আর-রাহীকুল মাখতুম নবি করিম (সাঃ) এর দুধমাতা হালিমার মুখ থেকে তাঁর ( হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ) শৈশবের কথা বর্ণণা করেনঃ

” মা বিধবা, দাদা বৃদ্ধ এ ইয়াতীম শিশুকে লালন-পালন করে তার বিনিময়ে কীইবা এমন পাওয়ার আশা করা যেতে পারে ? ইতস্তত করে এবং এ সবকিছু ভেবে-চিন্তে দলের কেউই তাঁকে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলো না ।
এদিকে দলের অন্যান্য মহিলা , যারা আমার সঙ্গে এসেছিল তারা সকলেই একটি করে শিশু সংগ্রহ করে নিল । অবশিষ্ট রইলাম শুধু আমি । আমার পক্ষে কোন শিশু সংগ্রহকরা সম্ভব হলো না । ফিরে যাওয়ার সময় যতই ঘনিয়ে আসতে লাগল আমার মনটা ক্রমান্বয়ে ততই যেন কষ্টকর ওভারাক্রান্ত হয়ে উঠতে থাকল ।
অবশেষে আমি আমার স্বামীকে বললাম, “আমার সঙ্গিনীরা সকলেই দুধপানের জন্য সন্তান নিয়ে ফিরছে আর আমাকে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে, এ যেন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না । তার চেয়ে বরং আমি সেই ইয়াতীম ছেলেটিকেই নিয়ে যাই । ”
স্বামী বললেন, ” আচ্ছা ঠিক আছে , কোন অসুবিধা নেই , তুমি গিয়ে তাকেই নিয়ে এসো ।
এমনটিও হতে পারে যে, আল্লাহ এর মধ্যেই আমাদের জন্য কোন বরকত নিহিত রেখেছেন।”
এমন এক অবস্হা এবং মন-মানসিক তার প্রেক্ষাপটে শিশু মুহাম্মদ (সা.) কে দুধ পান করানোর জন্য আমি (হালিমাহ) গ্রহণ করলাম ।

তারপর হালিমা বললেন, ” যখন আমি শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে নিজ আস্তানায় ফিরে এলাম এবং তাঁকে আমার কোলে রাখলাম তখন তিনি তাঁর দু’সীনা আমার বক্ষের সঙ্গে মিলিত করে পূর্ণ পরিতৃপ্তির সঙ্গে দদুগ্ধ পান করলেন । তাঁর দুধভাই অর্থাৎ আমার গর্ভজাত সন্তানটিও পূর্ণ পরিতৃপ্তিরসঙ্গে দুগ্ধ পান করলেন । এরপর উভয়ই ঘুমিয়ে পড়লো । এর পূর্বে তার এভাবে ঘুম আমরা কখনোই দেখিনি ।

অন্যদিকে আমার স্বামী উট দোহনকরতে গিয়ে দেখেন যে, তার উলান দুধে পরিপূর্ণ রয়েছে ।তিনি এতো বেশি পরিমাণে দুধ দোহন করলেন যে, আমরা উভয়েই তৃপ্তির সঙ্গে পেট পুরে তা পান করলাম এবং বড় আরামের সঙ্গে রাত্রি যাপন করলাম । পূর্ণপরি তৃপ্তির সঙ্গে রাত্রি যাপন শেষে যখন সকাল হলো তখন আমার স্বামী বললেন, ‘হালীমাহ!আল্লাহর শপথ, তুমি একজন মহা ভাগ্যবান সন্তান লাভ করেছ ।’

উত্তরে বললাম, ” আল্লাহর শপথ ! অবস্হা দেখে আমারও যেন তাই মনে হচ্ছে ।”
হালীমাহ আরো বললেন যে, এরপর আমাদের দল মক্কা থেকে নিজ নিজগৃহে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিল । শিশু মহাম্মদ (সা.)কে বুকে নিয়ে আমার সেই দুর্বল এবং নিস্তেজ মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে আমিও তাদের সঙ্গে যাত্রা শুরু করলাম । কিন্তু আল্লাহর শপথ আমার সেই দুর্বল গাধাই সকলকে পিছনে ফেলে দ্রুত বেগে সকলের অগ্রভাগে এগিয়ে যেতে থাকলো । অন্য কোন গাধাই তার সাথে চলতে পারলো না ! ”
আমরা সবাই জানি যে নবি করিম (সাঃ) এর দুধমাতা হালিমা (রাঃ) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৫বছর বয়স পর্যন্ত লালন পালনের দায়িত্ব পালন করেন । রাসুল (সাঃ) একটি দুধ পান করতেন এবং অপরটি তার দুধ ভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন । জন্মের পর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কাউকেই কষ্ট দেননি । পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র মহামানব , যিনি কখনোই কারো মনে কষ্ট দেননি এবং এমন কোনো কাজ করেননি যা দ্বারা কেউ কষ্ট পায় । তিনিই দুনিয়ার একমাত্র পারফেক্ট মানুষ , সকলের থেকে আলাদা । তিনি কখনো কোনো ভুল করেননি । তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যা ইসলামিক স্কলাররা ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন । তবে তারা এটিও বলেছেন এগুলো আল্লাহ পাকের ইচ্ছায়-ই বিশেষ কিছু কারণে রাসুল (সাঃ) কে দিয়ে করানো হয়েছিল ।
তাছাড়া আমার জানি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই কোনো মন গড়া কিছু বলেননি । বরং যা বলেছেন আল্লাহপাক রব্বুল আল আমিনের নির্দেশে বলেছেন ।

আমি যা বলেছি মন গড়া কিছু বলিনি । আশা করি সবকিছু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
যেহেতু আপনি এই ইসলামিক পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন । ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ ও কৌতূহল নিশ্চয় আপনার রয়েছে । সুতরাং আল্লাহ তাআলা আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুক এবং হেদায়েত দান করুন । পরিপূর্ণ ইমান নিয়ে কবরে যাওয়ার তৌফিক দান করুন । আমিন

Leave a Reply