নিয়ত করা

অন্যান্য নামাজের মতো এই নামাজের জন্যও নিয়ত করা ফরজ। আমি ইমামের পেছনে ঈদুল আযহার ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি- মনে মনে এই সংকল্প বা intention থাকাই যথেষ্ট। আরবি বা বাংলায় নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যে মুখে উচ্চারণ করে “নিয়ত পড়া” জরুরি নয়।

তাকবীরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করা

ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করবেন। উপস্থিত সকল মুক্তাদি তার সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করবেন।এরপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় ইমাম সাহেবসহ সকলেই মনে মনে “সানা” পড়বেন।

সানা

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন বলতেন-
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। (তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।

 

১ম রাকাত : অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর

  1. প্রথম তাকবিরের পর হাত বেঁধে সানা পড়ে নিতে হবে। “সানা” পড়া শেষ হলে ইমাম সাহেব ৩ বার “”আল্লাহু আকবার”” বলে তাকবীর দিবেন। মুক্তাদিরাও সকলে তার সঙ্গে তাকবীর বলবেন। অন্য সকল নামাজের মতোই এখানেও ইমাম সাহেব জোরে তাকবীর বলবেন আর মুক্তাদিরা আস্তে তাকবীর বলবেন।
  2. প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিতে হবে।
  3. দ্বিতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিতে হবে।
  4. তৃতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত নাভির নিচে বেঁধে নিতে হবে। (প্রথম ২ তাকবীরের মত হাত ছেড়ে দেয়া যাবে না)
  5. এরপর ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং অন্য কোনো সূরা মিলাবেন। এরপর অন্যান্য সালাতের ন্যায় রুকু-সিজদা আদায় করে ইমাম সাহেব ১ম রাকাত শেষ করে ২য় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তাদিরা যথারীতি ইমামের অনুসরণ করবেন।

২য় রাকাতঃ অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর

  1. ২য় রাকাতের শুরুতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর অন্য কোনো সূরা বা সূরার অংশ তিলাওয়াত করবেন। রুকুতে যাওয়ার আগে ইমাম সাহেব ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর দেবেন। মুক্তাদিরাও তার সঙ্গে তাকবীর দেবেন।
  2. প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দেবেন।
  3. দ্বিতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দেবেন।
  4. তৃতীয় তাকবীরের সময়েও কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দেবেন।
  5. এরপর ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলবেন। এটি হচ্ছে মূলত রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর। এ তাকবীর শুনে আমরা রুকুতে চলে যাব। এরপর বাকি সকল নিয়মকানুন অন্যান্য নামাজের মতোই। সকলেই ইমামকে অনুসরণ করে ২ রাকাত নামাজ শেষ করবেন।
  6. সালাতের পরে ইমাম সাহেব ২টি খুতবা দিবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব। অনেককেই দেখা যায় সালাত শেষে উঠে চলে যান। এটি গর্হিত অন্যায় একটি কাজ।

ঈদের সালাতে আমরা মূলত অতিরিক্ত তাকবীর নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকি। অতিরিক্ত তাকবীরের সময় দেখা যায় কেউ হাত তুলে হাত ছেড়ে দেন, কেউ বা আবার বেঁধে ফেলেন। কেউ বা আবার ভুলে রুকুতে চলে যান। আশা করি আসন্ন ঈদের সালাতে আমাদের এই ভুলগুলো হবে না।

 

সংক্ষেপে তাকবীরের নিয়মটা বলা যায় এভাবে

১ম রাকাত –
১ম তাকবির –> হাত বাঁধা –> সানা পড়া
২য় তাকবির –> হাত ছেড়ে দেয়া –> কিছুই না পড়া
৩য় তাকবির –> হাত ছেড়ে দেয়া –> কিছুই না পড়া
৪র্থ তাকবির –> হাত বাঁধা –> ইমাম সাহেবের কিরা’ত শুরু

২য় রাকাত –
রুকুতে যাওয়ার ঠিক পূর্বে –
১ম তাকবির –> হাত ছেড়ে দেয়া –> রুকুতে না গিয়ে সোজা দন্ডায়মান থাকা
২য় তাকবির –> হাত ছেড়ে দেয়া –> রুকুতে না গিয়ে সোজা দন্ডায়মান থাকা
৩য় তাকবির –> হাত ছেড়ে দেয়া –> রুকুতে না গিয়ে সোজা দন্ডায়মান থাকা
৪র্থ তাকবির –> হাত না তুলে সরাসরি রুকুতে যাওয়া।

আরও সংক্ষেপে

প্রথম রাকাতের প্রথম তাকবিরের পর হাত বেঁধে সানা পড়ার পরে ২ বার কান পর্যন্ত হাত তুলে ছেড়ে দিব। ৩য় তাকবীরে হাত বেঁধে ফেলব।

আর ২য় রাকাতে শুরুতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন তারপর রুকুতে যাওয়ার আগে ৩বার তাকবীরের সময়ই কান পর্যন্ত হাত তুলে হাত ছেড়ে দিব। চতুর্থ তাকবীরের সময় রুকুতে যাব। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ভাবে ঈদের সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

তথ্যসূত্রঃ
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
পৃষ্ঠাঃ ২৫৮
প্রকাশকালঃ জুন ২০০০

বিঃ দ্রঃ ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর কয়টি হবে বা এর নিয়ম কী হবে এ বিষয়ে হাদীসের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। সুন্নাহের আলোকে হানাফী মাযহাবের মত অনুসারে উপরের পদ্ধতিটি লিখা হয়েছে। আপনি যদি ভিন্ন মাযহাবের অনুসারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মাযহাবের আলেমদের থেকে জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার বা আলোচনার প্রয়োজন হলে অনুগ্রহ পূর্বক আলেমদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো। জাযাকাল্লাহু খাইর।

 

 

12 thoughts on "ঈদের নামাজের নিয়ম (অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সাথে)"

  1. MD FAYSAL Contributor says:
    ঈদের আগে সবাইকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। পোস্ট টা কাজে দিবে ❤️
    1. Kazi Mahbubur Rahman Author Post Creator says:
      Welcome brother ?
    1. Kazi Mahbubur Rahman Author Post Creator says:
      জাযাকাল্লাহু খাইরান
  2. Torikulking Contributor says:
    অনেক ভালো পোস্ট, ধন্যবাদ ❤️
  3. TOHIN02 Contributor says:
    ৭+৫ = ১২ তাকবির এর টা বেশি সহীহ্
    1. Kazi Mahbubur Rahman Author Post Creator says:
      জী আমিও একমত

      তবে Maximum জায়গায় এখন অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সাথে ঈদের নামাজ হয় তাই এটাই শেয়ার করা

  4. M. M. Anik Contributor says:
    Thanks.
    Eid Mubarak vai
    (TAQABBAL ALLAHU MINNA WA MINKUM)
  5. M. M. Anik Contributor says:
    TAQABBAL ALLAHU MINNA WA MINKUM
  6. M. M. Anik Contributor says:
    TaqabbalAllahu minna wa minkum
  7. mdronykhan75612 Contributor says:
    ধন্যবাদ এটা খুজতেছিলাম।

Leave a Reply