নি । এত বৃষ্টি এত ঝড় তবুও যেন, সব , স্পষ্ট । হটাত সেখানে একটি কাগজ পাওয়া গেল । মাওলানা উসমান ঠিক ভুড়ু কুচকিয়ে দিলেন । সেখানে একটি চিঠি লিখা হয়েছে বলে তার মনে হল । ভেজা কাগজটি মেলানোর চেষ্টা করছেন । মাওলানা উসমান দেখলেন এই চিঠিতে তার রক্ত ভরে ছিল তাই লালচে হয়ে গেছে ।

মাওলানা উসমান চিঠি নিয়ে উঠে দাড়ালেন । কাগজটা মেলে দেখলেন , প্রশাসনিক কর্মকর্তান পক্ষ থেকে মাওলানা উসমান এর  মাথা ফেটে পা ভেংগে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মাওলানা  উসমান তার পায়ের দিকে তাকালেন । তার স্বরণ হল , তার পা ভাংগা ছিল । মাত্র কিছুদিন আগেই উনি সুস্থ হয়েছেন বটে । কাগজটাতে , রাজার সিলমোহর লাগানো । উসমান সাহেব একা একা বলতে লাগলেন: হতে পারে , এই চিঠি টি সেই পেটুয়াবাহীনির কাছেই ছিল , তারা আমাকে মারার পর এই স্থানেই তারা ফেলে রেখে গেছে । হতে পারে আমার অপেক্ষায় তারা এই খানে অপেক্ষা করতেছিল । আর যেই আমি আসলাম আর অমনি আমার ঘোড়াগাড়ি কে কেন্দ্র করে তারা হামলা করে । এর মানে হতে পারে , ঘোড়া গাড়ির মালিকও ওদের লোক হতে পারে ।

 

কাগজটি মুরিয়ে , উনি সামনে দিকে তাকালেন । দেখলেন ঘোড়া ঘাশ খাওয়া শুরু করেছে । মাওলানা উসমান ঘোড়ার পিঠে চোড়ে , পকেটে চিঠি টা রাখলেন । এরপর ঘোড়ার উপর হাক ছাড়লেন । এরপর গোড়া দৌড় দিতে লাগল । মাওলানা উসমান চিতকার দিয়ে বললেন:  এই জায়গার গাছ-পালা , পানি পর্বত শুনে রাখো “ইন্না কায়দাস শয়তানা কানা দয়িফা” শয়তানের চক্রান্ত দূর্বল । ওরা চেয়েছিল আমাকে শেষ করতে কিন্তু জেলখানাতের আল্লাহ তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন ।

 

এই বলে  কঠিন বেগে মনের খুশিতে ঘোড়া চালাতে লাগলেন । দষ্যূর এলাকা এই টা তবে মাওলানা উসমান , কে  , একজন দষ্যূর হাতেও পরতে হল না । আল্লাহ পা’ক এর রহমত থাকলে দ্বীন কায়েমের ক্ষূদ্রতম সৈনিক কে কে ঠেকায় । চলছে তো চলছেই কোন থামা থামি নেই । মাওলানা উসমানের সামনে ঠিক সেই পাহাড় পরে গেল যেই পাহাড়ে দাড়িয়ে জৈনক যুবক নদী দেখছিলেন । মাওলানা উসমান অনেক্ষন ঘোড়া দাবরানোর পর , ঘোড়া থেকে নামলেন । ঘোড়াও হাপিয়ে গেছে । মাওলানা উসমান লক্ষ্য করলেন ঘোড়া ,জরে জরে শ্বাস প্রশাস নিচ্ছে । তিনি দাড়িয়ে গেলেন সেই পাহাড়ের মাথার উপরে যেইখানে সেই জৈনক ব্যক্তি দাড়িয়ে গিয়েছিল । তাকিয়ে দেখছে , নিচে নদীর স্রোতের টান । গভীররাত্রে , কঠিন ঠান্ডায় বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে আজকের এই দৃশ্য প্রমান করে আল্লাহ পা’কের সৃষ্টি অপরূপ ।

মাওলানা উসমান নিচে তাকিয়ে আছেন । নদীর পানিটা ছিল সচ্ছ । নিচে থাকা পাথর গুলি পর্যন্ত আকার বুঝা যাচ্ছিল । হটাত পিছনে অনুরুপ কেও একজন হাত দিল । মাওলানা উসমান এর হাত দিতেই তার মনে হল , নিশ্চয় কোন অশূভ দষ্যূ অথবাকোন  সিনতা্ই কারী । হাতে খন্চর নিয়ে ফিছনে ফিরতেেই উসমান সাহেবকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য , হাত দিয়ে আঘাত করার উদ্দেশ্যে , হাত এগিয়ে নিয়ে আসে , ওমনি উসমান খন্চর দিয়ে ,উপরপৃষ্ঠ থেকে আসা হাতের উপর কোপ দেয় । সাথে সাথে চিতকার । শুনে মনে হল , কোন একটি মেয়ের কন্ঠ । উসমান অবাক হয়ে গেলেন । খন্চরটিকি সত্যই তার হাত দিয়ে সে মারল ? ! একটু গরু জবাই করতে , তার হাত কাপে । আর একটি মানুষের হাতে ঘুতো মারলো সে ? মাওলানা উসমান , নিজের কাছে খুব কষ্ট লাগল । ঘুতো খেয়ে চলে যাওয়ার  চেষ্টা করলেই , মাওলানা উসমান কাটা অংশে চাপ দিয়ে ধরে থাকলো ।যাতে সে কষ্ট পেয়ে দৌড়ানো বাদ দেয় । চাপ দেওয়া মাত্রই চিতকার আর আর্তনাদ শুরু হল । মাওলানা উসমান ভয়ের কন্ঠে বলে উঠল: কে ভাই তুমি ? আমাকে মারতে চেয়েছিলে কেন  ? কি ক্ষতি করেছি ?

 

লোকটি কান্না শুরু করে । মর্শালটি জ্বলিয়ে দেখলো এটি এক যুবতী মেয়ে । মাওলানা উসমান দেখা মাত্রই হাত ছেড়ে দিল । এবং ইসতেগফার পড়লো । তার নজড় উপর দিকে তুলে সে বলল: কে তুমি ?

 

সে উঠতে চাইলেও আর উঠতে পারল না । হাতের ব্যথায় শেষ মেষ তাকে বসে থাকতেই হল । মাওলানা উসমান তার পর্দার আয়াত মনে হওয়া মাত্রই মেয়েটির চেহারা থেকে সে মর্শাল সরিয়ে নিল । আল্লাহ সোবহানাহুওয়াতায়ালার আদেশ , তোমারা তোমাদের চোখ কে হেফাজত করো পর পুরুষ এবং নারী হতে ।

 

মাওলানা উসমান এবার বললেন: আমিজানিনা , আপনি কে । তবে আমার উপরে কেন হামলা চালিযেছেন ?

মেয়েঠি উঠে দারায় । বলল: এই পর্বতের পার্শে অনেক পথিক  রাত্রিবেলায় , নিজের অজান্তে , এইখানে সুন্দর জায়গা পেয়ে দারিয়ে যায় । আমরা তাদের পকেট লুট করে , তাদের ঘোড়াতে যা আছে সব লুট করে তাকে ফেলে দিই নদীতে ফেরে দেয় তা না হলে , সে রাজ দরবারে অভিযোগ করে আমাদের এই সুযোগ হাতিয়ে নিতে পারে ।

 

মাওলানা , উসমান বুঝতেই পারলেন , এর সাথে রাজা মোসাই খুব ভালো ভাবেই জড়িত । কতোয়াল সাহেব থাকলে এইখানে ভালো ামনের একটি সহযোগিতা উনি করতে পারতেন । মাওলানা উসমান বললেন: তুমি  কে আমি জানিনা । আর জানতেও চাই না । বেপর্দা নারীদের সাথে কথা বলা আমার আর্দশের বাহিরে । তবে মনে রেখ , যত গুলো মানুষ কে মেরে ফেলেছ , এর হিসাব তোমাদের দিতে হবে । আসি আল্লাহ হাফেজ !

 

মাওলানা উসমান নিজের ঘোড়ার উপরে উঠলেন ।অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছিল , মেয়েটা তার দিকেই হয়ে আছে । পকেট থেকে , কতোয়াল সাহেবের দেওয়া একটা মোহরের পুটলি মেয়েটির দিকে ছুড়েমেরে বললেন, ডাকাতি ছেড়ে ভাল হয়ে যাও । শয়তান মেয়েদের কে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করে খারাপ কাজ করার জন্য । এর ভিতর অনেক অর্থ আছে ,  তোমাকে দিয়ে দিলাম এটি দিয়ে হালাল কিছু করে খেও । আল্লাহ হাফিজ !

 

মেয়েটি দাড়িয়ে থাকলো পুটলি হাতে নিয়ে । মাওলানা উসমান , ঘোড়ার উপর হাক ছাড়লেন । বিদ্যূত বেগে ঘোড়া ছুটতে আছে । মাওলানা উসমান মনে মনে ভাবলেন মেয়ে মানুষও ডাকাতিই করে ? আমাদের দেশ কতটা নিচু ? দুনিয়াতে আর কত টি দেখব ? হূর্ফ !

 

পাহাড় থেকে নিচের রাস্তায় আসতে আসতে , দেখলেন একটি সাদা ঘোড়া দারিয়ে । লোকনাই জন নাই হটাত একটি সাদা ঘোড়া নদীর পার্শে দাড়িয়ে আছেন । এতসুন্দর ঘোড়া কোথা থেকে এলো । তিনি নিজের ঘোড়া থেকে নামলেন । টপ টপ করে বৃষ্টি হচ্ছে ।মিটি মিটি পায়ে হাটতেছেণ । একদম ঘোড়াটির কাছে গেলেন মাওলানা উসমান । দেখলেন ঘোড়াটি দাড়িয়ে আছে । মাওলানা উসমান ঘোড়াটির সামনে দাড়িয়ে আছে এটি মনে হয় , ঘোড়া খেয়ালই করেনি ।

 

মাওলানা উসমান , চেয়ে রইলেন ঘোড়াটির দিকে । এতসুন্দর ঘোড়াটি । কিন্তু লক্ষ্য করলেন ঘোড়াটির চোখে পানি । মাওলানা উসমান খুব কষ্ট পেলেন । তিনি ঘোড়াটির  মাথায় হাত দেওয়া মাত্রই ঘোড়াটি ঝাকি দিয়ে উঠল । চোখে পানি আর মায়াবী চোখে জ্বল জ্বল করে তাকিয়ে আছে । একটি চুম্বন করলেন ঘোড়াটির মাথায় । তিনি বুঝার চেষ্টা করলেন ঘোড়াটির কি হয়েছে । ঘোড়াটি , মাওলানা উসমান এর সামনে বসে পরে গেল ।  ঘোড়াটি নদীর দিকে তাকিয়ে আছে । মাওলানা উসমান নদীর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন , আসলে সে কি দেখছে?

 

নাহ! কিচ্ছু বোঝা যায় না। এবার মর্শাল জালালেন , দেখলেন, হটাত , একটা মানুষ নদীর স্রোতে ভেষে এসে একটি পাথরের উপর ভেষে আছে । এটি দেখেই মাওলানা উসমান ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন । দেখলেন , ঘোড়াটি ঠিক ঐ দিকেই তাকিয়ে আছে । মাওলানা উসমান , তাকিয়ে ঘোড়াটির চোখ মুছিয়ে দিলেন । এরপর নদীতে তিনি নামলেন । নদীর স্রোতে তার টিকে থাকা কঠিন মনে হয় । তবুও জান বাজি রেখে ঝাপ দিলেন । পাথরের উপর আটকিয়ে থাকা লোকটির উপর লক্ষ্য করে দেখলেন এটি একটি যুবক । মাওলানা উসমান , তাকে টেনে নদীর কিনারায় নিয়ে আসলেন । নিয়ে আসার সাথে সাথে ঘোড়াটি তার কাছে আসলো । এবং যুবকটির মুখ চাটতে লাগলো । মাওলানা উসমান বুঝতে পারলেন , এটির জন্যই মূলত ঘোড়াটি এইভাবে দাড়িয়ে ছিল ।

মাওলানা উসমান নদীর ঠান্ডা পানির সাটা ,  যুবকটির চোখে দিলেন ।দু একবার সাটা দিতেই ছেলেটি লাফ দিয়ে উঠে কোমর থেকে তরবারী বের করে মাওলানা উসমানের উপর কোপ দেওয়ার চেষ্টা করতেই তার ছোটখন্চর দিয়ে আটকিয়ে ফেলল মাাওলানা উসমান ।

পুনরায় উল্টিয়ে , ঘুড়িয়ে তরবারী দিয়ে আরেকটি আঘাত করার চেষ্টা করতেই মাওলানা উসমান সরে গেল তার কোপ টি বৃথা হল । মাওলানা উসমান সরে যাওয়াই , যুবক টি তলোয়ার ফিকে মারলো । মাওলানা উসমান ভয় পেয়ে চিতকার দিয়ে , আল্লাহুয়াকবার বলল । আকাশ বাতাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল । কাছের উপরে থাকা পশু পাখি যেন তাদের ঘড়  ছেড়ে এই মদ্ধরাত্রিতে উড়িয়ে গেল ।

মুহুর্তের মদ্ধ্যে জোড়ে একটা বাতাস আসলো । চোখ খুলল মাওলানা উসমান । দেখলো ছোট একটি খন্চর সে ধরে ছিল ছুটে আসা তরবারী কে তাক করে । নিচে তাকিয়ে দেখল , সেই তরবারী টি দুই ভাগ হয়ে পরে আছে ।

যুবকটি অবাক হয়ে গেল ।

মাওলানা উসমান নিজেও অবাক না হয়ে পারলনা । তার কোন প্রশিক্ষন নেই যুদ্ধের উপর , অথচ , এত বিশাল একটা কাজ সে করে ফেলল । ছুটে আসা তরবারী মাওলানা উসমান এর খন্চর এর কাছে , দু’ভাগ  হয়ে গিয়েছে । সত্যই তিনি ভয়ে চিতকার দিয়েছিলেন আল্লাহুয়াকবার বলে । মুখটা সামনে দিকে তাকাল । খন্চর টি নামিয়ে বলল: আমাকে কেন মারছো ?

 

যুবকটি ঘুরে দৌড়ে এসে লাথি মারার চেষ্টা করলে মাওলানা উসমান সরে গেলেন । লাথি টা লাগলো গাছের উপরে । অমনি , যুবকটার পায়ে ভালই ব্যথা পেল । এবার সে থেমেছে । আর্তনাত সুরু করেছে ।

 

মাওলানা উসমান বললেন: আমি তোমাকে বাচালাম আর তুমিই আমার গলায় ছুড়ি ধরতেছ বাহ !

 

যুবকটির স্বরণ হল , সম্ভবত এই লোকটি তাকে বাচিয়েছে । সে বলল: তুমি আমাকে পাহাড় খেকে ফেলে দিয়েছো । আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেরেছিলাম ।

 

মাওলানা উসমান বুঝতে পারলেন । বিষয়টা কি । তিনি বললেন:আমি জানিনা কে তোমাকে , ফেলে দিয়েছে । আমার সাথেও এমনি হলে আমি বেচে যাই । আমি জানিনা কে তুমি । তোমাকে মারার প্রশ্নই উঠেনা । পথে চলতে চলতে ঘোড়াটির চোখে পানি দেখে আমি আমার ঘোড়া থামিয়ে ফেলি । এরপরেই , তোমাকে বাচানোর চেষ্টা করি আমি । বাচানোর পরে তুমিই আমাকে মারার চেষ্টা করলে । আমি তোমাকে বুজাতে চেষ্টা করলাম আমি তোমাকে মারতে আসিনি । কিন্তু তুমি আঘাত করার চেষ্টায় ছিলে তার পরেও । তারপর আরকি  ? প্রথমে তোমার তরবারী অর্ধেক হয়ে গেল এরপর ‍তোমার পায়ে ব্যথা পেলে !

 

যুবকটি শান্ত হল । খোড়াতে খোড়াতে , উঠে দাড়ালো । কোমড় থেকে একটা পুটলি বের করে বলল: এর চাইতে বেশি কিছু তোমাকে আর দিতে পারবো না ।

মাওলানা উসমান হাসি দিলেন । বললেন: তোমার কোন প্রতিদানের জন্য , আমি তোমাকে বাচাইনি । প্রশংসা সেই আল্লাহ পা’কের জিনি দয়া করে , তোমাকে বাচিয়েছেন ।

যুবকটি পুটলি আরেকটি বের করে বলল: বুঝেছি কম হয়ে গিয়েছে । এটি নাও ।

মাওলানা উসমান মুচকি হাসি দিয়ে বললেন: প্রয়োজন নেই ।

 

যুবকটি একটু অবাকহয়ে গেলেন । মর্শাল জলিয়ে মাওলানা উসমানের মুখ টা দেখলেন । ভাবলেন চেনা চেনা লাগছে । পরক্ষনেই মনে করলেন না অচেনা হতে পারে ।

মাওলানা উসমান বললেন: আল্লাহ হাফিজ।

এইবলে চলে আসতেই যুবকটি পিছন থেকে হাত দিতেই হাতটা ধরে একটি মুচর দিলেন উসমান । বললেন: এই পিছন  থেকে হাত দেওয়াই হতে পারে আমার মিত্যূর কারণ ।

যুবকটি বলল: আসলে আপনাকে মনে হয় আমার খুব পরিচিত মনে হয় ।

মাওলানা উসমান বুঝে উঠলেন , আর একটু পরিচয় দিলেই হয়ত চিনতে পারবে । কিন্তু তিনি পরিচয় গোপন করলেন । বললেন: আমি ভারত থেকে এসেছি এক ব্যবসায়ী ।

 

লেবাস দেখে যুবকটি আসলে চিনতে পারল না । মাওলানা উসমান যদি তার আসল লেবাসে আসতেন তাহলে নিশ্চয় চিনতে পারত এটি তার সামনে দাড়িয়ে আছে মাওলানা উসমান ।

উসমান সাহেব বললেন: আজ বিদায় । আল্লাহ হাফিজ ।

 

যুবকটি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলনা । মাওলানা উসমান নিজের ঘোড়ায় চরে হাক দিলেন । চলতে শুরু করলো ঘোড়া । যুবকটি চেয়ে রইল । থাকতে থাকতে অদূশ্য হয়ে গেলো বৃষ্টির মাাঝে ঘোড়াটি । মাওলানা উসমান , কঠিন বেগে ঘোড়া টান দিলেন । বাতাসের শব্দ তার কানে প্রচুর জোড়ে শোনা যাচ্ছে । বাতাসের এই কঠিন শব্দে যেন , বৃষ্টির শব্দ লুকোচুরি খেলছে ।

মাওলানা উসমান , এর মাথায় অনেক চিন্তা আজকের রাত নিয়ে । যে কোরেই হোক আজকের রাতের মদ্ধ্যে তাকে বাড়িতে পৌছতেই হবে । ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই । প্রায় ২ঘন্টার রাস্ত্রার পর সে তার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে গেল । তার বাড়িটি ছিল মাটির । বিশাল বাড়ি । তবে থাকতো শুধু তিনি আর তার স্ত্রী ।

মূলত এই বাড়ীটি মাওলানা উসমান এর বাবা কিনেছিল । সেই সূত্রেই মাওলানা উসমানসাহেবের আওতায় , বাড়িটি এখনোও আছে । বাড়ির গেট টি ছিল লোহার । ছোট্ট গেট তবে মজবুত ছিল  । গেট টি তে নক করলো । কেও নেই । প্রচুর ঝড় হচ্ছে । শব্দও প্রচুর । বেশিক্ষন দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই । মাওলানা উসমান মনে মনে ভাবলো , এতদিন যাবত তিনি নিখোজ সুতরাং তার স্ত্রী এইখানে থাকার কথাও নয় । কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন ভিতর থেকে লাগিয়ে দেওয়া । তখন তার মনে হল , অবশ্যই ভিতরে কেও থাকবেন । উনি জোরে জোরে ঠক ঠক করতে লাগলেন । এদিকে গা ভিজে শেষ হয়ে গেল । ঝড় আর বিজলীর কঠিন শব্দে কান তালি মেরে যাচ্ছে ।  জোড়ে জোড়ে ঠকঠকানোর পরেও কেও নাই । মাওলানা উসমান এর মনে হল বাড়ির পিছনের একটি দরজা আছে এই দরজা বাহির থেকে তালা দেওয়া থাকে আর এই তালার চাবি শুধু তার কাছে আর তার স্ত্রী ব্যতীত কারোও কাছে থাকে না । উনি সেখানে গেলেন । পান্জাবির পকেটে চাবিটি ছিল । ডেস চেন্জ করার সময় সেটি তার সাথে নিয়ে এসেছিলেন । চাবিটি বের করে , উনি , ভিতরে ঢুকলেন এবং ভিতর থেকেও লক করলেন । দেখলেন প্রতিটি ঘড়ের দরজায় তালা খোলা । মনে হয় কোন লোক আছে । প্রতিটি ঘড় ঘুড়ে দেখলেন কোন লোক নেই । তার স্ত্রী বেচে আছে না মরে গেছে তাও বুঝার উপায় নেই ।এক ঘড়ে নিচ তলায় বাতি জলানো দেখলেন । সস্তি পেলেন । দেখলেন হারিকেন জলানো । হারিকেনের আলোটি বাড়ালেন । কিন্তু না ঘড়ে কেও নেই । মাটির পাতিলে ভাত । উনি ভাবলেন হয়ত তা স্ত্রী এখনও আছেন । কিন্তু এতরাত্রে সে গেছে কোথায় ? নাকি তার বাড়ি কেও দখল করেছে ? কোনটা ! চিন্তায় কান গরম হয়ে গেল । মাথা কিছু কাজ করতেছেনা । ঘন্টাখানেক বসে থাকলো । নাহ কেও আসেনা । পাতিলে ভাত খুদাও লেগেছে কিন্তু , খাওয়ার মন মানষিক তার নেই । উঠে দাড়ালেন । বিছানায় বসে পরলেন । একটু পর শুয়ে পরলেন । চিন্তায় ঘুম আসছেনা। কি করা যায় ভাবতেছেন । কিছুক্ষন পর উঠলেন আবার বসলেন । আবার ঊঠলেন ।

কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলেন । নাহ ! আর ভালো লাগছেনা । এবার তিনি বলেই ফেলল: মনে হয় চলেই যাই । থেকেও লাভ নেই ।

 

কিন্তু হটাত মনে হল , সারা বাড়িতে যদি কেও নাই ই থাকে তাহলে গেট কেন ভিতর থেকে লাগিয়ে দেওয়া ?

আবর মনে হলো আরেকটি গেট তো বাহির থেকে লেগে দেওয়া ।

আবার মনে হল , কেও যদি না থাকে তাহলে পাতিলে ভাত কেন ?

পাতিলের ভাত হাতে নিয়ে শুখলেন । দেখলেন এটি মাত্র কিচুক্ষন আগের রান্না করা খাবার ।

মাওলানা উসমান মাটির সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলেন । দেখলেন প্রতিটা রুমেই অন্ধকার ।প্রতিটা রুমেই তালা । মাত্র একটি রুমে বাতি জলতেছে । মাওলানা উসমান হারিকেন নিয়ে সেদিকে গেলেন । বৃষ্টির শব্দে বোঝা যাচ্ছিল না রুম থেকে কেও একজন কথা বলতেছে ।  মাওলানা উসমান একটু আতংকেই পরে গেলেন । এত রাত্রে বৃষ্টি আর ঝড়ের মদ্ধ্যে সারা বাড়ি ফাকা আর একটা রুমে আলো জলা দেখলে ভয় পাওয়ো স্বাভাবিক । আসতে করে উনি চলে গেলেন । হালকা নজর দিয়ে দেখলেন তার স্ত্রী নামাযে মুনাজাত করছেন । তাহাজ্জুদ নামায আদায় করছিলেন । মাওলানা সাহেবের চোখ ভিজে গেলেন । বিয়ের পরে তার স্ত্রী কে সে তাহাজ্জুদ  নামায পরার জন্য মাঝরাত্রে চোখে পানি ছিটিয়ে দিতেন আর বলতেন উঠো।

 

এখনো সেই ধারাবাহিকতা চলছে ।

 

মাওলানা উসমান কাছে গেলেন । তার স্ত্রী দোয়া করছে  “আয় আল্লাহ তায়ালা আমার স্বামীকে তুমি ভালো রেখো ।জালিমদের তুমি হেদায়াত দাও আর না হয় , ধ্বংস করে দাও ”

বেশ লম্বা সময় মোনাজাত করতেছিলেন তার স্ত্রী । মাওলানা উসমান নিজেও যখন মুনাজাত করতেন তার মুনাজাতে মানুষের চোখে পানি এসে যেত । কঠিন মুনাজাত করতেন ।

তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তিনি মৃদ্যূ হাসলেন । মুনাজাত শেষ হলে মাওলানা সাহেব ডাকলেন: আসিফা !

 

তার স্ত্রী প্রথম ডাকে পিছু হলেন না । তিনি আবার ডাকলেন: আসিফা !

তার স্ত্রী উঠে দাড়িয়ে পিছন ফিরলেন আর সাথে সাথে দেখেই চমকে উঠলেন । প্রথমত এত রাত্রে একজন পুরুষ মানুষ তাও আবার একা বাড়িতে । মাওলানা উসমান এর লেবাস দেখে ঠিক চিনতে পারেনাই তার স্ত্রী ।

 

তার স্ত্রী একটু ভয় পেয়ে সরে গেল । বললেন: আপনি বাড়িতে কিভাবে ঢুকলেন আর কি চাই ? আমর ঢোকার আগে আপনার পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল ।

 

মাওলানা উসমান বললেন: আ’সিফা আমি উসমান ।

 

আসিফা আতংকিত হয়ে বলল: কিহ ? এই মুহূর্তে বেড়িয়ে যান। তামশা করার জন্য ঘড়ে ঢুকেছেন ? আল্লাহর দোহাই বেড়িয়ে যান । আমার হাসবেন্ড গত একমাস আগেই ইন্তেকাল করেছেন ।

 

মাওলানা উসমান তার স্ত্রীর হাত ধরে বললেন: কি হয়েছে আপনার  ? আমাকে চিনতে পাচ্ছেন না ? আমি উসমান ।

 

এবার হাতের হেরিকেন নিজের মুখের উপরে ধরলো মাওলানা উসমান ।

এখন কি অবস্থা হবে ভাবুন । এক মাস আগে একজন লোক ইন্তেকাল করেছে জানার পর তার সামনে যদি ১মাস পরে একলা বাড়িতে বৃষ্টি-ঝড় এর মদ্ধ্যে দেখা গেলে একজন মানুষের কেমন লাগবে ? নিশ্চয় ভয় লাগবে এটিই স্বাভাবিক । তার স্ত্রী ভয়ে চিতকার দিয়ে উঠলেন । মাওলানা উসমান হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বললেন: চুপ করুন প্লিজ !

 

তার স্ত্রী হাত সরিয়ে নিয়ে সুরা নাস আর সূরা ফালাক পরা শুরু করে  দিয়েছে । মাওলানা উসমান বললেন: কি করতেছেন আপনি ? মাথা ঠিক আছে ?

 

এটা বলার পর সে আরও জরে সুরা পরতে থাকলো । কারণ তার ধারনা তার সামনে কোন জ্বীন বা ভুত কিছু একটা দাড়িয়ে আছে । ২ বার পরে ফু দেওয়ার পরেও কিছু হয় না । এবার মাওলানা উসমান তার মুখে হাত দিয়ে বলল: থামুন !

 

আসিফা থেমে গেল । বলল: সত্যি করে বলুন তো আসলে আপনি কে ? এত রাত্রে কি চান ? আপনি আমার স্বামী নন এটা আমি শিউর । পরিচয় গোপন করে একজন পরস্ত্রীর ঘড়ে ঢুকতে লজ্জা করা উচিত ।

 

মাওলানা উসমান নিচের ক্যাপ খুলে ফেললেন । এবার চশমাও খুলে ফেললেন । উসমান  সাহেব বললেন: আসিফা ! কি হয়েছে আপনার ? জলজ্যান্ত রক্তে মাংসে গড়া মানুষ সেই উসমান আপনার সামনে দাড়িয়ে আছি । মিত্যূর ফয়সালা তো আসমানে হয় । যমিন থেকে নয় ।

 

আসিফার যেন তাও বিশ্বাস হল না । তিনি বললেন: আমার স্বামী মারা গিয়েছে । আপনাকে আমি স্বামী রূপে গ্রহন করতে পারিনা । আপনি আসতে পারেন ।

 

উসমান সাহেব বললেন: তুমি কি আমার চেহারা দেখতে পাচ্ছ না ? আমি এক মাস জেলে আটকা ছিলাম । আমাকে দষ্যূরা ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে দিয়েছিল । তখন আমার পা এবং মাথা ফেটে গিয়েছিল । মাত্র আজ কতোয়াল সাহেব আমাকে দয়া করে আমার বাড়িতে আসতে দিলেন । তুমি এতদিন একা একা বাড়িতে পরে থাকবে এটাও আমার জানার বাহিরে । আমাকে প্রচার করা হয়েছে আমি নাকি মরে গেছি । আমি নাকি নিখোজ ।

 

আসিফা ঢোক গিলে বলল: আমি অনেক আগে থেকেই জানি আমার স্বামী মারা গিয়েছে । আপনি আসতে পারেন ।

 

উসমান সাহেববললেন: তুমি মিডিয়াকে বিশ্বাস করো ? কেন ? ‍তুমি কি জানোনা প্রশাশনিক বাহীনি তোমার সামনে অপ্রপার চালাত ? তুমি তো আমার সামনেই বসেসেই নিউজ গুলো পরেছো  পত্রিকায় ?

 

তার স্ত্রী এবার কিছুটা  হালকা হয়ে গেল । কিন্ত বুকের ধুকপুক এখনো আছে । নিজের হাতে ছুয়ে দেখলেন সত্যেই কি এটা তার স্বামী ?!  হ্যা সত্যই তো ।

 

উসমান সাহেব বললেন: তুমি কি আমার লাশ দেখেছ ?

তার স্ত্রী বললেন: না ! কিন্তু কিভাবে …

এটি বলতেই মুখে হাত দিলেন মাওলানা উসমান ।  বললেন: আসিফা ! অনেক হয়েছে , এবার নিচে চলো । আমি অনেক ক্লান্ত ।

 

তার স্ত্রী পিছু পিছু গেলেন । আর মাওলানা উসমান আগে আগে গেলেন । প্রকৃত অর্থে , উপন্যসটির মাধ্যম্যে বুঝানো হয়েছে , আল্লাহ পা’কের দ্বীন কায়েমের জন্য  আপনি যাই ত্যাগ করুননা কেন আপনাকে বুঝতে হবে  উপরে আল্লাহর উপরে ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে ।

*জীবন চলে যাবে তাতে কি হয়েছে ? আপনার স্ত্রী চলে যাবে ? তাতে কি হয়েছে ? জান্নাতের ভিতরে , হূর দের ভিতরে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালার , আদেশে হুরদের  চেহারায় আপনার স্ত্রীর মত হয়ে যাবে । সুতরাং দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনের জন্য , কখনোও নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আল্লাহ পা’কের দ্বীন কে বিজয়ী করার চেষ্টা ছাড়বেন না । আজকে ক’জনের স্ত্রী আছে মধ্যরাত্রে নামাযে স্বামীর জন্য কাদে? কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম এর স্ত্রীগন তাদের জন্য কাদত । সেটিই ছিল আর্দশবান স্ত্রী । *

 

 

মাওলানা উসমান , হাটতে লাগলেন, উঠানে দাড়িয়ে তিনি বললেন: বৃষ্টি হচ্ছে , আপনি খাবার রেডি করুন আমি গোসল করবো ।

আসিফা প্রশ্ন করলেন: এত রাত্রে ?

মাওলানা উসমান মুচকি হেসে বললেন: কিচ্ছু হবেনা যাও ।

 

তার স্ত্রী ঘড়ে প্রবেশ করলো । আর মাওলানা উসমান , দাড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করলেন । তাকিয়ে দেখলেন উঠানের একটি চালের নিচে , ঘোড়া , আশ্রয় নিয়েছে বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য । মাওলানা উসমান , গরুর খাবার খর নিয়ে  এসে ঘোড়ার পায়ের নিচে , দিয়ে দিলেন ।ঘোড়াটি তার উপর বসলো ।

উসমান সাহেব মেঝেতে শুয়ে পরলো । আকাশ থেকে মুষূর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । মাওলানা উসমান বললেন:

আয় আল্লাহ , বাদশা কে ফকির আর ফকির কে বাদশাহ বানাও তুমি । তোমরই গোলামি করি,তোমিই আনুগত্য স্বীকার করি । হে আল্লাহ , তোমাকে ভুলবোনা ।

হে আল্লাহ আমি তোমাকে ডাকছি তুমি আমার ডাকে সাড়া দাও আল্লাহ !

 

এদিকে , তার স্ত্রী ডাকছে তার সে খেয়াল নেই । আল্লাহর বান্দা আসমানের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল হয়ে গিয়েছেন । থপ্পস করে েএকটি শব্দ হল । গালে একটি টমেটো মেরেছে তার স্ত্রী । মাওলানা উসমান লাফ দিয়ে উঠলেন বললেন: কি হল হাসছেন কেন ?

 

আসিফা হাসছিলো উসমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে । সে বলল: আপনাকে ডাকছিলাম । কিন্তু অপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন । তাই গালে টমেটো মারলাম ।

 

মাওলানা উসমান হাসি দিলেন । শরীরটা মুছে ড্রেস চেন্জ করে কেতে বসলেন । তার স্ত্রী হারিকেনের আলো বাড়িয়ে দিল ।থাল দিয়ে বাতাস করছিলেন তাকে ।

 

উসমান সাহেব বললেন: আসিফা ?

আসিফা: হু!

উসমান: আপনি এখনো আমাকে একটি প্রশ্ন করেন নি ?

আসিফা একটু অবাক হয়ে বলল: আমি তো এখনোও বিশ্বাশই করতে পাচ্ছিনা যে আপনি বেচে আছেন ।

 

মাওলানা উসমান চুপ করে খাবার খেতে লাগলেন ।

 

আসিফা বলল: আপনি কি সত্যই উসমান ? নাকি আমি ভুল করছি !

উসমান সাহেব একটু হেসে দিলেন । বললেন: যেটা ভাবেন ।

 

আসিফা চুপ করে থাকলো । উসমান সাহেব বললেন: আমাকে গ্রেফতার করেছিল ,  সরকারের পেটুয়াবাহীনি আল্লাহর লানত ওদের উপরে , যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সহজ রাস্তা কে বক্র করে দেয় । আমিেএখনও বেচে আছি । আল্লাহ তায়ালা আমাকে বেচে রেখেছেন । কিন্তু আমার ধারণা ছিলনা , যে তুমি এইখানে থাকবে ।

 

আসিফা একটু অবাক হয়ে গেল । বলল: তাহলে কোথায় থাকবো ?

উসমানসাহেব বলল: না আসলে বিষয়টি তা নয়। আমি ভেবেছিলাম তুমি এখন তোমার বাবার বাড়ি আছো । তোমার ভয় করেনা একা বাড়িতে ছিলে ?

 

আসিফা একটু চুপ থেকে বলল: একা আছি বলেই দিন রাত আপনার জন্য দোয়া করতে পারতাম আল্লাহ তায়ালার কাছে ।

 

উসমান:- আপনি যে দোয়া করলেন , আল্লাহ আমার স্বামীকে পরকালে ভালো রেখো , কিন্তু আমিতো মরিইনি তাতেই এই দোয়া ।!

 

আসিফা প্রায় একটু হেসে দিল । বলল: আমি তো জানিনা সেটি ।

 

উসমান:- আমি যদি বলি , আমি জ্বীন মানুষের রূপ ধরে এসেছি ।

আসিফা , একটু ভয় পেয়ে তাকিয়ে থাকলো । বলল:- মানে ?

উসমান হেসে আবার খাওয়া শুরু করলো । আসিফা আবার স্বাভাবিকহতে চেষ্টা করলো । উসমান বলল: আমিযদি, জ্বীন বা শয়তান হতাম , তুমি যখন সূরা নাস এবং ফালাক পরলে আমাকে দেখে , তখনই তো কিছু একটা হওয়ার কথা । তবুও কি সন্দেহ দূর হয় না আমি আসলে কে?

 

আসিফা এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল: নাটক বহু দেখলাম এবার খাবার খান ।

 

খাবার শেষ করে ,বিছানায় বসলেন , মাওলানা উসমান । শুয়ে পরলেন । এবপর বললেন: মাত্র কিছু সময় নিয়ে এসেছি ,আবার ফেরত চলে যাবো ।

 

আসিফার এটি শুনে বেশ খারাপ লাগলো । উসমান সাহেবের দিকে তাকালেন । বললেন: প্লিজ আপনি থাকুন ।

উসমান সাহেব মুচকি হাসলেন : বললেন থাকলে আমি ধরা পরে যাবো । আমি যে আসলাম এটা কাওকে জানাবেনা ।কেও যদি প্রশ্ন করে  অবশ্য করবেও না । কারন সবাই জানে ,  আমি মারা গিয়েছি । আমার মা এর কি অবস্থা তার সাথেই আগে দেখা করা উচিত ছিল ।

 

আসিফা আশাহীন হয়ে বলল: তিনি  তা আপনার মা ! চিন্তা কি নেই তার ? কি বলতে চান ? কষ্ট তো হয় । আমার মনে হয় তার সাথে দেখা করা উচিত ।

উসমান: না আসিফা । তার সাথে দেখা করলে সে হয়ত আসতে দিবেনা। একদিন ,  সে ঠিকই জান তে পারবে । হয়ত , সেদিন অনেক দেরি হবে জানতে  । আমি বিশ্বাস করি কারাগার থেকে বের হবার মত এমন একদিন আসবে । যতই কাফের মুশরিকরা আমার স্বরযন্ত্র করুক না কেন । আমি বেশি না একটা মাহফিল যদি করতে পারি সরকারের খবর আছে এটা জেনে রাখো ।

 

আসিফার চোখে জল । মাওলানা উসমান চোখটি মুছে দিয়ে বললেন: আমি আবার আসবো চিন্তুা নেই ।তবে জানিনা কবে আসবো । আপনি সারাক্ষন এই বাড়িতে থাকেন ভয় করে না ?

 

আসিফা বলল: আমার মা এখন এখানে থাকে তবে রাত্রিবেলায় থাকেনা । কালকেও আসবেনা ।

মাওলানা উসমান বললেন: তাহলে সারাদিন  আমাকে এইখানেই থাকতে হবে , কারণ আজ পুনরায় রওয়ানা দেয়ার মত , সময় আর নেই , আর দিনের বেলা বের হওয়া যাবেনা , এতে ,মানুষ চিনে ফেলবে ।

 

আসিফা এবার কিছুটা খুশি । মাওলানা উসমান হাসলেন । বললেন: আসিফা ?

আসিফা: হু ?

উসমান: তুমি কি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামায আদায় করো ?

আসিফা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললেন: হু ।

 

একটু পর বললেন: কেন আপনি পরেননা ?

উসমান সাহেব বললেন: নাহ । আমাকে যেই রুম এ রাখা হয়েছিল এতদিন সেখানে থাকাই যাইতো না মুয়ে বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে গেছে । তাহাজ্জুদ তো দূরের কথা ঘুমানোও ঠিক ভাবে যায় না । আর তাছাড়াও আমার পা দীর্ঘদিন যাবত ব্যান্ডেস অবস্থায় ছিল । জানো ?

 

আসিফা একটু কেপে উঠলো । বলল: ওরা আপনাকে মেরেছে ?

উসমান: আলহামদুল্লিাহ , জেলের ভিতের কেও আমার সাথে খারপ ব্যবহার করেনি । তবে , যখন আমকে তুলে নিয়ে যায় তখন আমার মাথায় আঘাত দেয় । এবং অজ্ঞান করে ফেলে । এর পরে এই অবস্থায় প্রচুর পেটায় । এটা আবার ধারণা । তা না হলে আমার পা ভেংগে যেত না ।

 

আসিফা শুনে বেশ কষ্ট পেল ।

 

 

মাওলানা উসমান বললেন: তোমার চোখ কালো হয়ে গেছে । তাহাজ্জুদ নামাযে রাত জেগে কান্নাকাটি করো তাই না ?

আসিফা চুপ করে আছে ।

উসমান: আমি জানি । আমার কথা তোমার মনে পরে । কি করবো বলো ? আল্লাহ তায়ালা জন্য কষ্ট করতেই হবে । আমার ঘুম ও হয়না ঠিক ভাবে । আসিফা ?

 

তাকিয়ে দেখলো সে ঘুমিয়ে গেছে । মাথায় হাত  বুলিয়ে দিয়ে মাওলানা উসমান চোখ বুঝে গেল ।

 

 

পরেরদিন সকাল

কতোয়াল সাহেব , আসলেন , দেখলেন মাওলানা উসমান এখনোও আসেনি । তিনি নিজেকে শান্তনা দিলেন । সে অবশ্যেই আসবে । কতোয়াল সাহেব দেখলেন উসমান এর রুমে থাকা লোকটি শুয়েই আছে । কোন উঠাউঠি নেই ।

কতোয়াল সাহেব , চলে গেলেন ।

 

মাওলানা উসমান ঘুম থেকে উঠে দেখলেন ফজরের ওয়াক্ত পার হয়ে গেছে । তার স্ত্রী তাকে ডাকও দেয়নি । আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে । বৃষ্টি থেমে গেছে । পার্শে তাকিয়ে দেখলাম আসিফা ঘুমিয়ে আছে । মাওলানা উসমানের হাত টি ধরে ছিল ঘুমের ঘোরে । হাতটি ছেড়ে নিয়ে উনি উঠে দাড়ালেন । তাকিয়ে দেখলেন গতরাত্রের সেই ঘোড়াটি দাড়িয়ে আছে । উঠান কিছুটা পানিতে ভরে গেছে । আসতে আসতে পানি কমতে শুরু করেছে । যেহেতু , গতকাল রাত্রে অনেক বৃষ্টি হয়েছে , তাই হালকা পানি আটকিয়ে থাকা স্বাভাবিক । দাত টি ভালোভাবে মেজে , মুখটা ধুলেন । এরপর , উঠানে চেয়ার নিয়ে গিয়ে বসলেন । অযু করে এস বসে আছেন, তাই মুখস্ত কোরআন তেলওয়াত করা শুরু করে দিলেন । মাওলানা উসমান এর মনে হচ্ছে এক সময় সে , এইভাবে মাহফিল করে এসে বাড়িতে অনেক রাত্রে আসতো । কিন্তু কপাল , সেই দাওয়াত তো আর দেওয়া হচ্ছে না । মানুষের আড়ালে এক জংগলের পার্শে একটি জেলখানায় , তার এখন অবস্থান ।

পিছন থেকে চা এর কাপ দিলো । মাওলানা উসমান তাকিয়ে দেখলেন তার স্ত্রী । কোরআন তেলওয়াত শেষ করে তিনি বললেন: আপনি কখন উঠলেন ? আবার এত তাড়াতাড়ি চা ?

 

আসিফা , বলল: আমি জানি আপনি সকালে চা খাইতেন ।

 

চা টা হাতে নিয়ে , খাওয়া শুরু করলেন ।

 

গল্প করতে করতে বিকেলটা গড়িয়ে এলা । এবার বের হওয়ার পালা । কোন ফাকে একটি দিন পেরিয়ে গেল বুঝায় গেল না । মাওলানা উসমান , তার বিবির দিকে লক্ষ্য করতে থাকলেন । দিন যত ঘনিয়ে আসছে , আসিফার মুখ থেকে হাসি তত দ্রূত চলে যাচ্ছে ।

সন্ধায় মাগরিব  নামাজ পর , আসিফার চোখে পানি । মাওলানা উসমান বললেন: আমি আবার আসবো আসিফা  , আপনি কাদছেন কেন ?

 

আসিফা চুপ হয়ে আছে ।

কাপড়  , গুলো সব ঠিক ঠাক ভাবে নিলো মাওলানা উসমান । ঠিক এটিই , নেওয়ার জন্য তার আশা । সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে নেওয়া  হলে কিছু দরকারী পুস্তক সাথে নিলেন যা পরতে কাজে লাগবে । অবশেষে এশার নামায  , আদায় করে খাওয়া-দাওয়া সারলেন । এবার উসমান সাহেব: বললেন , আসিফা , আজ আর নয় , এখন উঠি ।

আসিফার মন খারাপ ! মাওলানা উসমান সেদিকে কেয়ার করলেন না। ঘোড়াটা নিয়ে বাড়ির বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুত নিলেন । গেটের সামনে যেতেই আসিফা হাত টেনে ধরলো । বলল: শুধু মাত্র আল্লাহর জন্যই আপনাকে চেড়ে দিচ্ছি ।

মাওলানা উসমান, মুখে হাসি নিয়ে বললেন: আমিও শুধু আল্লাহর জন্যই তোমাকে রেখে যাচ্ছি আমাকে ভুলে যেওনা । আমি যদি সম্ভব হয় জেলখানা থেকে তোমাকে চিঠি লিখবো । যে কোন ভাবে তোমার কাছে পৌছানোর চেষ্টা করবো । যদি , সারা বছরে একটা চিঠিও না পাও তাহলে ভাববে হয় আমি স্বাভাবিক মিত্যূ পেয়েছি অথবা , আমি শহীদ হয়ে গিয়েছি , অথবা , আমি অসুস্থ ।

 

আসিফার , চোখে পুনরায় জল । উসমান , সাহবের চোখেও জল। তিনি বললেন: দেখ , যাওয়ার সময় কাদলে ভালো লাগবেনা । আমি যদি , যুদ্ধে যেতাম তোমাকে নিয়ে যেতাম , কিন্তু সত্যই পরিস্থীতি সেরকম নয় । তুমি কাদলে ভালো লাগবেনা । প্লিজ হাসো ।

 

আসিফা কান্নাজড়িত মুখে হাসলো ।

মাওলানা উসমান সালাম দিয়ে চলে আসলেন । তার স্ত্রী তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন । ঘোড়ার পৃষ্টে ছওয়ার হয়ে , কঠিন জোড়ে টান দিলেন মাওলানা ‍উসমান ।

তার স্ত্রী অপলক তাকিয়ে আছে দৃষ্টি যতদূর যায় , আর ঘোড়া যতদূর অদৃশ্য না হয় , ! ততক্ষন তাকিয়ে আছে । চোখ দিয়ে পানি বেয়ে যাচ্ছে । মুখে কপার দিয়ে  চেপে ধরে কাদছে । মাওলানা উসমানের চোখে পানি । ঘোড়াটি অদৃশ্য হয়ে গেল । তার স্ত্রী , দেখতে আর না পেয়ে দরজা দেখে দিল ।

 

মাওলানা উসমান তার ঘোড়ার পৃষ্ট্যে সওয়ার হয়ে আল্লাহ পা’কের কাছে দু হাত তুলে বললেন: আয় আল্লাহ তায়ালা , আমার স্ত্রীকে তোমার হেফাজতে রেখে গেলাম । আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন !

এই বলে , হাত দিয়ে দু’চোখ মুছে , মূহুর্তের মধ্যে , স্বাভাবিক হয়ে ঘোড়ার দিকে মনোযোগী হলেন । চলছে ঘোড়া … ! ঘোড়াটি এমন জোড়ে যাচ্ছে মনে হয় , কোন বীর জেহাদের ময়দানে যাচ্ছে ।  পিছণে একবার অন্তত চেয়ে দেখলেন না , তার স্ত্রী কি তার দিকেই তাকিয়ে আছে নাকি চলে গেছে । তার সে চিন্তা যেন মাথাতেই নাই । এক হাতে মর্শাল আরেক হাতে , ঘোড়ারকে কন্ট্রোল করার দড়ি । মর্শাল জ্বলছে দাও দাও করে ,,, আর ঘোড়ার তেজও কঠিন গতিতে ।

 

জংগলের মদ্ধ্যে ঠিক সেই জায়গায় যেই জায়গায় সে একটি মেয়ের ধাক্কা খেতে লেগেছিল অল্পের জন্য বেচে গিয়েছিল । ঠিক সেই জায়গায় দাড়ালো । দেখলো সেই যুবক দাড়িয়ে । বয়সে মাওলানা উসমান এর ছোট হবে । এই ছেলে সেই ছেলে যাকে নদী থেকে , বাচিয়েছিল । আর ঐখানে যেই ঘোড়াটি কে থেকে সে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গিয়েছিল , সেটি ছিল ঐ যুবকেরই ঘোড়া । মাওলানা উসমান , পিছন থেকে যুবকটির গায়ে হাত দিতে চাইলো কিন্তু ভাবলো , হাত দিলে খবর আছে , হয়ত আক্রমণ করতে পারে । তাই সে , সেটি না করে , সে গলা কাসি দিল । এতেযুবকটি পিছনে ফিরলো । যুবকটি ছিল সত্যই স্মার্ট । মাওলানা ‍উসমান কে দেখে একটু অবাক হলেন । বললেন: আপনি সেই লোকটা না ?

 

মাওলানা উসমান বললেন : হ্যা ।

যুবকটি বলল: সেদিন আসলে আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল । আমি চিনতে ভুল করেছিলাম । আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে পানিতে ফেলে দিয়েছেন।

 

সাহায্যের হাত  এগিয়ে দিয়ে , বলল: আমি , সুলতান !

 

মাওলানা উসমান একটু ভেংচি মেরে বলল: তো আমি কি করবো ?

যুবকটি , একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে লজ্জা পেল । বলল: আমিবন্ধুত্বের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম ।

 

মাওলানা উসমান হাসলেন । বললেন: আমি কারও ধর্ম সমপর্কে না জেনে কারও সাথে বন্ধুত্ব করিনা ভাই । আমি মুসলিম তুমি ?

 

যুবকটি একটু অবাক হল , পরক্ষনে বলল: আমিও মুসলিম ।

এবার হাত মিলালো । মাওলানা উসমান বললেন: হম . আমি উসমান ।

 

যুবকটি ভুড়ু কুচকালো বলল: আপনাকে কারও মত লাগতেছে , আমিজানিনা কার মত ! তবে মনে হয় চেনা চেনা ।

 

 

মাওলানা উসমান ভুল করে বসলো নিজের পরিচয় দিয়ে । যাই হোক নাম  বলেছে সমস্যা নেই চিনতে পারলেই সমস্যা । বলল: তুমি তো সালাম দিলেনা তুমি তো মুসলিম ?

 

সুলতান অবাক হয়ে বলল: আপনিও দেন নি ।

উসমান: আমিও দেয়নি কারন, আমি জানিনা তুমি মুসলিম না কোন ধর্মের !

সুলতান , বলল: কেন আমি যতটুকু জানি , খৃষ্টান ধর্মেও যীশু সালাম দিত ।

 

উসমান:= হ্যা । এটি তুমি পাবে ,  বাইবেল যদি খুলো , তাহলে New Testament এর , Gospel Of Luke  ২৪ অধ্যয় ৩৬ অনুচ্ছেদ, এখানেই  পাবে।

 

যুবকটি অবাক হয়ে গেল । বলল: আপনি বাইবেল পরেছেণ ?

 

উসমান সাহেব , হাসলো । বলল: আমার বেদ , রামায়ন , মহাভারত , ভবিষ্যপূরান , গিতা , এছাড়াও , বাইবেল সহ , আমার মুখস্ত নিউ টেস্টামেন্ট অথবা ওল্ড টেস্টামেন্ট ।  মূখস্ত বললে , ভুল হবে মুটামুটি একটা আইডিয়া আছে আর কি ।

 

সুলতান একটু অবাক না হয়ে পারলেন না । বললেন:- আচ্ছা , তাহলে তো আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে , আমি এগুলো সমপর্কে জানতে চাই ।

 

মাওলানা উসমান হাসলেন । বললেন: নিজের ধর্ম সমপর্কে কতটুকু জানো ?

সুলতান একটু চুপ কর বলল: মোটামুটি জানি ।

 

মাওলানা উসমান বলেন: তাহলে এগুলো বিষয় , নিয়ে জানতে পারো । তবে আজকে সময় আমার হবেনা !

 

সুলতান: তাহলে কোনদিন বলুন ?

মাওলানা উসমান এখন কি বলবে বুঝতেছেনা ।

সুলতান  আবারোও বলল: বলুন?

মাওলানা উসমান বললেন: তুমি জেলখানার বর্ডারের ভিতর মাঠে ঢুকতে পারবে ?

সুলতান অবাক না  হয়ে সত্যিই পারল না । ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । বলল: কেন ?

উসমান: একচুয়ালি , আমি জেলবন্দি আসামি নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য ছাড়া পেয়েছি  , আজকেই আবার জেলে বন্দি হয়ে যাবো ।

 

সুলতান একটু গতবম্ভ হলেন । বললেন: জেলে কেন ?

উসমান: সে নিয়ে পরে কথা হবে । তোমার সাথে হয়ত আর দেখাও হবেনা এছাড়া।

উসমান অতটা গুরুত্ব ন িদিলেও সুলতান জোড় করেই বলল: হ্যা পারবো । আমার এইগুলোর বিষয়ে  জানতে চাই । প্লিজ ।

 

আচ্ছা তাহলে , আগামীকাল রাত্রে ঠিক এশার নামাযে ২ ঘন্টা পর জেলখানার ২০৬ নাম্বার রুম আছে তার সামনে একটি খোলা খেলারমাঠ আছে ঠিক এটির সামনে চলে আসবে , ।তারপর দেখতে পারবে মাঠের সাথেই একটি রুম আছে । সেখানে আমাকে পাবে ।

সুলতান হা করে সব সুনতেছিল । আর ভাবতেছিল বেচারা মাল খাইছে নাকি ! একটু পর সে বলল: আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনার ঐখানে যাবো নিশ্চয় আমার যত কষ্টই হোক ।

মাওলানা উসমান মৃদ্যূ হাসলেন । বললেন: থাকো আজ দেরি হয়ে যাচ্ছে জেলখানায় ধরা দিতে হবে । আল্লাহ হাফেজ ।

 


দীর্ঘ বেশ আবার ২ ঘন্টা জার্নি করার পর এবার জেলখানার পিছনের গেটে দাড়িয়ে উসমান । তার কাছে পেছনের গেটের চাবি ছিল । ঘোড়াটি বেধে রেখে ঢুকে পরলো । সোজা গেল ২০৬ নাম্বার রুমে । সেই রুমের চাবি ও তার কাছে । মানে স্পেশাল সব কারবার । চোর ইচ্ছে করলেই পালাতে পারবে এমন অবস্থা করে দিয়েছিল কতোয়াল সাহেব কিন্তু , উসমান সাহেব বিশ্বাস রেখে ফিরে এসেছেন । ভিতরে থাকা লোককে ডেকে তুললেন , এবং বললেন : আপনি চলে যান এখন আমি এসেছি । এবং কতোয়াল সাহেব কে পাঠিয়ে দিন ।

 

 

 

 

 

 

 

…………………………………………………………….চলবে …………………………………………………………….

 

বি:দ্র: ভাই , একটা পর্ব লিখতে অনেক কষ্ট হল বিশ্বাস করুন , বসেছি রাত , ১0.30 মিনিটে সম্ভবত এখন বাজে রাত 3.53 মিনিট । আপনারা যদি কিছু শিখতে পারেন শুধু এই স্বার্থেই লিখলাম । গতপর্বে আমি তুলে ধরেছিলাম হিন্দুস্থানের সাথে আমাদের বাংলাদেশের একটি যুদ্ধ হবে সেই যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শাসকের প্রথম অক্ষর থাকবে শীন এবং শেষের অক্ষর থাকবে নূন । এটি একটি ভবিষ্যত বাণী ছিল আমি দলিল সহ দিয়েছি সেখানে । আপনাদের লিখাগুলো ভালো লাগবে মেহেরবাণী করে একটি কমেন্ট করে যাবেন । আমি চাই বেশি না শুধু একজন আমার লিখা গুলো পরে হেদায়াত হোক সেটাই যথেষ্ট ।

 

 

 

 

 

 

 

12 thoughts on "কি হবে আগামী বিশ্ব পর্ব ৪- শাফিউল আলম"

  1. Akash PK Author says:
    Assalamu alaikum vai,

    এই উপন্যাস টা কি আর লিখবেন না?

  2. Akash PK Author says:
    ভাই এই উপন্যাস টা কথাই পাইছেন।??
  3. Akash PK Author says:
    ভাই এই uponnas টা কথাই পাইছেন।??
    1. Trickbd Boy Author Post Creator says:
      আমি নিজে বানিয়ে লিখেছি ।
  4. Akash PK Author says:
    Amake er asol link ba ei uponnas tar full downloadlink dibn plz
    1. Trickbd Boy Author Post Creator says:
      ভাইজান , উপন্যাসটি আমার নিজের লিখা , এইখানেই প্রথম উপন্যাসটি লিখেছি ।
  5. Forhad Rahman Author says:
    Bro,
    Full source chai
    1. Trickbd Boy Author Post Creator says:
      ভাইজান , উপন্যাস টি আমি নিজে লিখেছি . পুরোটা এখনোও লিখা হয় নাই । প্রথমে এইখানেই পোষ্ট করেছি ।
  6. Forhad Rahman Author says:
    Mashallah! Chaliye jan Brother. <3
    1. Trickbd Boy Author Post Creator says:
      shukran
  7. Nazmul Huda Contributor says:
    ভাই পরের পর্বটা দিন প্লিজ
    1. Trickbd Boy Author Post Creator says:
      দিবো ভাইজান ।

Leave a Reply